#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১০
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
সকাল থেকে বিয়ের কোলাহল শুরু হয়ে গেলো। মানুষে গিজগিজ করছে বাসায়। রেডি হয়ে আমি আর রিহু চলে গেলাম ছাদে।
দুইজনে সেলফি তুলছিলাম তখন নিচে গাড়ির শব্দ শুনলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি ফাহিম ভাইয়ারা চলে এসেছে। আমরা নিচে চলে আসলাম।
ভাই বোনরা সবাই গেট ধরে টাকা উঠালো। আমি আর রিহু এতো কোলাহলের ভিতর গেলাম না। দূরে থেকেই এনজয় করলাম আমরা।
রোয়েন ভাই ও আজকে কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। মনে হচ্ছে আমার সাথে ম্যাচিং করেই কিনেছে। আমাদের এক সাথে দেখলে সবাই ভেবে নিবে আমরা কাঁপল।
ফাহিম ভাইয়া কে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দেওয়া হলো, একটু পরে আপুকে এনে ভাইয়ার পাশে বসিয়ে দিলাম। আপুকে আজকে লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা পড়েছে, একদম পুতুলের মতো লাগছে আপুকে।
বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে গেলো। ভাইয়াকে কবুল বলতে বলার সাথে সাথে বলে দিলো। এই নিয়ে একধাপ সবার হাসাহাসি করা হয়ে গেলো। এবার আপুকে কবুল বলতে বলা হয়ে একটু সময় নিয়ে আস্তে ধীরে বললো।
আমরা সবাই মিলে এক সাথে পিক তুললাম।
রিহু কোথায় যেনো চলে গেলো, আমি একা একা ঘুরছিলাম তখন অচেনা একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।
হ্যালো শুনতে পারছেন?
জি, আমাকে বলছেন?
হ্যা। আপনি ইমা ভাবির ছোট বোন না?
জি।
আমি ফাহিমের ফ্রেন্ড অনিক, আপনি?
ছেলেটাকে বিরক্ত লাগছে তবুও ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসে বললাম আমি হুর।
আপনার নামটাও আপনার মতো সুন্দর।
হুর কি বলবে বুঝতে পারলো না, এই মুহূর্তে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে ওর। কিছু বলতেও পারছে না।
আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
দূর থেকে এসব রোয়েন দেখছিলো আর রাগে ফুসছিলো কিন্তু কিছু বললো না। বিয়ে বাড়িতে ঝামেলা করতে চাচ্ছে না তাই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো।
হুরের হঠাৎ চোখ গেলো রোয়েনের দিকে, ওদের দিকেই চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে।
হুর এই তাকানোতে ভয় পেয়ে গেলো আর কোনো কথা না বলে এক্সকিউজ মি বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
তখন রোয়েন অনিকের কাছে এসে একটু সাইডে নিয়ে বললো একটু আগে যার সাথে কথা বলছিলেন ওর দিকে যেনো আর ভুলেও তাকাতে না দেখি।
আপনি বলার কে আমি কার দিকে তাকাবো নাকি তাকাবো না।
আমি কে? আমি ওর হবু হাসবেন্ড। সো ওর আসেপাশেও যেনো না দেখি।
অনিক কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। আপনি যে ওর হবু হাসবেন্ড তার প্রুফ কি?
আপনাকে প্রুফ দিতে আমি বাদ্ধ নই। ওর আসেপাশেও যেনো না দেখি তাহলে খুব খারাপ হবে। এই বলে চলে গেলো।
অনিক মনে মনে কিছু একটা ভাবলো তারপর চলে চলে গেলো ওই যায়গা থেকে।
——————
আপুর বিদায়ের পালা এবার। এতো সময় হাসি আনন্দে পরিবেশ টা মুহূর্তেই নিরব হয়ে গেলো। কান্নার রোল পড়ে গেলো।
বড় আম্মু সেন্সলেস হয়ে গেছে কান্না কেরতে করতে।
আপুও কন্না করছে অনেক। কিজে খারাপ লাগছে, আমাদের সবার চোখে পানি।
আপু যেতে চাইছিলো না আব্বুরা বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠালো।
আপু চলে গেছে মনটা অনেক খারাপ লাগতেছে। যে যার রুমে চুপচাপ চলে গেলাম।
ইয়াদ ভাইয়া রুমে একা বসে আছে, তাকে সামলাতে রিহু গেলো। হয়তো ছেলে মানুষ দেখে কারো সামনে কান্না করতে পাড়ে নি তাই রুমে চলে গেলো। রিহু ও ইয়াদের পিছু পিছু গেলো।
আমি রুমে বসে চুপচাপ কান্না করছিলাম, আপুর জন্য অনেক খারাপ লাগছে। কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে আপুর সাথে।
তখন রোয়েন এসে আমার পাশে বসলো।
আমি নিজেকে না সামলাতে পেরে রোয়েন ভাইকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
তিনি আমাকে শান্তনা দিয়ে মাখায় হাত বুলিয়ে বললো কাঁদে না। ইমা তো আসবেই দুই দিন পর।
তবুও নিজেকে সামলাতে পারলাম না তার বুকে চুপটি করে কান্না করতে লাগলাম।
দেখি কি হয়েছে, এতো কান্না করলে হবে হুর পরী? দেখি আর কান্না করা লাগবে না এই বলে বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো। তারপরে কপালে চুমু দিয়ে আবারো বুকে জড়িয়ে নিলো। আমি তার বুকে চুপটি করে থেকে ফোঁপাতে লাগলাম।
যদি জানতাম এই জড়িয়ে ধরাতে আজ আমার নামের সাথে কলঙ্ক লেগে যাবে তাহলে কখনো আবেগের বশে এভাবে জড়িয়ে ধরতাম না।
আমি যখন ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাচ্ছিলাম তখন সেখান দিয়ে এক প্রতিবেশী যাচ্ছিলো। আর আমাদের এই অবস্থায় দেখতে সবাইকে ডেকে বাজে মন্তব্য করতে লাগলো।
নোংরা মেয়ে কোথাকার রুমে বসে ফুপাতো ভাইর সাথে নষ্টামি করছে। এইসব মেয়েদের লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। আরো কটু কথা বলছে অনেকে, আমার এবার কান্না করতে করতে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। এতো বাজে কথা আর নিতে পড়ছিলাম না।
আম্মুরা সবাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন আম্মু এসে রোয়েন ভাই কে বললো, তোমার উপর আমার পুরো ভরসা আছে। এখানে কি হয়েছে সব খুলে বলো।
রোয়েন ভাই সব খুলে বললো। আমার ফ্যামিলির সবাই বিষয় টা বুঝলো কিন্তু বাধ সাধলো কুটনি প্রতিবেশীরা।
সব এই নিজেদের এখন বাঁচানোর জন্য বানোয়াট কথা। আজকালকার মেয়েরা বিদায়ের সময় এই কাঁদে না আর এ নাকি বোনের বিদায়ের কষ্টে কেঁদে বুক ভাসাবে। এসব চরিত্রহীন মেয়েদের আমাদের চেনা আছে।
মুখ সামলে কথা বলবেন আর নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম রেগে বললো রোয়েন।
যত বড় মুখ নয় ততো বড় কথা। নিজেরা দোষ করে এখন বড় মুখে কথা বলতে আসছে।
রোয়েন ভাই কিছু বলতে নিলে আব্বু তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো আমাদের মেয়ে কি করেছে, না করেছে তা আমরা বুঝে নিবো। আপনাদের এতো নাক গলানো লাগবে না। আপনাদের এখানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে খেয়ে চলে যাবেন। আমার পরিবারকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে দু বার ভাববো না।
বিয়ে বাড়িতে ডেকে আমাদের অপমান করা হচ্ছে, আমরা কি সেধে সেধে এসেছি নাকি আপনাদের মেয়ের বিয়ে খেতে।
ইয়াদ রেগে বললো আপনাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় নি এটাই অনেক। বেড়িয়ে যান আমাদের বাসা থেকে।
তারা আরো কটু কথা শুনিয়ে দিতে দিতে চলে গেলো।
রোয়েন ভাই রাগের জন্য চুল খামছে ধরে বসে পড়লেন।
তখন রোয়েন ভাইয়ার আব্বু এসে বলে, দেখ রোয়েন আমরা জানি তোমাদের কোনো দোষ নেই কিন্তু সেটা শুধু আমরা জানি অন্য কেউই যানে না। তুমি ছেলে মানুষ তোমাকে কেউ কিছু না বললেও হুরকে সবাই কথা শুনাবে বাসা থেকে বের হলে। ও এটা সহ্য করতে পারবে না তখন ডিপ্রেশনে চলে যাবে ও। তখন কি হবে?
আব্বু আমি ওকে আজকের ভিতরেই বিয়ে করতে চাই, এবার তোমরা কি চাও সেটা ভেবে জানাও আমাকে এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই রিহু চিৎকার দিয়ে উঠলো।
পিছে তাকিয়ে দেখে হুর সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। এতো কিছু নিতে না পেরে জ্ঞান হারালো।
—————-
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমার আসেপাশে সবাই বসে আছে চিন্তিত হয়ে। আমি ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলাম।
আম্মু আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে কি হয়েছে মা কান্না করে না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আম্মু তোমরাও কি আমাকে তাদের মতো ভুল বুঝলে? বিশ্বাস করো আম্মু তারা আমাদের ভুল বুঝছে। আমাকে কতো অপবাদ দিয়ে গেলো তাঁরা আম্মু, আমি আর নিতে পারছি না আম্মু। পাগলের মত কান্না করতে করতে বললাম।
আম্মুও কান্না করে দিলো আমার অবস্থা দেখে। কে বলেছে মা আমরা তোমাকে ভুল বুঝেছি, আমরা জানি তোমাদের কোনো দোষ নেই। এতো বিচলিত হয় না মা, আমরা আছিতো তোমাদের পাশে। এভাবে কান্না করে না মা অসুস্থ হয়ে যাবে।
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম। আম্মু আমাকে শান্তনা দিচ্ছে।
পশের রুম থেকে হুরের কান্না শুনে রোয়েন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফললো। যারা আমার হুর পরীকে এভাবে কান্না করিয়াছে তাদের কাউকে আমি ছেড়ে দিবো না।
চলবে?
#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১১
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
আম্মু আমার কাছে একটা শাড়ি নিয়ে আসলো।
আম্মু শাড়ি কেনো?
দেখ মা আজ যা হয়ে গেছে তার সত্যি টা কিন্তু শুধু আমরা জানি। আর কেউ জানলেও তারা উলটা ঠেলবে। এ সমাজ তোকে শান্তিতে চলতে দিবে না মা। আমি মা হয়ে তা সহ্য করতে পরবো না। রোয়েন তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। রোয়েন ছেলে হিসেবে অনেক ভালো তা তুই ও জানিস। আমাদের ভুল বুঝিস না মা, তোর ভালোর জন্য এই বিয়েটা। তাহলে কেউ তোকে কথা শুনাতে পারবে না।
আম্মু আমি তোমাদের ছাড়া থাকবো কি করে। আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও থাকতে পারবো মা আম্মু।
পাগলি মেয়ে আমার কান্না করে না। দূরে কোথাও যাচ্ছিস নাতো। কাছেই তো তোর ফুপি বাড়ি। যখন মন চাইবে তখন চলে আসবি।
আম্মু আমাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে শাড়ি পরিয়ে দিলো তারপর নিজ হাতে সাজিয়ে দিলো। মেয়েটার মুখটা ফেকাসে হয়ে আছে।
কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, আদরের মেয়েটাকে আজ পরিস্থিতির চাপে পড়ে এতো তারাতাড়ি দূরে পাঠিয়ে দেওয়া লাগছে। কিভাবে থাকবো এই মেয়েকে ছাড়া আমি। নিজের মনের অবস্থাটা মেয়েকে বুঝতে দিলো না তাহলে মেয়েটা কান্না করতে করতে পাগল হয়ে যাবে। এমনি আজকে ওর উপর দিয়ে কতো কিছু বয়ে গেলো।
রাত বাজে এগারোটা, এখন রোয়েন আর হুরের বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। রোয়েন কবুল বলে দিলো। হুর কান্না করছে, গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।
সবাই মিলে হুরকে শান্ত করলো তারপর আস্তে ধিরে কবুল বললো।
বিদায়ের পালা এবার হুরকে কেউই শান্ত করতে পারলো না। আবারো জ্ঞান হারালো। সবাই কান্না করছে, বাড়ির দুই মেয়েকে একি দিনে বিদায় করতে তাদের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।
রোয়েন হুরকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
মিনা বেগম অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে, রোয়েন যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। কান্না করো না মামি, আমি ওকে কখনো আর কষ্ট পেতে দিবো না। আগলে রাখবো নিজের সবটা দিয়ে।
মিনা বেগম ভরসা পেলেন। রোয়েনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছেন। পাশ থেকে ইয়াসমিন বেগমকেও টেনে জড়িয়ে নিলো রোয়েন। তাদের কারো মন মানসিকতা এখন ভালো নেই । মেয়ে দুটোকে আজ পরের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।
তাদের কান্না একটু কুমে আসতে রোয়েন হানিফ সিকদার আর হামিদ সিকদারের কাছে গেলো। তাদের আস্বস্ত করে তাদের থেকে দোয়া নিয়ে গাড়িতে উঠলো। ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো মন খারাপ করে থাকিস না আমি কালকে হুরকে নিয়ে আসবো। সবাইকে সামলিয়ে রাখিস।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। আস্তে আস্তে তাদের ছাড়িয়ে গাড়ি চলে গেলো তার আপন গতিতে।
গাড়িতে বসে রোয়েন এক ধেনে তাকিয়ে আছে হুরের দিকে। মেয়েটার চোখ নাকমুখ ফুলে গেছে কান্না করতে করতে। বুকের ভিতর খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। মেয়েটার কষ্ট একদমি সহ্য করতে পারে না ও। একটু ঝুকে হুরের চোখে গভীর ভাবে চুমু খেলো। আর কখনো এক বিন্দু পরিমান কষ্ট পেতে দিবো না তোমাকে হুর পরী এই বলে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো।
বাসার সামনে গাড়ি আসতে রোয়েন হুরকে আবার কোলে তুলে নিলো। সোজা নিজের রুমে যেয়ে ওকে বেডে শুইয়ে দিলো। রোয়েনের পিছে পিছে সবাই আসলো।
আম্মু একটু পানি আনো ওর জ্ঞান ফিরাতে হবে আগে।
পানি নিয়ে আসার পরে ওর মুখে ছিটানো হলো। কিছুখন পরে আস্তে চোখ খুললো। চোখ খুলে নিজেকে নতুন জায়গায় আবিষ্কার করলাম।
আস্তে আস্তে আমাদের বিয়ের কথা মনে পরলো। আমাকে তাহলে এই বাসায় নিয়ে আসলো।
ফুপি আম্মু কোথায়?
মুচকি হেসে বললো পাগলি মেয়ে আমার। আম্মু বাসায় আছে কালকে যেও আম্মুর কাছে। আজকের দিনটা এই আম্মুর কাছে থাক। কি এই আম্মুকে কি পছন্দ হয় নি?
মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলাম ফুপিকে।
চোখ গেলো সোফায়। রোয়েন ভাই বসে আছে চুপচাপ।
ফুপা বললো এখন চলো সবাই ওরা রেস্ট করুক। ওদের উপড় দিয়ে আজকে অনেক কিছু গেছে। এই বলে সবাই চুপচাপ চলে গেলো। আর বলে গেলো খাবার উপড়ে পাঠিয়ে দিবে ওদের জন্য।
কষ্ট ভুলে গিয়ে এখন একরাশ লজ্জা হানা দিলো আমার ভিতরে। ইসস রোয়েন ভাই এখন আমার হাসবেন্ড, আমরা এক সাথে ঘুমাবো। ভাবলেই গা কাটা দিয়ে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
রোয়েন বেডের কাছে এগিয়ে আসলো। হুরের পাশে যেয়ে ওর গালে হাত রেখে বললো শরীর কেমন লাগছে এখন?
একটু ভালো লাগছে।
যাও ফ্রেশ হয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে আসো।
উঠতে নিলে পড়ে যেতে নিলাম শরীরে এক ফোটাও শক্তি নেই।
রোয়েন তারাতাড়ি ধরে ফেললো হুরকে। তারপর ধরে নিয়ে ওয়াশরুমের দিয়ে আসলো। লাগেজ থেকে একটা টি শার্ট আর প্লাজু নিয়ে দিয়ে আসলো ফ্রেশ হয়ে পাড়ার জন্য।
হুর ফ্রেশ হয়ে বের হতে রোয়েন ওকে ধরে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো।
তু্মি একটু ওয়েট করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, এ বলে যেয়ে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি বদলে আসলো।
এর ভিতরেই দরজায় টোকা দিলো হিরা বেগম।
রোয়েন যেয়ে দেখে খাবার নিয়ে এসেছে। খাবার টা ভিতরে রেখে তিনি চলে গেলো। রোয়েন দরজা আটকিয়ে হুরের পাশে বসলো।
খাবার মেখে হুরের সামনে খাবারের লোকমা বাড়িয়ে দিলো। হুর চমকে তাকালো রোয়েনের দিকে, এক দিনে লোকটার কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কতটা যত্নশীল লোকটা, এক ভালো লাগা ছেয়ে গেলো পুরো শরীরে।
হা করো।
হুর আস্তে করে হা করলো। রোয়েন একটু একটু করে খাইয়ে দিচ্ছে।
আর খাবো না পেট ভরে গেছে।
আরেকটু খেতে হবে শরীর তোমার দূর্বল, এতো কম খেলে সুস্থ হবে কি করে। সুস্থ না হলেতো কালকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাবো না।
বাসায় যাওয়ার কথা শুনে আবার খেতে লাগলাম। সুস্থ হতে হবে তারাতাড়ি। আর নাহলে কালকে যেতে পারবো না। আমিতো কাল এই যাবো।
রোয়েন হুরকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নিলো। তারপর হাত ধুয়ে হুরের পাশে যেয়ে বসলো।
অনেক রাত হয়েছে এবার চুপচাপ ঘুমাবে। এই বলে লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জালিয়ে দিয়ে হুরকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। তার এতো বছরের তৃষ্ণা মিটলো আজকে। বুকের ভিতর শান্তি লাগছে আজকে তার।
এইদিকে হুর খনে খনে কেঁপে উঠছে। মানুষ টা ওর এতো কাছে ভাবতে বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করছে। এভাবেই রোয়েনের বুকের সাথে লেগে ঘুমিয়ে পড়লো।
শেষ রাতের দিকে রোয়েন তার শরীরে গরম কিছু অনুভব করলো। ঘুম ভাঙতেই দেখলো হুরের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
রোয়েন তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলে দেখলো হুর ওকে ঝাপটে ধরে আছে। হুরের হাতটা আস্তে করে সরিয়ে উঠে যেয়ে পানি এনে একটা কাপড় ভিজিয়ে কপালে দিতে লাগলো। এভাবে অনেক সময় দেওয়ার পরে জ্বরের তাপ একটু কুমলো।
ফজরের আজান দিয়েছে। রোয়েন নামাজটা পড়ে আবার যেয়ে শুয়ে পড়লো। হুরকে কাছে টেনে নিতেই পাখির ছানার মতো চুপটি করে রোয়েনের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো। রোয়েন মুচকি হেসে হুরের কপালে একটা চুমু খেয়ে আরো শক্ত করে হুরকে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে?