#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১০
কার্ডিয়াক আই সি ইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণা। তার শ্বশুরের অপারেশন শেষ কিন্তু তাদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।
আরশাদ ছুটে এসেছে এই কথা শুনে। তার চুল দিয়ে এখনো টপটপিয়ে পানি পড়ছে।
চোখ দুটো মারাত্মক লাল হয়ে আছে। এই এক সমস্যা আরশাদের৷ একটু রাত জাগলে বা শরীরের উপর দিয়ে ধকল গেলে তার চোখ হয়ে যায় রক্তবর্ণের।
“ডক্টর কোনো কমপ্লিকেশন?”
আরশাদের কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে ডক্টর জানালেন,
“চিন্তা করবেন না।আগামী ৬-৭ ঘন্টায় জ্ঞান চলে আসবে। জ্ঞান ফিরলে আপনাকে জানাবো। তখন এসে দেখে যেতে পারবেন।”
সবাই স্বস্তির শ্বাস ফেলল।এবার আরশাদ তাকালো তৃষ্ণার দিকে। তার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
চোখের নীচের কালি জানান দিচ্ছে তার বিশ্রাম প্রয়োজন।
আরশাদ এবার তৃষ্ণার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাদের চলে যেতে বলল।
যেহেতু এখানে থেকে তাদের কোনো কাজ নেই তাই তারা চলে গেল।
বাবার সাথে বাসায় ফিরে তৃষ্ণা ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে। তার নিজস্ব রুমে ঢুকে প্রথমে কোনো ভাবে গোসল করে ফিরে এসে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। তার চেনা পরিচিত আপন ঘরের চার দেয়ালে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নেয় সে।বারান্দায় লাগানো কোনো ফুল থেকে আসছে মিষ্টি গন্ধ। ফুলটার গন্ধ সে চিনে কিন্তু নাম মনে পড়ছে না। এখন তার উঠে যেতেও ইচ্ছে করছে না।
পাশ ফিরে বালিশ বুকে নিয়েই সে তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে। তার যখন ঘুম ভেঙেছে তখন রাত ফুরিয়ে ভোর হবে বলে। রাত তিনটে, ক্ষুধার জ্বালায় সে বসে থাকতে পারছে না। ওড়না নিয়ে খাবারের রুমের দিকে গিয়ে দেখতে পায় তার মা ভাত নামাচ্ছে চুলো থেকে।
হাত দিয়ে চুলগুলো খোপা করে তৃষ্ণা জিজ্ঞেস করলো,
“এখন ভাত রান্না করো কার জন্য?”
“ওই যে এক নবাবজাদি আছে না? তার জন্য।”
“নবাবজাদী যে এখন খেতে আসবে তা আপনি জানেন কীভাবে?”
“২৫ বছর পেলে তারপর বিয়ে দিছি। নারী নক্ষত্র সব জানি।”
টেবিলে বসে তৃষ্ণা দেখতে পেল তার মা তার জন্য শুটকী ভর্তা,সজের পাতা ভর্তা এবং গরম ধোঁয়া উঠা ভাত নিয়ে বসে আছেন।
এমন খাবার দেখে তৃষ্ণার আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেয়ে নেয়।খেতে খেতে হঠাৎ তার মনে হয় আঞ্জুমের কথা। আঞ্জুম কেন এটা বলল?
সে একবার চিন্তা করে মা কে কী জিজ্ঞেস করবে?
আবার ভাবে মা যদি না বলে?রঙ্গান ভাই জানলেই বা কী বলবে?
তৃষ্ণাকে ভাবুক চেহারায় দেখে তার মা তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করলেন,
“খাওয়ার সময় এত কীসের চিন্তা?”
“তেমন কিছু না।”
“বলে ফেলো।”
তৃষ্ণা তখন ধীরেধীরে মা কে সব’টা বললে তার মা বলল,
“রঙ্গানের মায়ের লিভার সিরোসিস। প্রায় লাখ লাখ টাকার খরচ এই চিকিৎসায়। এখন তারা চায় রঙ্গান সব টাকা দিক।কারণ তার মা বলে।
কিন্তু তুই তো জানিস রঙ্গান কেমন।ওর হাতে টাকা থাকে কই?ও এক সাথে ৫০ জন বৃদ্ধার খরচ একা চালায়। ও যদি ওর মা কে টাকা দেয় তবে সেই পঞ্চাশ জন না খেয়ে থাকবে।
আঞ্জুম হচ্ছে রঙ্গানের সৎ বোনের জা। তাই সে সব জানে। হয়তো রঙ্গান টাকা দেয়নি তাই সে এমন বলেছে।”
“একে বারেই দেয়নি?”
“ও ছেলেকে তুই জানিস না?দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কী বলতো! ওদের চাহিদা পূর্ণ করতে পারছে না বলে এত সমস্যা।”
এক মগ চা হাতে নিজের ঘরে ফিরে এলো তৃষ্ণা। তার শাশুড়ি মা পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছেন।
নানা জল্পনা কল্পনায় তৃষ্ণা কল দিলো আরশাদের ফোনে।
বালিশের নিচ থেকে বেজে উঠেছে ফোন।
চায়ের মগে চুমুক দিয়ে তৃষ্ণা ফোন হাতে নিলো। কপালের দিকটায় আবেগী ভঙ্গিতে একটু আঘাত করে সে আরশাদের ফোন দিয়ে৷
নিজের ফোন টেবিলের উপর থেকে নিয়ে কল দেয় তার ভাইকে।
একবার কল হতেই রিসিভ করে সে। মনে হয় ফোন হাতেই ছিল।
“প্রেম করছিলে?”
“বেশি পেকেছিস?”
“পাকতে পাকতে ঝুনা নারকেল হয়ে গেছি।”
“তাই তো দেখছি।”
“ডক্টর কিছু বলেছে?”
“না।”
“কোথায় তোমরা?গাড়ির শব্দ কীসের?”
“চা খেতে বেরিয়েছিলাম।”
“চা খাওয়া যায় না।”
“এই একদম চুপ।বইন্যা এখন শুরু করিস না।”
“আচ্ছা। আরশাদ কই?”
“কেন?প্রেম করবি?লজ্জা করে না?বড় ভাইয়ের ফোনে কল দিয়ে প্রেম করতে চাস?”
“না করে না।ফোন দাও তো।”
“ওর ফোনে কল দে। আমি ঘুমাবো।”
“রাস্তায় ঘুমাবা?দেও নইলে বাবাকে তোমার বিয়ের কথা বলবো না।”
“আচ্ছা দিতেছি।তোর জ্বালায় মনে হয় দেশ ছাড়ি চলি যাই।”
“লাভ নাই, লাভ নাই। ছোটো সে তরী। তোমার কুকামে গিয়াছে ভরী।”
বলেই তৃষ্ণা হাসতে থাকে। ততক্ষণে ফোন উঠেছে আরশাদের কানে। সে চুপচাপ শুনছিল হাসি।
“আসসালামু আলাইকুম।”
হঠাৎ সালাম শুনে তৃষ্ণা কিছুটা অবাক হয়ে কান থেকে ফোন নামিয়ে নেয়। কল কী কেটেছে না কী কনফারেন্স হয়েছে দেখার জন্য। কিন্তু না এমন কিছুই হয়নি। পুনরায় ফোন কানে নিয়ে তৃষ্ণা বলল,
“ওয়ালাইকুম আস সালাম।হঠাৎ সালাম?”
“তোমার হাসিটা আমায় শান্তি দিলো তাই এই সালামের মাধ্যমে চাইছি তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
“বাবা কেমন আছে?জ্ঞান ফিরেছে?”
“হ্যাঁ। ভালো আছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
টুকটাক কথা শুরুর আগেই হঠাৎ টুং ম্যাসেজের শব্দ হয় আরশাদের ফোনে।
লক খুলে ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই তৃষ্ণা দেখল,
সোনালী ইভা নামের মেয়ে আইডি থেকে অনেকগুলো ম্যাসেজ। লাস্ট ম্যাসেজে মেয়েটা আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছে।
চলবে।