#শেষ বিকালের আলো
#পর্ব_০৪
#নিশাত_আনজুম
চাচাতো বোন রিমার বিয়ে থেকে এসে সেতু কেমন যেন হয়ে গেছে। বিয়ের দিন সন্ধ্যায় চলে আসার সময় হঠাৎ করে সেতু বললো সে মায়ের সাথে থাকবে একদিন। সেই একদিন শেষ করে চারদিন পর এসেছে সেতু। ঐ চারদিনে দুইবার ফোন করেছে মাত্র। অথচ মেয়েটা বিয়ের পর সংসার ছেড়ে, হামিদকে ছাড়া একদিনও কোথাও থাকেনি। হামিদ রেডি হতে হতে এসব ভাবছিল আর সেতুকে পরখ করছিল। সেতু আলমারির কাপড় ভাজ করছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। অথচ অন্যদিন সেতু এসময় রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকে ঘরের ছেলেদের জন্য সকালের নাস্তা বানাতে আর অফিসের লাঞ্চের জন্য খাবার রেডি করতে। রাগে হামিদ কপাল কুঁচকে ফেললো।
” আমার বের হবার সময় হয়েছে আর তুমি এখানে বসে গান গাইছো! নাস্তা দিচ্ছো না কেন? আমি যে অফিসে যাবো সেটা ভুলে গেলে না কি!”
” গান গাওয়ার সাথে সাথে যে কাপড় ভাজ করছি সেটা দেখছেন না? না না গান গাওয়ার সাথে সাথে না। কাপড় ভাজ করার সাথে সাথে গান গাইছি।” সেতু কথাটা বলে উপরের তাকে ভাজ করা কাপড়গুলো রাখলো।
” আর নাস্তা তো সেই কখন টেবিলে সাজিয়ে রেখেছি। টিফিন বক্সটাও টেবিলে রাখা। যাওয়ার সময় মনে করে নিবেন। কাপড়গুলো গুছাতে হবে আমার। রিমার বিয়ে থেকে এসে দেখি অনেক কাজ জমে আছে। ” কাজের খুব ব্যস্ততা দেখালো সে।
হামিদ কিছু না বলে ডাইনিং রুমে চলে গেল। অফিসের দেরি হয়ে যাবে। হামিদ খেতে বসে দেখলো পানির জগ নেই।
” খেতে বসেছি আর পানি নেই। এখন কী আমি নাস্তা করে টিউবওয়েলে যাবো পানি খেতে? সেতু!” চিল্লিয়ে বললো হামিদ।
সেতু তার রুমের দরজার সামনে এসে মাথা বের করে বললো, পাশেই আছে গ্লাস ভর্তি পানি। একটু এদিক ওদিক তো দেখবেন!”
হামিদ পাশে স্টিলের গ্লাসটা দেখতে পেল। এই গ্লাসটাতে করেই তাকে পানি দেয় সেতু সবসময়। হাত বাঁকা করে জগ থেকে পানি ঢেলে খেতে হয় না। আসলে সে সেতুকে কথা শোনাতে চেয়েছে। হামিদ বেরিয়ে যাওয়ার সময় সেতুকে বললো, ” আমার মোবাইলটা দাও। বের হচ্ছি আমি।”
সেতু রুম থেকে উঁচু গলায় বললো, ” বাবু পটি করেছে। ওকে পরিষ্কার করছি। আপনি এসে নিয়ে যান।”
প্রতিদিনের মতো সেতু আজ সব কাজ ফেলে হামিদকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়নি। হামিদ যাওয়ার পর সে টেবিল গুছিয়ে শাশুড়ীর রুমে গেল। পাশের বাড়ির এক মহিলা এসেছিল। তার সাথে অনেকক্ষণ চিল্লাফাল্লা করেছেন। কারণ কী সেতু জানে না, জানার চেষ্টাও করলো না। সেতু যখন শাশুড়ির কাছে গেল তখনও তিনি বকে যাচ্ছেন মহিলাকে। সেতু গিয়ে বললো, ” মা, এদিকে আসুন। আপনার মাথায় তেল মালিশ করে দেই। নবরত্ন তেল দিলে মাথা ঠান্ডা হবে।”
” মশকরা করো আমার সাথে হ্যা!”
রুবিনা গর্জে উঠলো।
” মশকরা কেন করবো? আপনার সাথে কি আমার মশকারারা সম্পর্ক? আপনার ভালোর জন্য বলছি।” বলতে বলতে সে রুবিনার মাথার তালুতে তেল ঢেলে দিলো। রুবিনাকে কিছু বলতে না দিয়েই সে আবার বললো, ” চোখ বন্ধ করে একটু শান্ত হয়ে বসুন মা। দেখবেন ভালো লাগবে।”
রুবিনা কিছু বলতে চেয়েও বললেন না। সেতুর হাতের মালিশে চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল। চিল্লাতে চিল্লাতে মাথাটা সত্যিই ধরেছে তার। কিছুক্ষণ পর সেতুর মনে হলো রুবিনা বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। নিঃশব্দে হেসে উঠলো সে। শাশুড়ির সাথে তার বরাবরই দূরত্ব ছিল। দুজনের কথা হয় মেপে মেপে। শাশুড়ী রাগী হওয়ায় সেতুও কখনো দুয়েক কথা বলে গল্প পাতানোর চেষ্টা করেনি। এসব ভাবছিল তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। হামিদ ফোন করেছে। লাঞ্চের সময় বক্স খুলে খাবার দেখে হামিদের মাথা খারাপ হলো।
” কী খাবার দিয়েছো তুমি! ভাজা মাছ দিয়ে শুকনা শুকনা ভাত আমি খেতে পারবো? ডাল না হলে আমি ভাত খেতে পারি না সেটা মনে ছিল না তোমার? ”
” আমি কী করবো? আপনাকে কয়বার বলেছি মসুরের ডাল প্রায় শেষ হয়ে গেছে, কিনে আনুন! কিনে না আনলে আমি কোত্থেকে রাঁধবো?
হামিদের মনে পড়লো সেতু কয়েকবার বলেছিল, ম্যাসেজও দিয়েছিল। ডাল নিয়ে যেতে সে ভুলে গেছে। এমন অনেক কিছুই তো আনতে ভুলে যায় সে। তারপরও কীভাবে যেনো সেতু ম্যানেজ করে নেয়। না পারলে বারবার আফসোস করে। আর আজ কী করেছে!
” ও নাহয় ভুলে গেছে। তুমি তোমার শ্বশুররে বলতে পারোনি?”
সেতু চমকে গেল। শাশুড়ী এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরেছিল নাকি!
” বাবাকে বলেছিলাম তো। বাবা মুগডাল নিয়ে এসেছে।”
রুবিনা এবার নিজের স্বামীকে বকতে শুরু করলেন। এতো বছর সংসার করেও ব্যাটাকে মসুরের ডাল আর মুগ ডাল চেনাতে পারলো না।
চলবে….