গল্পঃ লীলা বোর্ডিং, ১২১৫।
খন্ডঃ ০১
লেখকঃ Borhan uddin
যুবতীর রাণী গোলাপি রঙের কামিজ ভিজে গিয়ে অন্তর্বাসের হুকটা স্পষ্ট ঠেকছে হুট করে আসা আলসে বৃষ্টির বদৌলতে। বাঁ হাতে নীল রঙা মস্ত কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে বোর্ডিং গেঁটের সামনে। গেটে সাদা রঙে গোটা গোটো অক্ষরে লেখা, “লীলা বোর্ডিং,তেজগাঁও -১২১৫ “। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের ছিপছিপে গড়নের শায়লার অজগরসম চুলের ডগা হতে পানি পড়ে তা তেজগাঁওয়ের ড্রেন গাড়িয়ে এতক্ষণে হয়তো কাওরান বাজার পৌঁছে গেছে তবুও বোর্ডিং এর ভেতর থেকে কেউ গেট খুলতে আসছে না এতবার ডাকাডাকির পরেও। শায়লার নিশ্চলতা দেখে বোর্ডিং এর মুখোমুখি থাকা চায়ের দোকান থেকে হারু মিয়া গলা ছেড়ে বলল, বোর্ডিং এ ঢুকবেন নি? শায়লা উত্তরে কেবল বার দুয়েক মাথা ঝাঁকায়। হারু মিয়া চায়ের কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে বৃষ্টির শব্দকে পরাস্ত করে গলা উঁচিয়ে বলল, “হাসাইন্যা রে, গেট খোল হারামজাদা ” এইডা কইয়া ডাক দেন, গেট খুলব তাইলে। শায়লা আরো বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, তার মুখ দিয়ে হারুর শিখিয়ে দেয়া বোল বেরোয় না। হারু মিয়া আর ওদিকে ফিরে তাকায় না কাস্টমারদের ভীড়ে। শায়লা ওড়না চিপে নিয়ে ভালোভাবে মাথায় পেঁচিয়ে এবার গলা ছেড়ে ডাক দিল, হাসান ভাই, গেটটা খোলেন একটু। বার কয়েক ডাকতেই গেট খুলে গেল। ভেতর থেকে কেউ একজন উঁচু গলায় বলল, কী চান?
-আমি শায়লা, আমার আসার কথা ছিল।
ও, আপা কইছিল। ভিইজা গেছেন একবারে, আহেন আহেন৷
শায়লা গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। হাসানের পেছন পেছন সে গেস্টরুমে এসে বসে। হাসান একটা আধভিজা গামছা শায়লার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, আপনার রুম নম্বর, তেরো। আরো দুইজন আছে, একজনের নাম শ্রাবণী আপা, আরেকজনের নাম কানিজ আপা। দুইজনে ভালো মানুষ। আপনার কপাল ভালো যে কেয়া আপার রুমে পড়েন নাই। পড়লে খবর আছিল। যাই হোক, আপনি দরজাটা বন্ধ কইরা কাপড়টা বদলাইয়া নিয়া দুই তালার বাঁমদিকে কয়েক কদম হাটলেই আপনার রুম পাইবেন।
শায়লা মাথা নাড়িয়ে হাসানকে প্রস্থানের নীরব সম্মতি দিতেই হাসান বেরিয়ে যায়। শায়লা ব্যাগ খুলেই বয়ামে রাখা বিস্কুট থেকে দুটো বিস্কুট খেয়ে নেয়, খিদেতে মাথা ঘোরাচ্ছিল তার। আগে মাথা ঘোরা বন্ধ হোক তারপর না হয় কাপড় বদলানো যাবে।
লীলা বোর্ডিং এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ছত্রিশ। বোর্ডিং মালিক লীলা হালদার চাইলেই এক রুমে পাঁচজনকে ঢোকাতে পারেন,তবে সেটা করলে বোর্ডিং এর পরিবেশ নষ্ট হবে, ছিমছাম ভাবটা থাকবে না বলেই সে আপোষে নারাজ। তিনি মাসে একবার দুবার আসলে আসেন এদিকে, তার হয়ে সমস্ত দেখাশোনা করেন তার দুঃসম্পর্কের ভাগনি রুবাইয়া জাহান । রুবাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ইতিহাসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হলেও তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় সম্রাট শাহজানকে কে বন্দি করে কারাগারে পাঠিয়েছিল তখন রুবাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলবে, সম্রাট শাহজানকে নিশ্চয়ই কারাগারে পাঠানোর পেছনে বিরোধী দলের হাত রয়েছে। বস্তুত সে ক্ষমতাসীন দল “কেপিপি পার্টির” ছাত্রী নেত্রী হওয়ায় ইতিহাসের “ই” টাকেও কখনো দুদন্ড সময় নিয়ে পড়ে দেখেনি, তার যত ব্যস্ততা কোথায় কবে সেমিনার, আন্দোলন, র্যালী আছে সেসব নিয়েই। দলেত সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদের স্বপ্নে সে দিনরাত বিভোর থাকে। দল থেকে তাকে ছাত্রী হলের আস্ত একটা রুম দেয়া হলেও সে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকে না কেবল এই বোর্ডিং এর প্রতি মায়া আর দায়িত্ববোধ থেকেই।
এই ভেতরে কে? দরজায় লাগাইছেন কেন?
রুবাইয়া বেশ জোরেই লাথি মারে গেস্টরুমের দরজায়। ভেতর থেকে নরম গলায় উত্তর আসে, কাপড়টা বদলাচ্ছি যে আপা, খুলতিছি দাঁড়ান। এমন অপরিচিত গলা শুনে রুবাইয়া আর মেজাজ দেখায় না, এই বোর্ডিং এর কারো সাথেই সে মেজাজ দেখায় না তবে তার হাতে থাকা রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখাতে মাঝেমধ্যে রিক্সাওয়ালা, বাউন্ডুলে বাইকারকে পান থেকে চুন খসলেই থাপ্পড় মারতে গিয়েও মারে না। বোর্ডিং এর বেলায় রুবাইয়া একদম যেন মাটির মানুষ।
দরজা খুলে গেল। অপরিচিতার মুখটা মায়ায় ঠাসা, কোমল স্নিগ্ধতার খেলা এই মুখজুড়ে। রুবাইয়া ঈষৎ হেসে বলল,এখানে কাপড় বদলাচ্ছিলেন কেন? আপনাকে তো চিনলাম না।
-আমি শায়লা, দোতলার তেরো নম্বর রুমে ওঠার কথা ছিল আমার।
ও, আচ্ছা আচ্ছা। আপনিই সেই!গতকাল পুরো একবছরের বোর্ডিং খরচ দিয়ে গেল আপনার জন্য, কে উনি?
শায়লা ঐ সম্পর্কের কী নাম দেবে সেটা খুঁজে পায় না, ব্যতিব্যস্ত হয়ে দ্রুত গলায় বলে, ও উনি…উনি তো আমার, ইয়ে, মানে আমার ভাই।
রুবাইয়া স্পষ্ট দেখে শায়লার মুখ জুড়ে বিব্রত হবার আভা, কোনো কিছু লুকানোর প্রয়াস। সম্পর্কে যে ঐ লোক শায়লার ভাই হয় না সেটা বুঝতে দেরি হয় না রুবাইয়ার৷ রুবাইয়া শায়লাকে আর জেরা করে না, মিথ্যা বলে পালাতে যাওয়া মানুষকে পালাতে দেয়াটা শ্রেয় বলেই শায়লা আবারও ঈষৎ হেসে বলল, আসেন আমার সাথে, আপনার রুমে নিয়ে যায়। শায়লা রুবাইয়ার পেছন পেছন দোতালায় উঠে আসে৷
রুমে ঢুকতেই দেখা গেল একটা মেয়ে চেয়ারে পা তুলে বসে কেঁদে চলেছে, আরেকজন মুখে প্যাক লাগিয়ে, দুচোখে দুটো কচি শসা দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে মৃদুভাবে মাথা নাড়িয়ে চলেছে গানের তালে তালে। রুবাইয়া দাঁতমুখ শক্ত করে, কপাল কুঁচকে বলল, “এই শ্রাবণী! তুই আবার কান্দিস! তোরে নিয়ে কই যাব বল তো?”। শ্রাবণী রুবাইয়ার সাথে অপরিচিতার আগমনে কান্না থামিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে, আপু, শাওন আমার ফোন ধরে না সেই রাত থেকে, মেসেজ দিলেও সিন করছে না।
রুবাইয়া গলা বাড়িয়ে বলল, এই কানিজ আপু, আপনি কিছু বলেন না কেন এই মেয়েরে?
কানিজ চোখ থেকে শসা নামিয়ে, কান থেকে হেডফোন খুলে বলল, কিছু বলো আমাকে? আর উনারই আসার কথা ছিল?
-হ্যাঁ, উনি শায়লা, তিন নম্বর বেড উনার। আচ্ছা আপু, আপনি শ্রাবণীরে কিছু বলেন না কেন? এই মেয়ে তো চরম বিরক্তিকর হয়ে উঠছে দিনদিন! এই এক শাওন, শাওন করে সারাদিন মাথা খারাপ করে সবার।
কানিজ চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে শায়লার সাথে হ্যান্ডশেক করে বলল, আমি কানিজ । আপনি বিব্রত হবেন না, এই শ্রাবণী সারাদিন কান্নাকাটি করলেও সে বেশ উপকারী রুমমেট। যেমন ধরুন আপনার ভোরে উঠতে হবে? আ্যলার্ম, বজ্রপাতেও আপনার ঘুম না ভাঙলেও ভোর সকালে এর কান্নায় আপনার ঘুম ভেঙে যাবে। মাঝ রাতে খিদে পেলে, কোথাও খাবার কিছু না পেলে দেখবেন তার টেবিলে ঠিকই রাতের খাবার রয়ে গেছে আর সে নিরবে কেঁদে চলেছে। এত উপকারী রুমমেট কোথায় পাবেন বলুন?
শায়লা তার বেডে ব্যাগ রেখে শ্রাবণীর মাথায় হাত রেখে বলল, এমন কইরে কাঁদলি হবে আপু? অসুস্থ হয়ে যাবেন তো। শায়লার এমন প্রশ্নে শ্রাবণী উত্তর না দিলেও রুবাইয়া ফিক করে হেসে উঠে বলল, এই মেয়ে আরো অসুস্থ হবার বাকি! এর বয়ফ্রেন্ড সারা রাত নাকি তার সৌদি থাকা মামার সাথে কথা বলে! আর সে এদিকে সারা রাত কাঁদে, কিরে শ্রাবণী তোর বয়ফ্রেন্ড গে নাকি রে? মানে সব ঠিকঠাক আছে তো? মামার সাথে এত কিসের কথা? শ্রাবণী কপাল কুঁচকে বলল, দেখেন আপু, শাওনরে নিয়া বাজে কথা বলবেন না। কানিজ, শায়লা, রুবাইয়া একসাথে হেসে ওঠে শ্রাবণীর কথা শুনে।
ওদের হাসিতে ছেদ পড়ে মিনুর উপস্থিতিতে। এই বোর্ডিং এর সবচেয়ে বয়স্কা মানুষটির নাম মিনু, ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙের মিনু সারাক্ষণ পান চিবানোর কারণে তাকে আটত্রিশ বছরের বদলে পয়তাল্লিশ পেরোনো মহিলাদের মতো দেখতে লাগে৷ লীলা বোর্ডিং এ গত সাতবছর ধরে রাঁধুনীর কাজ করে আসছে সে। বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি। মিনু বৃদ্ধাঙ্গুলির ডগা থেকে চুন জিহ্বায় নিতে নিতে বলল, দুপুরে কী রান্ধুম আপা?
রুবাইয়া কানিজের দিকে তাকিয়ে বলল, বৃষ্টির দিন, খিচুড়ি আর মাংস হইলে কেমন হয় আপু?
– না, খিচুড়ি দরকার নাই৷ শিরিন আপা সকালে বেরোনের আগে বলে গেছে বৃষ্টি দেখে খিচুড়ি যেন না রান্না হয়। এখন তোমাদের ইচ্ছে করলে রাঁধাও৷
আরে না, পাগল নাকি! শিরিন আপা তো ঠান্ডা গলায় বাঁশ যা আমাকেই দেবে, আপনারা তো বেঁচে যাবেন। মিনু আপা, যা ইচ্ছে হয় রাঁধতে পারো ।
মিনু পানের পিক গিলে নিয়ে বলল, রুই মাছের কালিয়া করি, ঘন করে মুশুড়ির ডাল আর ধনেপাতা ভর্তা করি?
রুবাইয়া উত্তর দেবার আগেই দরজার বাইরে থেকে কেউ একজন টেনে টেনে বলল, ও মিইইনু! এই অশ্লীল ভর্তা কে শেখাইছে তোমারে?
মিনু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল পেছনে কেয়া দাঁড়িয়ে আছে। মিনু চোখের ইশারায় কেয়াকে ঘরে ডাকে৷ কেয়া ঘরে ঢুকতেই মিনু বলল, কিয়ের ভর্তার কথা কন? কেয়া ঠোঁটের কোণে হাসি এনে বলল, থাক এসব কথা দুইবার কইতে না, তুমি রান্ধাঘরে যাইয়্যা ওসব আকাইম্যা ভর্তা বানাও গিয়া যাও৷
কানিজ, রুবাইয়া হো হো করে হেসে উঠল। শায়লা মুখ টিপে হাসলেও শ্রাবণী হাসল না কেবল। কেয়ার সাথে শায়লার পরিচয় করিয়ে দিয়ে কানিজ বলল, কেয়া! একটা কাজ করতে হয় যে । আজকে রাতেই।
-কী কাম,বইল্যে ফেলো।
একটা বিয়ে ভাঙতে হবে, ছেলের বাড়ি সিলেটে। আজকে রাতে যাব আমরা।
রুবাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল কানিজের কথা না শোনার ভান ধরে, কেয়া রুবাইয়ার হাত খপ করে ধরে বলল। ও মনু! পলাও ক্যান হ্যাঁ? তুমি না কেপিপি পার্টির নেত্রী! পলাইলে হইবে? বিয়া তো ভাঙতে যাইতে হইবেই, তুমি গাড়ির সামনের সিটে বইবা কানিজ আপার লগে।
রুবাইয়া হাত ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলল,কানিজ আপা, এই বরিশাইল্যা কেয়ারে নিয়ে যান আপনি। এর পা থেকে মাথা পর্যন্ত কলিজা। খালা জানলে আমারে আস্ত মাটি চাপা দেবে।
কানিজ কিছু বলার আগেই কেয়া বলল, আইচ্ছা যা, তোর যাইতে হইবে না। তয় ময়না হোনো, আমার বর্তমান বয়ফ্রেন্ড কিন্তু আটত্রিশ নম্বরডা চলে তোমাগো দোয়ায়। আর হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ হইবে তোমার কেরাশ সাজ্জাদরে দিয়া, দুঃখ পাইয়ো না, হাফ সেঞ্চুরি উপলক্ষে ট্রিট দিমুয়ানে। কই খাইবা খালি এইডা কইয়্যা যাও।
রুবাইয়া আর না বলার সাহস করে না। এই কেয়া যখন বলেছে সে ওটা করবেই। সাজ্জাদকে দেড় বছর ধরে পছন্দ করলেও অজানা ভয়ে সেই ভালো লাগা জানাতে পারে না সে৷ কেয়া তার গ্ল্যামার আর স্মার্টনেসে এই পর্যন্ত যে আটত্রিশ জনকে নাকে দাড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিয়েছে, তাদের সবাইকে নিয়ে আলাদা আলাদা গল্প আছে, সেই গল্প রুবাইয়ার জানা থাকায় সে আর দুঃসাহস দেখায় না। মুখ ঝামটি দিয়ে বলল, আচ্ছা যাব যা, একটু মজাও করতে দিস না তোরা।
কেয়া চেয়ারে বসতে বসতে বলল, এই কানিজ আপু! ঐ পোলা কে হয় আপনার?
কানিজ ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি এনে বলল, আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড।
কেয়া লাফিয়ে উঠে বলল, ও মোর খোদা! একছের জইম্যে যাবে দেহি! বিয়া বাড়িতে হুলুস্থুল কান্ড ঘইট্যে যাইবে! ভাবতেই কী শিহরণ লাগে বুকের ভেতর৷ এই আপু, আপনে বাসা দিয়া ড্রাইভাররে গাড়ি আনতে কন, লগে মোনা আপুরে লইয়া লন৷ মোনা আপু খুব ঠান্ডা মাথায় কথা কইতে পারে।
কানিজ খানিকক্ষণ ভেবে বলল, না, মোনা আপুরে নেয়া যাবে না। উনি হয়তো উনার পথশিশু সংগঠনের কোনো কাজে ব্যস্ত থাকবেন, শ্রাবণীরে নিয়ে যাব৷ ও ভালো কাঁদতে পারে, সম্পর্কে ও আমার ছোটোবোন হবে, এক্স দুলাভাই তার বোনকে ছেড়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করছে এই শোকে সে ওখানে দুর্দান্ত কাঁদতে পারবে৷ কাঁদতে কাঁদতে ফিট হয়ে যাবে।
শ্রাবণী হুট করে হু হু করে কেঁদে উঠে বলল, আমারে নিয়ে খালি মজা করো তোমরা, আমি যাব না তোমাদের সাথে। শ্রাবণী হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই সবাই আবার একসাথে হেসে উঠল।
কেয়া কানিজের হাত ধরে বলল, আপু, এই সেমিস্টারে টাকা দিয়া তো শপিং কইর্যে ফালাইছিলাম, কিছু ধারদেনার ব্যবস্থা কইরো, অহন গেলাম আমি।
কেয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই রুবাইয়া বলল, এরেই কয় বরিশাইল্যা জিনিস! বিয়ে ভাঙবে বিয়ে ভাঙবে বলে খুব নাচল, কারণ তো দেখলেন, স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না ও। আচ্ছা আপু, ওর এত অর্নামেন্টস, ড্রেস লাগে কেন! একটা ওয়ারড্রব ভরা ওর কাপড়! বাপে টাকা দেয় আর সে দু’হাতে।
-ওর সাইত্রিশটা বয়ফ্রেন্ড বদলানো হয়ে গেছে এই তিন বছরে, আর তুমি মেয়ে কাপড়ের হিসবে নিয়ে আছো? যাও একটা ঘুম দাও গিয়ে, সারা রাত গাড়িতে থাকতে হবে।
কানিজ, শ্রাবণী, কেয়া, রুবাইয়ারা রাত বারোটার দিক বেরিয়ে গেছে সিলেটের উদ্দেশ্য। মস্ত রুমটায় শায়ালার নিজেকে আজ খুব একা লাগছে। ঘরের দরজা লাগিয়ে শায়লা তার গায়ের সমস্ত কাপড় খুলে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বুকজুড়ে থাকা কালশিটে দাগগুলোতে হাত বোলাতে বোলাতে শায়লা গুঙিয়ে কেঁদে ওঠে৷ কাল থেকে শায়লা নতুন উদ্যমে বাঁচবে, একটা ডে-কেয়ারে চাকরি জুটিয়ে দিয়েছে খাইরুল সাহেব৷ নিজের কামাইয়ে, নতুন পরিচয়ে বাঁচার অনাগত আনন্দে লীলা বোর্ডিংকে সাক্ষী রেখে অতীতগুলো লালার সাথে গিলে ফেলে শেষবারের মতো নগ্ন হয় শায়লা৷