শেষ বিকেলের রোদ- ১৬তম পর্ব
©শাহরিয়ার
ফুপু:- ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কি হয়েছে সোহানের আর তুই বা কেন আমাদের জানালি না?
— ফুপু শান্ত হও, তেমন কিছু হয়নি জ্বর এসেছিলো এখন স্বাভাবিক আছে।
ফুপু:- তাই বলে জানাতে হয় না?
— অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আর তোমাদের জানাই নি। আপু তোমাদের জানাতে চেয়েছিলো আমিই নিষেধ করছি। কথা বলতে বলতে ফুপা আর আপুও ঘরের ভিতর ঢুকলো।
ফুপা:- কি অবস্থা এখন তোমার?
সোহান:- জ্বি ফুপা এখন অনেক ভালো।
ফুপা:- তোমরা কি আমাদের পর মনে করো নাকি? শরীর অসুস্থ অথচ জানানোর মত মনে করো না।
— ছিঃ ফুপা এমনটা কেন বলছেন? হঠাৎ জ্বর আসছে রাতেই আপুর কাছ থেকে ঔষধ এনে ছিলাম ভেবে ছিলাম মাথায় পানি দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু জ্বর কমতে কমতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আর আপনাদের ডাক দেইনি।
আফরিন:- হয়েছে এখন তোমরা যাওতো, ভাইয়াকে রেস্ট নিতে দাও। আর তুই ঔষধ গুলো খায়িয়ে দে। আমরা নাস্তা বানাচ্ছি একটু পর এসে দু’জন নাস্তা খাবি।
— আচ্ছা তোমরা যাও, আমি এগুলো নিয়ে আসতেছি। সকলে চলে যাবার পর সোহানের দিকে ঔষধ এগিয়ে দিলাম। সোহান ঔষধ খাওয়ার পর আমি মগ গুলো নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে যাবো এমন সময় সোহান হাত টেনে ধরলো।
সোহান:- সরি আর থ্যাংক্স।
— হাতটা ছেড়ে দাও তোমার সরি কিংবা থ্যাংক্স কোনটাই আমার দরকার নেই। তুমি কি ভাবছো সারা রাত তোমাকে সেবা যত্ন করছি মানেই আমি সব ভুলে গেছি? তুমি গতকাল আমার সাথে কেমন ব্যবহারটা করেছো। না আমি মোটে্র ভুলিনি কোন কিছুই।
সোহান:- দেখ আমি বুঝতে পারছি আমার ঐরকম রিয়াক্ট করা ঠিক হয়নি। আর কেন করছি তা আমি জানি না। তার জন্যই সরি বলছি। আর কখনো এমন করবো না।
— সে তোমার ব্যাপার তুমি কেন করছো তাও আমি জানতে চাই না। কিন্তু যা করছো তা আমি কোন দিনও ভুলতে পারবো না। হাতটা ছেড়ে দাও বলছি।
সোহান:- হাত ছেড়ে দিয়ে বেশতো যা, আমিও দেখবো তুই কতদিন রাগ করে থাকতে পারিস।
— আর কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রান্না ঘরে চায়ের মগ রেখে নিজের রুমে চলে আসলাম। টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি একুশটা মিস কল দিয়েছে আরমান। ফোন ব্যাক করতেই আরমান রিসিভ করলো।
আরমান:- কেমন আছেন আর আপনার ভাইয়া কেমন আছে?
— হ্যাঁ ভালো আছি আর উনিো সুস্থ আছেন কিন্তু আপনাকে কে বললো?
আরমান:- গত রাতেই আকাশ বলেছে তাইতো এতো বার ফোন দিলাম। বড় কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জানার জন্য।
— ওহ আসলে ফোনটা কাছে ছিলো না তাই রিসিভ করতে পারিনি কিছু মনে করবেন না।
আরমান:- না না কি মনে করবো, আসলে আমার বুঝার দরকার ছিলো আপনি ব্যাস্ত আছেন না হলে অবশ্যই ফোন ধরতেন।
— জ্বি তাতো অবশ্যই, তারপর বলেন আপনার বাড়ির সকলে কেমন আছে, আর সারা রাত ঘুমানি নিশ্চই?
আরমান:- হ্যাঁ সকলেই ভালো আছে, আর হ্যাঁ রাতে ঘুমাইনি, আসলে ঘুম আসছিলো না।
— ওমা কেন? ঘুম কোথায় হারালো আপনার?
আরমান:- কোথাও হারায়নি, আসলে এখনো আবহাওয়ার সাথে এডজাস্ট করতে পারিনি। তাই ঘুমের একটু সমস্যা হচ্ছে।
— ওহ আচ্ছা তাই বলুন আমি ভাবলাম অন্যকোন সমস্যা।
আরমান:- অন্য কোন সমস্যা মানে? একটু বুঝিয়ে বলুন।
— ঐ যে আছে না গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারা রাত জেগে গল্প করা টাইপ।
আরমান:- সরি আমার তেমন কেউ নেই।
— যাক ভালো,
আরমান:- ভালো কেন?
— ভালো কারণ হচ্ছে কারো জন্য সারা রাত জেগে অপেক্ষা করতে হবে না। এটাই হচ্ছে ভালো,
আরমান:- হ্যাঁ তা ঠিকই বলেছেন আচ্ছা আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?
— [মনে মনে হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি একজনকে] না তেমন কিছু না, এখনো তেমন কেউ আসেনি জীবনে।
আরমান:- যাক তাহলেতো আপনারও ভালোই।
— হ্যাঁ তা বলতে পারেন, কারো ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কারো সাথে দেখা করার জন্য দিন গুনতে হয় না। এভাবেই দীর্ঘ সময় আরমানের সাথে কথা হলো। ফোন রাখতেই আফরিন আপু রুমের ভিতর ঢুকে।
আফরিন:- কিরে তুই তোর কি নাস্তা খেতে হবে না নাকি?
— হ্যাঁ আপু এইতো যাচ্ছি চলো। বলে দু’জন রুম।থেকে বেরিয়ে এসে ডাইনিং এ বসলাম। সোহান ছলছল চোখে চেয়ে রয়েছে, মনে হচ্ছে এ বুঝি আকাশ বাতাস এক করে কান্না শুরু করবে। দেখেও না দেখার ভান ধরে নিজের মত করে নাস্তা করতে শুরু করলাম। মাঝে মাঝে আড় চোখে তাকিয়ে দেখছি সোহান একটু একটু করে রুটি ছিঁড়ে নিয়ে খাচ্ছে। মায়া লাগছে বড্ড মায়া লাগছে সোহানের জন্য, আচ্ছা যে আমাকে ভালোবাসে না তার জন্য কিসের এতো মায়া আমার? সেতো কখনোই আমার ভালোবাসা বুঝে না। সব সময় বকাবকি করতেই তার ভালো লাগে। ভাবতে ভাবতে নাস্তা শেষ করে টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে আসলাম। সারা রাত ঘুম না হওয়াতে শরীর কেমন জানি ক্লান্ত লাগতেছিলো। মুখে পানি দিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম। এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম। দুপুরে আপুর ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম।
আফরিন:- কিরে তুই ও কি অসুস্থ হয়ে পরলি নাকি আবার?
— না আপু সারা রাত ঘুমাইনি, তাই একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
আফরিন:- উঠে ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি লাঞ্চ করতে আয়।
— হ্যাঁ আপু তুমি যাও আমি আসছি। আপু চলে যেতেই উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নিলাম। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চুল গুলো টাওয়েলে পেঁচিয়ে রওনা হলাম ডাইনিং এর দিকে। ডাইনিং এ যেয়ে কোথাও সোহানকে দেখতে পেলাম না। আপুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ভাইয়া কোথায়?
আফরিন:- বললো বাসায় ভালো লাগছে না, বাহির থেকে ঘুরে আসবে নাকি।
— আর খাবার কোথায় খাবে?
আফরিন:- বললো লাঞ্চ বাহিরে করে নিবে।
— মনে মনে বাহ খুব ভালো এখন বাহিরে ঘুরতে গেলেও আর জানাতে ইচ্ছে করে না ওর। আমিতো কেউ না আমাকে জানাবে কেন? অবশ্য আমারও বা দোষ কম কোথায়? নিজেইতো রাগ করে বসে ছিলাম। না ভালো লাগে না কিছু না পারি বলতে না পারি সইতে, এ যে কঠিন জ্বালা, যে জ্বালায় পুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছি অথচ কাউকে বলতে পারছি না। কেউ দেখতেও পায় না সেই আগুন। এ আগুন শুধুই হৃদয় পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
ফুপু:- কিরে খাচ্ছিস না কেন? খাবার ভালো হয়নি?
— কই খাচ্ছিতো, আমার ফুপুর হাতের মত কেউ কি রান্না করতে পারে?
ফুপু:- ছেলেটার যে কি হলো হুট করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় যে গেলো না খেয়ে।
— তোমাদের ছেলে মনে হয় ছোট খোকা? খায়নি বাহিরে ভালো ভালো খাবার খেয়ে নিবে।
ফুপু:- এমন করে বলিস কেন? আসলে আজ আকাশদের বাড়ি থেকে মেহমান আসবে সন্ধ্যায় ছেলেটা নাই কেমন জানি লাগছে।
— চিন্তা করো না সন্ধ্যার আগেই দেখবা এসে হাজির হয়ে গেছে।
ফুপু:- আসলেই ভালো।
— আরে আসবে আসবে, না আসলে আমি কান ধরে নিয়ে আসবো চিন্তা কইরো না।
ফুপু:- আস্তো ফাজিল হচ্ছিস দিন দিন।
— হাসতে হাসতে খাবার খেয়ে আফরিন আপু আর আমি রুমে চলে আসলাম। বিছানায় শুয়ে মনে মনে ভাবছি কোথায় গেলো সোহান একা একা। কাউকে কিছু না বলে, খুব রেগেছে মনে হচ্ছে।
আফরিন:- এই ইকরা ঘুমিয়ে যাইসনা কিন্তু আবার।
— আরে না না ঘুমাবো না আর, শুয়ে রেস্ট নিচ্ছি এইটুকুই।
আফরিন:- হ্যাঁ এটাই ভালো ঘুমালে কাজ করবে কে? আজ অনেক কাজ কত রকম রান্না করতে হবে।
— হুম তাতো করতেই হবে। বিকেল হয়ে এলো অথচ সোহানের আসার কোন নামই নেই। এদিকে আকাশ ভাইয়াদের বাড়ি থেকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে তারা রওনা দিয়ে দিছে। না আর ভালো লাগছে না এই অসুস্থ শরীরে ছেলেটা গেলো কোথায়। এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখি বাবা ফোন দিয়েছে। ফোনটা রিসিভ করে বাবাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছো।
বাবা:- আমরা সকলে ভালো আছি তোরা দু’জন কেমন আছিস?
— আমরাও ভালো আছি বাবা তোমরা কোন টেনশন করো না।
বাবা:- সোহান কোথায়? ওকে জ্বালাসনাতো?
— বাহিরে বেড়াতে গেছে, জ্বালাবো কেন? এভাবে আরও কিছুক্ষণ কথা হবার পর ফোনটা কেটে রেখে দিলাম। মাঝে মাঝে বাবা মায়ের উপর প্রচণ্ড রাগ উঠে যায়। আমার চেয়ে তারা সোহানকেই মনে হয় বেশী ভালোবাসে, মনে হয় সোহানই তাদের পেটের সন্তান আর আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে আসছে। হয়তো বাড়ির বড় ছেলে কিংবা একমাত্র ছেলে বলেই এতোটা আদর সে পায়। সব কিছুর শেষেও মনটা ছটফট করছে ওর জন্য, কোথায় গেলো, কি করছে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে। ভাবতে ভাবতে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম আকাশ ভাইয়ারা সকলে বাড়ির ভিতরে ঢুকছে। দ্রুত বারান্দা থেকে রুমের ভিতর ঢুকে ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বের হলাম। বাড়ি ভর্তি মেহমান অথচ সোহান নেই, কেমনটা লাগে একটা ফোন দিবো কি দিবো না ভাবতে ভাবতে মেহমানদের সামনে চলে আসলাম। সালাম দিলাম।
আফরিন:- ও হচ্ছে আমার একমাত্র মামাতো বোন, ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছে।
— আকাশ ভাইয়া উনার বাড়ির সকলের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম আরমান আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। আর তার বাবা মাও বার বার আমার দিকেই দেখছে। আমি হাসি মুখে কোন রকম।নিজেকে সামলে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম। রুমের দিকে এগিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে সোহানকে ফোন দিলাম। কয়েকবার রিং বাজতেই সোহান ফোন রিসিভ করলো।
সোহান:- গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো কি বলবেন বলুন।
— ফাজলামো করো আমার সাথে? কবে থেকে তোমার বড় বোন হলাম যে আপনি করে বলতে শুরু করলে?
সোহান:- মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলাই উত্তম কাজ, আর বদলে যাওয়া মানুষের সাথে কথা বলার আগে বহুবার ভাবতে হবে, খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা ভাবনা করেইতো কথা বলতে হবে। বলেন এখন কেন ফোন দিছেন।
— তোমার চিন্তা ভাবনার নিকুচি করি আমি কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো বাড়িতে অনেক মেহমান। আর কে বদলে গেছে তা বাড়িতে ফেরার পর যখন চুল গুলো টেনে ছিড়বো তখনি বুঝতে পারবে। কথা বলে ফোন কেটে রুমের ভিতর থেকে বের হতে যাবো এমন সময় দরজার সামনে আসতেই বাহির থেকে ভিতরে ঢুকতে আসা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাচ্ছিলাম।
চলবে..
শেষ বিকেলের রোদ- ১৭তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— মাটিতে পরার ঠিক আগ মুহুর্তে বুঝতে পারলাম কারো হাত প্রচণ্ড রকম শক্ত ভাবে আমার কোমরের উপর অনুভব করলাম। কোন রকমে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম আরমান। চোখের উপর চোখ রেখে প্রশ্ন করলাম আপনি এখানে?
আরমান:- বাড়িটা হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম। কিন্তু আপনি এতো জোড়ে বের হচ্ছিলেন কেন? ভুত দেখে ভয় পেয়েছেন নাকি?
— জ্বি না ভুত দেখবো কেন? আপনারা এসেছেন তাই বের হচ্ছিলাম। আর দয়া করে হাতটা সরিয়ে নিলে খুশি হবো।
আরমান:- উফ সরি কিছু মনে করবেন না, খেয়াল করিনি।
— ইটস ওকে। আচ্ছা আপনি ঘুরে দেখুন আমি ওদিকে দেখি কি অবস্থা নাস্তা হলো কিনা, রান্না বান্নায় ফুপু আর আপুকে সাহায্য করতে হবে।
আরমান:- দেখা যেহেতু হয়ে গেলো চলুন না বাড়িটা একটু ঘুরিয়ে দেখাবেন।
— সরি এখন পারছি না পরে এক সময় দেখবেন।
আরমান:- ওহ আচ্ছা সমস্যা নেই, চলুন আমিও যাই একা একা ঘুরতে ভালো লাগবে না।
— কেন আকাশ ভাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারতেন। আর চাইলে পুকুরের ঐদিকটায় যেয়ে ঘুরে আসতে পারেন ভালো লাগবে।
আরমান:- আকাশ শ্বশুড় বাড়িতে এসেছে সকলের সাথে গল্প করছে, ঐখান থেকে ডেকে নিয়ে আসাটা ভালো দেখাবে না তাই আর ডাক দেইনি। একা একা কোন জায়গায় ভালো লাগবে না। চলুন আমিও ওদের সাথে যেয়ে আড্ডায় যোগ দেই।
— বেশতো চলুন।
আরমান:- হ্যাঁ চলুন।
— দু’জনে হাঁটা শুরু করলাম পাশাপাশি, আরমান বসার রুমে চলে গেলো আর আমি চলে আসলাম রান্না ঘরে ফুপু রান্না করছে, নাস্তা রেডি হয়ে গেছে আমি আর আপু নাস্তা নিয়ে সকলের সামনে এগিয়ে দিতে শুরু করলাম। নাস্তা দেয়া শেষ করে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম রান্না ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ফুপুকে রান্নায় সাহায্য করছি একটু পরেই আপুও চলে আসলো রান্না ঘরে।
ফুপু:- ছেলেটা এখনো আসলো না ইকরা ফোন দে না একবার। তোর ফুপাও একা একা কথা বলছে এতো গুলো মানুষের সাথে।
— চলে আসবে কিছুক্ষণের ভিতর কল দিয়েছিলামতো একবার।
আফরিন:- আচ্ছা আমি কল দিচ্ছি তোমরা বসো আমি ফোনটা নিয়ে আসতেছি।
— ফুপুর সাথে গল্প করছি আর রান্নায় সাহায্য করছি এর ভিতর আপু ফোন নিয়ে আবার রান্না ঘরে ফিরে আসলো। সোহানকে ফোন দিলো সোহান জানালো বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছে দশ মিনিটের মত লাগবে।
ফুপু:- এক কাজ কর তোরা যেহেতু সোহান আসতেছে ওর জন্য নাস্তাটা নিয়ে ওর রুমে দিয়ে আয়। সারা দিন কি খেয়েছে না খেয়েছে, এখন যদি এসে ওদের সাথে কথাবার্তা বলতে বসে তাহলে হয়তো আর খাবার সময়ই পাবে না।
আফরিন:- হ্যাঁ ঠিকই বলছো তুমি দাওতো নাস্তার বাটিটা আমার হাতে দাও আমি যেয়ে দিয়ে আসি ভাইয়ার রুমে আর চা টা গরম করে ওর কাছে দাও ও যেয়ে দিয়ে আসবে। আমি নাস্তাটা রেখে যেয়ে দেখি ওনাদের কি অবস্থা।
— আপু নাস্তার প্লেট নিয়ে চলে গেলো, কিছু সময়ের ভিতরে ফুপু চা গরম করে মগে করে আমাকে দিয়ে বললো যা যেয়ে সোহানের রুমে রেখে আয়। চায়ের মগ নিয়ে সোহানের রুমে যেয়ে রেখে ঘুরতেই সোহান রুমের ভিতর ঢুকলো। কিছুটা চমকে উঠলাম।
সোহান:- কিরে তুই আমার ঘরে কি করছিস?
— কিছু না চা আর নাস্তা দিয়ে যেতে বললো ফুপু তাই নিয়ে আসছিলাম। তা নাহলে তোমার রুমে আসার আমার কি কোন প্রয়োজন আছে নাকি?
সোহান:- হ্যাঁ তাইতো আমিতো অপ্রয়োজনীও মানুষ হয়ে গেছি।
— তুমি সব সময় বেশী বুঝ, আমি কি এভাবে বলছি নাকি?
সোহান:- তো কিভাবে বলছিস?
— তুমি কখনোই কোন কিছু বুঝবে না।
সোহান:- বুঝিয়ে বললেই মানুষ সব বুঝেতে পারে, তুই কি বলিস তুই নিজেই বুঝিস না আর আমি কি বুঝবো?
— এখন তোমাকে বুঝানোর মত সময় আমার হাতে নেই, বাড়ি ভর্তি মেহমান তাড়াতাড়ি খেয়ে তাদের সাথে দেখা করো। ফুপা একা সেই কখন থেকে বসে তাদের সাথে কথা বলছে। বলেই রুম থেকে বের হতে যাবো এমন সময় বললো দাঁড়া, আমি ঘুরে আবার কি হলো?
সোহান:- পেছন থেকে হাত সামনে এনে বেলী ফুলের মালা এগিয়ে দিতে দিতে এটা তোর জন্য খোঁপায় বেশ মানাবে তোর।
— বাহ দারুণতো এটা আমার পছন্দ হইছে এই উপলক্ষে তোমাকে মাফ করা যায়। তারপরেও আপাতত মাফ করছি না। চুলের খোঁপায় ফুল গুঁজতে গুঁজতে বাড়ি ভর্তি মেহমান তাদের আগে বিদায় কর। এরপর বুঝবো তোমাকে ক্ষমা করবো নাকি শাস্তি দিবো।
সোহান:- ওহ তাই বুঝি আচ্ছা ঠিক আছে, দু’টো নতুন বই এনেছিলাম ভেবেছিলাম ফুলটুসিকে দিবো। থাক আর দিতে হবে না ভালোই হলো আমিই পড়বো।
— এই না না দাও এখুনি।
সোহান:- উহু এখন না সবাইকে বিদায় কর তারপর দিবো কিনা ভেবে দেখবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা যাক কি হয়। বলে রুম।থেকে বের হলাম। সোহানকে দেখলেই এক অন্য রকম ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। এই ভালো লাগাটাই যে আমার সারা জীবন চাই। ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরে চলে আসলাম।
ফুপু:- সোহান এসেছে কি?
— হ্যাঁ ফুপু এসেছে।
ফুপু:- যাক ভালো হলো, নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি মেহমানদের সাথে দেখা করতে বলছিস তো?
— হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি উফ সারা দিন খালি সোহান সোহান আর সোহান, এই যে আমি একজন আছি আমার দিকেওতো একটু তাকাও।
আফরিন:- আহ্রে বেচারি, চিন্তা করিস না তোর দিকে তাকানোর জন্য কতজন আছে তারাই তাকাবে তোর দিকে।
— মানে কি? কি সব বলো না তুমি।
আফরিন:- মানে খুব সহজ, আমার এতো সুন্দরি মিষ্টি বোনটার দিকে কত ছেলে যে তাকাবে তার কি কোন হিসেব আছে?
— উফ আপু তুমিও না, আচ্ছা তোমরা থাকো আমি রুমে যাচ্ছি রান্না শেষ হলে আমাকে ডাক দিও আমি চলে আসবো।
ফুপু:- আচ্ছা যা আর যাবার আগে একবার সোহানের রুম হয়ে যাস, ওর আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করিস।
— আচ্ছা ঠিক আছে বলে রান্না ঘর থেকে বের হলাম। সোহানের রুমে সামনে যেতেই ও রুম থেকে বের হলো।
সোহান:- কিরে আবার কেন আসলি কোন কিছু লাগবে?
— না তোমার কিছু লাগবে কিনা জানার জন্য এসেছিলাম।
সোহান:- না লাগবে না, যা তুই যেয়ে ঐদিকটা দেখ ফুপুকে সাহায্য কর।
— লাগবে না ঐ দিকে আমি রুমে যাচ্ছি।
সোহান:- আচ্ছা শোনতো ওদের সাথে কি কোন মেয়ে আসছে নাকি অল্প বয়সী?
— হ্যাঁ আসছেতো আরমানের ছোট বোন আসছে, আকাশের চাচাতো বোন আসছে। কেন বলতো?
সোহান:- এমনি জানতে চাইলাম আর কি, আচ্ছা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
— খারাপ ও না ভালোও না একদম মদন মদন।
সোহান:- কি?
— হাসতে হাসতে তোমাকে সব পোষাকেই অনেক সুন্দর লাগে। তাড়াতাড়ি যাওতো তুমি বলেই হাঁটা শুরু করলাম নিজের রুমের দিকে। সোহান পেছন থেকে বোকার মত তাকিয়ে রয়েছে। এটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি, কিছুটা দূরে এসে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকিয়ে চোখের ইশারায় প্রশ্ন করলাম কি?
সোহান:- মাথা নেড়ে বুঝালো কিছুনা।
— হাসতে হাসতে রুমের ভিতর ঢুকে পরলাম। রান্না হতে এখনো অনেক সময় লাগবে। তাই একটু সেঁজে নিলে মন্দ হয়না, আর এখনতো সোহান ও এসেছে ভাবতে ভাবতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেই খোঁপায় গেঁথে রাখা বেলী ফুলের মালাটা চোখে পরলো। হাতে নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরতেই এর মিষ্টি ঘ্রাণে যেন মাতোয়ারা হবার অবস্থা। মনে হচ্ছে কোথাও না কোথাও সোহানের স্পর্শ লুকিয়ে আছে এই ফুলের মাঝে। হঠাৎ করেই মনে পরলো সত্যি সত্যিই তো আরমান আর আকাশের বোন এসেছে সোহান যদি তাদের সাথে, না না তা করতে দেয়া যাবে না। অবশ্য ছেলেদের কোন ভরসা নেই। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আবারও চুলের খোঁপায় ফুলের মালাটা গুঁজে দ্রুত রওনা হলাম ঐ রুমের দিকে। ভিতরটায় কেমন জানি ছটফট করছে কি যেন নেই কি যেন নেই, এমন মনে হচ্ছে নিজের কাছে। রুমের ভিতর ঢুকতেই সবার দৃষ্টি আমার দিকে পরলো। সকলে কথায় বিরতি টেনে এক নজর দেখে নিয়ে আবার গল্পে মনোযোগী হলো। এদিকে আরমান আর চোখে চেয়েই রয়েছে। আমি যেয়ে ফুপার পাশে বসে, ফুপাকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম কিছু লাগবে কিনা।
ফুপা:- সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলো কারো কিছু লাগবে কিনা, চা বা নাস্তা।
— কারো কিছুই লাগবে না জানালো। হঠাৎ করে আরমান বলে উঠলো পানি খাবে। আমি সেখান থেকে উঠতে উঠতে সোহানের দিকে তাকালাম সোহান এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে থাকা আগের জিনিস গুলো ট্রেতে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। মনে মনে আরমানকে গালি দিতে দিতে ট্রে নিয়ে রান্না ঘরের সামনে রেখে আবার ফিরে আসলাম ডাইনিং এ। পানি নিয়ে ঘুরতেই পেছনে সোহান দাঁড়িয়ে আছে। একি তুমি এখানে কেন?
সোহান:- মুখের উপর আঙ্গুল দিয়ে চেঁপে ধরে, তোকে আজ নজরকাড়া সুন্দরি লাগছে, তাই কারো নজর যেনো না লাগে তাই কপালে কালি লাগিয়ে দিতে আসছি।
— উহু মোটেও এমনটা করবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।
সোহান:- হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো কেন কি করবি তাহলে শুনি?
— চিৎকার করবো পুরো বাড়ি চিৎকার করে মাথায় তুলে নিবো।
সোহান:- আরেকটু কাছে এসে একটা হাত চেঁপে ধরে আচ্ছা চিৎকার করবি? তাহলে আমি কি করবো বলেই হ্যাঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
— কি করছো ছাড়ো বলছি কেউ চলে আসবে বলেই সোহানের দিকে তাকালাম।
সোহান:- তোর চিৎকার শুনবো চিৎকার কর।
— সোহানের বুকে মাথা রেখে পারবো না এখন চিৎকার করতে যেতে দাও পরে কথা বলবো।সোহান নিজের মুখটা নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে আসতেই দুচোখ বন্ধ করে নিলাম।
চলবে..