শেষ বিকেলের রোদ-১০ম পর্ব
©শাহরিয়ার
— জীবনে প্রথম কোন পুরুষের ঠোটের স্পর্শে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। প্রাণপণ চেষ্টা করলাম নিজেকে সে ঠোটের স্পর্শ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে। একটা সময় বুঝতে পারলাম আমি পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছি। তখন শুধু চোখ বন্ধ করে রাখা ছাড়া আর কোন উপায় আমি খোলা দেখতে পেলাম না। চোখের কোনে পানি চলে আসলো। গাল বেয়ে টপ করে পানি সোহানের গালে পরতেই সোহান আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি ছাড়া পেতেই লাফিয়ে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। পেছন থেকে সোহান ডেকে চলছে। আমি একবারের জন্য ফিরে তাকালাম না সোজা এসে পুকুর ঘাটে বসলাম। দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পানি পরছে। কি হতে কি হয়ে গেলো কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না।
— দীর্ঘ সময় পুকুর ঘাটে বসে থেকে অবশেষে চোখের পানি মুছে ঘরে চলে আসলাম।
আফরিন :- কিরে এমন মন মরা হয়ে আছিস কেন?
— মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে তুলে কই নাতো,
আফরিন:- কি হয়েছে সত্যি করে বলতো।
— আরে কিছু হয়নি, বাবা মায়ের সাথে দু’দিন কথা বলিনি তাই খারাপ লাগছে।
আফরিন:- ওহ এই ব্যাপার ফোন দে কথা বল, আমি রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছি দুপুরের জন্য রান্না করতে হবে।
— আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে শুরু করলাম আচ্ছা আমি কান্না করছি কেন? এটা সুখের কান্না নাকি দুঃখের আমিতো বরাবরই এমনটা চেয়েছি। সোহানের ভালোবাসা তবে কেন আজ এমন লাগছে। আর যা হয়েছে তার দোষ কি আমার নয়? ভাবতে ভাবতেই ফোনের মেসেজ বেজে উঠলো ফোনটা হাতে নিতেই সোহানের নাম্বার থেকে ছোট একটা মেসেজ যেখানে লেখা সরি। একটু হাসলাম আবার লজ্জাও লাগলো মনে মনে বলতে শুরু করলাম সরির বদলে কেন লেখলে না ভালোবাসি?
— দুপুরে খাবারে টেবিলে বসে আছি সোহান ফুপার সাথে বাহিরে গেছে অনেক মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে। সোহানকে ছাড়া খেতে কেমন কেমন যেন লাগছিলো। হঠাৎ করেই ফুপু বলে উঠলো কিরে খাচ্ছিস না কেন?
— কই খাচ্ছিতো ফুপু।
ফুপু:- খাবার ভালো হয়নি?
— অনেক ভালো হইছে ফুপু।
আফরিন:- কিরে তার কথা মনে পড়ছে নাকি?
— কি সব বলো না তুমি আপু ফুপু শুনলে কি মনে করবে?
আফরিন:- আরে শুনবে না, এক কাজ কর তারে ফোন দিয়ে কথা বল।
— না দরকার নেই, খাওতো আমার খুব খুদা লেগেছে।
আফরিন:- কত যে খুদা লেগেছে তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
— আপু
আফরিন:- আচ্ছা খা আর কিছু বলবো না।
— লাঞ্চ শেষ করে রুমে আসতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
বাবা:- হ্যালো মা কেমন আছিস?
— ভালো বাবা তোমরা সকলে কেমন আছো আর কবে আসবে?
বাবা:- আমরাও সকলে ভালো আছি, বিয়ের আগের দিন চলে আসবো। সোহান কোথায় ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
— ওতো ফুপার সাথে বাহিরে গেছে বিয়ের কার্ড দেওয়ার জন্য হয়তো নেটওয়ার্ক পায় না তাই বন্ধ দেখাচ্ছে।
বাবা:- আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখিস আর সোহানকে জ্বালাবি না একদম, সারাদিনতো ছেলেটার সাথে ঝগড়া করিস।
— হ্যাঁ সব দোষতো আমার আর তোমাদের ছেলেতো খুবি ভালো, আমিই শুধু খারাপ।
বাবা:- দেখ মেয়ে কি বলে? এমনটা বলছি আমি।
— হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।
বাবা:- আচ্ছা রাখছি নিজের খেয়াল রাখিস।
— বাবার সাথে কথা বলে বিছানায় শুয়ে পরলাম। পাশে এসে আফরিন আপুও শুয়ে পরলো। দু’জন মিলে গল্প করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম।
— সন্ধ্যায় ফুপুর ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম।
ফুপু:- ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি আয় নাস্তা করবি। বলে ফুপু চলে গেলো। আমি আর আপু ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যেতেই দেখতে পেলাম সোহান মাথা নিচু করে বসে আছে। আমার ও ওর দিকে তাকাতে কেমন জানি লজ্জা লাগছিলো। ফুপু সবাইকে নাস্তা খেতে দিলো। নাস্তা খেতে খেতে ফুপা বললো সোহানকে আজ নাস্তা বাড়িয়ে দাও, সারা দিন অনেক পরিশ্রম করছে।
সোহান:- কি যে বলেন না ফুপা আপনি, এটা কোন ব্যাপার হলো? আর দুপুরেতো দু’জন এক সাথেই লাঞ্চ করলাম।
ফুপা:- আরে বোকা ছেলে বুঝে না তোমার নাম আর আমাদের সকলের কাম। কি বলিস ইকরা?
— জ্বি ফুপা ঠিক বলেছেন বলেই সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান তখনো মাথা নিচু করে নাস্তা খাচ্ছিলো, এক বারের জন্যও এদিকে তাকাচ্ছিলো না দেখে রাগে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। আচ্ছা ফুপা বাহিরে কি খুব রোদ ছিলো নাকি আজ?
ফুপা:- কই নাতো কেন?
— না এমনি একজন মাথা নিচু করে খাচ্ছে মনে হচ্ছে রোদে চেহারা পুড়ে গেছে তাই মাথা নিচু করে রাখছে।
ফুপা:- ওহ আচ্ছা হয়তো ক্লান্ত লাগছে ওর সারা দিন জার্নি করছে।
— ওহ তাহলে কি আজ স্যারের হাত পা টিপে দিতে হবে মনে হয়।
ফুপু:- এই ইকরা কি সব বলছিস, সব সময় এতো লেগে থাকিস কেন ওর সাথে।
— কোথায় লেগে থাকলাম আমিতো ভালো কথা বললাম, আর আমি মাঝে মাঝেই দেইতো এমন করে তাইনা ভাইয়া।
সোহান:- কাশতে কাশতে হ্যাঁ দেয়তো মাঝে মাঝে।
— হ্যাঁ সমস্যা নেই আজও দিবো, বাবা ফোন দিয়েছিলো বললো তাদের ছেলেকে দেখে রাখার জন্য। আর যেহেতু ফোন দিয়ে বলেই দিয়েছে তখন কি আর সেবা না করে থাকতে পারি বলো তোমরা?
ফুপু:- হয়েছে এখন চুপ করে খাতো তোরা।
— সবার নাস্তা শেষ হতেই বললাম চা করে দিবো সবাইকে? বলতেই সোহান আমার দিকে তাকালো, আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- আমি চা খাবো না।
— বললেই হলো ফুপু তুমি বসতো আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি, দেখি চা না খেয়ে যেতে পারে কিনা। যদি এখান থেকে উঠছো তাহলে তোমার খবর আছে বলেই হাঁটা শুরু করলাম রান্না ঘরের দিকে। আর মনে মনে বলছি এতো ভিতুর ডিম একটা।
— অল্প সময়ের ভিতর চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম সবার দিকে চা এগিয়ে দিতে শুরু করলাম। সোহানের দিকে চা বাড়িয়ে দিতেই সোহান কাঁপা কাঁপা হাতে কাপটা ধরলো, আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললাম ভয় নেই মরিচ দেইনি।
— চা খাওয়া শেষ হতেই সবাই যার যার মত উঠে পরলাম। সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসলাম পুকুর ঘাটে। আমার পিছু পিছু সোহানও ছুটে আসলো।
সোহান:- এই তোর সমস্যা কিরে? তোকে সরি বলছি না?
— একটা সরিতে কি সব শেষ হয়ে গেলো?
সোহান:- তাহলে কি করতে হবে পায়ে ধরে মাফ চাইতে হবে?
— কি আজব আমি কি বলছি তুমি এমন করো?
সোহান:- তাহলে এমন করে খোঁচা মেরে কথা বলছিস কেন?
— তো কি করবো তুমি কি করছো তা কি ভুলে গেছো?
সোহান:- না ভুলে যাইনি, আর তা ইচ্ছে করে করিনি।
— তাহলে এখন ইচ্ছে করে করো।
সোহান:- মানে?
— মানে কি তুমি বুঝনা?
সোহান:- তোর মাথা কি ঠিক আছে?
— তোমার কি আমাকে পাগল মনে হয় বলেই সোহানের মুখোমুখি দাঁড়ালাম।
সোহান:- কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দেখ ভালো হবে না কিন্তু।
— ভালো হবে না তো কি হবে?
সোহান:- আমি যাচ্ছি বলেই ঘুরে দাঁড়ালো।
— হাত ধরে টান দিয়ে এই কই যাচ্ছো তুমি? বলেই হাত ধরে আবার টান দিতেই কাত হয়ে গেলো সোহান।
সোহান:- ফুলটুসি ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
— সোহানের কাঁধের উপর হাত রেখে মুখটা সোহানের মুখের সামনে নিয়ে কি ভালো হচ্ছে না?
সোহান কিছু বলতে যাবে ওমনি পুকুর ঘাটের দিকে কারো আসার শব্দ পেয়ে দ্রুত সোহানকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়ালাম।
আফরিন:- তোমরা দু’জন এখানে কি করো?
সোহান:- কিছু না এমনি দাঁড়িয়ে আছি আলো আঁধারিতে পুকুরের পানির ঢেউ দেখতে ছিলাম। তুই কোথায় যাচ্ছিস?
আফরিন:- এই যে এই ইকরা কে খুঁজতে বের হলাম। ঘরে আসেনি তাই ভাবলাম হয়তো তোমার ঘরে গেছে ওখানে গিয়েও পেলাম না তোমাদের কাউকে তাই ভাবলাম হয়তো এদিকে আসছো তাই এখানেই চলে আসলাম।
— ভালো করেছো এখানে এসেছো এখন তিনজন বসে গল্প করতে পারবো।
আফরিন:- এখানে এখন মজা হবে না গল্প করে অন্ধকার হয়ে আসছে, আরও কিছুক্ষণ পর পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে তখন মজা হবে। কখনো পুকুরের পানিতে চাঁদ দেখেছিস?
— নাতো কখনো দেখিনি,
আফরিন:- আজ চাঁদ উঠলে দেখতে আসিস এখন ঘরে চল।
— আপুর সাথে হাঁটছি আর মনে মনে বলছি আজতো চাঁদ দেখবোই তবে একা নয় সোহানের সাথে। ভাবতে ভাবতে তিনজন মিলে রুমে চলে আসলাম। রুমে আসতেই সোহানের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। বড় চাচা ফোন করেছো।
সোহান:- হ্যাঁ বাবা বলো, তারপর অনেকটা সময় দু’জন কথা বলে ফোনটা এগিয়ে দিলো।
— সালাম দিয়ে হ্যাঁ আমি ভালো আছি, কোন সমস্য্ হচ্ছে না, টুকটাক আরও অনেক কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। তারপর তিনজন মিলে গল্প করতে শুরু করলাম। আমিতো অপেক্ষায় আছি পূর্ণিমার চাঁদ উঠার। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে যেতেই চাচ্ছে না। সোহান কিছুটা ভয়ে আছে তা বুঝাই যাচ্ছে তবে আমি খুব মজা পাচ্ছি এ ভেবে জীবনে প্রথম বারের মত ভালোবাসার মানুষটা সাথে পুকুর ঘাটে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখবো।
চলবে…
শেষ বিকেলের রোদ- ১১তম পর্ব
©শাহরিয়ার
হঠাৎ করে ফুপুর ডাকে সব ভাবনায় ছেদ পরলো।
ফুপু:- সবাই খাবে আসো। খেয়ে এসে না হয় গল্প কইরো।
— ফোনের স্কিনে চাপ দিতে দেখতে পাই রাত নয়টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট, গ্রামের জন্য এটাই অনেক রাত। যদিও বাড়ির গেট থেকে শুরু করে অনেকটা রাস্তা আর বাড়ির ভিতরের অনেকটা জুড়েই লাইটিং করা। উজ্জল আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে তবুও অভ্যাস বলে একটা কথা রাতের খাবার খেয়েই সকলে শুয়ে পরবে। ভাবতে ভাবতে সকলে মিলে খাবার টেবিলে চলে আসলাম। আমরা আসার আগেই ফুপা প্লেটে খাবার রেডি করে রেখেছেন।
ফুপা:- আয় আয় বস তোরা, যখন মনে চায় ঘুমাবে কিন্তু খাবার আগে খেয়ে হজম করতে হয় বুঝলে, তাহলে ভালো ঘুম হয়।
— সকলে মিলে এক সাথে উত্তর দিলাম হ্যাঁ। এরপর খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়া শেষ হতেই আমি আর আফরিন আপু আমাদের রুমে আর সোহান সোহানের রুমে চলে আসলো। আসার পথে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভালোই আলোকিত হয়েছে চারিদিক। বেশ আনন্দ লাগলো দেখে। ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে দু’জন বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মনে মনে ভাবছি কখন আপু ঘুমাবে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বুঝতে পারলাম আপু ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমি উঠে আস্তে করে দরজাটা খুলে রুম থেকে বের হয়ে সোজা পুকুর ঘাটে চলে আসলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে সোহানকে কল করলাম।
সোহান:- হ্যালো কি হয়েছে তোর কোন সমস্যা?
— হুম অনেক সমস্যা ঘুম আসছে না। তুমি একটু আসো না, পুকুর ঘাটে বসে আছি।
সোহান:- এই সব ন্যাকামি বাদ দিয়ে ঘরে যাইয়া ঘুমা।
— তুমি আসবা নাকি আমি তোমার ঘরে চলে আসবো?
সোহান:- এই না না আসবি না, আমি আসতেছি।
— ফোন কেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কখন সোহান আসবে, এক দিকে অপেক্ষা অন্যদিকে ভয় ভয় ও লাগছে এতো কিছুর পরেও যদি সোহান আমাকে ভালো না বাসে? ভাবতে ভাবতেই সোহান পিছনে এসে দাঁড়ালো।
সোহান:- কি হইছে বল?
— অনেক কিছু হয়েছে, আপাতত আমার পাশে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখো। তাহলেই হবে,
সোহান:- তুই কি আমাকে জ্বালিয়ে মারবি?
— উহু ঘাড় মটকে মারবো।
সোহান:- আমার ঘুম পাচ্ছে যা যেয়ে ঘুমিয়ে পর।
— তুমি এতো পঁচা কেন?
সোহান:- আমি কিসের পঁচা, ভালোর জন্যই বলছি কয়দিন পর আফরিনের বিয়ে রাত জেগে বসে থাকলে চেহারা আর চেহারা থাকবে না।
— তুমি আস্তো একটা আনরোমান্টিক ছেলে।
সোহান:- এটা ঠিক বলেছিস। আচ্ছা রোমান্টিক হবার কোন টিপস জানা আছে তোর?
— আহা কি ঢং,
সোহান:- ঢং এর কি হলো? তুইতো সারা দিন রাত রোমান্টিক মুভি আর বই পড়িস আমাকে একটু রোমান্টিকতা শিখিয়ে দে।
— দেখ ভালো হবে না কিন্তু ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিবো।
সোহান:- এই না না খবরদার এমন কাজ করিস নে।
— তাহলে চুপ করে আমার পাশে বসে পরো।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে।
— সোহান বসতেই আমি ওর পাশে বসলাম। নিরব রাত চারিদিক থেকে ঝিঁঝিঁপোকা ডেকে চলেছে, সোহানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে সে শব্দ শুনে চলেছি কারো মুখে কোন কথা নেই। কখনো কখনো নিরবতাও অনেক ভালো লাগে যেমনটা এখন আমার ভীষণ ভালো লাগছে। প্রিয় মানুষটির কাঁধে মাথা রেখে এভাবেইতো অনন্তকাল আমি কাটিয়ে দিতে চাই। সোহান তুমি কেন বুঝনা কত ভালোবাসি তোমাকে।
সোহান:- নিরবতা ভেঙে বলতে শুরু করলো, আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে মনে হয় বৃষ্টি নামবে ঘরের ভিতর যা ফুলটুসি।
— চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সত্যিই চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। তবুও সোহানের কাঁধে মাথা রেখে বললাম আসুক না বৃষ্টি থাকি না আরও কিছুটা সময় এই নিরলায়।
সোহান:- এই নিরব রাতে ঝুম বর্ষায় আজ মন হারাতে চায়। হোক না ঝড় তুফান, তবুও থাকবো দু’জন আজ নিরলায়।
— আরে বাহ তুমিতো কবি হয়ে গেলে।
সোহান:- হা হা হা চেষ্টা করছি আর কি, ভবিষৎ এ যদি কাজে লাগে।
— হুম হুম লাগবে লাগবে, আচ্ছা আরও কিছু শোনাও না।
সোহান:- কখনো কখনো কিছু কথা না বলা থাকাই ভালো, কখনো কখনো নিরবতার ভাষা জানতে না চাওয়াই ভালো। কখনো কখনো কিছু ভালোবাসার কথা না বলাই ভালো।
— আরে বাহ! তুমিতো দেখছি খুব রোমান্টিক হয়ে গেছো।
সোহান:- হয়েছে এবার যা ঘরে যা।
— আমি ফিরবো না ঘরে আমি থাকবো আজ বাহিরে, অজানা অনেক গল্প, না বলা অনেক কথা আজ শুনতে চাই। মুখ ফুটে চিৎকার করে বলতে চাই ভালোবাসি ভালোবাসি।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তুই চিৎকার করেই বলতে থাক, যদি তোর ডাক শুনে কেউ ছুটে আসে।
— চুপ একদম চুপ করে বসে থাকো কারো আসার দরকার নেই।
সোহান:- তুই কি আমাকে বৃষ্টিতে ভেজাবি?
— না বৃষ্টি আসতে এখনো অনেক সময় বাকি। দু’জন আবারো নিরবে বসে রইলাম হঠাৎ করেই বাতাস শুরু হতেই সোহান উঠে দাঁড়িয়ে হাত টান দিয়ে বলতে শুরু করলো আর এক মুহুর্তও এখানে না। তাড়াতাড়ি চল না হলে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। সোহানের পাশাপাশি হাঁটছি আর ভাবছি আজও সোহানকে বলতে পারলাম না, কিংবা ওর মুখ থেকে শুনতে পারলাম না ভালোবাসি শব্দটা। নিঃশব্দে হেঁটে চললাম ঘরের দরজার সামনে রেখে সোহান নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। আমি মুগ্ধ হয়ে অন্ধকারে সোহানের চলে যাওয়া দেখছি কয়েক পা হেঁটেই সোহান পেছনে ফিরে তাকিয়ে।
সোহান:- দারুণ মুহুর্ত উপহার দেবার জন্য তোকে ধন্যবাদ যদি কখনো সুযোগ হয় তবে আমিও তোকে ফিরিয়ে দিবো এমন একটি মুহুর্ত।
— বলেই সোহান আবার হাঁটা শুরু করলো, আমিও যে অপেক্ষা করছি তোমার সাথে প্রতিটা সুন্দর মুহুর্ত কাটানোর জন্য। ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই, আফরিন আপু বলতে শুরু করলো।
আফরিন:- কিরে কেমন কাটলো রোমান্টিক মুহুর্ত?
— কিসের রোমান্টিক মুহুর্ত?
আফরিন:- হয়েছে আর লুকাতে হবে না আমার কাছে, আমি তোর চেয়ে বয়সে বড় অতএব আমি অনেক কিছুই বুঝি।
— হয়েছে হয়েছে তোমার এতো কিছু বুঝতে হবে না, আর রোমান্টিক না ছাঁই, বৃষ্টি শুরু হলো বলে।
আফরিন:- হাসতে হাসতে আহা দু’জন বসে বৃষ্টিতে ভিজলেইতো পারতি।
— তুমিও না আপু কি সব বলো দাঁড়াও আকাশ ভাইয়ার কাছে বিচার দিতে হবে।
আফরিন: সত্যি বললেও দোষ তাহলে আর কি কিছুই বলা যাবে না।
— বিছানায় শুয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরে, কি করবো বলো এখনো ভালোবাসি বলতেই পারিনি, আর ঐ হাবলাটাও আমার মনের কথা বুঝে না।
আফরিন:- আরে বুঝে বুঝে হয়তো কোন কারণে বলতে সাহস পাচ্ছে না।
— ভালোবাসি বলার জন্য কি এমন লাগে? আর আমিতো অপরিচিত কেউ না।
আফরিন:- এটাইতো সমস্যা অপরিচিত হলে সহজেই হয়তো বলে দিতে পারতো। কিন্তু খুব কাছের মানুষকে খুব সহজে কিছু বলা যায় নারে।
— দু’জন গল্প করতে করতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। রাত গভীর থেকে গভীর হতে শুরু করলো। এক সময় দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো। গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পরলাম।
— খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো, আমি ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম, আফরিন আপু তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। দরজা খুলে আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা সোহানের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। তখনো ঠিকমত অন্ধকার কাটেনি। যদিও ফযরের আজান অনেক আগেই দিয়েছে কিন্তু মেঘলা আকাশ তাই চারিদিক অন্ধকার। নিঃশব্দে এগিয়ে যাচ্ছি যদি কেউ দেখে ফেলে তবে কি জবাব দিবো। সোহানের ঘরের সামনে এসে দরজায় হাল্কা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। সোহান রাতে দরজা না লাগিয়েই ঘুমিয়েছে, আমি চুপ করে রুমে ঢুকলাম। আরামে ঘুমাচ্ছে সোহান।
আস্তে আস্তে কয়েকবার ডাক দিলাম উঠলো না।
ঘুমন্ত অবস্থায় সোহানকে বেশ বোকা বোকা লাগে।
মাঝে মাঝেই ওকে সকালে ডাক দিতে এসে আমি একা একাই প্রচণ্ড হাসি। আর একটু জোড়ে ডাক দিতেই সোহান লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানার উপর।
— সোহান চোখ ঢলতে ঢলতে কিরে তুই এতো ভোরে আমার রুমে কেন?
— পাশে বসতে বসতে চলো না বাহির থেকে ঘুরে আসি।
সোহান:- তুই যাতো যা আমার ঘুম হয়নি ভালো আমি ঘুমাবো।
— তুমি যাবা নাকি পানি এনে ঢেলে দিবো।
সোহান:- খুব বেড়ে গেছিস কিন্তু যা বলছি।
— না যাবো না, এখুনি তোমাকে উঠাচ্ছি বলেই ওয়াশ রুমের দিকে দৌড়ে যেয়ে মগে করে পানি নিয়ে এসে যাবে নাকি ভিজিয়ে দিবো?
সোহান:- বলছি এখান থেকে যা পানি দিলে ভালো হবে না।
— সব ভালো মন্দ তুমি একাই বুঝ আমরা কিছু বুঝি না নাকি?
সোহান:- তুই সব কিছু এক লাইন বেশী বুঝিস এখন রুম থেকে যা নয়তো..
— নয়তো কি হ্যাঁ?
সোহান:- কিছু নাতো তুই যা বলছি মানে চলে যা।
— আমি না বলছি মানে তোমাকে না নিয়ে যাবো না বলেই পানির মগটা সোহানের দিকে এগিয়ে ধরতেই। সোহান বাধা দিতে চেষ্টা করলো। হাত ধরে টানাটানির এক পর্যায় দু’জনের শরীরের পানি ছিটে লাগলো। টানাটানির এক পর্যায় আমি বিছানায় পরে গেলাম। অমনি সোহান আমার দু’হাত চেঁপে ধরলো।
— উফ ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি,
সোহান:- দু’হাত আরও জোড়ে চেঁপে ধরে না ছাড়ছি না। তোকে আজ
— ছাড়বে না কি করবে।
সোহান:- একটা হাত ছেড়ে দিয়ে চুলের মাঝে হাত রেখে ঠোঁটটা নিচে নামিয়ে ঠোঁটের সাথে চেঁপে ধরলো।
চলবে..