লজ্জাবতী পর্ব-০১

0
361

#লজ্জাবতী
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব_১

-‘বিয়ের রাতে শুধু আমি একটু ‘ওর’ হাত ধরেছিলাম।’
-‘তারপর..তারপর? বন্ধুরা খুব কৌতূহল নিয়ে অনুপমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অনুপম হুইস্কির গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,
-‘ ও হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে, ভয়ে গুটিশুটি মেরে সরে শুলো। আমার আর একটু সাহস বেড়ে গেল। আমি কম্বলের তলায় ওর হাতটা টেনে নিয়ে, আঁকিবুঁকি করতে লাগলাম।
-‘দোস্ত, আমার খুব এক্সাইটেড লাগতেছে। তারপর বৌদির সাথে কী করলি? সিধু মুখে হাত দিয়ে লাজুক হেসে বলল।
-‘তারপর আমি কিছু করিনি। যা করার ‘ও’ করছে!
রবি বলল,
-‘ও মাই গড। বৌদি এত রোমান্টিক? দোস্ত তোর তো কপাল খুলে গেছে।
সিধু বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘চুপ করবি শালা! আগে অনুপমকে পুরো কথাটা শেষ করতে দে!
অনুপম কাঁচের গ্লাসে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলল,
‘মাধবীলতা হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। একে একে ঘরের সবগুলো লাইট জ্বেলে দিল। ওর মা, বড়বোনকে পাশের ঘর থেকে টেনে নিয়ে এলো। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল,
-‘বড়দি এই ব্যাটা মাঝরাতে ঘুম বাদ দিয়ে, আমার হাত টানাটানি করছে। এত কাতুকুতু দিয়ে ঘুম ধরে, তোমরাই বলো?
সবগুলো বন্ধু একসাথে খিলখিলিয়ে হেসে দিল। সেকি দম ফাঁটা হাসি। সিধু বলল,
-‘ইশ,
অনুপম লাজুক হেসে, মাথা চুলকে বলল,
-‘শাশুড়ীমা তার মাথামোটা মেয়ের কথা শুনে, লজ্জায় আঁধমাথা ঘোমটা টেনে তড়িঘড়ি করে চলে গেল। এদিকে আমারও খুব লজ্জা লাগছিল। আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে, ঘুমের ভাণ ধরে ঘাপটি মেরে পরে রইলাম।
ওর বড়দি ওকে কতকিছু বুঝাল। কিছুতেই কাজ হলো না। সে আর আমার সাথে শুবেই না। তার ঘুরেফিরে একটাই কথা। ‘এই লোকের মতলব ভাল না।’ তাকায়ও যেন কেমন কেমন করে।

-‘এই বড়দা কত রাত হলো! তুই এখনো ছাদে বসে আছিস? নতুন বৌদিকে নিয়ে কাকিমা, মামী তোর ঘরে বসে আছে। তোকে এখন যেতে হবে।
-‘ তুই যা.. আমি আসছি!
রিধীকা চলে যেতেই, অনুপম উঠে দাঁড়াল। সিধু পিছু ডেকে, চোখ টিপে বলল,
-‘দোস্ত ফুলসজ্জা একটু বুঝেশুনে করো! তোমার যে বউরে বাবা! শেষে দেখা যাবে, পুরো পাড়া চিল্লিয়ে মাথায় করে ফেলেছে।
অনুপম চিন্তিত ভঙ্গীতে মাথা নাড়ল। বলল,
-‘বাবা-মায়ের কথা শুনে, এত অল্পবয়সী মেয়ে বিয়ে করা ঠিক হয়নি।
-‘দোস্ত একটা বুদ্ধি দেই?
-‘বল?
-‘তুই বরং বৌদিকে দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাওয়া! কিচ্ছু ঠিক পাবে না।
অনুপম, সিধুর মাথায় চাট্টি মেরে বলল,
-‘শালা..মাধু আমার প্রেমিকা না বউ। এত তাড়া কিসের?
অনুপম বিয়ের সমস্ত নিয়ম-নীতি মেনে যখন শুতে এলো। দেখল, মাধু ঘরে নেই। অনুপম বেশ অবাক হলো। কাউকে লজ্জায় বলতেও পারছে না। মাধু কোথায়? অনুপম জানালা খুলে দিল। পাশেই বিশাল সরষেখেত! ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। মাধু খাটের তলা থেকে বেড়িয়ে এলো। শাড়ি এলোমেলো। গয়নাগাটিও জায়গারটা জায়গায় নেই। কপালের টিকলি কানের পাশে এসে গেছে, বাঁধা চুলের ফাঁকফোকর দিয়ে কিছু খোলা চুল বেড়িয়ে এসেছে, চোখদুটো পদ্মপুকুরের মতো টলমলে স্বচ্ছ মায়া কাড়া, ফর্সা গোলগাল মুখ, চেহারায় অল্পবয়সী ছাপ স্পষ্ট ফুঁটে উঠেছে।
অনুপম বিষম খেয়ে বলল,
-‘তুমি খাটের তলায় কী করছিলে?
মাধবীলতা সর্তক দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। ব্যস্ত ভঙ্গীতে বলল,
-‘একটা ইঁদুর দৌঁড়ে আপনার খাটের তলায় এসে ঢুকেছে। খুঁজে পাচ্ছি না। একটু দেখুন তো, পাঁজি ইঁদুরটা কোথায় গেল?
অনুপম বিড়বিড় করে বলল,
-‘অন্য মানুষের বউরা বাসর ঘরে বিড়াল মারে আর আমার বউ ইঁদুর মারছে। বাহ্ বেশ ইন্টারেস্টিং তো!
-‘কিছু বললেন?
-‘না তো।
অনুপম পূর্ণ দৃষ্টি মেলে মাধবীলতার দিকে একপলক তাকাল। হাতে শাঁখা-পলা, সিঁথিতে সিঁদুর, আলতা রাঙা নূপুর পরা সুন্দর পা, চোখে মোটা করে কাজল টানা। কপালের মাঝখানে বড় একটা লাল টিপ তার চারপাশে তিলক দিয়ে সুন্দর নঁকশা আঁকা। অনুপম বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলল। বুকের ভেতর শিরশির করছে। আস্তে করে ঘরের দরজার ছিটকানি তুলে দিল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-‘শুতে আসো?
মাধু শাড়ির আঁচলের গিট থেকে একটা কচকচে পেয়ারা বের করল। তাতে কামড় বসিয়ে মনের সুখে চিবুতে লাগল, তারপর বড় আরাম করে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসল। অনুপম পাশে বসে মাধুর একহাত চেপে ধরল। চোখে চোখ রাখল। মাধু বড় বড় করে তাকাল। হাত কচলাতে থাকল। শেষে অনুপমের পুরুষালি শক্তির সাথে না পেরে , ঠোঁট উল্টে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিল। অনুপম চাপা শব্দে ধমক দিল। বলল,
-এ্যাঁই মাধু তুমি কাঁদছ কেন?
-‘আপনাকে দেখলেই আমার খুব ভয় লাগে।
-‘কেন আমি বাঘ না ভাল্লুক?
মাধু নাক টেনে লজ্জিত ভঙ্গিতে ফিসফিস করে বলল,
-‘আমার বান্ধবীরা বলেছে আপনি কাছে আসলেই আমার বাচ্চা হবে। আমি এখন কিছুতেই বাচ্চা চাই না।
অনুপম শুকনো ঢোক গিলল। ফিসফিস করে বলল,
-‘তোমার বান্ধবীরা আর কী কী বলেছে?
-‘কাউকে বলবেন না তো?
-‘না..
মাধু নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘ওরা বলেছে, আপনি একবার কাছে আসলে একটা বাচ্চা হবে, দুইবার কাছে আসলে দুটো বাচ্চা হবে। আমার তো এখন বাচ্চাই চাই না। আপনি কাছে আসলে ভয় করবে না বলুন?

অনুপম হাসবে না কাঁদবে! বুঝতে পারছে না। এই মেয়েটার বয়স পনেরো বছর। আর অনুপমের বয়স সাতাশ বছর। এই মেয়েটার থেকে গুনে গুনে বারো বছরের বড় অনুপম। বাবাকে কত করে বোঝাল অনুপম। সে কিছুতেই এত কমবয়সী, ইমম্যাচিউর মেয়ে বিয়ে করবে না। কিন্তু অনুপমের অশিক্ষিত, সহজ-সরল বাবা সে কথা বুঝলে তো! অনুপম শহরে চাকুরী পাওয়ার পর, বাবা আর দেরি করল না। রীতিমতো ঘটক ধরে, মাধুর সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। যেদিন অনুপমরা, মাধুকে দেখতে গিয়েছিল। সেদিন দেখল, মাধু আমবাগানে বান্ধুবীদের সাথে দলবল বেঁধে জুতাজোর খেলছে। মাথায় দুটো বেণী বাঁধা, কোমড়ে ওড়না গুঁজা। নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
বাবা, মাধুকে ডেকে জিজ্ঞেস করল,
-‘মা, নিপেনবাবুর বাড়ি কোথায়?
খেলায় ব্যঘাত ঘটায় মাধু বোধহয় একটু বিরক্ত হলো। খেলা বিরতি দিয়ে বাবার হাত টেনে ধরে, নিপেনবাবুর বাড়িটা কোনরকমে দেখিয়ে দিয়ে একছুটে খেলতে চলে এলো। মাধুর মা আর বড়দি দুজন মিলে, খেলা ভঙ্গ করে মাধুকে আমাদের অগোচরে নিয়ে গিয়ে তৈরি করে দিল। মাধুকে যখন সাজিয়ে গুছিয়ে আমাদের সামনে আনা হলো। মাধু বাবাকে দেখে, একগাল হেসে দিয়ে বলল,
-‘কাকু আপনারা, আমাকে দেখতে এসেছেন?
দেখতে, সহজ-সরল, সুন্দরী গায়ের গড়নের মাধুকে আমার বাবার চট করেই পছন্দ হয়ে গেল। আমার যে খুব একটা খারাপ লাগছিল তা কিন্তু নয়।

একটু আগে মাধু আমাকে যে কথা শোনাল। আমার আর মাধুকে ছোঁয়ার সাহস হলো না। আমি কপালের উপর হাত রেখে টানটান হয়ে শুয়ে পরলাম। আমার দেখাদেখি মাধুও আমার পাশে এসে শুয়ে পরল। আকাশে থালার মতো বড় চাঁদ উঠেছে, বিছানা গোলাপ, গাঁদাফুল দিয়ে সাজানো, পাশে জীবন্ত নারী শরীর। সব মিলিয়ে মোহময় পরিবেশ। আমার নিজের মাঝের লুকানো কামুক পুরুষকে এখন খুব ভয় লাগছে। আমি চোখ মেলে তাকালাম। মাধু আমার গা ঘেঁষে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। মাথার চুল এলোমেলো, সিঁথির সিঁদুর লেপ্টে গেছে, লিপস্টিক আঁকা সুন্দর ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে নালা পরছে। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে মাধুকে দেখছি। এই চাঁদের মতো সুন্দর পুতুল বউটা এখন শুধুই আমার। ভাবতেই একরাশ ভাললাগায় মনটা ভরে গেল। আমি খুব গোপনে মাধুর কপালে চুমু এঁকে দিলাম। আমার অস্থিরতা বেড়ে গেল। সাহস করে, মাধুর কপালের এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে গালে একটা চুমু খেলাম।
আমাকে ওর মুখের উপর ঝুঁকে পড়তে দেখে, মাধু বড় বড় চোখ করে তাকাল। ভয়ে এক চিৎকার দেওয়ার আগেই আমি ওর মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। ও ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এলো। আমি ওর কানের সাথে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
-‘বিয়ের পর নতুন বউকে চুমু খেতে হয়। এটা নিয়ম।
মাধু খুব লজ্জা পেল। চোখ নামিয়ে নিয়ে, সন্দিহান গলায় বলল,
-‘সত্যি তো?

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে