#শেষ_পরিণতি
৯ম পর্ব
___________________________
দরজা খোলার শব্দে নীলিমা নড়েচড়ে বসে।
প্লেটে করে খাবার নিয়ে একটা লোক প্রবেশ করে ভেতরে।
খাবার দেখে নীলিমার ক্ষুধা লেগে গেলেও অবাক হয় আজ একজনকে আসতে দেখে।
এ পর্যন্ত রুমে যখনই কেউ এসেছে দলবদ্ধ হয়ে এসেছে। আজ একজনকে আসতে দেখে নীলিমার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। মনে মনে নীলিমা ভাবে, এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
এই সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলে কখনোই এখান থেকে বের হওয়ার সম্ভব হবে না।
নীলিমা বাথরুমে যাওয়ার নাম করে বাথরুমের সামনে ইচ্ছে করেই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার ভাণ করে।
নীলিমাকে পড়ে থাকতে দেখে লোকটা কয়েকবার উঁচু গলায় ডাক দেয়।
কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পড়ে থাকা নীলিমার পাশে গিয়ে কয়েকবার ধাক্কা দেয়। তবুও কোনো সাড়াশব্দ পায় না তার।
দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় লোকটি। সে পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করতে যাবে, তখনই নীলিমা থাবা দিয়ে ফোনটা কেঁড়ে নেয়।
লোকটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে ধাক্কা দিয়ে বাথরুমের ভেতরে ফেলে দিয়ে বাথরুমের দরজা বাহির থেকে লক করে দেয়।
বাসাটার সব দরজা ভালোভাবে আঁটকে দেয় নীলিমা, যাতে করে লোকটার চিৎকারের শব্দ বাইরে না যায়।
অতি সন্তর্পণে বেরিয়ে আসে সেই বাসা থেকে।
শরীরের মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা ও পেটে ক্ষুধা নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না নীলিমা।
কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে কেটে পড়তে হবে।
সুইচড অফ করে হাত থেকে ফোনটা ছুড়ে ফেলে দেয় ডাস্টবিনে। এটা সাথে রাখা বিপদজনক।
শরীরের সব শক্তি জুগিয়ে নীলিমা দৌঁড়ানোর চেষ্টা করে।
ছুটতে ছুটতে একটা বাস-স্টেশনের কাছে এসে দাঁড়ায়। ক্ষুধার যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছে না সে।
কাছে একটা টাকাও নেই যে দোকান থেকে কিছু কিনে খাবে।
কিন্তু কিছু না খেলে এক পা চলাও সম্ভব না।
নীলিমা স্টেশনের চারপাশে কিছু ফলের দোকান দেখতে পায়।
ওড়না দিয়ে মুখটা একটু ঢেকে ফলের দোকানের পেছন থেকে কয়েকটা অর্ধ পচা ফল তুলে নেয়।
সেগুলো খেয়ে একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
পৃথিবীতে ক্ষুধা কি জিনিস, অভাবে না পড়লে মানুষ কখনোই বুঝতে পারে না।
এক একটা খাদ্য যে সৃষ্টিকর্তার কতো বড় নেয়ামত সেটা হয়ত এই পরিস্থিতিতে না আসলে নীলিমা কখনোই বুঝতো না।
তবে, পৃথিবীর সব মানুষের একবার হলেও এমন পরিস্থিতিতে পরা উচিৎ। তাহলেই সবাই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির মুল্য দিতে বুঝবে।
অহেতুক অপচয় থেকে তখন প্রতিটা মানুষ সচেতন হয়ে যাবে।
এইতো যেমন, এসবকিছুর আগে নীলিমাও খাদ্যের মুল্য বুঝতো না।
প্লেটে খাবার নিয়ে কখনোই সে খাবার শেষ করেনি।
কোনো ফল খেতে গেলেও ১ কামড় দিয়ে আর তার রুচেনি। ফলে সেটার জায়গা হতো ডাস্টবিনে।
কিন্তু এখন!
এখন সেই ফলেরই পঁচা কয়েক টুকরোর জন্য কতো জায়গা ঘুরেছে সে।
.
.
.
পথযাত্রীদের কাছে কাকুতি মিনতি করতে করতে অবশেষে একজন নীলিমাকে নিজের মোবাইল থেকে বাসায় কল করতে দিতে রাজি হয়।
নীলিমা ফোনটা হাতে নিয়ে বেশ কয়েকবার তার বাসায় কল দেয়।
কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ কল রিসিভ করে না।
তারপর কল দেয় তার ছোট ভাইকে, প্রথমবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে নীলিমার ভাই। সালাম দিয়ে বলে,
-কে বলছেন?
অনেকদিন পরে ছোট ভাইয়ের কন্ঠ শুনে নীলিমার দুচোখ পানিতে ভরে ওঠে।
ও কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
-আমি নীলিমা তোর আপু। কেমন আছিস ভাই?
কথাটা বলার সাথে সাথে কলটা কেটে যায়।
নীলিমা পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার কল দেয় কিন্তু নাম্বারটা তখন ব্ল্যাকলিস্টে ছিলো।
নীলিমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। কি করবে এখন সে বুঝতে পারে না। এদিকে লোকটাও তার ফোন চাচ্ছে। বাসার কেউ যদি তাকে হেল্প না করে তাহলে বাসা পর্যন্ত পৌঁছানো তার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে।
পথিমধ্যে তাকে খুঁজতে সেসব হায়েনারা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে সম্পর্কে নীলিমা নিশ্চিত।
হঠাৎ মনে পড়ে তুবার কথা।
কোনোকিছু না ভেবেই তুবাকে কল করে নীলিমা।
কয়েকবার রিং হতেই তুবা কল রিসিভ করে বলে,
-হ্যালো, কে বলছেন?
কম্পিত কন্ঠে নীলিমা বলে
-তুবা আমি নীলিমা।
নীলিমার কন্ঠ শুনে আমি লাফিয়ে উঠি।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে নীলিমা বলে,
-আমি খুব বিপদে আছি বোন।
এখন বাড়তি কথা বলার সময় নেই, যত দ্রুত সম্ভব তুই আমাকে এখান থেকে বাসায় নিয়ে যা প্লিজ। আমি পরে তোকে সব খুলে বলবো।
আমি নীলিমার কাছ থেকে ঠিকানা জেনে রাজনের সাথে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
রাজন পথিমধ্যে অনেকবার জিজ্ঞেস করে ” আমরা কোথায় যাচ্ছি? ”
কিন্তু আমি কোনো উত্তর দেই না।
নীলিমার সাথে দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।
শুধু ড্রাইভারকে জায়গায় নাম বলে চুপচাপ গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি।
.
.
.
নীলিমার বলা ঠিকানায় গিয়ে চারপাশ তন্নতন্ন করে খুঁজি।
কোথাও তাকে দেখতে না পেয়ে আমি অনেক আপসেট হয়ে পড়ি। নীলিমার কাছে কোনো ফোনও নেই যে কল দেবো।
হঠাৎ তুবা বলে পেছন থেকে একজনের ডাকে থমকে যাই আমি।
পেছন ফিরে নীলিমাকে দেখে বেশ অবাক হই আমি।
আগের নীলিমার সাথে এই নীলিমার চেহারার কোনো মিলই নেই।
তবুও নিজের প্রিয় বোনটাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হলো না আমার
দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরি।
নীলিমাও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আমি অভিমানের স্বরে বলি,
-কতোদিন পর তোকে দেখলাম নীলিমা চল এবার বাসায় চল।
তুই চলে যাওয়ার পরে আংকেল অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে জানিস!
নীলিমা এসব কথা এড়িয়ে আগে বলে,
-খুব ক্ষুধা লেগেছে তুবা। হাঁটার মতো শক্তি নেই। আগে কিছু খেতে পারলে খুব ভালো হতো।
নীলিমার কথা শুনে আমার চোখ আবারও পানিতে ভরে ওঠে।
দেরি না করে নীলিমাকে নিয়ে আমি ও রাজন একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকি
.
.
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে নীলিমার জন্য কিছু শপিং করে, ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে সবাই গাড়িতে উঠে বসি।
গাড়িতে বসে নীলিমাকে জিজ্ঞেস করি,
-এবার বলতো নীলিমা, তোর এমন অবস্থা কি করে হলো? এতোদিন কোথায় ছিলি কার সাথে ছিলি?
-সে অনেক কথা তুবা। এ’ কদিনে অনেককিছু শিখেছি, আমার জীবনের অনেককিছু পাল্টে গেছে। আচ্ছা আমার কথা বাদ দে। আমাকে বল তোর আর রাজনের বিয়ে! কিভাবে কি হলো।
আমি কিছু বলার আগে পাশ থেকে রাজন বলে,
-তোমার খোঁজ করতে করতেই এই পর্যন্ত এসেছি আমরা।
আমি একটু মুচকি হাসি দেই।
.
.
.
.
নীলিমাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়েছি।
চাচার সামনে যেতে নীলিমা অনেক ভয় পাচ্ছে।
আমি ওকে সাহস জুগিয়ে ভেতরে নিয়ে যাই।
কয়েকবার কলিংবেল প্রেস করতেই চাচি দরজা খুলে দেন।
দরজা খুলে সামনে নীলিমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চাচি শকড হয়ে যান।
ভেতর থেকে চাচার কন্ঠ ভেসে আসে,
-কে এসেছে?
চাচি কিছু না বলে ওখানে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন।
চাচা কয়েকবার প্রশ্ন করে সাড়াশব্দ না পেয়ে এগিয়ে আসেন দরজার দিকে।
দরজার সামনে নীলিমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চাচা শক্ত গলায় বলেন,
-তোরা এখন কেন এসেছিস আমি জানি না। তবে তুবা মা, তোর জন্য আর জামাই বাবার জন্য আমার বাসার দরজা সবসময় খোলা, বাকিদের বলে দে, সে যেন তার রাস্তা মাপে।
আমি নিচু গলায় বলি,
-চাচা, ও ছোট মানুষ। একটা ভুল করে ফেলেছে, এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে, ওকে কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় না? ছেলেমেয়েরা তো ভুল করবেই, সেটা তো মা বাবাই শুধরে দেবে।
আমার কথ শুনে চাচা চিৎকার করে বলেন,
-কিসের মা বাবা আর কিসের সন্তান!
ও তো সেদিনই আমার জন্য মরে গেছে যেদিন বলেছিলো ওর কাউকে চাই না।
চলে যেতে বল ওকে। ওর জন্য আমার বাসায় কোনো স্থান নেই।
চাচার চিৎকার শুনে আমার মা বাবাও বের হয়ে আসেন।
মাকে বের হতে দেখে চাচা মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-তুবার মা, তুমি যদি এই মেয়েকে ঘরে জায়গা দাও, তাহলে তোমাদের সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।
চাচার কথা শুনে নীলিমা শব্দ করে কাঁদতে শুরু করে। ওর কান্না সহ্য করতে না পেরে আমি ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসি।
পেছন থেকে মা আমাকে অনেকবার ডাক দেয় কিন্তু তাদের কোনো কথা আমি শুনি না।
.
.
.
রাত ১০ টা।
নীলিমা আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলছে।
-শুরুতে মানুষটার হাত ধরে ভালোবেসে পালিয়ে যাই আমি। দু’জনে একই বাসায় থাকা শুরু করি। দিনের পর দিন বিয়ে করবে বিয়ে করবে বলে আমাকে ভোগ করে যায়। তার প্রতি আমার বিশ্বাস অগাধ থাকায় কখনো সন্দেহ করিনি।
এভাবে কয়েকমাস কেটে গেলে, একসময় আমার উপর তার অনিহা চলে আসে।
ধীরে ধীরে তার আসল রূপ আমার কাছে ধরা পরে।
বিয়ের কথা বললেই প্রচুর গালিগালাজ আর মারধর করতো।
একদিন আমি তাকে বলি যে আমি তাকে পুলিশে দেবো। সবাইকে জানিয়ে দেবো ওর আসল রূপ।
এরপর থেকে ও হিংস্র প্রাণীর মতো ভয়ানক হয়ে ওঠে।
আমার উপর দিনরাত অত্যাচার করা শুরু করে।
বন্ধুদের নিয়ে এসে গ্যাং রেপ করতো। সিগারেটের অসংখ্য পোড়া দাগ আমার পেটে। “এই দেখ”
বলে নীলিমা পেটের উপর থেকে কাপড় সরায়।
পেটের অবস্থা দেখে আমি আৎকে উঠি।
নীলিমার যন্ত্রণা অনুভব করে আমার দু’চোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,
-ভুল করেছিস অনেক নীলিমা। চাচা চাচি তোকে কতো আদরে বড় করেছে বলতো!
কখনো শরীরে একটা আঁচড়ও লাগতে দেয়নি।
সেই শরীরে আজ অসংখ্য ক্ষত।
মা বাবার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
তারা সন্তানের জন্য যেটা করে,ভালোর জন্যই করে।
নিজের মনমতো করতে গিয়ে আজ কি হারালি বুঝতে পারছিস তো!
যেখানে আগে তোকে পুরো এলাকার মানুষ তোকে ভালোবাসতো, সেখানে আজ নিজের মা বাবাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
কেন নিয়েছে? তোর অহংকার আর ভুলের জন্য।
তাই বলছি, এখন তো বুঝেছিস, চেহারা, টাকা পয়সা, অহংকার, সবকিছু সময়ের কাছে ধুলি কনা মাত্র। একটা হালকা বাতাসে এসবকিছু উড়িয়ে দিতে বিন্দুমাত্র সময় লাগে না।
অহংকারের শেষ পরিণতি কখনোই ভালো হয় না বোন।
যদি তখন আমার কথা একটু শুনতি তাহলে আজ তোর স্থান কোথায় হতো জানিস!
আমার কথার উত্তরে নীলিমা বলে,
-তুই যেখানে আছিস। এ স্থানটা তো আমারই প্রাপ্য ছিলো তাই না!
আকস্মিক নীলিমার এমন কথা শুনে আমি নির্বাক হয়ে যাই।
নীলিমা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে দিয়ে বলে,
-ধ্যাত বুদ্ধু মজা করলাম।
আমিও হেঁসে বলি,
-সবকিছুতো শুনলাম। কিন্তু তোর সাথে এসব যে করেছে তার নাম তো বললি না!
আমার প্রশ্নটা শুনে নীলিমা শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে।
তার মুখটা কালো হয়ে যায়।
ভীত কন্ঠে বলে,
-নামটা আমি বলতে পারবো না তুবা।
এই কাজ করলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
-নাম বলবি না মানে? এসব পশুদের তুই ছেড়ে দিবি? তোর মতো যদি তারা অন্য কারও সাথে করে তখন? তাছাড়া তোর ক্ষতি হতে বাকিই বা আছে কি?
-আমার জীবনটা বাকি আছে এখনো।
আমার সাথে কি হয়েছে এসব তুই আমি আর ওই জানোয়ার রা ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু আমি যদি এখন কিছু করতে যাই,ওরা আমার বেঁচে থাকা মুশকিল করে দেবে।
ওর কাছে আমার পারসোনাল ভিডিও আছে অনেক।
-আমি জানি তুই কার ভয় পাচ্ছিস। তুই ফাহিমের সাথে পালিয়েছিলি সেটাও আমি জানি।
কিন্তু আমার প্রমাণ চাই নীলিমা। তুই শুধু একবার ঘুরে দাড়া, দেখবি ওর নাকে দড়ি দিয়ে আমি কিভাবে ঘুরাই। দ্বিতীয়বার কোনো মেয়ের দিকে ফিরে তাকাতেও ও দশ বার ভাববে।
আমার কথায় নীলিমার ভেতরে কোনো ভাবান্তর ঘটলো না।
সে কন্ঠ শক্ত করে বললো,
-সবসময় যে তোর ভাবনাই সত্যি হবে এমন না তুবা। এ বিষয়ে আর কোনো কথা হোক সেটা আমি চাই না। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।
আমি নীলিমার উপর একরাশ বিরক্তি ও রাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাই।
নীলিমা বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলে,
-তুই যেটা ধারণা করেছিস সেটাই ঠিক তুবা।
কিন্তু আমি নিরুপায়। আমি যে এখন সত্যিই খুব অসহায়।
.
.
.
আমার প্রেগ্ন্যাসির এখন চারমাস চলে।
নীলিমার সাথে দিনগুলো ভালোই কাটছে।
হয়তো ও আছে বলেই বেশি ভালো কাটছে।
সবসময় আমার ভালো মন্দ সবকিছুর খেয়াল রাখে নীলিমা। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে বাসার প্রায় কাজ ও নিজ হাতে করে। আমাকে তো কিছু করতেই দেয় না।
কিন্তু এ’কদিনে রাজনের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ও এখন আর আগের মতো আমার কেয়ার করে না।
আগের মতো আমাকে সময়ও দেয় না। কারণে অকারণে রাগারাগী করে। সবকিছুতে কেমন যেন দুরত্ব চলে এসেছে। আমি এসব নিয়ে মন খারাপ করলে নীলিমা তখনও আমাকে নানাভাবে বোঝায়।
“আমি আছি বলেই হয়তো রাজন এখন তোর খেয়াল কম রাখছে। কারণ আমিতো তোর সবকিছুর খেয়াল রাখছি তাই না! তাহলে ওর কেন প্রয়োজন পড়বে বল? আর মন মেজাজ খারাপ থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে। সারাদিন বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত থাকে এক্ষেত্রে এটাও স্বাভাবিক। তুই অযথাই এতো দুশ্চিন্তা করিস তুবা।”
নীলিমার কথা শুনে আমার মনটা ভালো হয়ে যায় সবসময়। আগের মতো আর নেই ও। এখন কতো লক্ষী একটা মেয়ে হয়ে গেছে।
ওর মতো একটা বোন পেয়ে আমি সত্যি গর্বিত।
.
.
.
.
সকাল আট টা বাজে।
বাসার সবাই তখন ঘুমিয়ে আছে।
নীলিমা শোয়া থেকে উঠে কিচেনে চলে যায়।
চুলায় চা বসিয়ে ফল কাটতে থাকে।
হঠাৎ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কেউ।
আচমকা এমন হওয়ায় নীলিমা কেঁপে উঠে “কে?” বলে পেছনে তাকায়।
পেছনে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নীলিমা বলে,
“ওহ রাজন তুমি! আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম”
রাজন কিছু না বলে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলীমাকে।
নীলিমা ঠোঁটের কোণে ভেসে ওঠে একটা বাকা হাসি।
এই সবকিছুই থেকে যায় সবার চক্ষু আড়ালে।
Tuba Binte Rauf
—————-
……#শেষ_পরিণতি সিজন ১ এর সমাপ্তি……