#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৪
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
আমরা ঠিক করলাম আজকে রিক্সায় করে ঘুরবো। এটা মূলত আমাদের মেয়েদের বায়না। জোর করে রাজি করালাম। তাই তিনটা রিক্সা ডাকা হলো। একটাতে ইয়াদ ভাইয়া আর রিহু বসলো আরেকটায় ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়া বসলো। আমি আর রোয়েন ভাই একটায় বসলাম।
কোথায় যাচ্ছি বুঝতে পারলাম না তাই জিজ্ঞেস করে ফেললাম আমরা কোথায় যাচ্ছি ভাইয়া?
কপাট রাগ দেখিয়ে বললো আমি তোর ভাইয়া হই?
না মানে আসলে সব সময় তো ভাইয়া ডেকেছি তাই মুখে ভাইয়া চলে আসে।
আর একবার ভাইয়া ডেকে দেখ মুখ সেলাই করে দিবো একদম।
এই লোকটা কেমন আমি বুঝি না। এই ভালো বিহেব করে আবার বকা দেয়। এই তুমি করে বলে আবার তুই বলে। গিরগিটি একটা খনে খনে রং বদলায়।
আমতা আমতা করে বললাম তাহলে কি ডাকবো?
আমার নাম ধরে ডাকবি।
চোখ বড় বড় করে তাকালাম তার দিকে বলে কি এই লোক? সে আমার কতো বড়, তার নাম ধরে ডাকবো আমি?
এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিস কেনো?
তার কথা শুনে চোখ নামিয়ে নিলাম। লোকটা আচ্ছা ফাজিল,খাটাশ একটা।
মনে মনে আর গালি দেওয়া লাগবে না এসে পরেছি আমরা নামো।
এই লোক কি মনের কথাও বুঝে নাকি। এখন দেখছি মনে মনেও কিছু বলা যাবে না।
উনি নেমে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি তার হাত ধরে আস্তে করে নামলাম।
নেমে দেখলাম যায়গাটা খুব নিরিবিলি একটু সামনে আগাতেই দেখলাম সামনে নদী। নদী দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। এক ছুটে নদীর কাছে চলে গেলাম। যায়গাটা এতো ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
রিহু চল নদীতে পা ভিজাই।
চল আমারও ভেজাতে ইচ্ছে করছে।
চল তহলে এই বলে ওকে নিয়ে নদীর পারে বসে শাড়ি হালকা উপরে উঠিয়ে পা ভিজিয়ে বসে রইলাম।
ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়া একটু দূরে দুজন এক সাথে বসে চুটিয়ে প্রেম করছে।
রোয়েন আর ইয়াদ ভাইয়া আমাদের থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
হঠাৎ রিহুকে ইমা আপু ডাক দিলো। বললো আপুদের কাঁপল পিক তুলে দিতে। রিহু চলে গেলো আপুদের পিক তুলে দিতে। আমি চোখ বন্ধ করে নদীতে পা ভিজিয়ে রেখে পরিবেশটা উপভোগ করছিলাম তখন পাশে এসে কেউ বসলো। আমি ভেবেছি রিহু বসেছে তাই না ভেবে ওভাবেই বসে রইলাম।
হঠাৎ অনুভব করলাম আমার হাত আকরে ধরে আমার আঙুলের ভাজে করো হাত রাখলে আলতো করে। চমকে পাশে তাকিয়ে দেখি রোয়েন আমার পাশে বসে এবং আমার আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে রেখেছে।
আমার তাকানো দেখে তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন কেমন লগছে পরিবেশ টা?
অনেক অনেক সুন্দর, আমার খুব পছন্দ হয়েছে জায়গাটা।
তোমার পছন্দ হবে ভেবেই এই জায়গায় আসা।
আপনি ঠিক করেছেন এই যায়গায় আসার?
হ্যা।
বুঝলেন কিভাবে আমার এই জায়গাটা পছন্দ হবে?
আমার জানা আছে আমার হুর পরীর কি পছন্দ হবে আর কি হবে না এই বলে হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে ধরলো।
আমার হুর পরী কথাটা শুনে থমকে গেলাম আমি। এতো ভালোবাসে লোকটা আমায় কিন্তু কখনো প্রকাশ করে না। এই প্রথম ভালোবাসাময় কথা বললেন, নিজের #লুকানো_অনুভূতি কিছুটা প্রকাশ করলেন। ভালো-লাগা ছেয়ে গেলো আমার মনের ভিতর। আলতো করে তার কাধে মাথা রাখলাম। খুব ইচ্ছে ছিলো আমার প্রিয় মানুষটার সাথে কোনো এক নদীর তীরে বসে তার কাধে মাথা রেখে চোখ বুঁজে পরিবেশ টা উপভোগ করবো। আজ আমার ইচ্ছে টা পুরোন হলো।
রোয়েন হুরের এক হাত ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে পিছ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আবেশে চোখ বুঁজে নিলো হুর। দুজনেই চুপচাপ পরিবেশ টা উপভোগ করতে লাগলো।
এইদিকে রিহু ইমা আর ফহিমের কাঁপল পিক তুলে দিতে দিতে ক্লান্ত। তখন ইয়াদ যেয়ে বলে আজকে কি পিক তুলতে তুলতে ফোন ভেঙে ফেলবি নাকি। সবাই প্রেম করছে আমাকে তো একটু সুযোগ দে।
মুখ টিপে হাসলো ইমা আপু। এটা তোর শাস্তি, আমাদের পিছে সব সময় পড়ে থাকিস না এবার বুঝ ঠেলা।
আর জীবনেও তোদের পিছে লাগবো না এবার অন্তত ছাড়।
আচ্ছা ছাড়লাম, মনে থাকে যেনো এই কথা এই বলে ইমা ফাহিমকে নিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।
ইমা যেতেই রিহু বললো পাগল হয়ে গেলে? এখানে ভাইয়া আছে সেই খবর তোমার আছে?
হুস চুপ রোয়েন এখন প্রেম করতে ব্যস্ত। এইদিকে ওর খেয়াল নেই তাকিয়ে দেখো তুমি।
ইয়াদের কথা শুনে রিহু তাকালো রোয়েনদের দিকে। কি সুন্দর এক সাথে বসে দুজন পরিবেশ টা উপভোগ করছে।
সবাই মন মতো প্রেম করছে আমরা কতো দিন এভাবে লুকিয়ে প্রেম করবো? মন খারাপ করে বললো রিহু।
ইয়াদ রিহুর এক হাত জড়িয়ে ধরে বলে খুব শীঘ্র আমরাও সবার সামনে চলাফেরা করতে পারবো। একটা ব্যবস্থা করতে হবে, সবাই বউ নিয়ে ঘোরে আর আমার এখনো কপালে বউ জুটলো না এটা কি মানা যায়?
হয়েছে তুমি সব সময় পটপট এই করতে পারো কাজের কাজ কিছুই করতে পারো না।
কি বললে তুমি? আমি কাজের কাজ কিছু করি না? কপাট রাগ দেখিয়ে বললো ইয়াদ।
হয়েছে রাগ করা লাগবে না। চলো ওই দিক থেকে হেটে আসি একটু।
হুম চলো এই বলে ওরা একে অপরের হাত ধরে এক সাথে গল্প করে হাটতে লাগলো।
—————-
হুর…
হঠাৎ রোয়েনের ভরাট কন্ঠ শুনে চোখ খুললো হুর। আস্তে করে বললো জি।
আমাদের এ হঠাৎ বিয়েতে কি তোমার কোনো আপত্তি আছে? আমাদের বিয়েটা কি মেনে নিতে তোমার কষ্ট হচ্ছে?
হঠাৎ এই প্রশ্ন করলেন যে?
না মানে তুমি আমার সাথে সহজ হতে পারছো না কেনো? আমাকে এতো ভয় পেয়ে চলো কেনো? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?
আসলে এমন কিছু না, হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেলো তো তাই আমার মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে কিন্তু বিয়েটা আমি মন থেকে মানি। আমি অনেক খুশিও আপনার মতো এমন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে।
আমি কেমন? ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো রোয়েন।
আমি কি বলবো খুঁজে পেলাম না তাই চুপ করে রইলাম।
কি হলো চুপ কেনো?
আপনি অনেক কেয়ারিং একজন হাসবেন্ড। সব মেয়েরাই চায় এমন একজন জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে।
রোয়েন আমাকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো তাই নাকি?
আমি ছোট করে বললাম হুম।
তখন রিহু পিছ থেকে বললো ভাইয়া চলো তোমাদের কাঁপল পিক তুলে দেই।
আমি ভেবেছিলাম রোয়েন না করে দিবে কিন্তু সে আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
তারপর রিহুর দিকে তার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো তোল।
রিহু আমাদের পিক তুলে দিতে লাগলো। আর এক এক রকমের স্টাইল করতে বললো। ছবি তোলার এক পর্যায়ে রোয়েন আমার কোমর হাত রেখে একদম তার সাথে মিশিয়ে নিলো। কেঁপে উঠে চমকে তার দিকে তাকালাম আর সে আমার দিকে তখনই রিহু একটা পিক তুলে ফেললো।
পিকটা তুলে আমাদের কাছে নিয়ে এসে বললো ভাইয়া দেখো এই পিকটা সব থেকে সুন্দর হয়েছে। পিকটা দেখে লজ্জামাখা হাসলাম আমি।
এভাবে আরে কিছু সময় ঘুরলাম আমরা। তারপর চলে গেলাম আমরা একটা রেস্টুরেন্টে।
সেখানে যেয়ে সবাই সবার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলাম।
খাওয়া শেষে রোয়েন বিল পেমেন্ট করে দিলো। ফাহিম বিল দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো কিন্তু রোয়েন দিতে দিলো না। কথা ছিলো দুইজনের থেকে খাওয়া হবে তাই ঠিক করলাম রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে ফাহিম ভাইয়া আইসক্রিম খাওয়াবে।
রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে ফাহিম ভাইয়া আমাদের আইসক্রিম কিনে দিলো। ছেলেরা কেউ খেলো না আমরা মেয়েরা নিলাম শুধু।
রাত হয়ে গেছে অনেকটা, রাতে বেলা হাঁটার মজাই আলাদা তাই আমরা একটু হাঁটতে ছিলাম। রোয়েন ভাই আমার পাশে ছিলো, আমার এক হাত তার হাতের মুঠোয়। রাতে বেলা প্রিয় মানুষের সাথে পাশাপাশি হাঁটা অন্য রকম একটা সুখ পাওয়া যায়।
আজকের দিনটা স্মৃতির পাতায় লেখা থাকবে। খুব খুব এনজয় করেছি আজকে আমরা।
আমরা আবার রিক্সায় উঠে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আসার সময় যে যার সাথে এসেছে যাওয়ার সময় ও সে তার সাথে বসলো।
মনটা খুব ভালো আজকে। রোয়েনের সাথে এই প্রথম এতো সুন্দর দিন কাটালাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
কেনো?
আজকে এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য। আমার অনেক অনেক ভালো লেগেছে আজকের দিনটা।
এক হাত দিয়ে আমাকে পিছ থেকে আকরে ধরে তার কাছে নিয়ে আসলো আর বললো সব সময় এমন হাসিখুশি রাখবো তোমাকে হুর পরী। তোমার মুখে সব সময় হাসিটাই মানায় বুঝলে।
মুচকি হাসলাম তার কথা শুনে।
তিনি আমাকে আরেকটু কাছে এনে কপালে চুমু খেলেন। এভাবেই টুকিটাকি কথা বলতে বলতেই পৌঁছে গেলাম বাড়িতে।
চলবে?
#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৫
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। সবাই যেহেতু বাহির থেকে খেয়ে এসেছি আর অনেক রাত ও হয়ে গিয়েছে তাই শুয়ে পড়লাম। বিকেল থেকে ঘুরাঘুরি করে এখন খুব ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমের প্রয়োজন।
রোয়েন রুমের লাইট নিভিয়ে আমার পাশে শুয়ে আমাকে বুকে টেনে নিলো। আমিও চুপটি করে তার বুকে মুখ গুঁজলাম।
হুর… তিনি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মিহি কন্ঠে ডাকলো আামকে।
জি..
কালকে যদি আমরা চলে যাই তাহলে কি মন খারাপ করবে?
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তার দিকে তাকিয়ে বললাম এতো তারাতাড়ি চলে যাবো?
তিনি আমার গলে আলতো করে হাত রেখে বললো অনেক দিন থেকেতো অফিসে যাওয়া হয় না, অনেক কাজ জমেছে তাই যাওয়া লাগবেই।
আচ্ছা, হালকা মন খারাপ নিয়ে বললাম।
মন খারাপ করে না হুর পরী। কাজের প্রেশার একটু কমলে আবার আসবো তোমাকে নিয়ে প্রমিস এ বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো সেভাবেই ঘুমিয়ে পরলাম।
আজানের শব্দে ঘুম ভাঙলো, আমি উঠে তাকেও ডেকে দিলাম। তিনি আব্বু আর বড় আব্বুর সাথে মসজিদে চলে গেলো। আমি নামাজ পরে বেলকনিতে যেয়ে দাঁড়ালাম। সকালের এই স্নিগ্ধ পরিবেশ টা মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট। একটু পরে দেখলাম আব্বু, বড় আব্বু আর রোয়েন কথা বলতে বলতে বাসার দিকে আসছে। পাঞ্জাবি পরেছে আর মাথায় টুপি দেওয়া, কতটা নিষ্পাপ লাগছে তাকে। মন জুড়ে এক ভালোলাগা কাজ করছে। প্রিয় মানুষটার সব কিছুই মনে হয় সুন্দর স্নিগ্ধ লাগে।
আমার ভাবনার মাঝে রোয়েন আমার পিছে এসে দাঁড়ালো।
কি করছো একা একা?
সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশ টা উপভোগ করছি।
রোয়েন এসে হুরের পাশে দাঁড়ালো। হুরের ছোট ছোট সামনের চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললো ঠিক তোমার মত স্নিগ্ধ যা দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
মুচকি হাসলাম তার কথায়। আপনি একটু বসেন আমি কফি করে নিয়ে আসি। সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশে দাঁড়িয়ে কফি খাওয়া মজাই আলাদা।
কথাটা খারাপ বলো নি, আচ্ছা যাও।
আমি চলে আসলাম কিচেনে। যেয়ে কফি করে রুমে নিয়ে আসলাম। দুজন মিলে কফি খাচ্ছিলাম আর সকালের পরিবেশ টা উপভোগ করলাম।
আনেক সময় পর রোয়েন বললো ব্যাগ গুছিয়ে রেখো আমরা ৯ টার দিকে বের হবো।
রুমে যেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে কিচেনে গেলাম আম্মুর কাছে। যেয়ে দেখি আম্মু আর বড় আম্মু ব্রেকফাস্ট তৈরি করছে।
আমাকে দেখে আম্মু বললো কিছু বলবি?
আম্মু উনি চাচ্ছে আজকেই চলে যেতে। মন খারাপ পরে বললম আম্মুর কাছে যেয়ে।
হুম তোর আব্বু বললো একটু আগে আমাকে। মন খারাপ করিস না ছেলেটার কাজ জমেছে অনেক। কাজ শেষ হলে তোকে নিয়ে আবার আসবে।
আচ্ছা বলে আম্মুর পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।
একে একে সবাই ঘুম থেকে উঠে নিচে নামলো। আম্মু আমাকে বললো যা রোয়েনকে ডেকে নিয়ে আয়।
আমি রুমে এসে দেখি উনি শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
আম্মু ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে, নিচে চলুন।
উনি ফোন রেখে উঠে বসলো।
তুমি কি আর পড়ালেখা করবা না সে ধান্দায় আছো নাকি? জামা কাপড় গুছিয়েছো বই খাতা গুছাবে কে?
আসলে….
কি আসলে? ভ্রু নাচিয়ে বললো।
ওই আরকি খেয়াল ছিলো না। যাওয়ার সময় গুছাবো এখন চলেন নিচে সবাই ওয়েট করছে।
চলো এই বলে উনি বেড়িয়ে গেলেন উনার পিছে পিছে আমি গেলাম।
নিচে যেয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম সবাই। খাওয়া শুরু করলাম সবাই।
খাওয়ার ফাকে ফাহিম ভাইয়া বললো রোয়েন আজকে চলে যাবে নাকি শুনলাম।
হ্যা। অফিসে অনেক কাজ আঁটকে গেছে তাই যাওয়া লাগবে।
রিহুর মন খারাপ হয়ে গেলো। ভেবেছিলো আরো কিছু দিন এখানে থাকবে ইয়াদের সাথে সময় কাটাতে পারবে তা আর হলো না। ইয়াদের দিকে তকালো দেখলো ইয়াদ ও অসহায় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু রেস্ট করে বই খাতা সব গুছালাম পরে রেডি হলাম। এবার যাওয়ার পালা, মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। কান্না পাচ্ছে খুব, আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই দিলাম। আম্মু আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কন্না থামালো। পরে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
আমাদের নামিয়ে দিয়ে রোয়েন অফিসে চলে গেলেন।
——–
কেটে গেলো অনেক গুলো দিন। শুরু হয়ে গেলো ব্যস্ত জীবন।
রোয়েন অফিসে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে আমাদের নামিয়ে দিয়ে যায় কলেজের সামনে। আজকেও নামিয়ে দিয়ে উনি চলে গেলো। রুহু আর আমি কলেজে ঢুকে গেলাম।
ক্লাস শুরু হতে এখনো দেরি আছে তাই আমি আর রিহু একটু ঘুরছিলাম তখন রিহুকে ইয়াদ ভাইয়া ফোন দিলো। ও কথা বলতে বলতে একটু দূরে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন কেউ বলে উঠলো..
হেই হুর কেমন আছো?
এই সময় সেই বিয়ে বাড়ির ছেলেটাকে দেখে চমকে গেলাম। নিজেকে সামলে বললাম জি ভালো, আপনি?
এতোদিন ভালো ছিলাম না এখন তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেলাম। আমাকে চিনতে পেরেছো? আমি অনিক ফাহিমের বন্ধু।
থতমত খেয়ে গেলাম তার কথার ধরন শুনে। আস্তে করে বললাম জি চিনেছি।
তুমি কি এই কলেজে পড়ো?
জি বিরক্ত নিয়ে বললাম। কেমন গায়ে পড়া টাইপের ছেলেটা, উফ বিরক্তিকর।
আমিও এই ভার্সিটিতে পড়েছিলাম। একট জরুরি কাজে আসলাম আরকি এখানে আর তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।
ওহ্। আমি তাহলে যাই ভাইয়া ক্লাস শুরু হয়ে যাবে এই বলে তারা দেখিয়ে চলে আস্তে নিলাম তখন অনিক বলে ওঠে তোমর ফোন নাম্বার টা দেওয়া যাবে?
আমি শুনেও না শুনার ভান করে তারাতাড়ি চলে আসলাম ওখান থেকে।
এভাবে চলতে থাকলো দিন আর ওই ছেলেটার ও বিরক্ত করা বেড়ে গেলো। একবার ভাবলাম রোয়েনকে বলবো আবার ভয়ে বললাম না যদি রেগে যায়।
একদিন রোয়েন আমাদের দিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখন রোয়েনের দেখলো গেটের কাছে যেতেই হুরদের পিছে একটা ছেলেও যাচ্ছে। হাতে তার গোলাপ ফুল। রোয়েনের কিছুটা সন্দেহ হলো এটা সেই ছেলেটা না? রোয়েন ও গাড়ি থেকে নেমে ওদের পিছু নিলো।
কলেজ মাঠে আসতেই পিছ থেকে কেউ ডেকে উঠলো। আমি আর রিহু পিছে তাকাতেই দেখি সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে। বিরক্ত হলাম খুব, ভাবলাম আজকে কয়টা কথা শুনিয়ে দিবো। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই আমার সামনে হাটু মুরে বসে আমার দিকে গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দিয়ে প্রপোজ করে বসলো। তার কাজ দেখে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলাম। মোটেও এটা এই টাইমে আশা করি নি। থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
হঠাৎ কেউ একজন অনিককে ঘুষি দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। পাশে তাকাতেই কলিজায় পানি চলে আসলো ভয়ে কারণ আর কেউ না রোয়েন আগুন চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
রোয়েন যেয়ে অনিককে টেনে তুলে এলোপাতাড়ি মারা শুরু করলো। বলেছিলাম না ওর আশেপাশেও আসবি না তবুও তুই আসলি আর ওকে প্রপোজ ও করছিস। কতো বড় তোর কলিজা আজকে দেখবো তা আমি। এই বলে আবারো মারা শুরু করলো।
ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। তাকে থামানো উচিৎ আর নাহলে বড় কিছু ঘটে যাবে। কিন্তু থামাবো কি করে, যেই পরিমান রেগে আছে ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। চেরে দিক থেকে মানুষ আসা শুরু করলো এখানে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না রিহুকে বললাম কিছু একটা করতে কিন্তু ও কি এই বা করবে। এখন তার কাছে গেলে চর থাপ্পর এই না দিয়ে বসে।
একটু সাহস যুগিয়ে তার কাছে এগিয়ে গেলাম, আস্তে করে তার শার্ট খামছে ধরে ডাকলাম। শুনছেন, ছেড়ে দিন একে চারদিকে মানুষ আসছে।
উনি ছাড়লো তো না এই আরো কয়টা লাগিয়ে দিয়ে তারপর ছাড়লো। তারপর কলার ধরে বললো আজকে জান নিয়ে ফিরতে পারছিস পরের বার তা আর পারবি না। সো বি কেয়ারফুল কথাটা যেনো মনে থাকে এই বলে ধাক্কা মেরে চলে আসলো।
উনি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ভয়ে আমার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা। রিহুর হাত খামছে ধরলাম। উনি এসে আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আমি রিহুর দিকে অসহায় চোখে তাকালাম।
রিহু একটু সাহস যুগিয়ে বললো ভাইয়া ওর কোনো দোষ নেই, ওকে ছেড়ে দেও। কিন্তু সে কোনো কথার পাত্তা না দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। আমার ভয়ে কান্না করার মতো অবস্থা এবার।
উনি গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমি নিজেও জানি না, শুধু জানি আজকে আমার কপালে ভোগ আছে। কেন যে তাকে প্রথমে বললাম না তাহলে এতো কিছু হতো না। ইচ্ছে করছে নিজের মাথা নিজে ভেঙ্গে ফেলি।
আরো চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ মুখোমুখ শক্ত করে রেখে ড্রাইভ করছে। আজকে আর আমার রক্ষা নেই বুঝলাম।
চলবে?