শেষ বিকেলের রোদ – ৮ম পর্ব
©শাহরিয়ার
–কথাটা বলতে বলতেই ধপাস করে বারান্দায় কারো পরে যাবার শব্দ হলো। আমরা একজন আরেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে সেদিকে দৌড় শুরু করলাম।
— দৌড়ে বেড় হতেই দেখা গেলো হবু দুলাভাই মাটিতে পরে আছে। এমন অবস্থা দেখে হাসি চাপলেও হাসতে পারছি না। অনেক কষ্টে তা নিজের ভিতর চেঁপে রাখলাম। কিন্তু আফরিন আপু তা পারলো না হেসে দিলো। এমন সময় সোহান বের হয়ে কেমন অসভ্যরে তোরা? একজন মানুষ ভিজে মাটিতে পরে আছে আর তোরা হাসতেছিস? বলেই হাত বাড়িয়ে তাকে টেনে তুললো।
আফরিন:- হাসি থামিয়ে ভাইয়া কি করবো বলো, আচ্ছা পরিচয় হয়ে নেন দু’জনে।
সোহান:- ও হ্যাঁ আমি সোহান আফরিনের বড় ভাই।
–আমি আকাশ।
আফরিন– ভাইয়া উনি হলো এ বাড়ির হবু জামাই।
সোহান– তা ভাই তুমি কি আর দেশে কোন মেয়ে পেলে না? এই ফাজিল মেয়েকেই তোমার পছন্দ হলো। দেখছো এদের কি অবস্থা তুমি মাটিতে পরে আছো আর ওরা হেসে চলেছে।
— একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবে না। হেসে চলেছি মানে কি? এমন কাণ্ড ঘটলে যে কেউ হাসবে। আর সে যদি হয় দুলাভাই তাহলেতো কথাই নেই। বলেই হু হু করে হাসতে শুরু করলাম।
— এমন সময় ফুপু এসে কি শুরু করলি তোরা সরতো দেখি ওকে ঘরে আসতে দে। যেয়ে জামা কাপড় চেঞ্জ করে নিক।
— আকাশ রুমে ঢুকে জামা চেঞ্জ করে নতুন একটা লুঙ্গী আর পাঞ্জাবী পরলো। ততক্ষণে নাস্তা রেডি করে ফুপু সবাইকে ডাক দিলো।
— সবাই এক সাথে নাস্তা খেতে বসেছি, ফুপু ফুপা কোথায়?
ফুপু:- তোর ফুপা দুপুরে বের হইছে এখনো আসেনি।
আফরিন:- পরিচয় করিয়ে দিলো ও হচ্ছে ইকরা আমার মামাতো বোন আর ভাইয়ার সাথেতো পরিচয় হয়েছে আপনার। আর ইকরা আপনাকে দেখতে চেয়েছিলো তাই আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এই বৃষ্টির ভিতর আপনি আসবেন ভাবতে পারিনি।
সোহান:- হবু শালি দেখার আবদার করেছে তাই ছুটে এসেছে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। কি ঠিক বলছি না আকাশ।
— হ্যাঁ ভাইয়া, আসলে এমন একটা পরিস্থিতে পরতে হবে তা ভাবতে পারিনি।
সোহান:- আরে কোন সমস্যা নেই বরং ভালোই হলো, তোমাকে দেখতে পেলাম। আর একা একা আমারও বোরিং লাগতো এই ফুলটুসির বকবক শুনতে হতো।
— বড় বড় চোখ করে সোহানের দিকে তাকিয়ে তোমাকে কতবার বলছি আমাকে ফুলটুসি বলবা না।
আকাশ:- ভাইয়া নামটাতো খুব সুন্দর। আফরিনের ও এমন একটা নাম দিলে কেমন হয়?
সোহান:- হু হু খুবি ভালো হয়। ওরতো একটা নাম আছে ছোট বেলায় সবাই সে নামে ডাকতাম মাথা মোটা।
আফরিন:- ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
আকাশ:- বাহ বেশ সুন্দর কিন্তু নামটা।
আফরিন:- আচ্ছা শুনেন আজ মনে হয় আর বৃষ্টি থামবে না। এখানেই থেকে যান আপনি।
আকাশ:- এই না না কি বলো মানুষ কি মনে করবে?
সোহান:- কিছুই মনে করবে না। কে আসবে দেখতে তোমাকে এখানে, আর সব চেয়ে বড় কথা বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাণ্ডা জ্বর এসে যেতে পারে। তুমি বরং বাড়িতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দাও। আজ বাড়িতে ফিরবে না এখানেই থাকবে।
— হ্যাঁ দুলাভাই বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে দেন, শ্বশুড় বাড়ি মধুর হাড়ি সেই সাথে আছে সুন্দরি শালিকা।
সোহান:- হো হো সুন্দরি না পেত্নী ফুলটুসি।
আফরিন:- আচ্ছা ভাইয়া তোমরা সব সময় এভাবে ঝগড়ে লেগে থাকো কেন?
সোহান:- ঝগড়া কার সাথে আমার খেয়ে দেয়ে কি আর কোন কাজ নেই ওর সাথে ঝগড়া করতে যাবো।
— তোমার কাজ তো ঐ একটাই আমার সাথে ঝগড়া করা।
সোহান:- আচ্ছা যা ঝগড়া করবো না। আজ সারা দিন তোর হাতের চা খাওয়া হয়নি যা সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয়।
ফুপু:- সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসে লাগবে না, আমি নিয়ে এসেছি সবার জন্য চা।
নাস্তার পর্ব শেষ করে সকলে মিলে আফরিন আপুর রুমে চলে আসলাম। ঝির ঝির বৃষ্টি সাথে প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে। থেকে থেকে বৃষ্টির শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে এক রকম সুন্দর অনুভুতির সৃষ্টি হচ্ছে। সবাই মিলে গল্প করছি, নানান রকম গল্প। গল্পের মাঝে আমি মনোযোগি হতে পারছি না। আমার ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু এই রাত করে তা সম্ভব নয়। এদিকে সোহান নানান রকম হাসির কথা বলেই চলেছে।
সোহান:- এই ফুলটুসি ফুলটুসি, সোহানের ডাকে বাস্তবতায় ফিরে এসে হ্যাঁ বলো।
সোহান:- আমরা সবাই গল্প করছি তুই কোথায় হারিয়ে গেলি? কোন ভাবনায় কোন সে মানু্ষকে সঙ্গে নিয়ে?
কারো সঙেই না আমারতো ইচ্ছে করতাছে বৃষ্টিতে ভিজতে।
সোহান:- একা একা বৃষ্টিতে ভিজবি কেন বিয়ে করিয়ে দেই তাকে সঙে নিয়ে ভিজবি। প্রয়োজনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হানিমুনে চলে যাবি।
আরে বাহ তুমিতো আমার মনের কথা বলছো। আমারও খুব ইচ্ছে আমার যেদিন বিয়ে হবে সেদিন ঝুম বৃষ্টি হবে। সারা রাত বৃষ্টি হবে। আমি গভীর রাতে বরকে ডেকে বলবো চলো বৃষ্টিতে ভিজবো। আজ দু’জনে এক সাথে বৃষ্টি বিলাস করবো।
সোহান:- হাসতে হাসতে আর বেচারা বাসর ঘরে নতুন বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে মনের সুখে হার্ট ফেইল করবে।
তোমার মুখে কিছুই আটকে না?
সোহান:- আরে আমি দুষ্টমি করলাম। আচ্ছা চল তোকে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে নিয়ে আসি।
থাক এখন আমার আর ভিজতে হবে না। তবে কালকে দিনে বৃষ্টিতে ভিজবো নিশ্চিৎ থাকো।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে, নানান রকম গল্প করতে করতে রাত বাড়তেই থাকলো। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফুপা বাড়িতে ঢুকলো ভিজতে ভিজতে। ফুপু ফোন করে দিয়েছিলো ফুপাকে আকাশ ভাইয়া আমাদের বাসায় আছে। ফুপা আসার সময় আকাশ ভাইয়ার জন্য টিশার্ট আর প্যান্ট নিয়ে আসছে। সাথে সবার জন্য মিষ্টি দই নিয়ে এসেছে। সবাই এক সাথে রাতের খাবার খাওয়ার পর ফুপু দই বের করে দিলো।
খাওয়া শেষ করে যে যার মত নিজেদের রুমে চলে আসলাম। আফরিন আর আমি শুয়ে শুয়ে গল্প করতাছি। আচ্ছা আপু তোমরা কি একজন আরেক জনকে আগে থেকে চিনতে?
আফরিন:- না কেন?
এমনি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা আপু তুমি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?
আফরিন:- আরে না, ঐসব করার সময় কোথায়। আমারা গ্রামের মানুষ পরিবারের পছন্দেই বেশীর ভাগ বিয়ে হয়।
যাই বলো আপু আকাশ ভাইয়া কিন্তু অনেক সুন্দর। তোমাদের দু’জনকে বেশ মানাবে এক সাথে।
আফরিন:- তাই না, আচ্ছা এটা বল তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?
সত্যি বলতে একজনকে অনেক অনেক ভালোবাসি, কিন্তু কখনো বলতে পারিনি আর বাকি জীবনেও বলতে পারবো কিনা জানি না।
আফরিন:- কেন বলতে পারবি না?
কারণ আমি যাকে ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে কিনা তাতো আমি জানি না। হয়তো আমার ভালোবাসাটা এত তরফাই হয়ে গেছে। আর একটা মেয়েতো একটা ছেলেকে যেয়ে বলতে পারেনা যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আফরিন:- আচ্ছা ছেলেটা কেরে?
–আছে একজন যদি কোন দিন আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় তবে জানতে পারবে।
আফরিন:- শুধু জানলে চলবে? তাকে দেখবো আমার শ্বশুড় বাড়িতে নিয়ে এসে বেড়িয়ে যাবি। আমার বোন যে ছেলেকে ভালোবাসে সে ছেলে কতটা ভাগ্যবান তা দেখতে হবে না।
— সে ভাগ্যবান নাগো আপু আমি ভাগ্যবতী হবো তার ভালোবাসা পেলে, বলেই আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। অনেক রাত পর্যন্ত নানান বিষয়ে দু’জন গল্প করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম।
— খুব ভোরে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেলো, চোখ মেলে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি সোহান, ফোন রিসিভ করতেই সোহান বলতে শুরু করলো।
সোহান:- এই ফুলটুসি তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি উঠে বাহিরে আয় আমি দাঁড়িয়ে আছি।
— কয়টা বাজে এতো ভোরে উঠবো।
সোহান:- ঠিক আছে তুই শুয়ে থাক আমি এই সুন্দর প্রকৃতি উপভোগ করি।
— এই না না থাকো আমি আসছি, বলেই ফোনটা কেটে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পরলাম। উড়নাটা গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম সোহান উঠানের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সেদিকে এগিয়ে যেতেই সোহান আমার হাত ধরে টানতে টানতে পুকুরের দিকে নিয়ে যেতে বলতে শুরু করলো।
সোহান:- শোন নতুন জামাই এসেছে, বিয়ে হয়নি হবে, দু’জন একটু গল্প করবে নিজেদের মাঝে তাতো হতে দিচ্ছিস না। বোনের সাথে সব সময় আঠার মত লেগে আছিস। এতো বড় মেয়ে কবে তোর একটু বুদ্ধি হবে বলতো?
— ওহ আমি আঠার মতো লেগে আছি আপুর সাথে? সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে কি করে আপুকে আমি একা ছাড়বো? আর আপুই কি আমাকে রেখে আকাশ ভাইয়ার সাথে গল্প করবে?
সোহান:- হয়েছে চুপ কর এতো জোড়ে কথা বললে বাড়ির সকলে জেগে যাবে। ঐদিকে তাকা বলে পুকুরেে দিকে ইশারা করলো।
— মুগ্ধ হয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি, পুকুরের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে হিজল ফুল। এ এক অন্য রকম সুন্দর অনুভুতি এ এক অন্য রকম সুন্দর দৃশ্য। দু’জনে এক সাথে পাকা বাধাই করা ঘাটে বসলাম।
সোহান:- দারুণ না দৃশ্যটা।
— হুম অসাধারণ সুন্দর তুমি বসো আমি মুখটা একটা ধুয়ে নেই।
সোহান:- সাবধানে পিছিল থাকতে পারে সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে।
— কিছু হবে না তুমি চিন্তা করো না। বলেই ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম।
চলবে..