লুকানো অনুভূতি পর্ব-০৪

0
855

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ৪
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

রাতে বেলকোনিতে চুপচাপ বসে আছে রোয়েন। কিছু একটা গভীর ভাবে ভাবছে। মনে পরে গেলো দুপোরের কথা….

রোয়েন দুপুরে এসে পরার সময় হুরের রুমেট কাছে আসতে মনে পরলো ওর জন্য চকলেট কিনে ছিলো রাগ ভাঙানোর জন্য, কিন্তু চকলেট দিতে তো ভুলেই গেলাম, এই বলে ওর রুমে ডুকলোম চকলেট দওয়ার জন্য। কিন্তু রুমে যেয়ে দেখি হুর এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে। আসতে আসতে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে আসতে করে বসলাম। তাকালাম ওর মায়াবি মুখটার দিকে। কি নিস্পাপ লাগছে, ঐদিকে কে বলবে এই মেয়ে ঘুম ভেঙে গেলে এতো দুষ্টামি করে ছোটাছুটি করে।
আলতো করে কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিলাম। তাকিয়ে রইলাম ওই নিস্পাপ মুখটার দিকে। একটু ওর দিকে ঝুকে ওকে দেখতে লাগলাম।

কবে বড় হবি তুই হুর পরি? আর কতোদিন আমি আমার অনুভুতিগুলো লুকিয়ে রাখবো? আমি যে আর পারছি না, দিন দিন তুই আমাকে কতোটা দূর্বল করে দিচ্ছিস হুর পরি তা তুই নিযেও যানিস না।
তোকে বকা দিলে যখন অভিমান করে গাল ফুলিয়ে থাকিস ইচ্ছে করে টুক করে গালে কামড় দিয়ে বসি কিন্তু আমি যে এখন তা করতে পারছি না।
তুমি এতো কেয়ালেস কেনো হুর পরি? ছোটাছুটি করে তুমি ব্যথা পেলে যে সেই ব্যথা এসে আমার বুকে লাগে, কেনো বুঝিস না তুই তা। কবে বুঝতে পারবি তুই আমাকে, কবে বড় হবি হুর পরি। তারা তারি বড় হয়ে যানা, তোকে ছারা আমার ভিতোরটা পুরে যাচ্ছে কবে বুঝবি তুই?

আচমকা চোখ চলে গেলো হুরের গলার কলো তিলটার দিকে। ফরসা শরীর এ কলো তিলটা ফুটে উঠলো, শুকনো ডোক গিললো রোয়েন। নিযেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে গেলো। হতটা চলে গেলো তিলটার উপরে, আলতো করে ছুয়ে দিলো তিলটা। ঘুমের মাঝেই কেপে উঠলো হুর, নিঃশব্দে হাসলো রোয়েন হুরের কান্ডে। মেয়েটা ঘুমের মাঝেও কাপে।

আরো কিছু সময় হুরের মায়াবি মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কপালো আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো। আবারও কেপে উঠলো হুর। হেসে ফললো রোয়েন। তারপর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে চকলেট গুলো টেবিলের উপরে রেখে চলে গেলো রোয়েন……

ভাইয়া…

রিহুর ডাকে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসলো রোয়েন।

রিহু ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে।

কি হেয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?

তাকিয়ে থাকবো না তো কি করবো, সেই কখন থাকে ডাকছি তোমার তো হুস এই নাই। আবার একা একা হাসছো, কোন জগতে ছিলে? ঘটনা কি…

রোয়েন থতোমতো খেয়ে বসলো, আমতা আমতা করে বললো ওই ফানি একটা কথা মনে পরছিলো তাই হাসছিলাম। ডাকছিলি কেনো?

ফানি ঘটনা মনে পরছে নাকি হুরের কথা মনে পরছে তা বলো ব্রু নাচিয়ে বললো রিহু।

মাইর দিয়ে ভুত বানিয়ে দিবো, ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাই।

কথা ঘুরানো লাগবে না, আমি যানি তুমি হুরের কথাই ভাবছিলে মুখ ভেঙচিয়ে বললো রিহু।

তবে রে…. এই বলে রোয়েন রিহুকে ধরতে নিলে রিহু ছুটে পালালো। যাওয়ার আগে বলে গেলো আব্বু আম্মু খেতে ডাকছে।

রোয়েন নিচে নেমে আসলো। এসে ডাইনিং টবিলে বসলো।

তখন রিফাজ চৌধুরী বললো, কি অবস্থা তোমার ব্যবসায় জয়েন করবে কবে? আমি একা হাতে আর কতো সামলাবো।

এইতো আব্বু সামনে ফাইনাল পরিক্ষা, ওটা শেষ হলেই জয়েন করবো।

তাই করো। রিহু মা তোমার কলেজ কেমন কাটলো প্রথম দিন? কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো?

না আব্বু কোনো সমস্যা নেই। কলেজ ভালোই কেটেছে।

কোনো সমস্যা হলে রোয়েনের কাছে বোলো, ওতো ভার্সিটিতে থাকেই।

হ্যা আব্বু বলবো সমস্যা হলে।

হিরা বেগম বললো হ্যারে আজকে নাকি হুর কেলেজে পরে গেছিলো। পরলো কিভাবে?

রোয়েন পাশ থেকে বলে উঠলো সারা দিন ছোটাছুটি করলেতো পরবেই।

মেয়েটাযে এতো দুষ্টু, এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলো।

এরপর আর কথা হলো না, সবাই চুপচাপ খেয়ে যার যার রুমে চলে গেলো।

পরের দিন সকাল বেলা…

আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে। নিচে যেয়ে দেখি দাদি, আব্বু, বড় আব্বু ব্রেকফাস্ট করছে , আম্মু আর বড় আম্মু খাবার বেরে দিচ্ছে। আমি যেতে বড় আব্বু বলে উঠলো গুডমর্নিং মামোমি।

গুডমর্নিং বড় আব্বু, এই বলে আব্বুর পাশে বসে পরলাম।

হামিদ সিকদার বললো, আজ এতো তারা তারি উঠলে যে? কলেজ আছে নাকি?

জি আব্বু, এই জন্যই তারা তারি উঠলাম।

গুড.. নতুন কলেজে কেমন লাগছে? সব কিছু ঠিকঠাক তো?

হ্যা আব্বু আমার খুব ভালো লেগেছে কলেজ , সবকিছু ঠিকঠাক।

হানিফ সিকদার তখন বলে উঠলো তো মামনি শুনলাম কালকে নাকি ছুটাছুটি করে পরে গিয়েছো? এখনো বাচ্চাদের মতো ছুটলে হবে মামুনি? সাবধানে চালাফেরা করবে ওকে?

ওকে বড় আব্বু। এই বলে খাওয়া শুরু করলাম।

তখন নিচে আসলো ইমা আপু আর ইয়াদ ভাইয়া। সবাই এক সাথে খাওয়া শুরু করলাম।

আব্বু আর বড় আব্বু খেয়ে চলে গেলো আফিসে।

ইয়াদ ভাইয়া আমাকে আর ইমা আপুকে উদ্দেশ্য করে বললো তারা তারি দুইটায় রেডি হয়ে নিচে আয়, আর নাহলে রেখে চলে যাবো।

ইসস আসছে পরবো না, তুমি জানোনা মেয়েদের রেডি হতে সময় লাগে।

ইয়াদ ভাইয়া আমার মাঠা গট্টা মেরে বললো, আটা ময়দা মাখলে তো সময় লাগবেই। এখনকার মেয়েদে আসল ফেইস দেখাই যায় না আটা ময়দার জন্য।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি আর ইমা আপু ক্ষেপে গেলাম। ইমা আপু রেগে বলে ওটা আটা ময়দা না ওটা মেকআপ। এখন পযন্ত মেকআপ টা চিনলি না, বড় হেয়েছিস হাতে পায়ে।

হয়েছে মেকআপ নাকি আটা ময়দা তা আমরা জানি। এখন যেয়েইতো আটার বস্তা নিয়ে বসবি দুইটায়।

ভাইয়া…. এবার কিন্তু খারাপ হচ্ছে এই বলে আমি আর ইমা আপু ভাইয়ার পিছে ছুট লাগালাম। ভাইয়া তো ভো দৌড়, জীবন বাঁচাতে হলে পালাই।

এদের ভাই বোনদের খুনসুটি দেখে মিনা,ইয়াসমিন আর হালিমা বেগম উচ্চসরে হেসে উঠলো।

রুমে এসে রিহুকে কল করলাম, ফোন রিসিভ করছে না। নিশ্চিই এখনো ঘুমাচ্ছে, এই মেয়েটা যে এতো ঘুম পাগলি। ওকে ফোনে না পেয়ে শেষ মেশ ফুপিকে ফোন করলাম।

হ্যালো আসসালামু আলাইকুম ফুপি, কেমন আছো?

ওয়ালাইকুমস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই কেমন আছোস?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ফুপি রিহু কোথায়? ওকে ফোনে পেলাম না যে।

রিহুর কথা আর কি বলবো পরে পরে ঘুমাচ্ছে, সেই সকাল থেকে ডাকতে ডাকতে গলা ব্যথা হয়ে গেছে আমার।

ওযে এতো ঘুমাতে পারে, তারা তারি ডেকে দাও ওকে কলেজে লেট হয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা আমি ডেকে দিচ্ছি, তুই রিহুর সাথে আমাদের বাসায় আসিস আজকে।

আসবো ফুপি, এখন রাখি রেডি হবো। রহুকে তুমি তারা তারি ডেকে দাও আল্লাহ হাফিয। এবলে ফোন কেটে দিয়ে রেডি হতে থাকলাম।

একটু পর রেডি হয়ে নিচে আসলাম আমি আর ইমা আপু। পরে ইয়াদ ভাইয়ার সাথে আমরা চলে গেলাম কলেজে। ইমা আপু ও ওই ভার্সিটিতে পরে তাই সবাই এক সাথে যাওয়া যা।

এই রিহু কলেজে কি আজকে যাবি না, কয়টা বেঝেছে তোর খবর আছে। ঘুমথেকে ওঠ তারা তারি ।

কয়টা বেজেছে আম্মু ঘুম যরানো কন্ঠে বললো রিহু।

৯:৩০ বেজেছে তুই পরে পরে ঘুমা, ওইদিকে হুর তোকে ফোন করতে করতে হয়রান।

কি? সারে নয়টা বাজে তুমি আমাকে এখন ডাকছো। বলেই তারা তারি উঠে ফোন চেক করে দেখে হুর অনেক গুলো কল দিয়েছে।

থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো সেই সকাল থেকে ডাকতেছি, তুই নিজেইতো আরেকটু ঘুমাই বলে আর উঠোস না।

জোর করে উঠাতে পারলে না, এখন যাবে লেট হয়ে। এই বলে তারা তারি ওয়াশরুমের ডুকে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে যেয়ে দেখি আম্মু খাবার বারছে। খাবোনা বলে চলে যেতে নিলে আম্মু জোর করে কিছু খাইয়ে দিলো।

এইদিকে হুর কলেজে যেয়ে চারে দিকটা এটুক ঘুরে দেখছে। কালকে কতো কিছু হয়ে গেলো তাই কিছু আর তেমন দেখা হয় নাই।

আজকে হুর একটা কলো থ্রিপিস পরেছে, মেচিং করে কালো চুরি আর হালকা গোলাপি কালার একটু লিপস্টিক ব্যস হয়ে গেলো, এতেই হুরকে পরির মতো লাগছে।

হটাৎ সামনে একটা ছেলে এসে বললো কলেজে নতুন নাকি? কোন ইয়ার এর?

জি ভাইয়া নতুন, র্ফাস্ট ইয়ারের।

ওহ্। হ্যালো আমি রনি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরি। তোমার নাম কি?

জি ভাইয়া মিহি ইসলাম হুর।

বিউটিফুল নেইম। আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা পছন্দ করি না, সোজা সাপ্টার বলছি আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে। আই লাভ ইউ।

হুর হকচকিয়ে গেলো, এমন ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

তখন সেখানে উপস্থিত হলো ইয়াদ। কি হচ্ছে এখানে?

ইয়াদ কে দেখে রনি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো…. না ভাইয়া তেমন কিছু না। একটু কথা বলছিলাম।

জুনিয়র দের সাথে তোমার কি কথা, কথা বলছিলে নাকি ডিসটার্ব করছিলে। ও আমার বোন হয়, আর কখনো যেনো ওর আসে পাশে না দেখি।

সরি ভাইয়া, আর কখনো এমন করবো না এই বলে মাথা নিচু করে চলে গেলো।

চলবে?

ভুল এুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে