শেষ বিকেলের আলো পর্ব-০৫

0
637

#শেষ_বিকেলের_আলো(ভ্যাম্পায়ার)
#পর্ব_৫
#লেখক_দিগন্ত
বৈশাখী খুব কৌতুহলের সাথে চাইনিজ মহিলাটির কাছে জানতে চায়,
-“বৈশাখী রেইন রহস্য কি?”

চাইনিজ মহিলা স্তব্ধ হয়ে যান। বৈশাখীর দিকে আরচোখে তাকিয়ে বলেন,
-“তুমি জানতে চাও? নিজের অতীত ভুলে গেছ তুমি। এখন সেই অতীত মনে করে কষ্ট পেতে চাও।”

-“আমার অতীত মানে?”

-“আজ থেকে ১৫০ বছর আগে, ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজা ছিলেন লিন। তার ছিল দুই স্ত্রী রিনেই এবং ফুল। রিনেই খুব ভালো ছিল, তার মনে কোন লোভ ছিল না, রিনেইয়ের একমাত্র ছেলে রেইন, অপরদিকে ফুল ছিল হিংসুটে আর কুটিল, ফুলেরও ছিল এক ছেলে যার নাম ফরেস্ট।”

-“রেইন!”

-“‘হ্যাঁ, আর রেইনের প্রেয়সী কে ছিল জানো?”

-“কে?”

-“তুমি!”

মহিলাটির কথায় চমকে ওঠে বৈশাখী৷ মহিলা একটি সোনার চামচ ছুইয়ে দেয় বৈশাখীর কপালে। বৈশাখী ডুবে যায় তার অতীত রহস্যে।

~~বৈশাখী রেইন~~~
ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে খুব সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতো সবাই। তখন কেউ মানুষের রক্ত পান করত না,সাধারণ বাদুড়দের মতো ফল কিংবা ফলের রস খেয়েই জীবন অতিবাহিত করত।

-“বৈশাখী ওদিকে যাস না বোন আমার শোন আমার কথা।”

সুজির ডাকে বৈশাখীকে বড় গাছের ডাল থেকে নিচে নেমে আসে। সুজি বৈশাখীর ঘাম মুছিয়ে দিয়ে বলে,
-“এভাবে সারাদিন ছোটাছুটি করলে চলে? চল আরাম করে নিবি।”

-“ভ্যাম্পায়াররা তো ক্লান্ত হয়না আপু তাহলে বৈশাখী কেন ক্লান্ত হবে? আমি তো এটা বুঝতে পারছি না ও এখনো উড়তে পারে না কেন। আমরা সবাই উড়তে পারি শুধু বৈশাখীই…”

হেলেনার কথা শেষ হওয়ার আগেই সুজি তাকে থামিয়ে দেয়। ইশারা করে বলে চুপ থাকতে। বৈশাখী দৌড়ে চলে আসে হেলেনার সামনে। হেলেনাকে জোরপূর্বক আলিঙ্গন করে বলে,
-“তুমি দিনদিন মোটা হয়ে যাচ্ছ প্রিয় হেলেনা আপু। যখন থেকে উড়তে শিখেছ তখন থেকেই তুমি অলসতার কারণে এমন হয়ে গেছ।”

হেলেনা খুব রেগে যায় বৈশাখীর কথায়। তেড়ে যায় তার দিকে। দুই বোনের এমন খুনশুটি দেখে সুজি মাথায় হাত দেয়। আর বলে,
-“তোদের এই ঝগড়া আর কতদিন চলবে? যত বড় হচ্ছিস তোদের বাচ্চামি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

হেলেনা বৈশাখীর পেছনে দৌড়াচ্ছে। বৈশাখী নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়ে চলেছে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে ধরে বৈশাখী। তখনই কেউ তার হাতটা ধরে ফেলে। বৈশাখী বলতে থাকে,
-“এই কে রে আমায় এভাবে ধাক্কা দিলি, আমি ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের মন্ত্রী জিয়ানের মেয়ে। আমার সাথে এই অভদ্ররামি….”

বৈশাখীর তোতা মুখ ভোতা হয়ে যায় রেইনকে দেখে। তোতলাতে তোতলাতে বলে,
-“মার্জনা করবেন রাজপুত্র আসলে…”

রেইন ছেড়ে দেয় বৈশাখীর হাত। যার ফলে মাটিতে পড়ে যায় সে। কোমরে খুব ব্যাথা পায়। হেলেনা দাঁড়িয়ে দেখছিল সব। সে দৌড়ে এসে তুলে নেয় বৈশাখীকে।

রেইন রাগী চোখে তাদের দিকে তাকায়। হেলেনা বৈশাখীকে বকা দেয়,
-“প্রতিদিন কোন না ঝামেলা না করে তোর শান্তি হয়না তাইনা? এখন যদি রাজপুত্র রেগে যায় কি হবে বুঝতে পারছিস? আমরা তোকে কতবার সাবধান করি আর তুই…”

-“এইখানে তোমরা কোন সাহসে এসেছ? জানোনা আজ এখানে দেশ বিদেশের অনেক অতিথি আসবে। মেয়েদের আজ এখানে আসা বারণ সেটা জানোনা?”

রেইনের কড়া ধমকে হেলেনা, বৈশাখী দুজনেই ভয়ে পায়। বৈশাখী এমনিতে খুব সাহসী। তবে রেইন যদি কোন ভয়ানক শাস্তি দেয় সেটাই ভাবছে।

একটু পরেই বৈশাখীর মনে হলো সে কেন ভয় করবে? সে তো ইচ্ছে করে আসেনি। তাই এবার গলার স্বর উঁচু করে বলে,
-“আপনি এভাবে আমাদের সাথে কথা বলতে পারেন না রাজপুত্র রেইন। আমরা ভুল করে এখানে চলে এসেছি, কোন অপরাধ করিনি।”

রেইন রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। জোরে চেচিয়ে বলে,
-“এত বড় সাহস তুমি কোথায় পেলে? একে তো রাজার হুকুম অমান্য করে এখানে এসেছ তার উপর আমার মুখের উপর কথা বলছ। জানো এর শাস্তি কত ভয়ানক হতে পারে?”

রেইনের হুমকিতে ভয় পেয়ে যায় হেলেনা। বৈশাখীর কোন ভাবান্তর নেই। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
-“আমি ভয় পাই না। যা শাস্তি দেবেন দিন।”

বৈশাখীর এই দুঃসাহসিকতায় রেইনের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। হেলেনা রেইনের মুখ দেখেই বিপদ আন্দাজ করে তাই বৈশাখীকে টেনে নিয়ে যেতে ধরে। রেইন তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। বৈশাখীকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর তাকে নিয়ে আকাশে উড়ান দেয়। বৈশাখীর উচ্চতায় ভয় লাগে। সে প্রশ্ন করে,
-“এএভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? আমায় যেতে দিন।”

-“চুপ…একদম চুপ। অনেক সাহস বেড়েছে তোমার তাইনা? আজ রাজাই তোমার বিচার করবেন।”

বৈশাখী আর কোন পথ বা সুযোগ খুঁজে পায়না নিজেকে রক্ষা করার। রেইন নির্দয়ের মতো তাকে নিয়ে আসে রাজসভায়। ভ্যাম্পায়ারদের রাজা লিন তখন আজ রাতে আয়োজিত বিশাল মিলনমেলার ব্যাপারে সবার সাথে আলোচনা করছিল। তার মাঝে রেইনের এভাবে বৈশাখীকে ধরে নিয়ে আসতে দেখে বলে,
-“কি হয়েছে রেইন? তুমি ওকে কেন নিয়ে এসেছ?”

-“মহামান্য রাজা এই মেয়েটা আপনার নিয়ম অমান্য করে অনুষ্ঠানের ওখানে এসেছিল। তাছাড়া আমার মুখের উপর তর্ক করেছে। আপনি মেয়েটিকে যথাযথ শাস্তি দিন।”

রাজা লিনের দিকে অসহায়ভাবে তাকায় বৈশাখী। লিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান বৈশাখীর দিকে। তারপর মন্ত্রী জিয়ানকে বলেন,
-“আপনার মেয়ের অপকর্মের মাত্রা তো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তো আর ওকে বেশিদিন ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে রাখা যাবে না।”

মন্ত্রী জিয়ান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেন। বৈশাখীর খুব খারাপ লাগে নিজের বাবাকে এইরকম অবস্থায় দেখে। মনে মনে রেইন আর লিনকে অনেক গালি দেয়। তন্মধ্যে লিন বলেন,
-“জিয়ান তুমি আমার বিশ্বস্ত মন্ত্রী। তাই তুমি যদি বলো তাহলে তোমার মেয়েকে আমি কি ক্ষমা করে দেবো।”

জিয়ান বলেন,
-“আমি কিছু বলবোনা মহারাজ। আপনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই হবে।”

-“তোমার কি কিছু বলার আছে বৈশাখী?”(লিন)

-“হ্যাঁ মহামান্য রাজা। আমি বলতে চাই, প্রথমত আমি আপনার আদেশ অমান্য করিনি, আপনি বলেছিলেন অনুষ্ঠানে যখন দেশ বিদেশের মানুষের সমাগম ঘটবে তখন যেন কোন মেয়ে ওখানে না থাকে। আর অনুষ্ঠানে তো এখনো লোক সমাগম হইনি।”

লিন হেসে ফেলেন। এই মেয়েটা এর আগেও অনেক বার তার কাছে বিচারের উদ্দ্যেশ্যে নিয়ে এসেছিল রেইন। কিন্তু আজ অব্দি বারংবার এই মেয়ে নিজের বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে রক্ষা পেয়েছে।

-“তাহলে তো তোমাকে কোন শাস্তি পেতে হচ্ছেনা। যাও এখন তুমি।”

রেইন ক্ষিপ্ত হয়। সে বলে,
-“এই মেয়েটা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজপুত্রের সাথে তর্ক করেছে। এরজন্য তো শাস্তি প্রাপ্ত।”

-“আচ্ছা তুমি বলো কি শাস্তি দিতে চাও ওকে।”

-“এই মেয়েটাকে আজকের দিনের জন্য আমার দাসী হয়ে থাকতে হবে। আমার সকল আদেশ ওকে মান্য করতে হবে।”

বৈশাখী ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। রেইন বৈশাখীর দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি দেয়। লিন বলেন,
-“আচ্ছা যাও তাই হবে।”

যুবরাজ ফরেস্ট এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। এবার বলে ওঠে,
-“রেইন তুমি একটু বেশি নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছো না। এভাবে ওকে হয়রান করছ কেন?”

-“না ভাইয়া আমি ঠিকই করেছি। এই মেয়েটাকে ভুগতেই হবে।”

ফরেস্ট আর কিছু বলে না। বরাবরই শান্তশিষ্ট সে। তবে বৈশাখীর জন্য তার মায়া হয়। বৈশাখী যে তার অনেক সাহায্য করেছে এই জীবনে, অথচ সে মেয়েটার এই বিপদের দিনে কোন সাহায্য করতে পারছে না। এরমাঝে বৈশাখী একটা কাতর আবেদন জানায়,
-“মহামান্য রাজা, আমাকে তো আজ সারাদিন রাজপুত্র রেইনের দাসী হয়ে থাকতে হবে। তার আগে আমি একটু কিছু সময় চাইছি।”

ফরেস্টও বৈশাখীর কথায় সায় দিয়ে বলে,
-“আব্বু আমার মনে হয় বৈশাখীকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। ”

-“ঠিক আছে, যাও তোমাকে ঘন্টাখানেক সময় দিলাম।”(লিন)

বৈশাখী খুশি হয়। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে ফরেস্টের দিকে তাকায়। তারপর চলে আসে বাইরে। ফরেস্টের দেওয়া চিঠিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। কিছুক্ষণ আগে সুকৌশলে চিঠিটা দিয়েছে ফরেস্ট। জিয়ান এসে বৈশাখীকে বলে,
-“তোকে আর ভ্যাম্পায়ার করতে পারলাম না।”

-“তুমি চিন্তা করো না বাবা। আমি আর তোমার মাথা নিচু হতে দেব না।”

মেয়ের কথায় জিয়ান হেসে ফেলে। চাইলেও বৈশাখীর উপর রাগ করে থাকতে পারেন না। অন্য মেয়েদের থেকে বেশিই ভালোবাসেন তিনি বৈশাখীকে।

বৈশাখীকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন তিনি৷ হঠাৎ করে জিয়ানের স্ত্রী হৃদি ছুটে আসেন। বৈশাখীকে দেখে ক্রোধে আগুন হয়ে যান। মনে মনে বলেন,
-“এই মানুষের মেয়েটার জন্য না কোনদিন আমরা বিপদে পড়ি।”
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে