#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ৯…
√-আমি আবার শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম তরী এসে আমার পাশে শুইলো। তরীর দিকে আর ঘুরলাম না, কারন সে এমনিতেও অনেক লজ্জা পেয়েছে।
ভোর রাতে তরীর ডাকে প্রতিদিনের মতো ঘুম ভাঙ্গলো। নামাজ পড়ে আবার দুই জনই শুইয়ে পড়লাম। পা ঠান্ডা থাকায় ইচ্ছা করে তরীর গরম পায়ের সাথে পা মিশিয়ে দিলাম। মনে করছি ঠান্ডা পায়ের ছোঁয়া পেয়ে পা সরিয়ে নিবে ঠান্ডায়, কিন্তু তার উল্টো হলো। সে আরো তার পা দিয়ে আমার পা জরিয়ে রেখে গরম করে দিলো। তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে। কেমন যেনো দিনে দিনে তার মুচকি হাসি আমায় তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে ফেলছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর তরী চা করে দিলো। তরী রান্না শেষে গোসল করে আমার পাশে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে আর আমি খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি ~
আমিঃ আপনার বোনের নাম্বার টা দেন তো..
~ তরী আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটলো ~
আমিঃ কি হলো তোরার নাম্বার দেন…
তরীঃ আপনাকে তোরার নাম্বার দিবো কেনো?
আমিঃ একটু দরকার আছে দেন। এতো প্রশ্ন করেন কেনো?
তরীঃ দিবো না নাম্বার।
আমিঃ দিলে এমন কি হবে শুনি.?
তরীঃ দিবো না তো দিবো না।
আমিঃ আপনি রাগ হচ্ছেন কেনো.?
তরীঃ তাই রাগ হবো না বুঝি..?
আমিঃ দুলাভাই তো তার সালির সাথে কথা বলতেই পারে স্বাভাবিক। এতে এতো রাগের কি হলো?
তরীঃ সব দুলাভাই তার সালিদের সাথে কথা বলতেই পারে। কিন্তু আপনি বলতে পারেন না। কারন, আপনার ভাবসাব বেশি সুবিধার লাগছে না আমার কাছে।
আমিঃ হা হা..
তরীঃ আপনি যতই হাসেন না কেনো, নাম্বার আপনি পাচ্ছেন না বলে দিলাম।
আমিঃ আমার বুঝি আপনার থেকে নাম্বার না নিতে পারলে আর নাম্বার পাওয়া হবে না মনে করছেন, হা হা।
তরীঃ কিভাবে পাবেন?
আমিঃ এখুনি শ্বশুরআব্বাকে ফোন করে তার থেকে তোরার নাম্বার নিয়ে তোরার সাথে গল্প করবো। পারলে আটকান..(হাসি দিয়ে)
তরীঃ এমন করলে কিন্তু শুভ ভাইয়া খুব খারাপ হয়ে যাবে। আপনি সবার সাথে কথা বলবেন সমস্যা নেই। কিন্তু তোরার সাথে একদম বলবেন না। দুই জনই হলেন গভীর জলের মাছ।
~ আমি হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। তরী রাগী মুখ নিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
বাসার বাইরে এসে শ্বশুরআব্বাকে ফোন করে তার থেকে তোরার নাম্বার নিলাম। তারপর ছাদে গিয়ে ছাদের দরজা আটকে দিয়ে তোরাকে ফোন করলাম। ছাদের দরজা আটকানোর সময় তরী সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দেখছিলো রাগী মুখ নিয়ে। হয়তো এতোক্ষণে ভাবতে শুরু করছে আমি ছাদের দরজা আটকিয়ে তার বোনের সাথে প্রেম করছি। আসলে তরীকে জ্বালানোর জন্য এমন করলাম। কয়েকবার কল করার পর তোরা ফোন রিসিভ করলো ~
তোরাঃ আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
আমিঃ ওলাইকুম আসসালাম। আপনার সতীনের স্বামী…(হাসি দিয়ে)
তোরাঃ ওমা গো, দুলাভাই কি আবার কথাও বলতে পারে নাকি। এতোদিন পর সালির খবর নিতে মন চাইলো..?
আমিঃ কি বলে গো সালিকা। মাত্র দুই একদিন কে এতো দিন বানিয়ে দিলে নাকি।
তোরাঃ হ্যা তাই তো। কিন্তু দুলাভাই হঠাৎ ফোন করলে যে, সালিকার সাথে প্রেম করতে ইচ্ছা হয়েছে নাকি হঠাৎ…
আমিঃ আর প্রেম করা। তোমার সাথে কথা বললেই তরী রেগে ফুলে উঠে। আর প্রেম করলে তো খুন করে ফেলবে। তোমার নাম্বার চেয়েছি বলে কত রাগ হয়েছে বলে বুঝাতে পারবো না।
তরীঃ হা হা। এটাকেই সত্যি কারের ভালোবাসা বলে বুঝলেন গো দুলাভাই।
আমিঃ হুমম বুঝলাম। এখন বলো তোমার বোনকে রাগানো যায় কিভাবে আর?
তোরাঃ কি গো দুলাভাই, বোনকে রাগানোর চিন্তা কেনো?
আমিঃ তোমার বোন রাগলে ভালোই লাগে দেখতে।
তোরাঃ হুম হুম বুঝতে পারছি। তার মানে আপনার মনে বুবুর জন্য অনেক কিছু জমা হয়ে গিয়েছে তাই না?
আমিঃ কি আবার জমা হবে?
তোরাঃ ভালোবাসা..
আমিঃ হুম, একটু একটু তো হয়ে গিয়েছে।
তোরাঃ হি হি, আমি বুবুকে বলে দিবো আপনি বুবুকে ভালোবেসে ফেলছেন।
আমিঃ একদম বলবে না। সময় এলে আমি নিজেই প্রকাশ করবো আমার ভালোবাসা।
তোরাঃ এখন বললে কি হবে শুনি.?
আমিঃ আরে সালিকা তুমি তো অনেক গুলো প্রেম করছো। আমায় নাহয় একটাই করতে দেও তোমার বোনের সাথে। আগে এমন দুষ্টু মিষ্টি প্রেম তো করি, তারপর নাহয় সব হবে।
তোরাঃ হি হি। আচ্ছা তাই হবে। আমি কিছু বলবো না তুরী বুবুকে।
আমিঃ হুম খুব ভালো। এখন বলো কি করলে তোমার বোন অনেক রেগে যায়.?
তোরাঃ তেমন কিছু করতে হবে না। শুধু বুবুর রান্না করা যে কোনো খাবারের বদনাম করলেই হলো। দেখবেন রেগে ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। আসলে বুবু অনেক মনোযোগ দিয়ে রান্না করে, আর সেই রান্না যদি কেউ বলে লবন হয় নাই বা ঝাল হয় নাই, তাহলে তার অবস্থা খারাপ করে দেয় বুবু।
আমিঃ হা হা…
তোরাঃ হাসবেন না গো দুলাভাই। লবন কম বলছি বলে কয়েকদিন আমায় মারতে দাবুর দিয়েছে জানেন, হি হি। বুবুকে অনেক রাগাতাম এই সব বলে যে রান্না পঁচা হয়েছে। তাই বলে বেশি রাগাবেন না কিন্তু, তাহলে আপনার অবস্থা খারাপ করে দিবে, হি হি…
আমিঃ বুঝলাম..(হাসি দিয়ে)
~ তোরার সাথে কথা শেষ করে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে এলাম। এসে দেখি তরী খাটের উপর বসে কাপড় ভাজ করছে আর একা একা বকবক করছে। আমায় দেখে তরী বলতে শুরু করলো, “এই যুগে কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। টিভিতে কত কিছু দেখি দুলাভাই আর সালিদের নিয়ে, ছি ছি। এই সব দুলাভাইয়ের লজ্জা বলতে কিছু নেই। সালিদের সাথে প্রেম করে। আমার তো ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে। কি আজেবাজে মানুষ তারা হয়”
আমি তার বকবক শোনে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছি। আর সে তো রাগে চোখ লাল করে রাখছে ~
আমিঃ এই যে তরী ম্যাডাম, নাস্তা দিতে হবে না বুঝি..? আমি বের হবো কখন.?
তরীঃ ওই আপনি কে হে..?..(চোখ গরম করে)
আমিঃ আম্মু সহ সবাই কিন্তু বাসায় চলে এসেছে। আচ্ছা আমি তাহলে আম্মুকে ডাক দিচ্ছি..
তরীঃ বসুন। নাস্তা আনছি…
~ বলে তরী নাস্তা আনতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর তরী পরোটা ও ডিম ভাজি নিয়ে আসলো। আমি পরোটার টুকরোর সাথে ডিম ভাজি নিয়ে মুখে দিতেই কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বললাম ~
আমিঃ ইয়াক থু, এটা কি রান্না হয়েছে। একদম পঁচা রান্না। না হয়েছে পরোটায় লবন, না হয়েছে ভাজিতে লবন। এগুলো খাওয়া যায়। পরোটার আটার সাথে যে লবন মিশাতে হয় সেটা বুঝি কারো জানা নেই… (রাগী কন্ঠে)
~ তরীর দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ লাল করে সাথে বিশাল বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ বের হয়ে যাবে ~
আমিঃ এটা কোনো রান্নার মধ্যে পড়ে নাকি??.. বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছিলো তাও ঠিক মত রান্নাটাও শিখতে পারেন নাই অকামের ঢেঁকি একটা…
~ তরী তো চোখ লাল করে বড় বড় নিশ্বাস নিতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে আমায় খেয়ে ফেলবে ~
আমিঃ এভাবে রাগী ভাবে তাকানোর কি আছে? আমি কাউকে ভয় পায় না।
তরীঃ ভাইয়া আপনাকে শেষ বারের মত বলছি, সব কিছু ভালো লাগে, কিন্তু রান্নার খুত ধরলে কিন্তু আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়।
আমিঃ মানে কি? রান্না খারাপ হলে কি তাও বলতে পারবো না?
তরীঃ মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাস না সালা..?..(রাগ হয়ে)
আমিঃ কি বললেন, কি বললেন আপনি? আমি আপনার সালা..(রাগ হয়ে)
তরীঃ সরি ভাইয়া। এই ভাবে আপনি আমার পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করছেন কেনো?
আমিঃ এখানে ঝগড়া করার কি হলো? আপনার রান্না হয় একদম বাজে…
~ তরী দৌড়ে গিয়ে খাটের উপর থেকে টিভির রিমোট নিয়ে আসলো। আমার চোখের দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে রিমোট হাতের মধ্যে নড়াচড়া করতে রইলো।
ভাবসাব দেখে তো সুবিধার মনে হচ্ছে না। রিমোট দিয়ে কি তাহলে আমার মাথা ফাটাবে নাকি আবার ~
আমিঃ আপনি রিমোট নড়াচড়া করছেন কেনো হাতের মধ্যে?
তরীঃ হাতের মধ্যে কেমন যেনো চুলকানো উঠছে তো…(রাগী ভাবে)
আমিঃ হুমম বুঝতে পারছি। খাবার জিনিস তো, ফেলে দেওয়া তো যায় না, তাই খেয়ে নিচ্ছি। এর পর থেকে আর যেনো লবণ ছাড়া রান্না না হয় বুঝলেন?
~ তরী আর কোনো উত্তর দিলো না। আমি খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলাম। সারাদিন কাজে ব্যস্ত থেকে রাতে বাসায় আসলাম। দিনে দুই বার ফোন করলেও তরী ফোনে কথা না বলে কেটে দিয়েছিলো। হয়তো প্রচুর রেগে গিয়েছে।
কিন্তু রাতে যখন আসলাম, দেখি তরী আমায় দেখে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে। কিছুই তো বুঝতে পারলাম না। এতো রাগানোর পরেও আমায় দেখে ওমন করে হাসছে কেনো। আমি ফ্রেশ হয়ে খাটে বসতেন তরী সামনে এসে হাজির ~
তরীঃ আপনাকে খাবার দিবো ভাইয়া..?
আমিঃ কি ব্যাপার, আজ আসার সাথে সাথে খাবারের কথা বলছেন?
তরীঃ আপনি সকালে রান্না ভালো হয় নাই বলে ঠিক মত খেতে পারেন নাই তো, তাই সুন্দর করে রান্না করছি।
আমিঃ না, এখন আমি খাবো না।
তরীঃ না ভাইয়া, এখন আপনাকে খেতেই হবে। আমি খাবার নিয়ে আসছি ১ মিনিট।
~ হঠাৎ তরীর এমন হাসি দেখে সন্দেহ হতে লাগলো। মনে মনে আবার বদ বুদ্ধি করছে নাকি ~
আমিঃ আমি খাওয়া দাওয়া করে আসছি। রাতে আর খেতে হবে না।
তরীঃ এমন বললে আর হবে না। অনেক কষ্ট করে রান্না করছি, আপনাকে খেতেই হবে।
আমিঃ খাবো না।
তরীঃ খেতে তো হবেই আপনাকে…
~ বলে তরী রান্না ঘরে গিয়ে খাবার নিয়ে আমার সামনে দিলো। মুরগির মাংস রান্না করছে। তরকারির কালার তো ঠিকই আছে, তাহলে তরী এমন মুখ চেপে ধরে হাসছে কেনো! তাহলে কি তরকারির সাথে কিছু মিশিয়ে দিলো নাকি! ~
আমিঃ আপনি খাবার আনলেন কেনো? আমি বললাম তো আমি খাবো না।
তরীঃ কেনো খাবেন না? এখন ঝামেলা করবেন না কিন্তু…
আমিঃ আপনি আমায় চোখ গরম করে হুমকি দিচ্ছেন?
তরীঃ হ্যা, দিচ্ছি।
আমিঃ আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস পায় না, যদি তরকারির সাথে কিছু মিশিয়ে দেন।
তরীঃ কি বলেন এই সব? আমি ওমন কাজ করবো কেনো?
আমিঃ আপনাকে আমার চেনা হয়ে গিয়েছে।
তরীঃ মানে? কিভাবে চিনলেন আমায়?
আমিঃ সকাল বেলা রিমোট নিয়ে আমার কাছে আসছিলেন কেনো?
তরীঃ হি হি, বলবো না।
আমিঃ আপনি হাসছেন কেনো? বলুন…
তরীঃ সত্যি বলতে….
আমিঃ সত্যি বলতে কি?
তরীঃ আপনার মাথা ফাটাতে।
আমিঃ মানে..?
তরীঃ আমি এতো কষ্ট করে রান্না করছি, আর আপনি বলে দিলেন লবন হয় নাই। তাই অনেক রাগ হয়েছিল তখন।
আমিঃ তাই বলে মাথা ফাটাবেন নাকি?
তরীঃ হ্যা ফাটাবো তো। কেউ রান্না ভালো হলেও যদি খুত ধরে তাহলে আমার রাগ লাগে। আমি তো তোরা কে এই জন্য অনেক মেরেছি।
আমিঃ তাই বলে আমার মাথা! আচ্ছা কিভাবে ফাটাতেন শুনি?
তরীঃ হুমম আপনার মাথা। যদি তখন আরেকটা কথা বলতেন, দিতাম জোরে একটা বারি আপনার মাথায় রিমোট দিয়ে।
আমিঃ তারপর কি হতো?
তরীঃ কি আর হতো! রিমোট ভেঙ্গে যেতো ও আপনার মাথা ফেটে রক্ত পড়তো।
আমিঃ আর আপনাকে আমি কি করতাম তখন?
তরীঃ আমি কি দাড়িয়ে থাকতাম নাকি? মাথায় জোরে করে একটা বারি দিয়ে দিতাম এক দৌড়, হি হি…
আমিঃ তারপর তো দৌড়ে আপনাকে ধরে ফেলতাম। তখন আপনার অবস্থা কি করতাম বুঝতে পারছেন?
তরীঃ যা করতেন, করতেন। কিন্তু তরকারির খুঁত ধরার স্বাদ তো মিটিয়ে দিতাম..(হাসি দিয়ে)
~ মনে মনে ভাবি, এটা কি মেয়েরে বাবা ~
আমিঃ আপনি তো সাংঘাতিক মেয়ে। আপনাকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না। যান ডাইরি নিয়ে আসুন…
~ তরী গিয়ে ডাইরি এনে আমার হাতে দিলো ~
তরীঃ ডাইরিতে কি লিখলেন ওগুলো?
আমিঃ এখানে লিখলাম, “যদি এই তরকারি খেয়ে আমার কোনো কিছু হয়, তাহলে তরী দায়”
তরীঃ মানে কি হলো?
আমিঃ আপনার ভাবসাব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না, যদি তরকারির সাথে কিছু মিশিয়ে দেন। তাই আগে থেকে লিখে রাখলাম। যদিও আমার কিছু হয় এখন, আপনি জেলে যাবেন…
তরীঃ ইয়ে আল্লাহ, এটা কি মানুষ। তারাতাড়ি ডাইরি দেন তো, আমি ওই পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলবো।
আমিঃ হা হা, বললেই হলো। এখনি আমি এই তরকারি খাবো…
~ বলেই তরকারি থেকে মাংসের টুকরো নিয়ে মুখে দিলাম ~
আমিঃ ওয়াক থু… এটা কি রান্না হয়েছে? তেতা হয়ে গিয়েছে লবনে…
তরীঃ আপনি কিন্তু একদম বাড়াবাড়ি করবেন না বলে দিলাম। সকালে বললেন লবণ কম, আর এখন বলছেন লবণ বেশি, এর মানে কি?
~ এখন বুঝতে পারছি আসল কাহিনি। সকালে তো রান্না ঠিক ছিলো, তাও লবন কম বলে রাগিয়েছি। তার জন্য হয়তো এখন লবন দিয়ে তেতো করে ফেলছে ~
আমিঃ আমি খেতে পারবো না এই তরকারি। এতো তেতো খাওয়া যায় নাকি?
তরীঃ আপনি খাবেন না মানে? খেতে হবে।
আমিঃ খাবো না তো, তো খাবো না।
তরীঃ নেকা করেন নাকি? খান বলছি।
আমিঃ আপনি আমায় ঝারি দিচ্ছেন নাকি?
তরীঃ হুমম দিচ্ছি।
আমিঃ আপনার সাহস দেখে তো অবাক হয়ে যাচ্ছি, দিবো যখন একটা কানের নিচে…
~ তরী শাড়ি গুছিয়ে খাটের উপর বসে আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো ~
তরীঃ আসেন দেন..?
আমিঃ আপনার তো ভারি সাহস হয়েছে।
তরীঃ হুমম হয়েছে.. (চোখ গরম করে)
~ তোরা তো ঠিক বলছিলো, তার রান্না নিয়ে কথা বললে পাগলী হয়ে যায় ~
আমিঃ দাঁড়ান আপনার ব্যবস্থা করছি..(চোখ গরম করে)
~ বলে, ওই আম্মু, ওই আম্মু বলে ডাকতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু রুমে এলো ~
আমিঃ দেখো আম্মু, এগুলো কি রান্না করছে…
আম্মুঃ কেনো মুরগির মাংস…
আমিঃ আরে সেটা না। দেখো তোমার ওই বউমা লবন দিয়ে তরকারি তেঁতো করে ফেলছে।
আম্মুঃ একদম মিথ্যা কথা বলবি না বউমার নামে।
আমিঃ আমি আবার কখন মিথ্যা বললাম? তরকারিতে বুঝি লবন বেশি হয় নাই?
আম্মুঃ না। তরকারিতে একদম ঠিক লবন হয়েছে। বাসার সবাই খেলো কেউ বললো না তরকারিতে লবন বেশি, আর তুই শুধু বলছিস লবন বেশি হয়েছে, বেশি হয়েছে।
~ এটা কি হলো, সবাই এতো তেঁতো করা তরকারি খেলো কিভাবে! যেটা আমি মুখেই নিতে পারছি না এতো লবন হয়েছে। তাহলে নিশ্চয়ই এই মেয়ের কোনো কুবুদ্ধি ~
আমিঃ আচ্ছা আম্মু তুমি এই বাটি থেকে একটা মাংসের টুকরো মুখে নিয়ে দেখো তো লবণ ঠিক আছে কিনা?
~ তরী বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো ~
তরীঃ না আম্মা, আপনি খাবেন না।
আমিঃ দেখছো আম্মু এটা তোমার বউমার কাজ। সে হয়তো কিছু মিশিয়েছে আমার তরকারির সাথে…
~ তরী চুপ ~
আমিঃ আম্মু কি হলো দেখো…
~ আম্মু একটু টুকরো মুখে নিতেই ফেলে দিলো ~
আম্মুঃ ইহিরে, কত তেঁতো হয়েছে। এমন তেতো হলো কিভাবে তরকারি…
~ তরী চুপ করে দাড়িয়ে আছে ~
আমিঃ আরো করো তোমার বউমার নামে প্রশংসা। দেখলে তো কেমন মেয়ে, স্বামী মারার জন্য বুদ্ধি করছিলো। সারাদিন তো শুধু প্রশংসা করো না, এখন থেকে আর করবে প্রশংসা…?
আম্মুঃ তরী মা, তরকারি এতো তেতো হলো কিভাবে?
~ তরী মাথা নিচু করে চুপ করে আছে ~
আমিঃ সে আর কি বলবে? আমাকে মারার জন্য এমন করছে।
তরীঃ শুভ ভাইয়া, আপনি একদম বাজে কথা বলবেন না কিন্তু বলে দিলাম।
আমিঃ কেনো বলবো না?
তরীঃ আমিতো আর আপনাকে মারার জন্য লবন বেশি দেয় নাই।সকালে এতো সুন্দর করে রান্না করলাম, আপনি বললেন লবন কম। তাই রাতের রান্না করা তরকারি আপনার জন্য আলাদা করে রেখে তার সাথে লবন মিশিয়ে দিয়েছি। এখন তো আর বলতে পারবেন না তরকারিতে লবন কম…
আমিঃ দেখলে আম্মু, তোমার বউমার মাথায় কত সয়তানি বুদ্ধি ভরা। তোমাদের জন্য ভালো তরকারি রেখে, আমার জন্য তরকারি তেঁতো করে রাখছে।
~ আম্মু হাসি দিচ্ছে ~
তরীঃ ভালো করছি।
আমিঃ আবার মুখে মুখে তর্ক করে। পেত্নী সাকচুন্নি…
তরীঃ আপনি আমায় গালি দিবেন না কিন্তু ভাইয়া…
আমিঃ এগুলো গালি না। এগুলো আপনার নাম।
আম্মুঃ কি শুরু করলি তোরা..?
আমিঃ ওই মেয়ের অনেক সাহস হয়েছে, একটা কড়া করে শাস্তি দেও ওই মেয়েকে।
আম্মুঃ হা হা ..
আমিঃ তুমি হাসছো? শাস্তি দিবে না…
আম্মুঃ তোদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার তোরা মিটিয়ে নিস। এর মধ্যে আমি কি করবো…
~ বলে আম্মু চলে গেলো। তরী আমার সামনে থেকে তেতো তরকারি সরিয়ে নিয়ে অন্য ভালো তরকারি দিয়ে গেলো। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিলাম। তরী বিছানার উপর বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার সামনে গিয়ে চোখ গরম করে তাকালাম ~
আমিঃ এই পেত্নী, সরেন এখান থেকে…
তরীঃ ভাইয়া আপনি কিন্তু আমায় পেত্নী বলবেন না।
আমিঃ একশত বার বলবো। আপনি তো হিজল গাছের পেত্নী।
তরীঃ আপনি শুধু ঝগড়া করেন, ঝগড়াটে ছেলে।
আমিঃ হুমম করি, তাতে পেত্নীর কি শুনি? সরেন এখান থেকে.. (ধমক দিয়ে)
~ তরী খাট থেকে উঠে দাঁড়ালো। আমি গিয়ে খাটে শুয়ে পড়লাম ~
আমিঃ আমার শ্বশুর আমায় ঠকিয়েছে…
তরীঃ আমার বাবা আবার আপনাকে ঠকালো কিভাবে?
আমিঃ শুধু ঠকিয়েছে নাকি? বিশাল ভাবে ঠকানো হয়েছে।
তরীঃ মানে.??
আমিঃ তার ঘরে একটা গুনি মেয়ে থাকতে, আমার সাথে একটা অকামের ঢেঁকিকে বিয়ে দিয়েছে। এটা কি ঠকানো হলো না বলুন? সেই অকামের ঢেঁকি রান্নাও জানে না…
~ তরী আমার চোখের দিকে লাল চোখ করে তাকিয়ে আছে ~
আমিঃ ওই ভাবে তাকানোর কি আছে? আপনাকে দেখে আমি কি ভয় পায় নাকি…
~ তরী অন্য দিকে ঘুরে গেলো ~
আমিঃ আমি কালই সকালে শ্বশুরের সাথে কথা বলবো, তার মেয়ে এটা নিয়ে যেনো ওটা দিয়ে যেতে।
তরীঃ আপনি আসলে, কি বলবো…
আমিঃ না না, বলুন বলুন… সমস্যা নেই..
তরীঃ আপনার গলায় সব সময় চুলকাই নাকি ঝগড়া করার জন্য।
আমিঃ এটা ঝগড়া না। যেটা বলছি, সেটায় সত্যি। বউ আমার ওটায় চাই…
তরীঃ আপনি শুধু আমার স্বামী। নাহলে কি যে করতাম।
আমিঃ কি করতেন শুনি?
তরীঃ আস্ত খেয়ে ফেলতাম বুঝলেন। আর কখনো আমার বোনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন না বলে দিলাম।
আমিঃ দেখলে কি হবে..?
তরীঃ আপনার সাথে আমি আর কথায় বলবো না… (রাগ হয়ে)
~ তরী রাগী মুখে এসে বিছানা থেকে তার বালিশ কম্বল নিতে লাগলো ~
আমিঃ ওগুলো নিয়ে কোথায় যান?
তরীঃ আপনার পাশে আমি ঘুমাবো না।
আমিঃ হা হা, তাহলে তো ভালোই। পেত্নী যত দূরে থাকবে, তত ভালো।
তরীঃ আপনি তো… (রাগী ভাবে)
আমিঃ বলুন আমি কি..?
তরীঃ ঝগড়াটে ছেলে…
আমিঃ হুমম সে আর বলতে। তাই নিচে ঘুমালে বুঝি ঠান্ডা লাগবে না..?
তরীঃ লাগলে লাগবে। তাও আপনার পাশে থাকবো না। সব সময় শুধু আমার সাথে ঝগড়া করেন।
আমিঃ সেই জন্য তো বলি। তোরা হলে আপনারও সুবিধা হবে। তখন আপনার সাথে আর ঝগড়া করবো না, তোরার সাথে করবো, হা হা…
~ তরী আমার দিকে চোখ গরম করে নিচে বিছানা পেতে শুইয়ে পড়লো। আমার দিকে আর ঘুরে তাকালো না। আমি বার বার তাকাচ্ছি সে কি করে দেখতে। মেয়েটার এতো রাগ, বুঝাও মুসকিল।
আমিতো শিওর তার ঠান্ডা লাগছে, এই ভাবে রাগানো উচিত হলো না। সারারাত হয়তো অনেক কষ্ট হবে তার ঠান্ডায় ~
আমিঃ এই যে তরী ম্যাডান, উপরে উঠে আসুন…
তরীঃ আমি এখানেই থাকবো।
আমিঃ এতো রাগ ভালো না। পরে ঠান্ডা লাগবে তো।
তরীঃ লাগলে লাগবে। আমি এখানেই থাকবো।
আমিঃ আমার কিন্তু খুব রাগ লাগছে এখন…
তরীঃ আমায় মেরে ফেললেও আমি এখন আপনার কাছে যাবো না।
~ হায় আল্লাহ, মেয়ের রাগ কত। এই ভাবে বলে হয়তো খাটে উঠানো যাবে না, অন্য কিছু করতে হবে। অনেক ভেবে ভেবে একটা বুদ্ধি বের করলাম। ঘরের লাইট সব অফ করে দিলাম উঠে গিয়ে ~
তরীঃ আপনি লাইট অফ করলেন কেনো সব.?
আমিঃ আমার ঘর, আমার যা ইচ্ছা হবে তাই করবো।
তরীঃ আচ্ছা ভালো।
~ ঘরের মধ্যে অন্ধকার হয়ে আছে। আমি মোবাইল নিয়ে সাউন্ড বক্সে লাগিয়ে ভুত FM চালিয়ে দিলাম। শুরু হয়ে ভুতের গল্প। একটা মানুষকে ভুতে কামড়ে কামড়ে খেয়েছে সেই গল্প হচ্ছে। আমারই তো ভয়ে কাম সারা। কান চেপে চোখ বুঝে আছি। মনে মনে হাসি দিচ্ছি, দেখবো তরী এখন কি করো, হা হা…
কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম তরী উঠে গিয়ে ড্রিম লাইট জালালো। হয়তো মানুষ খাওয়ার গল্প শোনে ভয় পাচ্ছে খুব। ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে আবার নিচে গিয়ে শুইলো।
প্রায় ১০ মিনিট পর আবার উঠলো শোয়া থেকে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে খাটের উপর উঠে আমার পিছনের দিক থেকে জরিয়ে ধরে আমার গলার পিছন ভয়ে মুখ মিশিয়ে ধরে রইলো।
আমিতো মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছি। এমন রাগী বউ সোজা করতে মাত্র একটা ভুতের গল্প হলেই হলো, আর কিছু লাগে না, হা হা…
কিছুক্ষণ পর তরী আমার বুকের উপর দিয়ে আমার সামনে থেকে মোবাইলে চালু করা ভুত fm বন্ধ করতে গেলো। এতে তার শরীর এসে আমার শরীরের সাথে মিশে গেলো। আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না, সরাসরি জরিয়ে ধরলাম।
এমন ভাবে জরিয়ে ধরলাম যে আমি তার বুকের উপর। মানে সে আমার বুকের মধ্যে রইছে। আমার মুখ নিয়ে তার কানের সাথে মিশিয়ে রাখছি। তরী তো ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে শুরু করলো। আমিতো শক্ত করে আরো বুকের মধ্যে নিয়ে গেলাম। ৩-৪ মিনিট পর ছেড়ে দিলাম ~
আমিঃ কি ইচ্ছে টা কি? এই ভাবে আমি ঘুমিয়ে আছি, আর আপনি এসে আমায় জরিয়ে ধরছেন…
তরীঃ আমি আবার কখন আপনাকে জরিয়ে ধরলাম? আপনি তো আমায় জরিয়ে ধরলেন…
আমিঃ আমি জরিয়ে ধরছি মানে? এটা তো আমার জায়গা। আপনি শুইছিলেন নিচে। আমি কি নিচে গিয়ে আপনাকে জরিয়ে ধরছি নাকি আপনি এসেছেন আমার কাছে…
~ তরী চুপ করে আছে ~
আমিঃ এই সব কিন্তু আমার একদম পছন্দ না। হঠাৎ করে সুযোগ পেলে জরিয়ে ধরা…
~ তরী এখনো চুপ করে আছে। আমিতো ড্রীম লাইটের আলোয় এখন তার মুখ দেখে বেশ মজা পাচ্ছি। সাথে হাসিও আসছে খুব ~
আমিঃ এমন ভুল আর কখনো যেনো হয় না ওকে..?
তরীঃ হুমম।
আমিঃ তাই এখানে আসছিলেন কেনো?
তরীঃ আপনি ওই ভুতের কাহিনি চালু করছেন, খুব ভয় হচ্ছিল আমার। তাই বন্ধ করতে।
আমিঃ আচ্ছা আমি বন্ধ করে দিচ্ছি। কিন্তু খাটের উপর ঘুমাতে হবে কথা দিন, নাহলে কিন্তু আবার চালু করে দিবো।
তরীঃ আচ্ছা আমি রাজি…
~ আমি মোবাইল থেকে ভুত fm বন্ধ করে দিলাম। তরী আমার দিকে তাকিয়ে আছে ~
আমিঃ ওই ভাবে তাকিয়ে থাকার কি হলো?
তরীঃ আপনি আমার বুকের উপর উপর থেকে সরে গেলেই তো আমি সরতে পারবো।
~ আমি তরীর বুকের উপর থেকে সরে গেলাম। মনে মনে ভাবি, খেয়ে গেলাম তো ধরা তার বুকের উপর আমি থাকার কারনে, এতেই তো বুঝা যায় আমিই তাকে জরিয়ে ধরছি।
তরী গিয়ে আমার ওপর পাশে শুইয়ে পড়লো। মনে মনে আমার খুব আনন্দও লাগছে, সাথে কান্নাও আসছে। জরিয়ে ধরে আনন্দ তো পেলাম, এই সুযোগে একটু তার ঠোঁটের স্বাদ নেওয়া উচিত ছিলো, এই জন্য কান্না আসছে। মিস করে ফেললাম মিষ্টি খাওয়া।
তরীর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর চেচামেচি শোনে ~
আমিঃ কি হয়েছে আম্মু? চেচামেচি করো কেনো,?
আম্মুঃ কি হয়েছে মানে? তোর বউ তুরী সকালে গিয়েছিলো মায়ার সাথে দোকানে। তখন সাদিয়া নাকি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তুরীকে অনেক অপমান করছে। বাজে বাজে কথা বলছে। রাস্তায় মানুষও জমা হয়ে গিয়েছিল নাকি অনেক…
~ তরীর দিকে তাকিয়ে দেখি তরী মাথা নিচু করে আছে ~
আমিঃ তরী চলুন তো আমার সাথে সাদিয়াদের বাড়ি। আজ তার বাবার সামনে……………………. (..#চলবে..)