লুকানো অনুভূতি পর্ব-০৫

0
770

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ৫
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

একটু পরে হুরদের কাছে এসে হাজির হলো রিহু।

ইয়াদ রিহুকে দেখে বললো আসছে লেট লতিফ।

ইয়াদের কথা শুনে রিহু তেলে বেগুনে জলে উঠলো। কি বললে তুমি, আমি লেট লতিফ। তোমার জন্যই তো আমার লেট হয়, সারা রাত জেগে কথা বলবা আর সকালে দেরি করে উঠলেই বলবা লেট লতিফ।

তু্মি একা মনে হয় জেগে থাকো, আমিওতো থাকি তাহলে আমি উঠি কিভাবে?

সেটা তুমি জনো, আমাকে খোচা মারছো না তোমার সাথে আর কথাই বলবো না, চল হুর এখান থেকে এই বলে হুরের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।

হুর তো এদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। হ্যা হুর রিহু আর ইয়াদের রিলেশনের কথা সব জানে। রিহুর পেটে কোনো কথা থাকে না। হুরকে সব না বলা পযন্ত পেটের ভাত হজম হয় না। তাই রিলেশনে জরানোর সাথে সাথে হুরকে সব বলে দিছে।

এইদিকে ইয়াদের মাথায় হাত। মহারানি রেগে গেছে, এখন এই রাগ ভাঙাতে যে কতো কাঠখর পোরাতে হবে এটা শুধু ওই যানে। কেনো যে খোচাতে গেলাম, নিজের পায়ে নিযে কুরোল মারলাম।

রিহু আর হুর ক্লাসে চলে গেলো। সব ক্লাস করে রিহু হুরকে সাথে নিয়ে ওদের বাসায় চলে গেলো।

বাসায় যেয়ে কলিংবেল চপতেই হিরা বেগম এসে গেট খুনে দিলো।

হুর ফুপিকে পেয়েই ঝাপটে ধরলো। কেমন আছো ফুপ্পি?

এইতো মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই কেমন আছিস? ফুপিকেতো ভুলেই গিয়েছিস।

কে বলেছে আমি আমার ফুপিকে ভুলে গেছি, এইযে দেখা করতে চলে আসলাম।

আয় মা ভেতোরে আয়। এই বলে ফুপি নিয়ে ছোফায় বসিয়ে দিলো। তারপর শুরু হয়ে গেলো দু’জনের গল্প করা।

এইরে গল্পের জন্য তো ভুলেই গেলাম তুই কলেজ থেকে এসেছিস, যা ফ্রেশ হয়ে আয়।

আলসেমির জন্য যেতে চাইলাম না, ফুপি জোর করে পাঠিয়ে দিলো উপরে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

অনেক ঘুম পাচ্ছিলো, উপরে উঠে ঘুম ঘুম চোখে সামনে যেই রুম পেলাম সেটায় ডুকে ওয়াশরুমের ডুকে গেলাম। যেয়ে চোখমুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বেরিয়ে এসে আমার চোখ কপলে, একি আমি রোয়েন ভাইর রুমে আসলাম কি করে। উনে দেখলে সরবনাস হয়ে যাবে। তারা তারি এই রুম থেকে পালাতে হবে এই ভেবে যেই দৌড় দিবো অমনি একটা হাত এসে আমাকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। ভয়ে আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেল্লাম। একটু পরে চোখ খুলতে আরো ভয় পেয়ে গেলাম, কারণ রোয়েন ভাই আগুন চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে। ভয়ে ডুক গিল্লাম আমি।

কলেজে এতো সেজে জাস কেনো? কলেজে পড়ালেখা করতে জাস নাকি নিজের রুপ দেখাতে জাস। নেক্সট টাইম যদি দেখছিনা লিপস্টিক দিয়ে কলেজে গিয়েছিস, চরিয়ে একদম গাল লাল করে ফেলবো।

তার ধমকে ভয়ে আমার কলিজা সুকিয়ে গিয়েছে। সামান্য একটু লিপস্টিক দিওয়াতে এতো ক্ষেপা লাগে। আমার ঠোঁট আমি লিপস্টিক দিবো তাতে তার কি। তাই একটু সাহস জুগিয়ে বল্লাম, আমার ঠোঁট আমি লিপস্টিক দিবো তাতে আপনার কি?

কথাটা বলে আরো ভুল করে ফেল্লাম, এতে রোয়েন আরো চটে গিয়ে আরো জোরে হাত চেপে ধরলো। মুখে মুখে তর্ক করছিস, মুখ একদম ভেঙে দিবো। দিন দিন সাহস বারছে তোর এই বলে হাতটা আরো জোরে চেপে ধরলো।

হাতে অনেক ব্যথা অনুভব করলাম। ভাইয়া লাগছে হাত ছারুন।

উনি ছারলেন তো না উল্টো আরো জোরে চেপে ধরলেন। এটাই তোর শাস্তি, আর জীবনে যাবি সেজে?

ব্যথায় আমার চোখে পানি চলে আসলো, আমার চোখের পানি দেখে হাতটা একটু আলগা করলো। হাত ছেরে দিয়ে এক হাত আমার এক পাশে রেখে আরেকটু কাছে এসে আরেক হাত আমার ঠোঁটে রাখলো। চমকে কেঁপে উঠলাম আমি, এতোখনে খেয়াল হলো সে আমার এতো কাছে। বুকের ভিতোর হাতুরি পেটানো শুরু করলো। খনে খনে কেঁপে উঠছি তার স্পর্শে।

উনি তার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিলেন। আমার কোমল ঠোঁট তার হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো। এইদিকে তার এতো কাছে আসা তার উপর ঠোঁটে হাত রাখাতে নিঃশ্বাস আটকে আসছে আমার। শ্বাস নিতে ভুলে গেলাম, বুকের ভিতর ধুকপুক ধকপুক করছে।

আর কখনো যেনো লিপস্টিক দিয়ে কলেজে যেতে না দেখি, এই বলে উনি সরে গিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেলেন।

আমি থ হয়ে দারিয়ে রইলাম। ভারি ভারি নিঃশ্বাস নিলাম, এতোখন দম আটকে আসছিলো। ভাবতে লাগলাম উনার এই আচরোনের মানে কি, কিন্তু মাথায় কিছু আসছে না। হঠাৎ ওয়াশরুমে পানির শব্দে হুস আসলো আমার। হয়তো উনি সাওয়ার নিচ্ছে এই ফাকে আমি তারিঘরি করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। এক দৌড়ে রিহুর রুমে গিয়ে হাঁপাতে লাগলাম।

কিরে কি হয়েছে হাঁপাচ্ছিস কেনো?

ক..কই কি..ছু ন..নাতো।

আরে রিলাক্স তুই তোতলাচ্ছিস কেনো? আর এতো হাঁপাচ্ছিস কেনো?

কিছুখন চুপ থেকে নিজেকে সাভাবিক করলাম। আরে নিচ থেকে দৌরে শিরি বেয়ে উপরে উঠার জন্য হয়রান হয়ে গিয়েছিলাম তাই হাঁপাচ্ছিলাম।

তাহলে তোতলাচ্ছিস কেনো? সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বললো রিহু।

তুই কি গোয়েন্দাগিরি শুরু করলি সর এখান থেকে আমি ফ্রেশ হবো এই বলে আবারও ওয়াশরুমে ডুকে গেলাম।

যা বাবা গোয়েন্দাগিরি কোথায় করলাম, হলো কি এর আবার।

হুর ওয়াশরুমের ডুকে দেখে হাত লাল হয়ে আছে, অনেক জ্বালা করছে। হাতে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। তারপর এক সাথে হুর আর রিহু খাবার খেতে নিচে চলে গেলো।

হিরা বেগম ওদের ভাত বেরে দিচ্ছিলো তখন রোয়েন এসে একটা চেয়ারে বসলো। বসার পর সবার আগে চোখ গেলো হুরের হাতের দিকে। দেখে লাল হয়ে আছে, নিজের উপর এবার রাগ হলো এতো জোরে না ধরলেও হতো। না চাইতোও রাগের বসে আঘাত করে ফেললো।কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে রোয়েন চলে গেলো।

হুর আর রিহু ও চলে গেলো রুমে। হুরের আনেক ঘুম পেয়েছে তাই জেয়ে ঘুমিয়ে পরলো আর রিহু ইয়াদের সাথে রাগ দেখাতে ব্যস্ত।

এখন কেনো আমার সাখে কথা বলতে আসছো তখন তো ঠিকি খোচা মেরেছিলে। তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।

সরি জান এই কানে ধরলাম আর কোনো দিন খোচা মারবো না, এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।

না আমি কোনো কথা শুনতে চাই না, খবরদার আমাকে আর ফোন দিবা না।

এইদিকে ইয়াদ নানান কথা বলে রিহুর রাগ ভাঙাতে লাগলো। অবশেষে অনেক কাঠখড় পুরিয়ে রাগ ভাঙাতে সক্ষম হলো৷

ঘুম ভাঙলো সন্ধার পরে। উঠে দেখি রুমে আর কেউই নেই। ভাবলাম নিচে আছে সবাই তাই একটু ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেলাম। যেয়ে দেখি ফুপা, ফুপি আর রিহু মিলে গল্প করছে।

আমি জেতেই ফুপি বলে উঠলো ঘুম ভাঙলো তোর, বোস আমি চা নাস্তা নিয়ে আসি সবার জন্য। এই বলে ফুপি কিচেনে আলে গেলো।

রিফাজ চৌধুরী বললো হুর মামনি কেমন আছ?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো ফুপা। আপনে কেমন আছেন।

আছি মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

ফুপি চা নাস্তা নিয়ে আসলো। আমরা গল্প করলাম আর খেলাম।

একটু পরে আমি আর রিহু চলে গেলাম ছাদে। যেয়ে দুজনে আড্ডা দিতে লাগলাম। আড্ডার এক পর্যায়ে আমি বল্লাম…

কিরে রোয়েন ভাইকে দেখলাম না যে, সে কি বাসায় নেই?

কেন আমার ভাইকে মিস করছিস বুঝি। মুখ টিপে হেসে বললো রিহু।

রিহুর বাচ্চা উলটা পালটা কথা বলবি না, আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম।

হয়েছে হয়েছে বুঝি আমি। আমার ভাইকে মিস করছিলি বলে দিলেইতো পারোস।

তোর আজকে খবর আছে এই বলে ওর পিছে ছুটতে লাগলাম ছাদের আন্ধকারেই। ছোটাছুটির এক পর্যায়ে রিহু দৌড়ে নিচে নেমে গেলো, আমিও ওর পিছে দৌরে নামতে লাগলাম তখনেই কার সাথে যেনো ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিয়েছিলাম। পরে যাওয়ার আগে সে আমার কোমর জরিয়ে ধরে পরা থেকে বাচিয়ে দিলো।

ভয়ে আমি শেষ, ভালো করে সামনে তাকাতেই দেখি রোয়েন ভাই ধরে আছে আমাকে। এবার আমার কান্না পেলো, সবসময় কেনো তার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরা লাবে।

তুই কি জীবনেও ঠিক হবি না হুর? সবসময় এতো ছোটাছুটি কেনো করা লাগবে তোর। এখন এইতো পরে কোমর ভাঙতি। এই বলে আমাকে সোজা করে দার করিয়ে দিলো।

ভাইয়া রাগ না দিয়ে এমন সান্ত ভাবে কথা বলায় বেশ অবাক হলাম। তবুও ছোট করে বললাম সরি ভাইয়া।

যা নিচে যা সাবধানে চলা ফেরা করবি। এই বলে সে ছাদে চলে গেলো।

আমি আসতে ধিরে নিচে নেমে আসলাম, আর ভাবতে লাগলাম ভাইয়ার এই আচরণের মানে কি? সেকি সত্যি আমাকে ভালোবাসে? না না কি ভাবছি আমি, সে আমাকে ভালোবাসতে যাবে কেনো।

নিচে যেয়ে রিহুকে রুমে পেয়ে ওকে বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলাম, তোর কারনে ছুটাছুটি করে লাস্টে সব দোস এসে আমার ঘারে পরে। আজকে তোর খবর আছে।

রিহু মুখ টিপে হেসে বলে আজকেতো আর পরে জাস নাই ভাইয়াতো ধরেই ফেলেছে।

আমি চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। তার মানে লুকিয়ে লুকিয়ে তুাই সব দেখেছিস।

ইসসস কি রোমান্টিক সিন ছিলো। হুরের কথায় পাত্তা না দিয়ে রিহু বললো।

রিহুর বাচ্চা সব তোর জন্য হয়েছে আর এখন বলছিস রোমান্টিক সিন, আজকে তোর খবর আছে এ বলে বালিশ নিয়ে রিহুকে আবার মারা শুরু করলো, এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে দুজনে এক সাথে পাশাপাশি সুয়ে পরলো।

হুর……

হুম…

আমার ভাবি হয়ে যা না।

আবার শুরু করলি, এবার কিন্তু তোকে আস্ত রাখবো না।

আচ্ছা বাবা আর বলবো না এতো ক্ষেপোস কেনো।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে