শূন্য_অনুভূতি
রোকসানা_ইয়াসমিন
পার্ট:”তিন”
আমার এমন কাজে উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন।
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ!”
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ!এই কথাটা তো আমার বলার প্রয়োজন ছিল তাই নয় কী।ওই ফোনটা আপনার টাকায় কেনা ছিল না যে যখন ইচ্ছে আছাড় মেরে ভেঙে দেবেন।আপনার সাহস হলো কি করে আমার ফোন ভাঙাআআ………”
আমার কড়া গলায় বলা কথা গুলোয় উনি হয়তো একটু বেশি ই রেগে গেছেন।যার কারণে উনি চোখ মুখ শক্ত করে হঠাৎ করেই আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এলেন।উনার এমন আচমকা এগিয়ে আসায় ভয় পেয়ে আমি দুই পা পেছতেই টাল সামলাতে না পেরে বেডের ওপর ধপ করে বসে পড়লাম।আর উনি উনার এক পা আমার পাশে বেডের ওপর রেখে তাতে এক হাত রেখে আমার দিকে ঝুকে দাঁড়ালেন।উনাকে এভাবে কাছে আসতে দেখে ভয়ে আমার আত্মারাম হাওয়া হওয়ার পালা।কিন্তু আমার এই ভয়টা কে উনি সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করে দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“ফোন ভেঙেছে বলে এতটা কষ্ট পাচ্ছো নাকি ফোনের ওপাশে থাকা তোমার ওই সো ক কোল্ড বয়ফ্রেন্ডের জন্য।”
ওনার এমন দিকহীন কথায় আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি বলছেন উনি এসব।আমার বয়ফ্রেন্ড!এটা আবার কোথা থেকে উদয় হলো।আর উনিই বা এই বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে কোথা থেকে জানতে পারলেন।এবার আমার মাথা বৃত্তাকার ঘুরতে লাগল।হয় উনি পাগল হয়ে গেছেন নয়তো আমায় পাগল বানাচ্ছেন।আমার বয়ফ্রেন্ড অথচ আমি নিজেই তার কথা মনে করতে পারছি না।এ কেমন ধরনের কথা।
এ ধরনের হাজার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার পর হঠাৎ আমার মনে হলো শরীফের কথা।আমার ক্লাসমেট ছিল।মায়ের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ আগেই আমার তার সাথে কথ হলো।আমার এমন হঠাৎ বিয়ে হওয়া কারণ কী তা জানার জন্য ও নিজেই আমায় ফোন দিয়েছিল।কিন্তু ওর কথা ইনি জানলেন কী করে।জানার তো কথা নয়।আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।উনি ইতিমধ্যেই আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে বেডের ওপর ল্যাপচপ নিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন।ধুর,এই লোকটার মাথা মুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারি না।উনি শরীফের কথা কী করে জানলেন?আর আর যদি জানেন ও তাতে উনার কী।উনি তো আর আমায় ভালোবাসেন না যে আমার বয়ফ্রেন্ড থাকলে উনার জ্বলবে।তবে যদি ভালোই না বাসেন তাহলে বিয়ে করলেন কেন আমায়!এবার আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।কনফিউশনের ওপর কনফিউশন তার ওপর আরেক কনফিউশন।ধুর,ভাল লাগে না।কিছুটা বিরক্তি নিয়েই কিছু না বলে উনার পাশেই কাঁথা মুড়ি নিয়ে শুয়ে পড়লাম।মাথা ঠিক থাকলে কাল সকালে দেখা হবে।
.
.
.
.
.
পরের দিন সকাল সকাল ই আমি নিজ হাতে ব্রেকফাস্ট বানালাম।এর আগে কখনও বানানো হয় নি।তাতে কী হয়েছে এখন থেকে বানাবো।নিজের শখের ব্রেকফাস্ট টেবিলে গুছিয়ে রেখে নিজের ঘরে চলে গেলাম।ঘরে ঢুকে উনাকে দেখতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল।এই লোকটা দিন দিন আরো বেশি জেন্টলম্যান হয়ে উঠছে।আমি সিওর অফিসের সব মেয়েরাই উনাকে চোখ দিয়েই গিলে খায়।কথাটা ভাবতেই নিজের ভেতরে হাজার রাগের কীট জন্ম নিতে লাগল।আমি আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়িয়ে না থেকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে থাকা উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আমাকে এভাবে দাড়াতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন।হুহ্ তাতে আমার কী?আমি উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুই পায়ে উঁচু হয়ে দাড়িয়ে উনার চুল এলোমেলো করে দিলাম।ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার থেকে লিপস্টিক বের করে উনার সাদা শার্টের বিভিনাংশে দাগ কেটে দিলাম।আমার এমন কাজে রাক্ষসটা ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে উঠলেন,
“এসবের মানে কী?”
“বারে প্রতিদিন তো একদম ফিটফাট হয়ে অফিসে যান।আজ একটা দিন না হয় এভাবেই গেলেন।”
আমার এমন কথায় উনি আরো দ্বিগুণ রেগে আমার দিকে এগোবেন তার আগেই আমি চট করে বলে বসলাম,
“আর হ্যা,আজ কিন্তু বাড়িতেই খেয়ে যাবেন।আমি নিজ হাতে আপনার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি।”
আমি কথাটা বলেই মানে মানে উনার পাশ কাটিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই উনি হেচকা টানে আমার এক হাত পেছনে মুচড়ে ধরে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।হঠাৎ এমন হওয়ায় ঘটনা বুঝতে আমার প্রায় কয়েক সেকেন্ড লাগল।পেছনে হাত মুচড়ে ধরার কারণে আমি ব্যথায় কুকুড়ে উঠে উনার দিকে তাকালাম।উনার চোখ মুখ প্রায় লাল হয়ে এসে এসেছে।যা দেখে আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।এরই মাঝে উনি আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে দাঁতে দাত চেপে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“দুই দিন হলো এ বাড়িতে এসেছ।আর তুমি আমার ওপর হুকুম জারি করছো?নিজের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করো যদি তা পার হয়ে যাও তো তার ফলাফল তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না।মাইন্ড ইট।”
কথা গুলো বলেই উনি আমায় ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আর আমি অশ্রু শিক্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।যদি আমায় আমার অধিকার টা নাই তাহলে বিয়ে করলেন কেন আমায়।কেন সব কিছু ধোঁয়াশার মাঝে রাখছেন উনি।হঠাৎ আমায় এভাবে বিয়ে করার মানে কী?আর এসব ব্যবহারেই বা কারণ কী?তবে যাই হোক না কেন?যতই কড়া গলায় আমায় কথা শুনিয়ে যাক,গেল তো সেই আমার করা ডিজাইনার ড্রেস টাই।ভাবতেই ফিক করে হেসে দিলাম।
চলবে💞