#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ৭…
√-আমি আর তরী বাসায়। গতকাল রাত থেকে তরী আর আমার সাথে কথা বলে নাই।
সবাই ফুফু বাসায় যাওয়ার ঘন্টা খানিক পর দেখি তরী আর বাসায় নেই। পুরো বাড়ি খুঁজেও তরীর খোঁজ পেলাম না।
তরীকে কোথায় না পেয়ে তরীর বাড়িতে ফোন দিলাম, কিন্তু সেখানেও যায় নাই। আম্মুকে ফোন দিলাম, তারাও টেনশন করা শুরু করলো। আমার তো টেনশনে অবস্থা খারাপ। কিছুক্ষণ পর চিন্তা করলাম ছাদে গিয়েছে নাকি, ছাদে যাবো বলে যেই সিঁড়ির সামনে গেলাম, আর দেখি ম্যাডাম আচারের প্লেট নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে ~
আমিঃ এই আপনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন?
তরীঃ এই তো ছাদে গিয়েছিলাম আচার রৌদ্রে দিতে।
আমিঃ আমাকে বলে যাবেন না। আমি আরো টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।
তরীঃ আপনার চেয়ে আমি বড় টেনশনে পড়ে গিয়েছি ভাইয়া।
আমিঃ আপনার আবার কিসের টেনশন?
তরীঃ আচার রৌদ্রে দিতে গিয়ে আমিতো অর্ধেক খেয়ে ফেলছি, এখন আম্মা আমায় বকা দিবে না তো ভাইয়া…
আমিঃ এই আপনি আছেন আপনার আচার নিয়ে হুমম৷ আর আপনাকে না পেয়ে আপনার বাড়িতে আবার আম্মুকেও ফোন করছিলাম জানেন? তারাও টেনশন শুরু করছে।
তরীঃ হেএএএ
আমিঃ হেএএ না হ্যেহএ…
তরীঃ আপনি দেখি আমায় তাড়ানোর জন্য কত বুদ্ধি করছেন, আর এই টুকু সময় সামনে না পেয়ে টেনশন শুরু করছেন..
আমিঃ আপনি বুঝবেন না। যান রুমে যান..(রাগ হয়ে)
তরীঃ রুমে নয়, রান্না ঘরে যেতে হবে আমাদের দুই জনের জন্য রান্না করতে।
আমিঃ তাহলে তাই করুন যান।
~ তরী রান্না করতে চলে গেলো। আমি রুমে গিয়ে টিভি দেখতে থাকি। তরী রান্না করতে খুব পছন্দ করে।
১২ টার দিকে তরীর রান্না শেষ হয়ে গেলো। চুপচাপ নিরিবিলি পরিবেশ বাসায়।
নামাজে যাবো তাই গোসল করতে বাথরুমে ঢুকবো, গিয়ে দেখি তরী ভিতরে গোসল করতে ঢুকে গিয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছি তার দরজা খুলার নাম নেই ~
আমিঃ এই যে তরী ম্যাডাম, আপনার আর কতক্ষণ লাগবে? (চিৎকার করে)
তরীঃ ভাইয়া আর একটু সময় লাগবে। রাগবেন না প্লিজ শুভ ভাইয়া।
আমিঃ আপনি বুঝলেন কিভাবে আমি রাগ হয়েছি.?
তরীঃ ওই যে ম্যাডাম বলছেন আমায়, তাতেই বুঝতে পারছি।
আমিঃ আপনার মাথায় যতটুকু ভাবছিলাম গোবর ভরা, তার চেয়ে একটু কম আছে।
তরীঃ হা হা। ভাইয়া আমার একটু কাজ করে দিবেন প্লিজ?
আমিঃ কি কাজ বলুন..
তরীঃ আমার কাপড় গুলো ওয়ারড্রবের উপর তাকে ভাজ করা আছে, একটু এনে দেন না প্লিজ।
আমিঃ গোসল করতে গেলে সব কাপড় গুছিয়ে নিতে হয় আপনি জানেন না বুঝি.??
তরীঃ জানি তো ভাইয়া। আসলে প্রতিদিন মায়া আপু কাপড় গুলো এনে দেয় তো। আজ যে বাসায় মায়া আপু নেই, মনেই ছিলো না।
আমিঃ আমি পারবো না কাপড় এনে দিতে। আমি মেয়ে মানুষের কাপড় ধরি না।
তরীঃ প্লিজ দেন ভাইয়া। এই অবস্থায় আমি বের হতে পারবো না। একটু কষ্ট করে এনে দেন প্লিজ প্লিজ…
আমিঃ আচ্ছা দিচ্ছি। অপেক্ষা করুন..
~ আমি রুমে গিয়ে ওয়ারড্রব থেকে তরীর কাপড় গুলো নিয়ে গোসল খানার সামনে গিয়ে তরীকে ডাক দিলাম ~
আমিঃ এই যে তরী ম্যাডাম। আপনার কাপড় এনেছি।
তরীঃ আমি দরজা একটু খুলছি, আপনি কাপড় গুলো একটু এগিয়ে দিন ভিতরে।
~ কত বড় চালাক মেয়ে রে বাবা, দরজা খুলবে একটু, আর আমি বাথরুমের মধ্যে কাপড় দিতে যাবো, আর পা পিছলে পড়ে যাবো, আর তাকে ওই অবস্থায় দেখবো, আর তার প্রেমে পড়ে যাবো, যেমন হয় হিন্দি সিনেমায়। এটায় তো চাই এই মেয়ে, যেনো আমি তাকে ওই ভাবে দেখি আর তার প্রেমে পড়ি। কত বড় চালাকি করছে আমার সাথে।
আমিও কম চালাক না। হালকা দরজা খুলছে, আমিও চোখ বুঝে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে। চোখ বন্ধ থাকলে তাকে দেখতেও পারবো না, হা হা।
চোখ বুঝে তরীর হাতে যেই মাত্র কাপড় দিবো, তরী এতো জোরে কাপড় টান দিয়েছে সরাসরি পা পিছলে বাথরুমের মধ্যে গিয়ে পড়ছি।
ওমা গো, মাজা গিয়েছে ?
চোখ খুলে দেখি তরীর আমার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে ~
আমিঃ ওই আপনি পেত্নীর মত হাসছেন কেনো? আমায় টেনে তুলুন।
~ তরী এসে আমার হাত ধরে টেনে তুললো ~
আমিঃ এই আপনি দেখি সব কাপড় পড়ে আছেন?..(চোখ গরম করে)
তরীঃ আমি আবার কখন বললাম আমি কাপড় খুলে আছি.(অবাক হয়ে)
আমিঃ কাপড় যখন পড়ে আছেন, তাহলে আপনি গিয়ে নিজের কাপড় নিজে নিয়ে আসতে পারেন নাই? কাপড় এনে দেন, কাপড় এনে দেন বলে ঘ্যান ঘ্যান করছিলেন।
তরীঃ ভিজে কাপড়ে বের হলে ঘর ভিজে যাবে তাই বলছি কাপড় আপনাকে এনে দিতে। কাপড় না এনে, শরীরের কাপড় আগেই খুলতে যাবো কোন দুঃখে, হা হা।
আমিঃ আপনি একদম হাসবেন না। তাহলে দরজা পুরোটা খুললে কি হতো শুনি.?.(রাগী ভাবে)
তরীঃ ইয়ে মানে…
আমিঃ আপনার ইয়ে মানের কিছু কই, যান এখন বের হন তো। আমি গোসল করে নামাজে যাবো।
তরীঃ আমি একটু থাকি এখানে?
আমিঃ আপনার আবার এখানে কি কাজ.?
তরীঃ আপনার শরীর যদি ডলে দিতে হয় সাবান দিয়ে, তাহলে আমি ডলে দিবো।
আমিঃ কানের নিচে এমন একটা দিবো না, শরীর ডলে দেওয়া বের হয়ে যাবে। যান বের হন বলছি।
~ তরী হাসতে হাসতে বাথরুম থেকে বের হয়ে গেলো। তরী দিনে দিনে কেমন যেনো দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে।
আমি গোসল শেষ করে নামাজে চলে গেলাম। নামাজ পড়ে এসে দেখি তরী কোরআন শরিফ পড়ছে। আমি গিয়ে খাটের উপর বসে তার কোরআন শরিফ পাঠ করা শুনলাম। খুব সুন্দর লাগছে তার কন্ঠে। মনে চাই সারাদিন রাত সব সময় শুনি এতো মধুর কষ্ট।
তার কোরআন শরিফ পাঠ করা শেষ হলে আমার পাশে এসে বসলো। মসজিদে আজ জিলাপি দিয়েছে, সেগুলো আবার নিয়ে এসেছি তরীকেও দিবো বলে। হাতের থেকে কিছু জিলাপি তার দিকে এগিয়ে দিলাম ~
আমিঃ মসজিদে আজ জিলাপি দিয়েছিলো, তাই নিয়ে আসছি। নেন আপনিও খান…
~ তরী আমার হাত থেকে জিলাপি গুলো নিলো ~
তরীঃ জানেন শুভ ভাইয়া, আমরা যখন ছোট ছিলাম, বাবা মসজিদে গেলে আমরা অপেক্ষা করতাম জিলাপি নিয়ে আসবে তাই। তারপর বাবা এসে জিলাপি আমাদের দুই বোনকে ভাগ করে দিতো। আমরা খুব খুশি হতাম জিলাপি পেয়ে তখন।
আমিঃ সত্যি বলতে আমিও তো জিলাপি পাওয়ার লোভে মসজিদে যেতাম ছোট বেলায়।
তরীঃ হা হা। নামাজ পড়ার জন্য যেতেন না বুঝি..?
আমিঃ তখন তো খুব ছোট ছিলাম। কিন্তু তাই তেমন বুঝতাম না। কিন্তু জিলাপির জন্য গেলেও নামাজ ঠিক মত পড়তাম। এক দিক দিয়ে মসজিদে জিলাপি বাচ্চাদের উপহার হিসাবে দেওয়া ভালো। এতে বাচ্চাদের মসজিদে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। সব বুঝতে শিখে গেলে আর নামাজও ছাড়বে না। আপনি বলুন, বাচ্চারা মসজিদে গেলেই তো নামাজ পড়া শিখবে তাই না বলুন..?
তরীঃ একদম ঠিক বলেছেন। তাই আপনি বাচ্চাদের জন্য কিছু নিয়ে যান তো??
আমিঃ না তো।
তরীঃ কিছু নিয়ে গেলে কি হয় শুনি বাচ্চাদের জন্য?
আমিঃ আচ্ছা আপনি যখন বললেন আগামী সপ্তাহ থেকে কিছু নিয়ে যাবো।
তরীঃ আপনি না শুভ ভাইয়া খুব ভালো। আমায় যখন তাড়িয়ে দিবেন, তারপর যাকে বিয়ে করবেন, তার অনেক ভালো কপাল হবে… (মন খারাপ করে)
আমিঃ থাক না এখন এই সব কথা।
তরীঃ আচ্ছা তাহলে আপনাকে খেতে দেয় তাহলে।
আমিঃ আচ্ছা দিন। দুইজনের খাবার এক সাথে নিয়ে আসুন।
~ তরী উঠে খাবার আনতে রুমের দরজার কাছে যেতেই আবার ডাক দিলাম ~
আমিঃ একটা কথা বলার ছিলো..
তরীঃ হুমম বলুন ভাইয়া।
আমিঃ একজন স্বামী হিসাবে স্ত্রীর প্রতি যে দায়িত্ব, কর্তব, মায়া মোহাব্বত থাকে, সেটা আপনাকে আমি কখনো হয়তো দিতে পারবো না।
তরীঃ হুমম জানি তো।
আমিঃ কিন্তু আপনাকে আমার সব থেকে কাছের বন্ধু করতে চাই, আপনি কি আমার বন্ধু হবেন.??
তরীঃ বন্ধু মানে..(অবাক হয়ে)
আমিঃ মানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন আপনি? আমার অনেক গুলো বন্ধু আছে, কিন্তু কোনো বান্ধবী নেই। আপনি কি আমার বান্ধবী হবেন..?
তরীঃ আপনি ভাইয়া নিশ্চয়ই মজা করছেন আমার সাথে!
আমিঃ সত্যি মনে হয় আপনার মাথায় গোবর ভরা। মজা করবো কেনো, সিরিয়াসলি বলছি।
তরীঃ ওহহ।
আমিঃ আমি মানি বা না মানি, আমরা তো এমনিতেও স্বামী স্ত্রী। কিন্তু আপনি যদি আমার বান্ধবী হতে রাজি হন, তাহলে কথা দিলাম আর আমার ২ ফুটের মধ্যে চলে আসলেও আমি আর বকাঝকা করবো না। সাথে প্রতিদিন চকলেট এনে খাওয়াবো প্রমিস…
তরীঃ হা হা, আচ্ছা আমি রাজি।
~ বলে তরী মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো খাবার আনতে। মনে হলো তরী খুব খুশি হয়েছে। আমারও ভালোই লাগলো তাকে খুশি করতে পেরে। কেনো জানি মনের মধ্যে মনে হচ্ছে আমি আমার কালো বউ তরীর প্রেমে পড়ে গেয়েছি। আসলে তার ব্যবহার এতো সুন্দর, যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য। সব সময় মুখে হাসি থাকবেই তরীর। আর আমি শুনছি যেই মেয়েদের মুখে সব সময় হাসি থাকে, তাদের মন অনেক পরিস্কার থাকে। কিন্তু আমিতো তরীর প্রেমে পড়তে চাই না, তাও এমন মনে হচ্ছে কেনো আমার, বসে বসে চিন্তা করছি।
তরী খাবার নিয়ে আসলো আমাদের দুইজনের জন্যই। এখনো মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে। হয়তো খুবই খুশি হয়েছে তাকে বান্ধবী বলায়। খাওয়া দাওয়া শেষ হতে না হতে ঠান্ডায় বরফ হয়ে যাচ্ছি। তখন আকাশে ভালোই মেঘ হয়েছে, আবার শীতের দিন ~
আমিঃ আপনি এখন কি করবেন?
তরীঃ চুল আচঁড়াবো। আর আপনি?
আমিঃ আমার খুব ঠান্ডা লাগছে, তাই কম্বলের নিচে যাবো।
~ বলে আমি কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর তরী গিয়ে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াতে লাগলো ~
আমিঃ আচ্ছা তরী ম্যাডাম, আপনার কি রাতে ঠান্ডা লাগে নাকি খুব, পাতলা কম্বল নিয়ে ঘুমাতে..
তরীঃ আমি বুঝি ম্যাডাম, হি হি । জি স্যার, আমার ঠান্ডা লাগে একটু পাতলা কম্বল নিয়ে ঘুমাতে।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে এখন থেকে আলাদা কম্বল নিতে হবে না আপনার বুঝলেন। প্রথমে পাতলা কম্বল দিয়ে তারপর মোটা কম্বল দিয়ে এক সাথে করে নিবেন কেমন। তাহলে দুইজনের জন্য সুবিধা হবে, কারো ঠান্ডা লাগবে না আর।
তরীঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আমিঃ ভুলেও কিন্তু আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। নাহলে আপনার খবর আছে বলে দিলাম।
তরীঃ আচ্ছা স্যার, আপনার কাছেও ভুলেও যাবো না, হা হা।
~ আমি শুয়ে শুয়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করছি কম্বল দিয়ে। তরীর চুল আঁচড়ানো শেষে এসে খাটের পাশে বসে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে ~
আমিঃ কিছু বলবেন আপনি?
তরীঃ ভাইয়া, আমি কি কম্বলের নিচে আসবো? আমার পা বরফ হয়ে যাচ্ছে।
আমিঃ হা হা। আমায় দেখে বুঝি ভয় লাগে.?
তরীঃ একটু একটু। আপনি যেমন ভাবে ধমক দেন। ভয় তো লাগবেই।
আমিঃ ভয় লাগাটাই ভালো। আচ্ছা আসুন সমস্যা নেই। আমার শরীরের সাথে যেনো ছোঁয়া না লাগে।
~ তরী শাড়ি গুছিয়ে নিয়ে আমার পাশে এসে শুইলো ~
তরীঃ ভাইয়া আপনার মোবাইলটা দিবেন?
আমিঃ কেনো? কি করবেন?
তরীঃ গেমস খেলবো, হি হি।
আমিঃ এখন গেমস খেলা চলবে না। টিভি অন করুন, দুই জনে মিলে একটা মুভি দেখি।
তরীঃ আচ্ছা।
~ তরী টিভি অন করে সব চ্যানেল পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে লাগলো কোথায় কি সিনেমা হচ্ছে। কোথাও তেমন ভালো সিনেমা না পেয়ে একটা হিন্দি রোমান্টিক সিনেমা হচ্ছে ওখানে দিলো। দুই জনেই মন দিয়ে শুয়ে শুয়ে মুভি দেখছি ~
তরীঃ শুভ ভাইয়া আপনার কাছে একটা কথা জিগ্যেস করবো, রাগ হবেন না তো.?
আমিঃ রাগের কথা না বললে রাগ হবো না।
তরীঃ তাহলে থাক বলবো না।
আমিঃ আচ্ছা রাগ হবো না বলুন।
তরীঃ সাদিয়া নামের মেয়েটা কি আপনার গার্লফ্রেন্ড.?
আমিঃ হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?
তরীঃ না মানে, আপনি যখন নামাজে গিয়েছিলেন তখন আজও সাদিয়া ফোন করছিলো।
আমিঃ তারপর?
তরীঃ তার পরিচয় যখন পায় যে সে সাদিয়া, আমি ফোন কেটে দিয়েছি।
আমিঃ একদম ঠিক করছেন। এখন থেকে যদি কখনো সাদিয়া নামের মেয়ে ফোন করে, সরাসরি কল কেটে দিবেন কেমন…
তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া। কিন্তু বললেন না সাদিয়া আপনার কি হয়? গার্লফ্রেন্ড…
আমিঃ এখন সে আমার কিছু হয় না। তাকে আমি অনেক ঘৃণা করি। সে একটা খারাপ চরিত্রের মেয়ে। আচ্ছা থাক এগুলো, পরে একদিন আপনাকে সব বলবো।
তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া।
~ আবার দুই জন চুপচাপ সিনেমা দেখছি। তরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ~
তরীঃ ভাইয়া আপনাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই, রাগ হবেন না তো?
আমিঃ রাগ হলে বুঝি বলবেন না?
তরীঃ না।
আমিঃ আচ্ছা রাগ হবো না। এবার বলুন…
তরীঃ আরেকটা কথা দিন, শোনার পর আমায় ধমক দিবেন না।
আমিঃ আচ্ছা দিবো না।
তরীঃ যেটায় বলি, ধমক না দিয়ে হেসে দিবেন বলুন.?
আমিঃ এবার কিন্তু রাগ হচ্ছে আমার। বললাম তো ধমক দিবো না, বলুন বলছি…
~ তরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে ~
তরীঃ ভাইয়া আপনাকে না আমি অনেক ভালোবেসে ফেলছি (মাথা নিচু করে)
আমিঃ হা হা হা।
তরীঃ আপনাকে হাসতে বলছি, তাই বলে এতো জোরে জোরে হাসতে বলি নাই কিন্তু ভাইয়া..(লজ্জা পেয়ে)
আমিঃ আপনার কথা শোনে হাসি এলো তাই হাসলাম।
তরীঃ আমার একটা কথা রাখবেন আপনি?
আমিঃ কি কথা বলুন?
তরীঃ আপনি যদি আরেকটা বিয়েও করেন তাও আমায় ডিভোর্স দিবেন না প্লিজ। আমায় নাহয় কাজের মেয়ে করে রেখে দিবেন, তাও তো আপনাকে দিনে একবার হলেও দেখতে পাবো।
আমিঃ এখন আর এই সব নিয়ে একটা কথাও বলবেন না। চুপচাপ সিনেমা দেখুন বলছি..(রাগী ভাবে)
~ তরী চুপ হয়ে গেলো৷ আমিও সিনেমার দিকে মন দিলাম। কিন্তু যেই সিনেমাটা হচ্ছে সেখানে একটা চুমু খাওয়ার দৃশ্য আছে কিছুক্ষন পর। সেই দৃশ্যটি এগিয়ে আছে। আমি বার বার তরীর দিকে তাকাচ্ছি। হয়তো সিনেমাটা সে আগেও দেখছে, কারন সেও অস্থির মধ্যে আছে। মাথা নিচু করে রিমোট নড়াচড়া করছে হাতের মধ্যে।
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না, ওঠে চলে যাবো নাকি তরীর পাশেই থাকবো। একবার চিন্তা করছি, শত হলেও বউ তো, একসাথে দেখলে আর কি সমস্যা। আবার মনে হচ্ছে তার সাথে তো তেমন রোমান্টিক সম্পর্ক হয় নাই, এমন দৃশ্য দেখলে হয়তো সেও লজ্জা পাবে সাথে আমিও। এখন তো তরীও আমার দিকে লজ্জা মুখে তাকাতে শুরু করলো।
কি করবো, কি করবো ভাবতে ভাবতে সেই দৃশ্য চলে এলো। নায়ক কেবলমাত্র নায়িকার ঠোঁটে কিস করে ধরছে।
আমি শরীর থেকে কম্বল সরিয়ে এক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে ফ্লোরের উপর উপুর হয়ে… ধাপপপ করে পড়ে গেলাম ?
— ওমা গো, আমার নাক গেলো রে —
~ তরী বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে এসে আমায় ধরে উঠানোর চেষ্টা শুরু করলো। আমি তরীর সাইড দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলাম সেই কিস করার দৃশ্য গিয়েছে নাকি। যতক্ষণ ওই দৃশ্য হচ্ছিল, আমি ফ্লোরে শুয়েই রইলাম। দৃশ্য শেষ হওয়ার পর উঠে দাড়ালাম ~
তরীঃ আপনি পড়লেন কিভাবে ভাইয়া.?
আমিঃ আপনি চোখে দেখেন না। নামতে গিয়ে পড়ছি।
তরীঃ হঠাৎ করে এমন ভাবে দৌড় দিলেন কেনো ভাইয়া.? হি হি..
আমিঃ এখানে হাসার কি হলো? বাথরুমে যাবো তাই উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়েছি।
তরীঃ বাথরুমে বুঝি এই ভাবে দৌড়ে যেতে হয়? হি হি..
আমিঃ আপনি সব বুঝেও এখন না বুঝার ভাব নিচ্ছেন তাই না? আমি যেটা করছি, সেটা আপনার করা উচিত ছিলো।
তরীঃ ইয়ে মানে…
আমিঃ হয়েছে আর নেকা করতে হবে না। আপনি একটু বেশিই চালাক।
~ তরী চুপ করে আছে ~
আমিঃ মেয়ে মানুষ এতো চালাক কিন্তু ভালো দেখায় না। আমার একদম চালাক মেয়ে মানুষ পছন্দ না। যান আমার সামনে থেকে, যান…(ঝাড়ি দিয়ে)
~ তরী আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। আমি বিছানায় উঠে কোলবালিশ জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকাল বেলা তরীর ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গলো ~
তরীঃ ভাইয়া, ওই ভাইয়া উঠুন……….. (..#চলবে..)