লাভ টর্চার❤ Part-9

0
4426

#লাভ_টর্চার❤
#Part-9
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
সন্ধ্যার দিকে রুমে থেকে বের হয়ে নিচে যেতেই দেখি সবাই আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে দেখে আম্মু বলল,
– চোখমুখ এতো ফুলেছে কিভাবে!
.
.
আম্মুর কথা শুনে আমমুর দিকে তাকালাম। কিছু উত্তর দিবো তার আগেই শান্ত ভাইয়া বলল,
– প্রিয় মানুষ থেকে দূরে যাওয়ার বেদনা।
.
.
শান্ত ভাইয়ার কথায় তার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি বললেন,
– না মানে আমি আমার কথা বলছিলাম। আমিও তো তোর প্রিয় মানুষ। বিয়ের পর আমার থেকেও তো দূরে চলে যাবি।
.
.
শান্ত ভাইয়ার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। প্রিয় মানুষ! তাও আবার শান্ত ভাইয়া! আমার আর মানুষ পেলাম না। তীক্ষ্ম গলায় বললাম,
– দুনিয়াতে তো মানুষের অভাব পড়েছে।
.
.
শান্ত ভাইয়া একনজর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– পড়লে তো হতোই কাজ!
.
.
শান্ত ভাইয়ার কথাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে রুমের চারদিকে চোখ বুলালাম। না, শুভ্র ভাইয়াকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় হতে পারে! নিশ্চয়ই রুমে হবে! কথাটা মাথায় আসতেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম। দরজায় টোকা দিবো এমন সময় কানে আসলো,
.
.
.
.
.
– ওকে আমার চাই-ই চাই! কোনকিছুর বিনিময়ে হলেও চাই! আর একবার কাছে পেয়ে নিই! এমন শাস্তি দিবো যে দূরে যাওয়ার নামও নিবে না!
.
.
কথাটা শুনেই ঢোক গিললাম। বুকে এক বস্তা সাহস কুড়িয়ে দরজায় টোকা দিলাম। টোকা দিতেই সাথে সাথে কঠিন কন্ঠে বলল,
– কে?
.
.
যা ও একটু সাহস কুড়িয়েছিলাম তা ফুস! তাও নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু বলতে যাবো,,, তার আগেই দরজা খুলে গেলো। দরজার ওপাশে শুভ্র ভাইয়াকে দেখে ভ্যাবলাকান্তের মতো একটা হাসি দিলাম! আমার হাসি দেখে শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
– কি চাই!
.
.
শুভ্র ভাইয়াকে দেখেই আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কথার বুলিগুলো যেনো তোতাপাখি হয়ে আকাশে উড়াল দিয়েছে। এদিকে শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্মতে তাকিয়ে আছে। শুভ্র ভাইয়ার তীক্ষ্ম দৃষ্টি দেখে একটা জোরপূর্বক হাসি দিলাম। গলা একটু ভিজিয়ে বললাম,
– কি করছেন!
.
.
শুভ্র ভাইয়া এবার একটা হাসি দিলো। পাঠাকে বলি দেওয়ার আগে যে হাসি টা দেয় ঠিক সেই হাসিটা। হাসিটা মুখে ফেভিকলের আটা দিয়ে আটকে রেখেই বলল,
– বসে বসে পিঠা বিক্রি করছি। আয়, খেয়ে যা।
.
.
শুভ্র ভাইয়ার হাসিটা যে কতোটা প্রাণঘাতী হতে পারে তা তলে তলে বুঝতে পারছি। জোর করে একটু হাসি দিয়ে বললাম,
– না, থাক। পরে না হয় ঐ টাকার ফুচকা কিনে দিয়েন।
.
.
কথাটা বলে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওরে আমার ফুচকা রে! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যটা ফুচকা পছন্দ করে না। না করার কারণটাও আমি। কেন যে ঐদিন ফুচকা খেতে খেতে কথাটা বললাম! দুনিয়াতে কি আর কোন খাওয়া ছিলো না! নাকি সব খাওয়া বন্যার জ্বলে ভেসে গেছে! মনে মনে এতো কিছু ভেবে চলছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল,
– চল!
.
.
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
– এখনই ফুসকা খাওয়াবেন নাকি!
.
.
কথাটা বলতেই শুভ্র ভাইয়া যা চাহনি দিলো তাকে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। শুভ্র ভাইয়া আমাকে টেনে বসার রুমে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে দাঁড় করালো। আমাদের এভাবে দেখে সবাই চোখে তাকিয়ে আছে। সবার চাহনিকে উপেক্ষা করে শুভ্র ভাইয়া বলল,
– আরোহীকে ফুচকাওয়ালার সাথে বিয়ে দিবেন, তাও আবার কালকে।
.
.
শুভ্র ভাইয়ার কথার শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। ফুচকা পছন্দ বলে ফুচকাওয়ালার সাথে বিয়ে দিতে হবে নাকি! আজব! আমার মতো সবাই যে চারশ চল্লিশ ভোল্টের ঝাটকা খেয়েছে তা তাদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিস্ময় কাটিয়ে মামিমণি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে শুভ্র ভাইয়া বলল,
– কাল থেকে আমি ফুচকা বিক্রি করা শুরু করছি।
.
.
আগের কথায় যতটা না শক খেয়েছি এখনকার কথায় তার চেয়ে হাজার গুন বেশি শক খেলাম। বাসার সবার অবস্থাও ছিলো দেখার মতো। কারো মুখের থেকে কথা বের হচ্ছে না। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে, সে কি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিচ্ছে নাকি! আর যদি দিয়েও থাকে তাহলে আমার অতি সাধু পরিবার কি তা বুঝতে পারবে! যদি বুঝতে পারেও তাহলে কি বিয়েটা দিবে! আল্লাহ! কতো টেনশন! এতো টেনশন এখন কোথায় রাখবো তাই ভেবে আমার অবস্থা খারাপ!
.
.
চিন্তার সাগরে ঘুরে যাচ্ছি এমন সময় মামিমণি বলল,
– তাহলে তো ভালোই হয়। তুই ফুচকাওয়ালা হলে আশেপাশে যদি কোন ভালো ফুচকাওয়ালা পাস তাহলে আমাদের বলিস! বলে না, চোর চোর মসেরা ভাই, তেমনটাই! বোনকে এতো আদর করে যে ভালো জামাই খুঁজতে নিজে ফুচকাওয়ালা হয়ে যাবে! আহা! কতো ভালবাসা! দেখে মনটা জুরিয়ে যায়। তাহলে এটাই কথা থাক! তুই ভালো ফুচকাওফয়ালা পেলে বলিস, আমরা নিজে গিয়ে কথা বলবো। আমার আদরের মেয়ে বলে কথা!
.
.
মামিমণির জবাব শুনার পর শুভ্র ভাইয়া যা ফেস করেছে তা দেখে দম ফাটানো হাসি আসছে। কিন্তু এখন হাসলে যে সব রাগ আমার উপর দিয়ে যাবে তা ভালোই বুঝতে পারছি। আমার চাপা হাসি দেখে শুভ্র ভাইয়া বলল,
– এখানে হাসার কি আছে যে বাঁন্দরের মতো হাসছিস!
.
.
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– কি বললেন! আমি বাঁন্দরের মতো হাসি!
.
.
শুভ্র ভাইয়া তওবা, তওবার ভঙ্গি করে বললো,
– তওবা, তওবা! তুই বাঁন্দরের মতো কেন হাসবি! তুই তো বাঁন্দরণীর মতো হাসছিস!
.
.
কথাটা বলেই হাসিতে ফেটে পড়লো। সাথে সাথে পুরো ঘরভর্তি লোক হেসে চলছে। আমি রাগে মুখ ফুলিয়ে বললাম,
– আমি এখন ফুচকাওয়ালাকেই বিয়ে করবো, তাও আবার কালকের মধ্যেই! সবাই পাত্র খুঁজা শুরু করো!
.
.
সবাই এখনো হেসেই চলছে। কেউ আমার কথাকে পাত্তা দিচ্ছে না দেখে রেগে চলে এলাম। এই শুভ্র বিলাইকে দেখে ছাড়বো! হুহ!
.
.
Continue………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে