শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৭

0
1665

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#Writer_Nondini_Nila
#Part_7

নিচে দৌড়ে নিচে নেমে এলাম বুকের ভেতরটা টিপটিপ করছে মাহের এর কিছু হয়নি তো। আমি নিচে আসতে আসতে মাহের ও ভেতরে ঢুকছে। সাদা শার্ট রক্তে ভিজে আছে আমি ছলছল ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
মাহের আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হয়তো জাগানা আশা করে নি।
না আমি মাহের কাছে গিয়ে রক্তের দিকে তাকিয়ে বললাম,,
এসব কি আপনার কি হয়েছে?
উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
মাহের কিছু বলার আগে আমি এগিয়ে গিয়ে মাহের বুকে হাত রেখে বললাম আপনি আবার আঘাত পেয়েছেন।
মাহের আমাকে নিজের থেকে সরিয়ে বলে কি করছো আমাকে স্পর্শ করছ কেন?
আপনার আসতে এত সময় লাগে কেন কি হয়েছে আপনার?
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম।
মাহের বলল তুমি এখনো জেগে আছো কেন? যাও শুয়ে পড়ো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
বলে মাহের নিজে রুমে চলে গেল।
আমি কিছু ক্ষন থ মেরে দাঁড়িয়ে রুমে আসলাম। মাহের কিছুক্ষণ পর গোসল শেষ করে বের হলো।আমি এগিয়ে এসে বললাম আপনার এই অবস্থা কেন বলেন?
মাহের আমার হাত ধরে তাতে চুমু খেলো আর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
সুইটহার্ট খেতে দাও কিছু খুব খিদে পেয়েছে। সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি।
সারাদিন খাওয়া হয়নি শুনেই চমকে উঠলাম আর তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে এলাম।

মাহের উঠে বসে হা করলো আমি খাইয়ে দিতে লাগলাম।আর মাহের শরীরের দিকে তাকিয়ে আছি কোথায় ও আঘাত আছে কিনা।
এতো দেখার কিছু নাই। আজ আমি না ওদের আঘাত পাওয়ার দিন ছিলো।
আমি চমকে উঠলাম,,
মানে।
আমার কিছু হয়নি এতো টেনশন করো না।
আপনি কি করছেন আজ?
মার্ডার।
হোয়াট?
যারা আমাকে পেছন থেকে আঘাত করেছে তাদের আমি সামনে থেকে আঘাত করে চিরকালের জন্য পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছি।
কথাটা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
আপনি আবার খুন করেছেন।
এখন ও মারিনি আধমরা করে ছেড়েছি। কালকে লাশ হয়ে যাবে।
আমি মাহেরের হাত শক্ত করে ধরলাম চেপে।
আপনি এমনটা করেন না প্লিজ। ওদের ছেড়ে দিন‌।
মাহের আমার কথা শুনে বিশ্মিত হয়ে তাকিয়ে বলল,,,
আমার ওই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তুমি চাও না তারা শাস্তি পাক।
হ্যাঁ চাই আর আপনি আজকে তাদের যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছে প্রাণে মারবে না প্লিজ। তাদের ও তো ফ্যামিলা আছে আমার যেমন আজ সারাদিন আপনার চিন্তা করতে হয়েছে তাদের পরিবার ও তো তাই করে তাইনা।
এতো ভাবলে হবে না ওরা আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে যেনে শুনে আমার শত্রুর কাছে আমাকে পাঠিয়ে ছিল ওদের তো আমি ছারবো না আর এসব তুমি বাদ দাও।
আমি কিছু বলতে গেলে মাহের আমাকে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।আর কিছু বলতে পারিনা‌।
খাওয়া শেষে খাবারের প্লেট রেখে এসে দেখি মাহের কাত হয়ে শুয়ে আছে আমি মাহের এর দিকে তাকিয়ে লাইট অফ করে বিছানায় এক কোনে শুয়ে পরি ভাবছি এতো তাড়াতাড়ি মাহের ঘুমিয়ে পড়লো।
আমি অবসা আলোতেই মাহের এর দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তখন মাহের হাত বাড়িয়ে আমাকে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে বলল,,
ঘুমাও সুইটহার্ট।

দিন চলছে মাহের কেয়ার ভালোবাসা দিয়ে।মাঝে মাঝে দিন রাত বাসায় আসে না আমি চিন্তিত হয়ে থাকি আবার একেক সময় বাসায় থাকে।তো একদিন রাতে।মাহের একটা লাল শাড়ি নিয়ে আসে আর আমাকে দিয়ে বললে আজকে একটু সাজবে। আমি শাড়ি দিকে তাকিয়ে মাহের দিকে তাকিয়ে বলি,
কোথাও যাবেন?
তোমাকে আমার নিজের হাতে সাজাতে ইচ্ছে ছিল।আমাদের সম্পর্কটা এখনো তো নরমালি হয়নি তুমি হয়তো এখন আমাকে মানতে পারোনি কিন্তু আমি তোমার সাথে তেমন কিছু করবোনা তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে।শুধু একটু সাজবে আমি তোমাকে মন ভরে জোসনা আলোতে দেখব। আমার প্রিয়সি কে আমি একটু নিজের মন মত করে দেখতে চাই।
মাহেরের কথা আমি ফেলতে পারিনি।আর ফেলবো কেন মনে মনে এখন আমার মনেও মায়ের জন্য কিছুটা অনুভূতি তৈরি হয়েছে। আমিও তো এখন মাহের কে ‌ভালোবাস
তার ইচ্ছে তো আমি পূরণ করতেই পারি।সে আমার সঙ্গে তার ইচ্ছে পূরণ করা আমার দায়িত্ব।
শাড়িটা কোন রকম পড়ে আয়নার সামনে বসে ছিলাম। মায়ের নিজেই আমাকে সাজিয়ে দেয়। ঠোটে লিপিস্টিক কাজল হালকা ফেস পাউডার, দুই হাত ভর্তি রক্ত লাল রঙের কাঁচের চুড়ি। কানের ঝুমকা চুল খুলে দেয়। আমি চুপ করে শুধু মাহের এর কর্মকান্ড দেখছিলাম।কত যত্ন করে আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছিল বারবার আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। সাজানো শেষে
মাহের আমাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে। মাহের নেশাতুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি আর শাড়ির আচল আঙ্গুলে পেছাচ্ছি।
ফট করে মাহের আমার হাত ছেড়ে রুমে দৌড়ে আসে। আমি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে মাহের এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ কি হলো এভাবে দৌড়ে গেল কেন?
যেভাবে ছুটে গিয়েছিল সেই ভাবে আবার আমার সামনে এসে দাড়ালো,
আমি ভ্রু কুচকে মাহেরের দিকে তাকিয়ে আছি।
মাহের মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
ভুলে গেছিলাম বলে একটা ফুলের তোড়া এনে আমার মাথায় পরিয়ে দিল।
তারপর আমার পায়ের কাছে বসে পরলো। আমি চমকে পা পিছিয়ে নিলাম কি করছেন? পায়ের কাছে বসলাম কেন?
মাহের বল্ল,, পা সরাচ্ছো কেন?
বল আমার পা টেনে নিল আমি মাহের এর স্পর্শ পায়ে পেয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম।
মাহের আমার কাপাকাপি দেখে বলল,
এতো কাঁপছো কেন?
আপনি আমার পা পা ছারেন কি করছেন কি?
কিন্তু মাহের ছাড়লো না।কিছু একটা পড়ে দিতে লাগল জোছনার আলোতে দেখতে পেলাম নুপুর।
খুব যত্ন সহকারে পড়ি আমার পায়ে নুপুর পরিয়ে দিল। আমি স্তব্ধ হয়ে উনার নুপুর পরিয়ে দেওয়া দেখলাম।
এতো সুখে আমার চোখে জল চলে এলো। মানুষটা সত্যি আমাকে খুব ভালোবাসে।
উনি আমার পা ছেরে আমার পাসে বসে বলল, এবার পারফেক্ট।
আমি সেসব কিছুই শুনলাম না ওনাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেদে উঠলাম।
আমার কান্না দেখে উনি ভড়কে গেল। আর জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে কাঁদছো কেন?
আমি কান্না গলায় বললাম, আপনি আমাকে এত ভালবাসেন কেন? আমার এত সুখ দেখে মনে হচ্ছে এই সুখ বেশি দিনের জন্য নয়।
উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আর বলল,
সুইট হার্ট প্লিজ কেদোনা। আর কে বলেছে বেশি দিনের জন্য নয় আমি যতদিন আছি ততদিন তুমি এর থেকেও বেশি সুখ পাবে ভালোবাসা পাবে। শুধু একবার আমাকে ভরসা করে আমার হাতে হাত রাখো। তুমি কি এতো ভালোবাসা দেবো যে তোমার কখনো কষ্ট ছিল মনেই পরবে না।
আমি ওনাকে ছেড়ে দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে লাগলাম,
আপনাকে নিয়ে তোমার ভয় আপনি প্লিজ বন্ধ করে দিন মারামারি-কাটাকাটি ভালো লাগে না। আপনাকে হারানোর ভয় পাই।
আমার কথা শুনে উনার মুখে হাসি ফুটে উঠল,আমি রেখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম হাসছেন কেন আমি হাসির মত কি বলেছি?
সুইট হার্ট তুমি তো আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো তাহলে মুখে স্বীকার করছ না কেন?
আপনি এখনো মজা করছে তোমার সাথে।
মজা কোথায় করলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো না বল। বলবে কেন বল আর তোর মুখে স্বীকার করতে প্রবলেম।
হ্যাঁ প্রবলেম তো আপনি বুঝতে পারেন না সবকিছু কি মুখে বলতে হয় ভালো না বাসলে আপনার এখানে পড়ে থাকতাম।
আমার কথা শুনে ওনার চোখ ঝলমল করে উঠল। আচমকা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,
আমি জানি তো কিন্তু আমার যে তোমার মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছে হয়। প্লিজ একবার মুখে বলো ভালোবাসি।
আমি বললাম না।উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বলল ভালোবাসো না।
আমার লজ্জায় মাথা কাটা ভালোবাসি এভাবে বলা যায় আমি লজ্জায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ উনি পআমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল আচ্ছা যাও তোমার আমাকে ভালবাসি বলতে হবে না।
উনার কন্ঠ গম্ভীরতা।
আমি দিকে তাকিয়ে আছে উনি চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সেদিন রাতেই ভাবেই মান-অভিমান কাটলো আমি অনেকবার ডাকলাম কিন্তু আমার সাথে কথা বললো‌ না‌এমনকি রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরল না পরপর তিন দিন চলে গেল উনি আমার সাথে কথা বলে না আমার সমস্ত খেয়াল রাখে কিন্তু অনেক পরিবর্তন হলো আমার সাথে কথা বলে না রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে না কোথাও গেলে আমাকে চুমু দেয় এখন আমার কপালে চুমু দেয় না।
ওনার সাথে কথা বলতে না পেরে আমি খুবই কান্না করছি। কথা বলার চেষ্টা করলে ইগনোর করছে এসব আমি সহ্য করতে পারছিনা। চারদিনের দিন ঠিক করে ফেললাম আজকে উনাকে ভালোবাসি বলবো এই জন্যই তো আমার সাথে রাগ করে আছে।
আজকের শাড়ি ঠিক করলাম উনি যেহেতু শাড়ি পছন্দ করে আজকে রাতে শাড়ি পড়বো।
সন্ধ্যায় চলে আসবে বলেছে বিকেলে থেকে আমি খুশি মনে বসে আছি।আজকে ওনাকে আমি নিজেই করে নেব ওনার ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাবো আমাদের স্বামী-স্ত্রী জীবন শুরু করবো উনাকে আর কষ্ট দেবো না।
সন্ধ্যা হওয়ার আগেই কলিংবেল বেজে উঠলো আজকে এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।খুব একটা কলিং বেল বাজায় না ওনার কাছে একটা চাবি আছে যা দিয়ে উনি ভেতরে ঢুকে পড়ে।কিন্তু আজকে বাজাচ্ছে কেন আমি এত শত কিছু ভাবলাম না উত্তেজিত হয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলাম। জীবনের চরম ভুল করলাম দরজা খুলে।
দরজা খুলতেই কেউ একজন আমার মুখে রুমাল চেপে ধরল আমি সামনে শুধু একজন লম্বা কালো করে লোক দেখতে পেলাম যে আমার মুখে রুমাল চেপে ধরেছে সাথে সাথে আমি জ্ঞান হারালাম আর কিছুই মনে নেয়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে