#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১১
সোনালীর সামনে বসে আছে তৃষ্ণা। মেয়েটার অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল তৃষ্ণার।
“আপনি কে?”
“আমি তৃষ্ণা। আরশাদের স্ত্রী।”
“আপনাদের ডিভোর্স হয়নি?”
“এখনো হয়নি। তবে…”
“তবে কী?”
“হয়ে যাবে। চিন্তার কিছুই নেই।”
তৃষ্ণার পাশে বসে থাকা তুষার বিস্ফোরক চোখে তাকিয়ে আছে তার বোনের দিকে।পাশে বসে তার বোন শান্ত চোখে কথাগুলো বলে ফেলল।
এই কী সেই তৃষ্ণা? যে রাতের পর রাত পাহারা দিয়েছিল আরশাদকে। যখন সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল।সেবার আরশাদ ক্যাম্পাস থেকে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল খাগড়াছড়ি। ফেরার পথে ওদের বাস এক্সিডেন্ট হলো।
আরশাদের পায়ের হাড়ে চির ধরেছিল।
হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাকে। তৃষ্ণার তখন অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষা চলে। টানা চার ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে সে চলে যেত হাসপাতালে।
আরশাদের পাশের বেডে একটু খানি জায়গায় আরশাদের মায়ের সাথে ভাগাভাগি করে থাকতো।
পুরো কেবিনে ছোট্ট এক সংসার সাজিয়ে ফেলেছিল সে।
দিনে একবার বাসায় এসে গোসল করে খাবার নিয়ে ছুটতো হাসপাতালে।
আরশাদ তখন পুরোপুরি তৃষ্ণার উপর নির্ভরশীল।
প্রচন্ড বৃষ্টিতে আরশাদের মা বাসা থেকে আর যেতে পারেনি হাসপাতালে।
রাত তখন এগারোটা। আরশাদ হঠাৎ তুষারকে কল দিয়ে বলল,
“একটু আসবেন?”
তুষার বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দ্রুত ছুটে এসেছিল।কেবিনে ঢুকে দেখে তৃষ্ণা ঘুমিয়ে আছে। আরশাদ বসে বসে একটা ইংরেজি নোবেল পড়ছিল।
কেবিনে কোথাও আরশাদের মা কে না দেখে তুষার ভেবেছিল হয়তো ওয়াশরুমে কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরশাদ বলল বৃষ্টির কারণে সে আসতে পারেনি।
“তুমি আমায় আসতে বললে কেন?”
“আপনি তৃষ্ণার ভাই। সত্যি বলতে তৃষ্ণার জন্যই।
যদি আমি না পারি আমার লোভ কে সামলাতে!”
“এই ভাঙা পা নিয়ে?”
“মনে শয়তানি ঢুকলে শরীরে অসুরের শক্তি ভর করে।”
তুষার সে রাতেই এমনকি ঠিক সেই মুহুর্তে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
তৃষ্ণাকে বিয়ে আরশাদের কাছেই দিবে।
ওয়েটার এসে ডাক দেওয়াতে ঘোর কাটে তুষারের। কি চলছে আরশাদ এবং তৃষ্ণার জীবনে?কোনো ঝড় বইছে কী?
আর তার সামনে বসে থাকা মেয়েটিই বা কে?
আজ সকালে বাসায় ফেরার পর যখন তুষার ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন তৃষ্ণা এসে দরজায় নক করে।
তার সাথে যেতে হবে বললে তুষার ঝটপট তৈরী হয়ে নেয়।
এত বছরেও বোনকে কোথাও তারা একা ছাড়েনি। ভেবেছিল হয়তো কলেজে যাবে ছুটির ব্যপারে কিন্তু তারা এসেছে বাসার কাছাকাছি একটা রেস্তোরাঁয়। কেন যেন আজ তৃষ্ণা বোরখা পরেনি৷
পরণে তার ধূসর রঙের সালোয়ার সাথে লম্বা কোটি। পনিটেইল করে বাধা চুল ছড়িয়ে আছে পুরো পিঠ ঝুড়ে।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তৃষ্ণা সামনে থাকা মেয়েটিকে বলল,
“এত অল্প দিনের সম্পর্কে এতটা বিশ্বাস কিভাবে?”
“ভালোবাসার মূল স্তম্ভই তো বিশ্বাস।”
“কিন্তু আপনার ভালোবাসা তো নোংরামি ছাড়া কিছুই দেখছি না।”
“আমি আরশাদকে…….. ”
“আমি জানতে ইচ্ছুক নই। তবে শুনুন। মাত্র মাস কয়েকের সম্পর্কে আপনি কাউকে আপনার খোলামেলা ছবি দিবেন, তার সাথে বার বার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখবেন,সেগুলো গোপনে ভিডিও ধারণ করে যদি আপনাকে কেউ ব্ল্যাকমেইল করে এর দায়ভার অন্য কেউ কেন নিবে?”
“আমি নিরুপায়।”
“একজন নারী কখনো নিরুপায় হয় না।আপনার সাথে যা হয়েছে দুজনের সম্মতিতে হয়েছে। সে আপনাকে জোড় করেনি। তাছাড়া তার স্ত্রী আছে জানা স্বত্তেও আপনি তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক রেখেছেন।এর দায়দায়িত্ব আপনার উপরেই বর্তায় মিস সোনালী।”
“আপনি কী সম্পূর্ণ দোষ আমার দিচ্ছেন?”
“মোটেও না।আমি শুধুই আপনার ভুলগুলো বললাম।আপনি একটা ভুল ধামাচাপা দিতে আরো অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন।আপনার জন্য আজ আমার সংসার নষ্টের পথে।এর দায়ভার কে নিবে একটু বলবেন আমাকে?”
“আপনার স্বামীর কোনো দোষ নেই।”
“আমি কীভাবে ধরে নিবো তার দোষ নেই?যে ছেলে তার বন্ধুর কথায় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে তার কোনো দোষ নেই?”
“আপনি বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করুন।”
“দুঃখিত আমার আর সময় হবে না।আপনি সাহায্য চেয়েছিলেন আপনি পাবেন।এই নিন, এই নাম্বারে কল দিয়ে শুধু বলবেন আমার নাম টা বলে সমস্যার কথা বলবেন।আশা করি সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত পেয়ে যাবেন।”
“আরশাদ সত্যি আপনাকে ভালোবাসে। ও শুধুই ওর বন্ধুর ষড়যন্ত্রের স্বীকার।”
“আজ ষড়যন্ত্রের স্বীকার, কাল যে আবার হবে না এর কী নিশ্চয়তা?আমি আমার মানসিক শান্তি নিয়ে খেলতে পারবো না।”
“ডিভোর্সটা কী সত্যি করে ফেলবেন।”
“হ্যাঁ।”
তুষার বিল মিটিয়ে তৃষ্ণাকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে। তৃষ্ণা কিছুই খায়নি৷ এখন প্রথমে তাকে খাওয়ানো প্রয়োজন। রঙ্গানকে ম্যাসেজ করে পূর্বেই আসতে বলেছে সে।রঙ্গানের জন্য অপেক্ষা করছিল দুই ভাইবোন।
“তোকে দেখলেই আমার গলা শুকায় কেন রে?”
রঙ্গানের কথায় চোখ ছোট করে তার দিকে তাকায় তৃষ্ণা। তুষার ততক্ষণে বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত কারণ তৃষ্ণার প্রিয় বিরিয়ানি আনতে যাবে।
কিন্তু রঙ্গান ইশারায় দেখালো সে সাথে করেই নিয়ে এসেছে৷
তুষার, তৃষ্ণা বাইকে করে এসেছিল। তৃষ্ণা ভাইয়ের বাইকে উঠতে যাবে তখন রঙ্গান বলল,
“আমি কী ডেলিভারি ম্যান?ফুড পান্ডার খাবার সার্ভিস দিতে এসেছি?”
তুষার বলল,
“দে ভাই দে। আমি নিয়ে যাচ্ছি তুই তৃষ কে নিয়ে আয়।”
“যেতে পারি, এক শর্তে।”
“কী?”
“আজকেই ভাইয়ের বিয়ের কথা বাবাকে জানাতে সাহায্য করবে?”
রঙ্গান হাত এগিয়ে হ্যাণ্ডশেক করে বলল,
“ডিল।”
বাসায় ফিরে রঙ্গানকে সবটা বলল তুষার। আরশাদের বন্ধু রাকিবের সাথে সোনালীর সম্পর্ক।
রাকিব বিবাহিত। এখন সে সোনালীকে তার খোলামেলা ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে আরশাদকে বিয়ে করার জন্য।ওর সাথে সম্পর্কে যাওয়ার জন্য। এতে রাকিবের দুটো লাভ।
রঙ্গান জিজ্ঞেস করল
“কী?”
“এটা সেই রাকিব যে তৃষ্ণার পিছনে ঘুরতো এবং আমি ওর একটা দাঁত ভেঙেছিলাম তৃষ্ণাকে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল বলে৷
এক প্রতিশোধ নিবে। আর দুই আরশাদ যেহেতু ওর জালে ফেসেছে তাই ও চাইলে বিয়ের পর যখন তখন সোনালীকে ব্যবহার করতে পারবে।”
“আরশাদ এসব জানে?”
“না।”
ঠিক সে মুহূর্তে তৃষ্ণার ফোন বেজে উঠলো। রঙ্গান ফোন রিসিভ করে আরশাদকে জানালো তৃষ্ণা গোসলে৷
আরশাদ ফোন কেটে দিলো কোনো জবাব না দিয়েই।
তার পাশে বসে থাকা রাকিব বলল,
“ঘন্টা খানেক আগেই দেখলাম ওই পোলার লগে হাত ধইরা বের হতে রেস্তোরাঁ থেকে।আবার এখন কীসের গোসল?আরশাদ বিশ্বাস কর ঠিক আছে কিন্তু তোর বিশ্বাসটা অন্ধবিশ্বাস। সব’চে বড় কথা তুই যে এত খুশি যে তৃষ্ণা তোর বাবার চিকিৎসার খরচ নিজে সবটা ম্যানেজ করছে। দেখিস তো খোঁজ নিয়ে? দেখবি ওই পুলিশ ব্যাটায় টাকা দিছে।”
চলবে।