লতাকরঞ্চ (১৩)
প্রান্ত ভাই এই কালো মেঘে ঢাকা ঘোমড়া মুখ নিয়েই আমার কাছে আসলো আর বললো,
” লতা, তোর সাথে শোভা এটা খুব খারাপ করেছে। একদম ঠিক করেনি। তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস, তাই না? ”
আমি তখন মোবাইলে শোভা আপুর ঐ মাইকেল ভাইয়ের খোঁজ করছিলাম। কিন্তু প্রান্ত ভাইয়ার এসব কথাবার্তা শুনে খুব হাসি পেলো। হাসি দিয়ে দিলাম।
উনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– হাসছিস যে?
কোনো কথা নাই। মিটিমিটি হাসি দিয়ে যাচ্ছি। হাসিটা মূলত ইগ্নোর করার এক প্রপঞ্চময়ী(মায়াময়) ধাপ।
ভাই আবার বললেন,
– শোন, তোর হাসিটা একদম ভালোনা। কুৎসিত, কিম্ভুতকিমাকার টাইপ। সো, এত হাসিস না আমার সামনে।
আমি আরো বাড়িয়ে দিলাম মিটমিটে হাসির পুরুত্ব।
উনি রেগে যাচ্ছেন। আমি জানি।
কিন্তু আমার মনে এখন ডোন্ট কেয়ার, ডোন্ট কেয়ার ভাব। যার আমার অপমানে অপমান বোধ হয়না তার প্রতি আমার ফিলিংস তো দূর তার ত্রিসীমানাতেও আমি নিজেকে রাখতে চাইনা। বয়সের একটা সময়সীমা থাকে যে সময়টা আবেগে টইটুম্বুর থাকে।
আমার বয়সটা সেখানেই আটকা পড়ে বন্দি ছিলো এতদিন। তাই বুঝে উঠতে পারিনি, কে গিনি সোনা আর কে নয়।
উনি আবার বললেন,
– আমি কি বলছি তুই শুনছিস?
– হুঁ।
– কথা না বলে একদম হাসবিনা। আমি তোর সাথে মজা করতে বা হিজিবিজি কিছু করতে আসিনি। আমি আমার ইতস্তবোধটা প্রশমন করতে আসছি শুধু।
– হুঁ। কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলে যান। আমার একটু তাড়া আছে।
– এতক্ষন কি বললাম শুনিস নাই?
– হুঁ। ওগুলো কোনো কথার পর্যায়ে পড়ে বলে আমি মনে করিনা। ইম্পর্টেন্ট কিছু বলার থাকলে বলেন আর নয়তো আসেন।
– বাহ্! কথা তো শিখেছিস ভালোই!
আমি কিছু না বলেই চোখ ঘুরিয়ে নিলাম।
– আচ্ছা শোন, তুই ভাবিস না যে আমি এখন সিনেমা বা নাটকের ডায়লগ বলবো,
” সরি,লতা! আমি শোভার হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। প্লিজ তুমি কিছু মনে কোরোনা। ”
(কো- বাংলা শুদ্ধ বানান,প্রমিত। করোনা না হয়ে তাই কো রো না)
– আচ্ছা।
– আমি সরি বলবোনা আর চাই ও না বলতে।
এইসব সরি-টরির কোনো মানেই হয়না আসলে।
আমি রেগেই বললাম,
– আমাকে জ্ঞান দেওয়া এবার বন্ধ করে কাজের কথায় আসুন। প্লিজ।
– হোয়াট!
– হ্যাঁ। আমার জন্য এটা কোনো ধরা-বাঁধা বা রুলস নয় যে নিয়ম করে যদ্দিন দেখা হবে তদ্দিন শুধু ঝগড়াঝাঁটি আর জ্ঞান আরোহণ করতে হবে বা করেই যাবো আপনার কাছ থেকে। এনাফ ইজ এনাফ!
– ওহ্। যাক, এটাই বলার ছিলো যে সরি বলে আসলে কোনো শব্দ হয়না, হওয়া উচিত না। সবকিছুর সমাধান এই ছোট একটা এক বাক্যে নিহিত থাকার কোনো মানে হয়? হয়না।
শোভার ফল্টের জন্য শোভা ক্ষমা চাইবে, ওর হয়ে আমি কেন! সরি ইট কান্ট বি। নাউ ইট’স হার গো।
এনিওয়েজ, সাহিত্যিক মানুষের সাথে তো হাত ধরে রেস্টুরেন্টে পর্যন্ত আসতে পারিস আর আমি সামান্য জ্ঞান দিলেই দোষ?
তোর তো দেখছি সাহিত্যিক মানুষ বেজায় পছন্দ! তাহলে?
আমার জাস্ট বিরক্ত লাগছে। জাস্ট অসহ্য।
কিছুই বলার ইচ্ছা হচ্ছে না।
ইচ্ছা হচ্ছে ঠাঁস করে গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলি,
” এই আমি কখন হাত ধরাধরি করে রেস্টুরেন্টে আসছি? কিশোর ভাইয়ার সাথে আসছি ঠিক আছে; কিন্তু কোন পরিস্থিতে আসছি? কার জন্য এমনটা হলো? ”
ভাই আবার বেহায়ার মত বললো,
– আসলে আমি শোভাকে বলেছিলাম তোর কাছে সরি বলে অসমাপ্ত কাজটা সেরে ফেলতে কিন্তু………..
সারাক্ষন শুধু শোভা শোভা শোভা! এই একটাই নাম! আহ্, কি প্রেম! বিরক্তিকর।
আমাকে দূর থেকে কিশোর ভাই ইশারা দিলো উনার কাছে যাওয়ার জন্য।
আমি প্রান্ত ভাইয়ের মুখে এইসব শুনতে একদম ইন্টারেস্টেড না। তাই উনাকে তোয়াক্কা না করে সোজা দৌঁড়ে চলে গেলাম কিশোর ভাইয়ার কাছে।_____________
________
” তোমার কি ড্রেসটা পছন্দ হয়নি লতা? ”
কিশোর ভাই সোজা এটা বলে দিলো।
আমি কাঁচুমাঁচু করে বললাম,
– আরে না! কি বলেন! পছন্দ না হওয়ার কি আছে? আর আপনার পছন্দতো খুব সুন্দর। তা আমি জানি।
– কিভাবে জানো?
– আপনার বেশভূষায়।
– যেমন?
– এইযে এখন আপনি যে শার্টটা পরে আছেন, সাদা আর আকাশীর মিশ্রনে.. এটা কি কম নয়?
– মানে? তোমার এটা ভালো লাগছে?
– হ্যাঁ। আমার সাদা আর আকাশী কালার খুব পছন্দ।
কিশোর ভাইয়ার চোখ চকচক করছে।
মনে হচ্ছে উনি খুশিতে এখন পাঁচতালা থেকে লাফ দিবেন। অথবা পারেতো আমাকেই কোলে তুলে ফেলবেন।
আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– ভাইয়া এসব কি হচ্ছে? আমাকে প্লিজ একটু খুলে বলবেন?
– কেন? তুমি কি এখনো কিছুই জানো না?
– না।
– আরে, তোমার লিমা আপু আর মঞ্জু ভাইয়ের এনগেইজমেন্ট পার্টি আজকে। এই আরকি।
– তো এইটার জন্য আপনি সবাইকে জামা-কাপড় কিনে দিলেন কেন?
– ওহ্! আসলে আমার চাকরিটা অকল্পনীয়ভাবে প্রস্পার করেছে এবার। একটা এসাইনমেন্ট নিয়ে তুমুল খেটেছিলাম, মূলত এইজন্যই আমি বেশ কিছুদিন যাবৎ লাপাত্তা ছিলাম। এমন ও আছে যে আমি টানা ৭৬ ঘন্টা শুধু কাজ করে গেছি ল্যাপটপে। ঐ তিনদিন অফিস বন্ধ ছিলো। আমিও ভুলে গেছিলাম। যাবো যাবো করে আর যাওয়া হয়নি। কাজের চাপে কিছু খেয়াল ও করিনি। শুধু একটা মিল্ক শেডের বিস্কুটের প্যাকেট আর পানিই ছিলো আমার সম্বল।
যাইহোক, আমি সফল হয়েছি। সারা বাংলাদেশে টোটাল তিনজন বিজয়ী হয়েছে। তন্মধ্য আমি দ্বিতীয়। অবশ্য বিদেশে যাওয়ার অফার পেয়েছি অন্য একটা এপ্লিকেশনের জন্য। সেটা পরে দেখা যাবে…
আমি মনে মনে বললাম,
– আল্লাহ! বিদেশ চলে যাবেন! আমিওতো এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই। বাহ্!
ভাইয়া বলেই যাচ্ছে,
– বস খুশি হয়ে তার পাশের জায়গাটা এখন আমাকে দিয়ে দিয়েছে।
বেতনে এখন বেড়ে তিনগুন হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম সবার জন্য কিছু আনবো তকমা বা গিফটস্বরুপ। তারপর আবার মঞ্জু ভাইয়ের মুখে শুনলাম এই সারপ্রাইজ পার্টির কথা। দুইয়ে দুইয়ে চার মিললো। মঞ্জু ভাইকে আমি অনুরোধ করলাম যেন জামা-কাপড়ের ভারটা নির্দ্বিধায় আমার উপর ছেড়ে দেয়। উনি মানলেন, শুধু আজকের জন্য। উনিও কিনে রাখছে। কিন্তু আমার অনুরোধেই..
আমি বললাম,
– ভাইয়া আপনাকে আমার একটা কথা বলার ছিলো।
– কি?
– এখন আসি।
– কোথায় যাচ্ছো? কথাটা বলে যাও।
– আরে, আপ্নারা সবাই তো ঠিকি সেজেগুজে আছেন! আর আমি! আমার অবস্থা দেখেন! বেশিক্ষন লাগবেনা। ৩০মিনিট।
– কি যেন বলার ছিলো?
– পরে এসে বলবো।
___________
প্যাকেট খুলে দেখলাম একটা চিরকুট।
সেখানে লেখা:
” কেমন হইছে এখানেই জানিয়ে দিও। আমার পছন্দ একদম ভালোনা,আমি জানি। তবুও… সত্যিটাই বলবা। সমস্যা নেই।
কিশোর। ”
ড্রেসটা পরে আসলাম।
কালারটা সাদা আর আকাশী কালারের মধ্যে।
আকাশী কালারের জমিন আর সাদা কালারের আঁচলের এক অসম্ভব বেশি সুন্দর একটি শাড়ি টাইপ লেহেঙ্গা।
চলবে..
#ফারজানা_রহমান_তৃনা