রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
314

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(সমাপ্ত পর্ব)

দরজা খুলে দিতেই মৈএী অবক হয়ে যায়। মিজানুর, রাবেয়া,ময়নুল,মজনু, মুহিব, মোহ, সুমনা সহ দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখেই হাসিঁর ছোঁয়া লেগে আছে। সেই যে মুহিব আর মোহন মৈএীকে এখানে অনলের সাথে রেখে গেলো এরপর আর ভাইদের, বাবাকে দেখেনি মৈএী যদও কলে যোগাযোগ রাখতো মৈএী কার কাছে আগে যাবে?ভাইদের কাছে নাকি বাবার কাছে? নাকি সুমনা আর রাবেয়ার কাছে।
মিজানুর এগিয়ে এলেন মৈএীকে বুকে নিয়ে কপালে চুমুঁ আকঁলেন। তার মেয়ে।

বাবা কেমন আছো তুমি?এতো শুকিয়ে গেলে কেন?খাওয়া দাওয়া করতেনা নিশ্চয়ই? ভাবীর একটা কথাও নাকি তুমি শুনতে না?এরকম অবহেলা করলে কেন আমার ছেলের সাথে?তোমার একবার ও মনে হলো না? তোমার মা তোমায় নিয়ে কত চিন্তায় থাকে?

মিজানুর এর চোখ ভিজেঁ ওঠে সত্যই লোকের মুখের কথা নয় এটা মেয়েরা আসলেই বাবা দের কে মায়ের ভালো বাসা দেয়।

মিজানুর মৈএীর মাথায় হাত রেখে বলেন ,
আমার কলিজার মা ছাড়া আমি কিভাবে ভালো থাকি?ছেলেরা কি মায়ের থেকে দূরে ভালো থাকতে পারে?তাই তো সবাই চলে এলাম।

খুব ভালো করেছো বাবা।

মুহিব অনলকে কল করে বাসায় আসরে বলে আজ আর ক্লাস করাতে হবে না।অনল ও চলে আসে। সবার সাথে ভাব বিনিময় করে নেয়। রাবেয়া আর সুমনা এগিয়ে এসে মৈএীর সাথে গল্প জুড়ে দেয়।

দুপুরের দিকে মৈএীর সাথে ওরা দুজনে কিচেন সামলায়। কত রকমের রান্না শিখেছে মৈএী অনলের থেকে তার সব ভাই ও বাবার জন্য রান্না করে ফেলে।
খাবার টেবিলে সকলেই এক সাথে বসে।
মিজানুর বলেন,

মৈএী, অনল…আমরা আসলে তোমাদের বিয়ের নেমন্তন্ন করতে এসেছি।

বিয়ে? কার বাবা?

অনলের প্রশ্নে ময়নুল বলে,
এক সাথে তিনটে বিয়ে হবে অনল!কার বিয়ে বলবো?

অনলের সাথে সাথে মৈএীও অবাক হয়। এত কার বিয়ে?
রাবেয়া বলে,
তুমি তো মৈএী চারটে বিয়ের নেমন্তন্ন পাবে! তোমার তিন ভাই ও এক মাত্র বান্ধুবীর বিয়ে।

কি??

হ্যাঁ। মজনু,মুহিব আর মোহনের বিয়ে।

আমাকে ছাড়াই তোমরা ভাইয়াদের বিয়ে ঠিক করে ফেললে?

নারে মা!তুই আর অনল আজকে যাবি আমাদের সাথে। আমরা মেয়ের বাসাতে গিয়ে দিন তারিখ দিয়ে আসবো।

অনল বলে , মজনু ভাইয়া কি ওই পাঠানদের বাসার মেয়ের সাথে বিয়ে করবে?

হ্যাঁ।
আমি দেখেছি মেয়ে সুন্দরী। এছাড়া আমরাও চাই এই শত্রুতার শেষ হোক যদি বিয়ে দিয়ে হিয় তাহলে তাই হোক ওদের মেয়ে আমাদের বাসায় আসবে আমাদের ছেলের বউ হয়ে। এছাড়া মজনুর ও সম্মতি রয়েছে।

ওহ ভাইয়া রাজি থাকলে তো আর কোনো সমস্যা নেই।

হ্যাঁ।

বিকেলে অনল শশুড় এর সাথেই চলে আসে। একটু পরেই মৈএীকে ও অনলকে সাথে নিয়ে মিজানুর ও ময়নুল রাবেয়া চলে আসে পাঠান বাড়িতে।
কথা বার্তা বলে দিন ঠিক করে নেয়।

সামনে শুক্রবারেই তিন ভাইয়ের বিয়ে হবে। ছয় দিন সময় আছে মাত্র। এর মাঝেই সব কাজ ঠিক করতে হবে। অনলকে দিয়ে মৈএী গ্রাম থেকে শাশুড়ী কে নিয়ে আসে। মৈএীকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে উনিও খুব খুশি। বড় লোকের মেয়ে হলেই যে বউ কথার বাউরে যাবে বা অশান্তি নিয়ে আসবে এরকক নয়। ভালোবাসাই সবার উপরে।
অনল ও লহুব সহজেই সবার সাথে মিশে যেতে শুরু করে। মোহন বা মুহিবের উপর কখনোই রাগান্বিত হয়নি অথচ ওরা কি আ*ঘাত ই না করেছিলো অনলকে।

অনল মৈএীকে দেখে দিন দিন ভালোবাসার পরিমান বাড়িয়ে দেয় এই মেয়েটা কিভাবে অনলকে ভালো বাসে কত ভাবে ভালো বাসে ভাবলেই অনলের বুক কেঁপে ওঠে। একটু অসুস্থতা দেখা দিলেই মৈএী অস্থির হয়ে পরে। অনলের ছোটে বাসাতেও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে কত দারুণ ভাবে। আবার অনল যদি সামান্য কারণে ও চুপ করে থাকে মৈএীর উপর অভিমান করে তাহলে মেয়েটা কান্নাঁ করতে করতে সমুদ্র বানিয়ে ফেলে। এই তো সেদিন অনল কলেজ থেকে একটু লেট করে বাসায় ফেরে…..
দরজা খুলেই মৈএী অনলের বুকেঁ ঝাপিয়ে পরে… কান্নাঁ ভেজা গলায় বলে,

আজ এতো সময় লাগলো কেন অনল?আমি কত ভয় পেয়েছিলাম তুমি জান? তুমি একদম আমার কথা ভাবো না অনল…. তুমি একটুও ভালো না একবার ও মনে হয়নি আমার কথা?

অনল মনে মনে হাসে মেয়েটা তাকে নিয়ে আসলেই নানা রকম চিন্তা করে। অনলের ইচ্ছে করে মৈএীকে জাদু দিয়ে ছোটে বানিয়ে পকেটে নিয়ে ঘুরতে।
অনল মৈএীর সাথে ফাজলামো করতেই বলে,

মনে পরবে কি করে?কলেজ এ আমার জন্য কত মেয়েরা প্রেম প্রস্তাব দেয় প্রতিদিন তুমি জানো?
নুসরাত তো আজকেও আমাকে….

মৈএী নুসরাত ম্যামের কথা শুনেই অনলের বুক থেকে মাথা তুলে কঠিন গলায় বলে,
ওই ম্যামকে আমি তো খু**নই করে ফেলবো…. সব সময় আমার অনলের দিকে নজর দেওয়া বের করবো……..

অনল হেসে ফেলে মৈএীর কথা শুনে এরপর আবার বলে,

তুমি জানো মৈএী রেবেকা ম্যাম ও আমার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলে আজকাল।

মৈএী এবার বোম হয়ে যায় জ্বলন্ত চোখে বলে,
ওটারও একটা ব্যাবস্থা করবো আমি আজকেই বাবা কে কল করে বলবো….. তোমার আর কলেজ যেতে হবে না…..
আমি আজকেই বাবাকে বলে অন্য কলেজ এ জয়েন করতে বলবো…..
আর তুমি ও কেন কথা বলবে নুসরাত চু*ন্নির সাথে?
অনলকে ধমকাতে ধমকাতেই কান্নাঁ করে ফেলে মৈএী… অনল এবার মৈএীকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দরজা লক করে মৈএীর কপালে চু*মু আকে ও বলে,

আমি তো তোমারই আছি মৈএী! কেউ আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। হোক না তোমার আমার রৌদ্র মেঘের জুড়ি তবুও আমরা এক হয়েছি আর হয়েই থাকবো।

তুমি একদম আমার সাথে কথা বলবেনা অনল…. সব সময় আমাকে কাদাঁও কি পাও কি তুমি একদম কথা বলতে আসবেনা।

অনল ও মৈএীর কথায় সায় দিয়ে একটু সময় চুপ করে থাকে ব্যাস আরেক দফা
কান্নাঁয় ব্যাস্ত হয়ে পরে।

———

দেখতে দেখতে মৈএীর তিন ভাইয়ের বিয়ের দিন এগিয়ে আসে। অনেক ধুমধামে বিয়ে ও হয়ে যায়। অনলের আজকাল কলেজের কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে সবার পরিক্ষা এগিয়ে আসছে কি না!কত রকম প্রশ্ন তৈরি করতে হচ্ছে নোটস বানিয়ে দিতে হচ্ছে।

এত কিছুর মাঝেও মৈএীকে সময় দিতে হচ্ছে। মেয়েটার ফাইনাল এক্সাম ও হয়ে গেছে। এখন বাসায় অনলের মায়ের সাথেই থাকে। অনল প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও অনেক রাত করে বাসায় ফিরেছে। কিন্তু আজ আর মৈএী অনলকে কোনো রকম বকাঝকা করেনি। প্রতিদিন লেট করে আসায় মৈএী আর অনলের মা দুজনেই বকাবকি করে অনলকে। কিন্তু আজ এই নিয়ম ব্যাতিক্রম অনল ভাবে আজকে আবার দুজনেই এত শান্ত রয়েছে কেন?অনলের মা আজকে আগেই নাকি ঘুমিয়েছে। মৈএী নিজেই খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। অনল খেয়াল করে মৈএী আজ শাড়ি পরেছে দুই হাতে অনলের মায়ের দেওয়া সোনার মোটা বালা দুটো পরেছে। সেই সাথে অনলের গত মাসে দেয়া চেইন ও কানের দুল ও রয়েছে। ঠোঁট জুড়ে হাসির মেলা বসেছে একটু পর পর মৈএী অনলকে দেখছে আর খাবার এগিয়ে দিচ্ছে।

কি হয়েছে আজ?

মৈএী অনলের চোখে চোখ রেখে বলে,
কি হবে?দ্রুত খাও অনল।

কেন? সারপ্রাইজ দিবে?

সেরকমই!

অনলের মনে কৌতুহল দেখা দেয়… খাবার শেষ করে রুমে আসে একটু পর মৈএীও আসে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে।
অনল তা নিয়ে টেবিলে রাখে মৈএীকে টেনে কাছে নিয়ে আসে। কোমড়ে হাত রেখে বলে,
বলোনা মৈএী……

কি ভাবে বলবো?

অনল বলে , কেন লজ্জা লাগছে নাকি তোমার?

হ্যাঁ লাগছে।

তাহলে আস্তে আস্তে বলো মানে কানের কাছে মুখ নিয়ে…..

মৈএী একটু সময় নেয় এরপর সত্যই অনলের কানের কাছে , মুখ নিয়ে বলে ,
তুমি বাবা হতে চলেছো অনল….
অনলে সাথে সাথেই মৈএীকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। কপালে গাঢ় করে চুমুঁ একে বলে,
ধন্যবাদ আমার জান!আমাকে এমন একটা উপহার দেয়ার জন্য…..
আমার পৃথিবী সাজিয়ে দিলে তুমি মৈএী….বলোনা আমি কিভাবে তোমার পৃথিবী সাজাবো মৈএী?

অনলের বুকে মাথা দিয়েই মৈএী বলে,
তোমার সাজানো পৃথিবীতে আমায় একটু জায়গা দিও অনল…কথা দিলাম আমি আর কিছুই চাইবোনা।

অনল প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ করে নেয় এই মৈএীকে কি কোনো ভাবে এই বুকের মাঝে ঢুকিয়ে ফেলা যায় না??

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে