#লাভ_উইথ_মাই_বেটার_হাফ
#পর্ব-১
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
“আমি আমার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি।”
বাম হাত দিয়ে টেবিলের উপর থাকা পেপার ওয়েট হাতে নিয়ে কথাটা বলল আরশাদ।
টাইয়ের নব ঢিলে করে একটু আরাম করে বসতে চাইলো সে। তবে তার চোখে মুখে অস্বস্তি ফুটে উঠেছে।
আরশাদ বসে আছে একজন ডিভোর্স আইনজীবীর সামনে। মধ্যবয়স্ক আইনজীবী তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কেন?”
“কারণ আমি আর ওকে জাস্ট নিতে পারছি না।”
“পরকীয়ায় আসক্ত আপনার স্ত্রী?”
“না না। তৃষ্ণা ওমন মেয়েই নয়। ও যথেষ্ট ভালো মেয়ে।”
“তবে?আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন?”
আইনজীবীর এমন কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে আরশাদ।
হাতের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
“এমন কিছুই নয়। আমাদের প্রেমের বিয়ে। দীর্ঘ সাত বছর সম্পর্ক থেকে বিয়েতে।”
“তবে?”
“সেদিন তৃষ্ণার সাথে বাজারে গিয়েছিলাম। ও পাঁচ টাকার হিসেব মিলাতে না পেরে অস্থির হয়ে গিয়েছিল।পুরো রাস্তা হিসেব না মিলাতে পেরে আমার সাথে কথা বলেনি।”
“বাহ্ মশাই। আপনার স্ত্রী তো বেশ কড়া হিসেবি।”
“বিয়ের আগে ওর এই স্বভাবটা ভালো ছিল কিন্তু ইদানীং অসহ্য হয়ে উঠেছে।”
“তাই আপনি তাকে তালাক দিয়ে দিচ্ছেন?”
“সে তো আমার টাকার হিসেব নেয় না।সে নিজের টাকা খরচ করতে সে বার বার ভাবে৷”
“তাহলে আপনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আপনি নিজের টাকা নিজে খরচ করুন।”
“সমস্যাটা হচ্ছে ও আমার ক্লাসের সাথে যাচ্ছে না।হ্যাঁ আমরা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করতাম। ছাত্র জীবনে আমাদের এই পাঁচ দশ টাকা ছিল মাস শেষের সম্বল তবে এই না এখনো সেভ করেই চলবো।”
“কথাটা শেয়ার করুন তার সাথে। ডিভোর্স সমাধান নয়।”
“চেষ্টা করিনি এমন নয়। তাকে নিয়ে আমি কোনো পার্টিতে যেতে পারি না।তার বাসায় থাকলে তার দুহাতে থাকে মাছ মাংসের আঁশটে গন্ধ।ছুটির দিনে দুপুরবেলা তাকে কাছে পেতে চাইলে তার গা থেকে আসে ঘামের গন্ধ। কারণ সে রান্নায় ব্যস্ত।”
“আপনার স্ত্রী কী করেন?”
“কলেজ শিক্ষিকা।”
“সন্তানাদি আছে আপনাদের?”
“আমাদের বিয়ে হয়েছে সবে ন’মাস।”
“ঠিকাছে। আপনি প্রয়োজনীয় কাজ সেরে রেখে যান।যথা সময় আপনার স্ত্রীর কাছে লিগ্যাল নোটিশ চলে যাবে।”
চেম্বার থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরায় আরশাদ।সিগারেটের ধোয়ায় যেন উড়িয়ে দিতে চায় তার মনের সকল অবসন্নতা।
চোখ বন্ধ করে অনুভব করে সিগারেটের শেষ টান।তারপর বাইকে উঠে বসে চলে যায় তার গন্তব্যে।
পরীক্ষার খাতা নিয়ে বসেছে তৃষ্ণা। কলেজের মিডটার্মের পরীক্ষার খাতা দেখছিল।তখন শাশুড়ী এসে বললেন,
“পায়ের ব্যথা বেড়েছে। কালো জিরা, সরিষার তেল গরম করে এনে দিবে?”
পুরো দিন ক্লান্তি তখন তৃষ্ণার দু পায়ে। তবুও উঠে গেল তেল গরম করতে। সাথে বসিয়ে দিলো চায়ের পানি। শ্বশুর -শাশুড়ীর জন্য চা নাস্তা আর গরম তেল নিয়ে চলল তাদের রুমের দিকে।
আরশাদ যখন ফিরেছে তৃষ্ণা তখন রাতের রান্নায় ব্যস্ত। কাতল মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট।
আরশাদের পায়ের শব্দ পেয়েই সে ছুটলো চা নিয়ে। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত কোনো রকমে ধুয়ে চায়ের কাপ নিয়ে এসেছে সে। আরশাদের যে আবার মাছের আঁশটে গন্ধ মোটেও পছন্দ নয়।
কিন্তু পাজি মাছের গন্ধ কী একবার সাবান জলে যায়?
যতই রাগ অভিমান থাকুক না কেন তৃষ্ণার মুখ দেখলে সব রাগ পড়ে যায় আরশাদের। সে ভেবেছিল উকিল কে কল দিয়ে না করে দিবে। মানিয়েই নিবে কিন্তু চা’য়ের কাপ হাতে নেওয়ার সময় আবার সেই আশঁটে গন্ধ।
আরশাদ কিছু না বলে চুপচাপ চায়ের কাপ হাত নেয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় আজ রাতেই তৃষ্ণাকে সব জানাবে।
রাত যখন গভীর হচ্ছে তৃষ্ণা ব্যস্ত খাতা দেখায়।
অনবরত বেজে চলেছে আরশাদের ফোন। তার বন্ধু রুমন কল দিচ্ছে বার বার।
ওয়াশরুম থেকে ফিরে আরশাদ ফোন হাতে নিয়ে বাহিরে চলে যায়।
“বলছিস তালাকের কথা?”
“এখনো বলিনি।”
“কবে বলবি?আর মেলামেশা করিস না ওর সাথে। বাচ্চা পেটে থাকলে….. ”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি জানি।”
“আচ্ছা আমি রাখি তুই ওকে সব বলে দে। তালাক দিবি যে। সম্মতিতে হলে ভালো না হলে নাই।”
“আচ্ছা রাখ।”
বাহির থেকে ফিরে এসে আরশাদ দেখতে পেল তৃষ্ণা বিছানা ঠিক করে রেখেছে। হয়তো ওর খাতা দেখা শেষ। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে আরশাদের পাশ দিয়ে বাহিরে গেল তৃষ্ণা। বেলি ফুলের হালকা সৌরভ ভাসছে ঘর জুড়ে। ফিরে এসে এক গ্লাস গরম দুধ আরশাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে মুচকি হাসে তৃষ্ণা।
তবে আজ তার হাসিতে ভুলবে না আরশাদ।দুধের গ্লাস টেবিলে রেখে আরশাদ তৃষ্ণার হাত ধরে বলল,
“আমাদের এইবার ডিভোর্সটা নিয়ে নেওয়া উচিৎ। কারণ এভাবে আমি আর তোমাকে নিতে পারছি না।”
চলবে