#শোভা
#পর্ব_১৫
জামিলের অতিভক্ত ঘর জামাইয়ের আচরণের অত্যাচারে সব মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। একমাস হয়েছে সে এ বাসায় উঠেছে। মাঝেমধ্যে তাদের গার্মেন্টেসে যেয়েও সে বিশাল রকমের ক্যাচাল তৈরি করে। সেও বীনার স্বামীর মতো গার্মেন্টেস পরিচালনার কাজে বসতে চায়। এই ব্যাপারে শাশুড়ি আর বউয়ের কান নষ্ট করে ফেলেছে।
কোনোভাবেই তাকে বাসা থেকে বের করা যাচ্ছেনা।
মাঝেমধ্যে কোথাও গায়েব হয়ে যায় দুইতিন দিনের জন্য। ওই কটা দিনই শান্তি তাদের মনে। রিনার জীবন টাকে অস্থির করে তুলেছে সে। রিনার রুম দখল করে রেখেছে। রিনার সাথে স্বামীসুলভ ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু রিনার সাথে পেরে উঠছেনা। রিনা কোনোভাবে না পেরে বাধ্য হয়ে মায়ের রুমে যেয়ে থাকছে। তবে মুহিব তার বাবার সাথেই থাকে। এই কটা দিনে বেশ খাতির জমিয়ে ফেলেছে বাবার সাথে। বাবা ই প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে, নিয়ে আসছে। ছেলেকে যা চাচ্ছে তাই দিচ্ছে। তাকে নিয়ে সিনেমায় যাচ্ছে। ছেলে বাবার চরম ভক্ত! এটা দেখে ওদের মাথা পুরাই নষ্ট। কি করে ফিরাবে ছেলেকে জামিলের বাঁধন থেকে, সেই চিন্তায় মা আর নানির মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়!
জামিল এতদিনে খেয়াল করলো যে, মুহিব আসলে চরিত্রের দিক দিয়ে মা খালার মতোই হয়েছে। অনেক বেশি লোভী। সে সারাদিনই বাবার কাছে এটা-সেটা ডিমান্ড করতে থাকে। জামিল সবই বুঝে কিন্তু কিছুই বলছেনা। সে তার ছেলে চাওয়া মাত্র তার ডিমান্ডগুলিকে পূরণ করার চেষ্টা করছে। তার ছেলে এখন পুরোপুরিভাবে তার বশে চলে এসেছে। বাবা ছাড়া যেন সে কিছুই বুঝেনা। মায়ের সাথে সম্পর্কের ধীরেধীরে অবনতি হচ্ছে। এ নিয়ে রিনার চিন্তার শেষ নেই। কোনোভাবেই পেরে উঠছেনা জামিলের সাথে। রিনা তার ছেলেকে চাইলেই সব কিছু সাথেসাথেই দেয়না। তার ছেলের স্বভাব এমনিতেই খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই সে তাকে শুধরানোর জন্য অনেক স্ট্রিক্ট হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু, জামিলের সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা দেখে সে পাগলপ্রায় অবস্থা! জীবন টা অস্থির হয়ে উঠেছিলো তার। ছেলেকে বাবার সাথে খাতির জমানো নিয়ে কিছু বললে উলটা ছেলে তাকে শুনিয়ে দেয়। মা যেন তার চরম শত্রু। রিনা সারাদিন মায়ের কাছে কান্নাকাটি করে।
– মা, এভাবে আর কতদিন? আমি তো আর পারছি না! মুহিবের ব্যবহার দিন দিন অনেক উগ্র হয়ে যাচ্ছে। ওতো আমাকে দুচোখ দিয়ে দেখতে পারছে না। আমার কোন কথাই শুনেনা। লেখাপড়ার অবস্থা অনেক খারাপ। জানিনা ওর বাবা ওকে কি কান পড়া দিয়েছে। আসলে প্রথম প্রথম আমি না বুঝে ওকে অনেক মাথায় তুলে ফেলেছিলাম। তবে আমিও ধীরে ধীরে ওকে ঠিক করতেও সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু মাঝখান দিয়ে ওর বাবা এসে ওর সাথে যেটা করছে সেটা কি আমার ছেলের জন্য ঠিক হচ্ছে, তুমি বলো ?
– হুম! আমি সবই বুঝতেছি। ওই হারামির বাচ্চা আইসা সংসারটারে দোযখখানা বানাই ফেলছে। লজ্জা শরম ও নাই। এত্ত যে অপমান করি কোনো লাভ হচ্ছেনা। শয়তান টা সারাদিন আমারে ভাজা ভাজা কইরা দিচ্ছে। এইটা রান্ধেন, ওইটা রান্ধেন! লবন হয়নাই, ঝাল হয়নাই, উহ! আইজকাল আবার ফ্যাক্টরি তে বসার জন্য বীনার জামাইর সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদ করতেছে। অশান্তি আর ভালো লাগেনা। আচ্ছা! ও টাকা পয়সা পায় কই? কাজ কাম তো কিছু করে না। জানিস নাকি কিছু?
– আমি জানবো কোন জায়গা দিয়া হারামির বাচ্চা কোথায় টাকা পায়? মনে হয় জমি বেচা টাকাপয়সা কিছু আছে সেটাই খরচ করছে। শুনেছি আমার মুহিবকে নাকি হুন্ডা কিনে দিবে। মুহিব ওর কাছে হুন্ডা চাইছে। হারামি কিনে দিতে রাজিও হয়ে গেছে। আল্লাহ জানে যদি হুন্ডাই কিনে দেয় তাহলে কি হবে? আমি তো কোনোভাবেই পারতেছিনা! ছেলের সাথে ও না, আর ওই হারামির সাথেও না। ওর সাথে কথা বলতে রুচিতে বাধে। বেয়াদব টা বুইড়া কালে ভং ধরছে। শুনেছো কি বেয়াদব এর মতো কথাবার্তা বলে। মা কিছু একটা করো। ওর কাছ থেকে আমারে মুক্তি দাও। আর ও কণাকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলে। আর ভালো লাগছেনা। আমি ওকে ডিভোর্স দিবো সেই উপায়ও নাই। ছেলেটাকে বশে নিয়ে বসে আছে। ছেলেটা যদি আবার বেকে বসে। বাপের পিছু নেয় যদি। অলরেডি আমাকে ওই হারামি হুমকি ধামকি ও দিয়েছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়েই তো বেচেঁ থাকি। কি হবে জানিনা। এইভাবে চলতে থাকলে হয় আমি পাগল হয়ে যাবো। নতুবা, আমি আমি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করব । কিছু একটা করো মা! আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও! মুহিব আমার সাথে ভালোভাবে কথাই বলে না। আমি ওর বিরুদ্ধে কথা বলি দেখে ও আমাকে দুচোখ দিয়ে দেখতেই পারে না। লেখাপড়া সব গোল্লায় গিয়েছে। আমি কি করবো আমি জানিনা! সামনে পরীক্ষা দিবে। যদি এখন এভাবে চলাফেরা করে তাহলে কি করবে বলো? আমি কিছু জানিনা, তুমি আমার ছেলেকে আমার কাছে এনে দাও। আমি কিছু বুঝিনা! বলতে বলতে রিনা কান্নায় ভেঙে পড়লো।
– আহ! পাগলামি করিস না তো! তুই চিন্তা করিসনা। দেখি কি করা যায়? তুই মনে করছিস আমি চিন্তা করতেছি না? মুহিবতো আমার সাথে ও ভালো করে কথা বলে না। বাপ ছাড়া আজকাল কিছুই বোঝেনা। আমি সেদিন বাপের পিছে ঘুরে দেইখা বকছিলাম। যে মুহিবরে ছাড়া আমার দিন কাটানো কষ্টকর, আমার দিন চলে না, যে মুহিবের চেহারা না দেখলে আমার দিন ভালো যায় না। সেই মুহিব আমার সাথে ভালো কইরা কথা বলে না। দাঁড়া দেখছি কি করা যায় । জানিনা, কি কান পরামর্শ দিছে ওই শয়তান টায়!
জামিলের সাথে প্রতিনিয়ত শোভার সাথে কথা হয় । জামিল পারভীনের কাছে বলে এসেছে তিনমাস ব্যবসায়ীক কাজের জন্য চট্টগ্রামে যাচ্ছে। ওখানে কন্টিনিউ থাকতে হবে। মাঝে মাঝে এসে ওদের সাথে দুই চার দিনের জন্য থাকবে। পারভীনের কাছে সে সত্যি গোপন করেছে কারণ পারভীন যতই ভালো মনের মানুষ হোক না কেনো, কোনো স্ত্রী ই তার স্বামীকে আগের স্ত্রীর কাছে যেতে দিতে রাজি হবেনা। তাই শুধুশুধু সংসারের অশান্তি না বাড়িয়ে কৌশলে কাজ করছে সে। পরে সব কিছুই জানিয়ে দিবে! মনে মনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেদিন জামিল বাসায় অনেক ঝামেলা করেছে। কারণ সেও বীনার হাসবেন্ড এর মতো গার্মেন্টেসে বসতে চায়! কোনোভাবেই সে তার অধিকার ছাড়তে রাজি নয়। সে শাশুড়িকে বলে দিয়েছে যে করেই হোক তিনদিনের মধ্যে তাকে গার্মেন্টেসে বসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সেও হিসেব নিকাশের দায় দায়িত্ব দেখতে চায়। এ নিয়ে ঘরের সবার সাথে হুলস্থুল কাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু, কেউই রাজি নয়। সবার একই কথা বীনার জামাই অনেক কষ্ট করেছে এই প্রতিষ্ঠানে। আর তুমি কে? যে উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাও? কিন্তু, জামিলও ছাড়ার পাত্র না! সেও বড় জামাই হিসেবে পূর্ণ অধিকার চায় এ বাড়িতে।
রিনাকে সে স্ত্রী হিসেবে সাপোর্ট দেয়ার জন্য পাশে চায়। কিন্তু কেউই তাকে মেনে নিতে পারছেনা।
আজ জামিল প্লান করেছে তার বাসায় যাওয়ার জন্য। এজন্য সকাল সকাল রেডি হয়ে নাস্তার জন্য টেবিলে আসলো। টেবিলে এসে দেখে কোনো খাবার ই নেই। সে প্লেট বাটি ধরে নিচে ছুড়ে ফেলে দিলো। তার শাশুড়ি তাকে জোরে ধমক দিলো।
– কি পাইছো কি তুমি? এসব কি শুরু করছো?
– সকাল সকাল কি বাড়ির জামাই না খেয়ে বের হবে? কেমন শাশুড়ি হইছেন? পাচ মিনিটের মধ্যে টেবিলে খাবার দেখতে চাই। প্রতিদিন ই খাবার নিয়ে ঝামেলা করেন। এইগুলা কি?
– আমার বাসা দিয়া বাইর হও?
– বের হতে চাই তো। তবে আপনার মেয়েরও বের হতে হবে আমার সাথে!
– আমার মেয়ে কোনোদিন ও যাবেনা।
– অবশ্যই যাবে। আর না গেলে সমস্যা নেই তো। আমিও এখানেই থাকবো। আর হ্যা, আপনার মেয়ে যেহেতু আমার বিয়ে করা বউ! তাই আপনি নিশ্চয়ই বোঝেন যে স্বামী হিসেবে তার কাছে আমার কিছু পাওনা আছে। রাতের বেলা আজ যদি আপনার মেয়ে আপনার রুমে ঘুমায় তাহলে আজকে আপনার মেয়ের খবর আছে!
– বেয়াদব! মান, সম্মান, ইজ্জত কিছুই আর নাই! কার সাথে, কার সামনে, কেমনে করে কথা বলতে হয় তাও বোঝেনা! বাইর হ আমার বাসা দিয়া বাইর হ! তোরে দিব আমি নাস্তা! তোর জন্য কিছুই নাই! দেখি তোরে খাওন কে দেয় এই ঘরে আর! তুই আমার মেয়ের জীবন টারে যন্ত্রণায় যন্ত্রণায় ভরে দিছিস। তুই আমার নাতির মাথাটা নষ্ট করে দিছিস, কুলাঙ্গার! এই বল কি হইলে তুই এ ঘর দিয়ে বাইর হবি? কত টাকা লাগবে? টাকা দিয়ে দিব!
– আমি কি আপনাদের কাছে টাকা পয়সা চাইছি নাকি? আমি কি ফকির নাকি আপনাদের মত? আপনারা আমাকে ভদ্রতা শিখান? ছেলের বউয়ের সাথে যা করছেন আমার সাথে কি তাই করতে চান নাকি? আমি কিন্তু আপনার ছেলের বউয়ের মত অবলা নারী না! এটা ভুলে যাবেন না! এ বাসা থেকে বের হলে আমার ছেলে এবং বউকে নিয়ে বের হব, নইলে আমি বের হব না। আপনারা যা করার করেন। একসময় আমার নামে মামলা দিয়েছিলেন। মামলা কিন্তু আমিও দিতে পারি। এই বুড়ো বয়সে জেলখানার হাওয়া খুব বেশি ভাল লাগবে না কিন্তু আপনার!
– আপনার সাহস তো কম না! আপনি আমার মাকে জেলে দিবেন সেই হুমকি দেন! বেয়াদব যেন কোথাকার।
– আরে বিনা যে! আসা হয়ে গেছে সকাল সকাল গাট্টি বোঁচকা গোল করে। জামাই কি বাসায় বাজার করে না? সারাদিন বাপের বাড়ি এসে পড়ে থাকো! আচ্ছা যাক, সেটা তোমার ব্যাপার! জামাইতো আঁচলের নিচে নিয়ে ঘোর। তো জামাইরে বল না আমাকে আমার গার্মেন্টসের শেয়ার বুঝিয়ে দিতে। নইলে কিন্তু আমিও মামলা-মোকদ্দমা করতে জানি। এসব এখন ভালোই বুঝি।
– দেখছো মা! দেখছো! কত বড় বেয়াদব! কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলতেছে তোমার জামাইরে নিয়া!
আর এইটারে বিদায় করো না কেন? এইটারে বিদায় করো এখান দিয়ে যেমনে পারো। ইনার যন্ত্রনাতে তো এ বাড়িতে আসা ও যাবেনা দেখছি!
– বিদায় তো করতেই চাই। বিদায় হচ্ছে কই? বলছি কি নিবি নে। নিয়ে এ বাড়ি দিয়ে বিদায় হ।
জামিল মনে মনে খুব খুশি হলো। এত তারাতারি যে তার প্লান বাস্তবায়িত হবে সে বুঝতেই পারেনি। সে তো এই আশায়ই ছিলো। কিন্তু এতো সহজে সে রাজি হওয়া যাবেনা।
– শাশুড়ি আম্মা, আপনাকে তো বহুবার বলেছি আমি ওদেরকে নিয়েই এখান থেকে যাবো, নয়তো না! আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা তো আপনার মেয়ে।
– আমার মেয়ে তোর সাথে যাবেনা। আর নাতিও না। আগামীকালই তোরে ডিভোর্স এর জন্য কোর্টে যাবে রিনা।
– ডিভোর্স দিবে সমস্যা নাই। কিন্তু আমি তো সাইন করবো না। আর ডিভোর্স যদি হয়ও আমি আমার ছেলেকে ছাড়ছিনা।
– সেটা আমরা বুঝবো।
কোর্টে ডিভোর্সের জন্য আবেদন করলো রিনা। এরপরে বাসার পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো। জামিল ছেলেকে পুরাই বশে নিয়েছে।
জামিলের খারাপ লাগছে যে সে ওদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য নিজের ছেলেকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু, কিছুই করার নেই। ওদের মতো অমানুষদের অপদস্থ করতে এর চেয়ে ভালো কোনো সমাধান ছিলোনা। কারণ মুহিব ছিলো তার শাশুড়ি আর রিনার সবচেয়ে দুর্বল পয়েন্ট। সবকিছু জেনে বুঝেই সে এই পথ ধরেছে। সে জানে একথা জানার পর হয়তো মুহিব কোনোদিনই তাকে ক্ষমা করতে পারবেনা। তারপরেও এতটুকু আশা তার বুকে যে হয়তো তার ছেলে কোনোদিন বুঝবে তাকে। কেনো সে এই পথ নিয়েছিল! কেন সে তার নিজের ছেলেকে তার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছিলো!
একজন অধিকার বঞ্চিতাকে তার অধিকার দেয়ার জন্যই সে এই পথ ধরেছে। হয়তো তার ছেলের কাছে সে প্রতারক হিসেবে সারাজীবন চিহ্নিত থাকবে, হয়তো বা বিবেকের কাছে সারাজীবন নিজেই দংশিত হবে তারপরেও তার এতটুকু প্রশান্তি যে সে মানবিকতাকে জয় করেছে, অধিকার বঞ্চিতা কে তার প্রাপ্য ফিরিয়ে দিয়েছে।
এভাবে কিছুদিন গত হয়ে গেলো। বাসায় প্রতিদিনই নতুন নতুন নাটকের সূচনা হয়। বিশেষ করে মুহিবকে নিয়ে সবাই চিন্তিত। রিনা অনেক কান্নাকাটি করছে তার ছেলের জন্য। ছেলেকে কি জাদু করেছে জামিল যে সে বাবা ছাড়া আর কারো কথাই শুনতে পারছেনা। জামিল সবাইকে বলে দিয়েছে সে রিনাকে ডিভোর্স দিক আর না দিক ছেলেকে তার সাথে করেই নিয়ে যাবে। মুহিবকে কোন অবস্থাতেই তাদের কাছে রেখে যাবে না। আর মুহিবও তার বাবার সাথে যেতে রাজি। এ নিয়ে রিনার আর তার শাশুড়ির সাথে তুমুল ঝগড়া হয়েছে।
একদিন সন্ধ্যার সময় জামিল মুহিবের সাথে বসে দাবা খেলছিল। তখন তার শাশুড়ি রুমের মধ্যে ঢুকে মুহিবকে অন্য রুমে যাওয়ার জন্য বললো। কিন্তু, সে প্রথমে রাজি হলো না। তার বাবা বলাতে সে চলে গেল। শাশুড়ির পিছুপিছু রিনাও এসে দাঁড়ালো। এরপর তার শাশুড়ি তার কাছে বললো, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, কথা বলা যাবে?
-অবশ্যই, বলেন। আমি আপনার কি উপকার করতে পারি।
– আমি তোমার সাথে সওদা করতে আসছি।
– কিসের সওদা? আমি তো কোন ব্যাপারী না।
– আমার মেয়ে আর নাতীর সওদা।তুমি রিনাকে ডিভোর্স দিবে এবং মুহিব কেও তুমি পাবা না। এজন্য তুমি কি চাও? তুমি যা চাও আমি তোমারে তাই দিব!
– ও মেয়ে আর নাতীকে নিলামে তুলছেন? অবশ্য আপনাদের দ্বারা সবই সম্ভব! আমি অবাক হচ্ছি কেনো! তা সওদা যখন করতেই চান, কতো দাম তুলছেন মেয়ে আর আদরের নাতীর?
– ও তার মানে তুমি রাজি! রিনাতো ঠিকই বলছে। টাকা পয়সার গন্ধ শুনে অমনি রাজি হয়ে গেলা। ছেলে বউয়ের জন্য দরদ উইড়া গেলো! লোভী! ছোটলোক!
– ছোটলোক ঠিকই বলেছেন।আহা! শাশুড়ি-আম্মা ছোটলোকরাই তো সব সময় বড়লোকদেরদের থেকে নেবে এটাই তো নিয়ম! ছোটলোক যখন বলেছেন তাহলে কি দেবেন বলেন? আপনার মেয়ের জন্য নাতীর জন্য কি কি ত্যাগ করতে পারবেন?
– অতশত কাহিনী না কইরা তুই বল তুই কি নিবি? কত নিবি?
– জামিল একটু কেশে নড়েচড়ে বসে বললো, ঠিক আছে দরদামের বিষয়টা যেহেতু আমার হাতে তুলে দিচ্ছেন, সমস্যা নেই। তাহলে আমিই বলি! আমাকে আপনার তিনতলা বাড়িটা আর এই যে ফ্ল্যাটে থাকেন এটা লিখে দিতে হবে। আর নগদ দশ লাখ টাকা দিতে হবে। তাহলে আর কোনোদিন আপনাদের মা মেয়ের জীবনে আমি আর ফিরে আসবো না। আপনাদের নাতীকেও আমি নেওয়ার কথা বলবো না। এটা তো আপনাদের জন্য তেমন বিষয় না। সামান্য বিষয়! আপনাদের গার্মেন্টসে আজকে কত টাকা ইনকাম হচ্ছে। আপনারা এখন বিশাল বড় লোকের খাতায় নাম লিখে ফেলেছেন! এরকম পুরানো বাড়ি আর ফ্লাট দিয়ে কি হবে? বিশাল বড় ফ্লাট কিনবেন সামনে!
– বেয়াদব! তোর দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। তোর এত বড় সাহস! তুই মায়ের কাছে মার বাড়ি আর লাখ লাখ টাকা চাচ্ছিস ! তোকে এক পয়সাও দিবোনা। দেখি কি করিস?
– রিনা, ডার্লিং উত্তেজিত হয়োনা। উত্তেজিত হওয়ার অনেক সময় পাবে সামনে। ছেলেটাকে নিয়ে পগার পার হই তারপর উত্তেজনা দেখিও। আর আমি তো প্রথমে কিছুই চাইনি। তোমরাই তো তোমাদের দরদাম হেকেছো। তো আমার কাছে তো তুমি আর মুহিব অমূল্য সম্পদ। তাই এতটুকু চাওয়াও কম পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু শাশুড়ির তো আর দেয়ার কিছুই নাই তাই চাওয়ার পরিমাণ আর বাড়ালাম না।
অনেক বাক বিতণ্ডা হলো। তিনজনের মধ্যে। জামিলও তার ডিমান্ড থেকে এক চুলও সরলো না।
সারারাত ধরে অনেক কান্নাকাটি করলো রিনা। ছেলের কাছে জামিলের চেহারা তুলে ধরলো। কিন্তু ছেলে উল্টা তাকেই বেশি শুনিয়ে দিলো। জামিল আগে থেকেই ছেলের কাছে সবকিছু সেট আপ করে রেখেছিল। তাই রিনার কোনো কথাই সে কানে তুললো না।
রিনা কেঁদে কেটে অস্থির। সে তার ছেলেকে না পেলে গলায় ফাস লাগাবে বলে চিৎকার করে করে ঘর ফাটিয়ে দিচ্ছে। জামিল তার ছেলেকে নিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে ফুল ভলিউমে গান শুনছে আর দাবা খেলছে। মায়ের কান্নাকাটি তার কানে পৌছালোনা।
রিনার মাও নাতীর চিন্তায় সারারাত ধরে দু চোখের
পাতা এক করতে পারলো না।
মেয়েদের সাথে কোনো পরামর্শ না করেই সকাল বেলা জামিল কে তার রুমে ডেকে বললো, আমি তোমার শর্তে রাজি। তবে এত কিছু দিতে পারবো না। কারণ ওই বাড়ি টা আগেই ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা। আর আমার কাছে কোনো টাকাপয়সা ও নাই। টাকাপয়সার ব্যাপার বীনা আর কণা জানে। ওরা কোনোদিনিই রিনার ছেলের জন্য নিজেদের ভাগ ছাড়বেনা।
আমি তোমারে এই ফ্লাট আর কিছু গয়না দিতে পারি। গয়না বেইচা লাখ তিনেক টাকা পাইতে পারো। তবে আমার দুইটা শর্ত আছে।
– এত কম দাম পরিশোধ করবেন মেয়ে আর নাতীর জীবনের! আচ্ছা, যাই হোক মুরুব্বি মানুষ বলছেন। আর আপনার যেহেতু কিছুই করার নাই। ঠিক আছে। বলেন দেখি কি শর্ত?
– আমারে স্টাম্পে লিখিত দিবা যে আমার নাতীর জীবনে আর দখলদারি করতে আসবানা, আর আমার মেয়ের তালাকনামায় সাইন করবা আইজই।
আর দুই নাম্বার শর্ত হইলো যে, কেউরে বিষয়টা জানাবানা। কারণ, কণা আর বীনা, বীনার জামাই জানলে কোনোদিনই আমারে দিতে দিবেনা।
– বুচ্ছি। তবে আগে এইগুলা আমাকে হ্যান্ডওভার করবেন তারপর আমি তালাকনামা আর স্টাম্পে সাইন দিবো।
– ঠিক আছে। কাগজপত্র রেডি করো। রেডি হইলে আমারে জানাবা। তবে সবকিছু হবে গোপনে।
– ঠিক আছে।
জামিল খুশিতে একাকার অবস্থা। কিন্তু, সেটা প্রকাশ করতে পারছেনা। সে দৌড়ে রুমে যেয়ে শোভাকে ফোন করে সবকিছু জানালো।
শোভা আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়লো। সে বারংবার জামিল আর মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকলো!
চলবে……..