শুধু তুই পর্ব-৩+৪

0
3770

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)

“আপনার কি মনে হয় আপনি আমার পিএ হওয়ার যোগ্য? দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

” নাা

“তাহলে কেনো এসেছে?

হুঙ্কার দিয়ে বলে সায়ান। তুলিতো ভয়ে শেষ।

” আআআআমাকে ববববববাবা

“সাট আপ

তুলির কথা শেষ হওয়ার আগেই ধমক দেয়। তুলি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে সাহস বাড়িয়ে বলে

” আমি ইচ্ছে করে আপনার পিএ হতে আসি নি। আংকেল আই মিন আপনার বাবা আমাকে জোর করে এনেছে।
আংকেল আংকেলললললললল
তুলি জোরে ডাকে সায়ানের বাবাকে।

“এই মেয়ে এটা আপনার বাড়ি না। এটা অফিস

” আই নো। আমি যখন সাট আপ বলেন তখন আপনার মনে থাকে না এটা অফিস।

“আমার অফিসে আমার যা খুশি আমি তাই করবো

” কি হয়েছে তুলি
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সায়ানের বাবা বলে

“আংকেল উনি বলছে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম। আমি ওনার পিএ হওয়ার যোগ্য না

” সায়ান তুলিই তোমার পিএ। এটা আমার ডিসিশন

“তোমার ভালোবাসা তুমি পার্সোনাল ভাবে দেখাবে কোনোভাবে তাতে আমাকে ইনভলভ করবে না।

” তোমার পিএ কে হলো না হলো এতে তোমার এতো মাথা ব্যাথা কেনো? আর এতে ভালোবাসা দেখানোর কি আছে?

সায়ান টেবিলে একটা লাথি মেরে বেরিয়ে যায়।
সায়ানের বাবা তুলির কাছে গিয়ে বলে

“মামনি
তুলি ওনাকে থামিয়ে বলে

” আমি জানি না আপনি বাবা আপনারা কেনো আমার সাথে এমনটা করলেন? কেনো এমন করলার সাথে আমার বিয়ে দিলে? তোমরা কাজটা ভালো করো নি

তুলি বেরিয়ে যায়। সায়ানের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“কারণটা জানলে তুমিও চমকে যাবে।

লান্স টাইম। সায়ান তুলিকে সায়ানের জন্য খাবার আনতে বলে। তুলি ভাবছে কোথা থেকে খাবার আনবে। এখানকার দোকানপাট কিচ্ছু চেনে না তুলি তার ওপর আবার সায়ান কি খায় তাও জানে না।

” কি করবো? কোথায় যাবো? ওই গোমড়া মুখোর জন্য এবার আমি কোথা থেকে খাবার আনবো? যদি খাবার না নিয়ে যায় তাহলে বলবে সাট আপ।

ঠাস করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায় তুলি।

“ও মা গো কোমরটা গেলো রে

তুলি তাকিয়ে দেখে ইয়া লম্বা মোটা চোখে কানাদের চশমা। বড় বড় চুল। তুলির চুলের থেকেও বড়। আবার চাপ দাঁড়িও আছে। তুলি এবার কনফিউজড উনি ছেলে না মেয়ে। তুলি ওনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

লোকটা তুলির দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে। তুলি এবার লোকটার চুল ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। লোকটা তুলিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে

” কি হচ্ছে এসব কি হচ্ছে? লোকটা মালয়েশিয়ার ভাষায় বলে।
তুলি এবার লোকটাকে ছেড়ে দেয়।

“ও মাই গড আপনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। তা বলছিলাম কি আপনি ছেলে না মেয়ে?

তুলি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করছে।

” আমি কিছু বুঝতে পারছি না আপনার কথা। লোকটা মালয়েশিয়ার ভাষায় বলে

“ওহহহ আপনি মেয়ে। দেখলেন আপনার ভাষা আমি কতো ভালো বুঝি। (তুলি লোকটার কাঁধে হাত দিয়ে বলে) আসলে আমি কে তুলি? আমি সব পারি। কারো মুখ দেখেই পবলেম বুঝতে পারি।😎

” কি হচ্ছে এসব
পেছন থেকে সায়ান রাগী সুরে বলে। তুলি চমকে লোকটার কাঁধ থেকে হাটটা সরিয়ে নেয়। সায়ান লোকটার কাছে এসে হাত মেলায়। তারপর কি কি বলতে থাকে তা তুলি বুঝতে পারে না। সায়ান বারবার লোকটাকে মিস্টার বলছে

“আরে আরে আপনি ভুল বুঝছেন উনি মিস্টার না মিসেস।

” সাট আপ

“সত্যি কথা বললেও ধমক খেতে হয়।

মাথা নিচু করে বলে তুলি।
” উনি আমাকে বলেছেন উনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। আর উনি মেয়ে। দাঁড়ি তো শখ করে রেখেছেন

তুলির কথা শুনে সায়ান হাসবে না কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।

“উগান্ডা প্রেসিডেন্ট। লোকটা ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে। তুলি খুশিতে গদগদ করে বলে

” দেখলেন উনি নিজেই বললো উনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। শুনে নিয়েছেন

“উনি আমার বিজনেস পাটনার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন। আর উনি ছেলে

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলি একবার সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে একবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছে

” দশ মিনিটের মধ্যে আমার খাবার চাই

এতোখান তুলি খাবারের কথা ভুলে গেছিলো।

“আসলে আমি তো জানি না আপনি কি খান

” যা খুশি নিয়ে আসেন

তবুও তুলি দাঁড়িয়ে আছে।

“যেতে বলছি। আউট

তুলি দৌড়ে চলে যায়। সায়ানের জন্য চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে আসে। সায়ান লোকটার সাথে কথা বলছিলো। তুলি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে

” বাকি নিয়ে এসেছি। এখন টাকা দেন দিয়ে আসি।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

“যাহ বাবা আমি কি করলাম? জাস্ট টাকা চাইলাম তাতেই এতো রেগে গেলো। মনে হয় টাকা নাই কাছে তাই রেগে গেছে।
বিরবির করে বলছে তুলি।
ধীর পায়ে সায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে সায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে

” আপনার কাছে টাকা নাই বলে রেগে যাচ্ছেন? বেপার না আমি আংকেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসছি

তুলি এবার লম্বা চুল ওয়ালা লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে

“বলছিলাম কি আপনার বউ কি টাকলা?

টাকলা। লোকটা উচ্চারণ করে। তুলি এবার লোকটার কাছে গিয়ে বলে

” হুম টাকলা। শুনুন এরকম লম্বা চুল এ আপনাকে পুরো উগান্ডার প্রেসিডেন্ট লাগে। এভাবে ঘুরে বেড়ালে উগান্ডার লোকজন আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে।

“মিস্টার সায়ান উনি কি বলছেন? লোকটা তার ভাষায় সায়ানকে জিজ্ঞেস করে। সায়ান তুলির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে

” সি ইউ ম্যাড

তুলির মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে যায়

“আমাকে পাগল বললো। আমি পাগল

বিরবির করে বলে তুলি। সায়ান লোকটাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

” আস্ত একটা করলার বংশধর। আমাকে পাগল বললো। তুই পাগল তোর বউ পাগল তোর চোদ্দো গোষ্ঠী পাগল।

তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে

“What’s your problem?

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান

” অনেক পবলেম। আপনি আমাকে পাগল বললেন কেনো?

“পাগলের মতে ননস্টপ বকবক করলে পাগল বলবো না তো কি বলবো?

” আমি তো ঠিকই বলেছি

“সাট আপ। আমার খাবার কোথায়?

তুলি সায়ানের টেবিলে ঠাস করে খাবার রাখে। সায়ান খাবারে হাত দিতে গেলেই তুলি খাবার সরিয়ে নেয়। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

” হোয়াট

“আগে টাকা

” মানে

“রেস্টুরেন্টের মালিক তো আর আমার জামাই হয় না যে ফ্রী তে খাবার দেবে।

সায়ান একশো টাকা বের করে দেয়

” ওরে আল্লারে। চিকেন বিরিয়ানি আনছি আপনার জন্য ডাল রুটি না

“তো

” তো মানে আরও টাকা লাগবো

সায়ান এবার পাঁচশত টাকার নোট দেয়। তুলি সেটা নিয়ে বাইরে চলে যায়।

“কি কিপ্টারে বাবা। ভাবছিলাম হাজার টাকা দেবে তা না পাঁচশত টাকা দিলো। ধুর

তুলি এসব বকবক করছে আর হাঁটছে। হঠাৎ তুলি সেই পিচ্চিটাকে দেখে দৌড়ে সায়ানের কেবিনে যাচ্ছে। তুলিকে দেখে পিচ্চিটা থামে তুলির কাছে আসে

” হেলো পাপার আপু

“আমি তুলি। আমাকে এই নামে ডেকো না প্লিজ

” কেনো?

“জামাইয়ের বউ হওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নাই

” জামাই কি?

তুলি দাঁত দিয়ে জিভ কেটে পিচ্চিটাকে কোলে নেয়

“নাম কি তোমার?

” জুজু

“এতো কিউট তোমার নাম? তো তুমি এখানে একা কেনো?

” মামনি দিয়ে গেছে। আমি পাপার কাছে যায়

জুজু তুলির কোল থেকে নেমে চলে যায়।

“আমাকে এবার সতিনের ঘর করতে হবে। এ জ্বালা আর প্রাণে সহে না

সন্ধায় তুলি আর সায়ানের বাবা বাড়িতে আসে।

” তুলি তুই

“জিসান

তুলি দৌড়ে গিয়ে জিসানকে জড়িয়ে ধরে। সায়ানের মা বাবা মনা কাকিমা ডলি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সায়ানের মা তো রাগে ফুঁসছে।

” কি হচ্ছে এসব?

সায়ানের মা রাগী গলায় বলে। তুলি জিসানকে ছেড়ে দেয়।

“মা ওই তো তুলি আমার একমাত্র কিউট বেষ্টু। তোমাকে তো ওর কথা বলেছিলাম।

” জিসান ও আর এখন তোর বেষ্টু তুলি না। তোর বড় ভাইয়ের বউ

“কিহহহহ

জিসান হো হো করে হাসতে থাকে।

” সিরিয়াসলি মা তোমার ওই বোরিং ছেলের বউ তুলি

জিসান হাসিটা কন্টোল করে বলে।

“জিসান শোন

” শোন মানে কি? জিসান তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তো ছোট ভাই বলে ডাকবে

তুলি মাথা নিচু করে বলে

“হুম

” ওর সাথে কথা শেষ হলে আমার রুমে আসিস জিসান কথা আছে

“ওকে মামনি

” আর তুমি (তুলিকে ইশারা করে) বাড়ির বউ তুমি সারাদিন ঘুরে বেড়ালে হবে না। রাতের রান্নাটা তুমি করবে।

“তুলি মাথা নারায়। সায়ানের মা চলে যায়। এক এক করে সবাই চলে যায়।

” তুলি

“হারামি কুত্তা তোর ভাই আমার লাইফটা হেল করে দিলো

” আমার ভাই কি করে রে বল আমিও একটু শুনি

তুলি জিসানকে মারতে থাকে।

জিসান তুলির ফ্রেন্ড। জিসান তুলির বেষ্টুকে পছন্দ করতো সেই থেকে ওদের বন্ধুত্ব।

“মারছিস কেনো?

তুলি থামে

” দোস্ত আমি রান্না করতে পারি না

তুলি অসহায় মুখ করে বলে

“খেতে পারিস

” একদম এক্সপার্ট

“সেটাই। শোন যা পারিস তাই কর। আমি খাবার অর্ডার দিচ্ছি যখন কেউ তোর খাবার মুখে তুলতে পারবে না তখন আমার খাবার গুলো খাবে

” বাবা এতো বুদ্ধি তোর মাথায়

“মাথাটা কার দেখতে হবে না

” কার বেষ্টু দেখতে হবে না

দুজন একসাথে হেসে ফেলে।

তুলি কোমরে ওড়না বেধে রান্নায় নেমেছে। কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে। তখন জিসান আসে।

“দোস্ত পেঁয়াজ কাটে কেমনে

” পেঁয়াজটা হাতে নিয়ে ছুড়িটা হাতে নিয়ে কাঁটতে হয়।

“ওয়াও আমি তো জানতামই না।

” শোন ইউটিউবএ সার্চ দে

“পাওয়া যাবে

” কি বলছিস এখন তো ইউটিউব দেখে বড় বড় ডাক্তাররা সার্জারী করছে

“কি বলছিস

” হুম। আমি তো শিখতেছি। কদিন পরে একটা চেম্বার দেবো। কতো নাম হবে বল তো

“হুম আগে রান্না করি তারপর তোর আশারের গল্প শুনবো

ইউটিউব দেখে পেঁয়াজ কাটে কোনোরকম। তারপর মাংস রান্না করে

” এই এরকম কালার হলো কেনো?

“গাধী হলুদ দেস নাই তুই

” ওহহ

তুলি অনেকটা হলুদ দেয়।

ডাইনিংএ খাবার সার্ভ করে জিসান আর তুলি। সবাই খেতে বসেছে। খাবারের চেহারা দেখে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে

“খাবারের চেহারা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই অনেক ইয়াম্মি হয়েছে খেতে। কি রে জিসান সরি ছোট ভাই বলেন

” হ্যাঁ

সায়ান খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি সবার প্লেটে খাবার দেয়। সবাই খাবার নারছে। সায়ান খাবারটা মুখে দেয়

“কে রান্না করছে?

তুলি বলতে চায় জিসান এগিয়ে গিয়ে বলে

” আমি রান্না করছি। তুলি জাস্ট একটু হেল্প করেছে। খুব ভালো হয়েছে না খেতে। দেখতে হবে না কে রান্না করছে 😎

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে