#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ৪…
√-আম্মুঃ এই তুই কি পেয়েছিস শুভ। তোর বাবা রেগে গিয়েছে।
আমিঃ কেনো আম্মু, কি হয়েছে.?
আম্মুঃ আজও তুই বউমাকে তার পিতার বাড়ি না নিয়ে গিয়ে কাজে চলে গিয়েছিস কেনো?.. তোর বাবা তো রেগে আছে।
আমিঃ আমি তো তাকে বলছি ফ্রী সময়ে একদিন নিয়ে যাবো। আবার সেও রাজি হয়েছে, তাহলে আবার বাবার রাগ হবে কেনো।
আম্মুঃ তুরীর মা-বাবা ফোন করেছিলো। বিয়ে হয়ে গিয়েছে ২ দিন হয়ে গিয়েছে এখনো বউকে নিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন মনে হলো না তোর.. (খুব রেগে)
আমিঃ আরে আম্মু, সে তো বললো ফ্রী সময়ে নিয়ে যেতে।
আম্মুঃ না বলে উপায় আছে। তুই তো বউমাকে কথায় কথায় ধমক দিস, খুব নেতা হয়ে গিয়েছিস তো বিয়ের পর দেখছি। সেই ভয়ে বউমা তোর সব কথা শোনে। তোর কপাল ভালো এমন নরম মনের মেয়েকে বউ হিসাবে পেয়েছিস, অন্য মেয়ে হলে দেখতি এতোক্ষণে মারামারি গেলে যেতে।
আমিঃ আচ্ছা তোমাদের বউমা ভালো, আর আমি খারাপ। এবার তো খুশি..
আম্মুঃ হুম খুশি। আগে বল বউমাকে নিয়ে কখন যাবি বাপের বাড়ি.?
আমিঃ আগে বাড়ি তো আসতে দেও। যাও আগামী কাল সকালে নিয়ে যাবো তাকে বলে দিও।
আম্মুঃ আসার সময় তুরীর জন্য কিছু নিয়ে আসিস কেমন।
আমিঃ আচ্ছা দেখা যাবে।
আম্মুঃ দেখা যাবে না। নিয়ে আসতে হবে কিন্তু। নতুন বউয়ের জন্য কিছু কিনে আনলে সে খুশি হবে, এই টুকু বুদ্ধি তোর মাথায় নেই বুঝি.?? এখন থেকে আসার সময় আর খালি হাতে আসবি না কিন্তু।
আমিঃ আচ্ছা দেখা যাক…
~ বলে ফোন কেটে দিলাম। দুপুরে আর বাসায় আসলাম না, রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। সারাদিন কাজ কর্ম করে রাতে আসার সময় শাহি মোগলাই নিয়ে বাসায় আসলাম। আম্মু দরজা খুলে হাতে ব্যাগ দেখে খুশি হলো। মা-বাবা ও ভাই বোনের গুলো আম্মুর হাতে দিয়ে আমি আমার ও তরীর দুটো মোগলাই নিয়ে রুমে চলে গেলাম।
রুমে গিয়ে দেখি তরী কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে। আমায় দেখে উঠে বসলো। আমি ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপর গিয়ে বসলাম ~
তরীঃ আপনাকে খাবার দিবো ভাইয়া..?
আমিঃ আপনি খেয়েছেন..?
তরীঃ না, আপনাকে খাবার দিয়ে তারপর আমি খাবো। আপনাকে কি খাবার এখন দিবো.??
আমিঃ এখন আর ভাত খাবো না আমি। আপনি খেয়ে নেন।
তরীঃ আপনি না খেয়ে থাকবেন সারারাত..?
আমিঃ না। ওই ব্যাগ খুলে দেখুন দুইটা মোগলাই আছে, একটা আপনি খাবেন আর একটা আমায় প্লেটে দিন। ওই একটা খেলেই আমার পেট ভরে যাবে।
~ তরী উঠে গিয়ে মোগলাই বের করে আমায় একটা প্লেটের উপর সাজিয়ে দিয়ে সাথে সস দিয়ে আমার হাতে দিলো। আরেকটি নিয়ে রুম থেকে বের হতে লাগলো ~
আমিঃ আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন?
তরীঃ মায়া আপুকেও দিতে যাচ্ছি।
আমিঃ এতো ভালো মায়ার ভাবিজান হতে হবে না আপনাকে। মায়াকে আমি দিয়ে এসেছি। আপনি ওটা একায় পুরোটা খেয়ে নেন, ওটা শুধু আপনার ।
~ সেও প্লেটে সস নিয়ে আমার পাশে এসে বিছানার উপর বসে খেতে লাগলো ~
আমিঃ এতো হেসে হেসে মোগলাই খেয়ে লাভ নেই। আমি নিজ ইচ্ছায় আপনার জন্য আনি নাই। আম্মু জোর করে আনিয়েছে।
তরীঃ ওহহহ।
আমিঃ আপনার জন্য আমায় আজ বকা শুনতে হয়েছে…
তরীঃ কে বকা দিয়েছে আপনাকে?
আমিঃ কে আবার, আম্মু। আপনাকে আপনাদের বাসায় নিয়ে যায় নাই কেনো তাই।
তরীঃ ওহহ।
আমিঃ আপনার কি খুব জেতে ইচ্ছা করছে মা-বাবার কাছে?
তরীঃ হুমম।
আমিঃ তখন তাহলে বললেন যে ফ্রী সময়ে নিয়ে গেলেই হবে।
তরীঃ ইয়ে মানে…
আমিঃ থাক বুঝতে পারছি। আচ্ছা খাওয়া দাওয়া শেষ করুন। আমার খাওয়া শেষ।
~ তরীর খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর সে প্লেট নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। আমি টিভি অফ করে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর তরীও এসে আমার পাশে শুইলো ~
তরীঃ শুভ ভাইয়া, একটা কথা বলি রাগ হবেন না তো…
~ ঘুরে গিয়ে তার দিকে তাকালাম। দেখলাম মায়াবী ভাবে তার ডেবডেবে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ~
আমিঃ কি বলতে চান, বলুন…
তরীঃ আপনি আমাকে পিতার বাড়ি নিয়ে গেলে আর কখনো নিয়ে আসবেন না ফেরত, তাই না..?
~ এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, খুব মায়া লাগছে ~
আমিঃ আচ্ছা দেখা যাক। যখনকার কথা তখন দেখা যাবে। আপনি সকাল সকাল রেডী হয়ে যাবেন কিন্তু। আপনাকে দিয়ে আমি আবার চলে আসবো।
~ তরী মন খারাপ করে চোখ বুঝে ফেললো। আমিও অন্য সাইডে ঘুরে ঘুমিয়ে গেলাম। ভোরে তরী ডেকে উঠালো নামাজ পড়ার জন্য। সেও নামাজ পড়লো।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নিলাম। তরীকেও রেডী হতে বললাম। ১০ টার দিকে নাস্তা করে বসে আছি তরীর জন্য। কিছুক্ষণ পর তরী রুমে এসে বললো সে রেডী। তাকে নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে বললাম গাড়িতে বসতে ~
আমিঃ এই যে তরী ম্যাডাম, আপনি পিছনের সিটে না বসে সামনে আমার পাশে বসুন..
তরীঃ কেনো ভাইয়া..
আমিঃ আপনি পিছনে বসে থাকবেন, আর আমি সামনে ড্রাইভ করে যাবো,তাই না..?
তরীঃ হুমম।
আমিঃ হুমম মানে? ওমন ভাবে কেউ দেখলে সবাই ভাববে আপনি হলেন আমার ম্যাডাম, আর আমি ড্রাইভার। আমি আপনাদের বাড়ির নতুন জামাই হয়ে যাচ্ছি, ড্রাইভার না বুঝলেন হুমম…(চোখ গরম করে)
তরীঃ হি হি । আচ্ছা ভাইয়া সামনেই বসছি।
~ তরী সামনে আমার পাশে বসলো। কেনো জানি মেয়েটাকে আর দেখলে রাগ উঠে না, প্রথম দিনের মত। কিন্তু মনে মনে এখনো রাগ উঠায়, কারন তরীকে আজ হক বা কাল হক, একদিন ছেড়ে দিতে বাধ্য আমি।
আমাদের বাসা থেকে তরীদের বাসা এক ঘন্টার গাড়ির পথ। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর তরী বললো ~
তরীঃ শুভ ভাইয়া, একটা কথা বলি কিছু মনে না করলে।
আমিঃ হুমম বলুন।
তরীঃ গ্রামে যদি নতুন জামাই খালি হাতে যায় তাহলে অনেকে অনেক কিছু বলবে তো।
আমিঃ মানে..?
তরীঃ আপনি আমাদের বাড়ির নতুন জামাই। যদি মিষ্টি না নিয়ে যান তাহলে প্রতিবেশীরা সবাই তো কানাকানি করবে।
আমিঃ বলছি না আপনাকে আমি বউ হিসাবে মানি না। তাহলে আবার এতো নতুন জামাই জামাই করছেন কেনো..?
তরীঃ ভাইয়া আপনি খুব নেগেটিভ চিন্তা করেন। আমি কি বলছি আমায় বউ হিসাবে মানতে হবে, বউয়ের অধিকার দিবে হবে হুম। মিষ্টি না নিয়ে গেলে আপনাকে সবাই খারাপ বলবে। আপনার মামাকে অনেকে চিনে, সবাই বলবে ওনার ভাগনা কিপ্টে।
~ কথা তো তরী ঠিক বলছে ~
আমিঃ আপনাদের ওখানে নেই ভালো মিষ্টির দোকান.??
তরীঃ বাজারে একটা আছে। মোটামুটি ভালো মিষ্টি।
আমিঃ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এটা বলবেন না যে মিষ্টি নিতে হয়। তাহলে শহর থেকেই নিয়ে আসতাম।
তরীঃ আমিতো ভাবছি আপনি হয়তো জানেন…
আমিঃ আমিতো আগে অনেক গুলো বিয়ে করছি যে মিষ্টি নিতে হয় জানি, যতসব.. (রাগ হয়ে)
তরীঃ হি হি হি…
আমিঃ আপনি হাসবেন না তো আমার সামনে। আপনার হাসি দেখলে আমার রাগ লাগে..(রাগ হয়ে)
~ তরী চুপ হয়ে গেলো। তরীদের বাসার যাওয়ার পথে বাজার থেকে মিষ্টি নিয়ে গেলাম। গাড়ি সাইড করার পর তরী গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে আছে ~
আমিঃ কি হলো, ওই ভাবে মুখ খারাপ করে দাড়িয়ে আছেন কেনো? বাসার মধ্যে চলুন…
তরীঃ ইয়ে মানে…
আমিঃ ইয়ে মানে কি? কিছু বলতে চাইলে তাড়াতাড়ি বলুন।
তরীঃ ভাইয়া আপনি এখন আমাদের বাসায় আমায় রেখে চলে যাবেন,তাই না??.. আর জীবনে আপনাদের বাসায় আমায় উঠতে দিবেন না, তাই না..(নরম কন্ঠে)
~ কখন যে কি বলে, উত্তর দেওয়াও মুসকিল ~
আমিঃ আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে।
~ বলে তরীকে নিয়ে বাসার মধ্যে ঢুকলাম। আমার সালিকা তোরা এতে তরীকে জরিয়ে ধরলো। তোরা সালিকা খুব সুন্দরী। খুব ফর্সা। অবাক করা বিষয় হলো, ওনারা এক বোন কালো অনেক আবার এক বোন ফর্সা অনেক।
বাসার মধ্যে যাওয়ার পর দেখলাম শাশুড়ী ভালোই আয়োজন শুরু করছে আমার জন্য খাওয়া দাওয়ার।
যাওয়ার পরেই ফল কেটে দিলো, সাথে হালকা নাস্তা, শরবত ও দিলেন। গ্রাম হিসাবে দুপুরে অনেক কিছুর আয়োজন করছে। পোলাও, গরুর মাংস, রোস্ট, দই, বিভিন্ন রকমের সালাদ, সাথে কয়েক রকম মিষ্টি।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে শাশুড়ী আম্মাকে বললাম, “আমি এখন চলে যাবো একটু কাজ আছে তাই। তরীর কয়েকদিন এখানে বেড়ানো শেষ হলে আমি এসে নিয়ে যাবো”
তরীকে রেখে যাবো শোনে তরীর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। তরী ভাবছে তাকে সারাজীবনের জন্য এখানে রেখে চলো যাবো। কিন্তু আমার ওমন ইচ্ছা থাকলেও এখন পারবো না, যদি বাবা শোনে তার বউমাকে সারাজীবনের জন্য বাপের বাড়ি রেখে দিয়েছি, তাহলে আমার অবস্থা খারাপ আছে। মনে মনে চিন্তা করছি তরী দুই দিন বেড়ানো শেষ হলে নিয়ে যাবো।
শাশুড়ী বললো, এখন তো দুপুর, তাই বিকালে যেও। বিশ্রাম নিতে বললো ততক্ষণ। মুরব্বি মানুষের উপর আর না বলতে পারলাম না, রাজি হয়ে গেলাম বিকাল পর্যন্ত থাকবো বলে।
বিশ্রাম নিতে বিছানায় কাথ হয়ে চোখ বুঝে শুয়ে আছি, এমন সময় কে যেনো কোমরে সুরসুরি দিলো। মেজাজ এতো গরম হলো যে, তরীকে বলছি আমার থেকে ২ ফুট দূরে থাকতে, আর তার এতো বড় সাহস হলো কিভাবে আমায় সুরসুরি দেয়।
যখনি ঘুরে দিবো ঝারি, আর দেখি ওটা তরী না, তরীর ছোট বোন তোরা। আমায় মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। খুব সুন্দরী মেয়ে তোরা, বয়স ১৬-১৭ হবে ~
তোরাঃ কি গো দুলাভাই, সুরসুরি লাগে..
আমিঃ তোরা তুমি..?
তোরাঃ দুলাভাই দেখি আমার নামও জানে, হা হা। হো গো দুলাভাই আমি।
~ আমি উঠে বসলাম ~
আমিঃ কিছু বলবে তুমি.?
তোরাঃ তুরী বুবু গিয়েছে পাশের বাড়ির কাকিমার সাথে দেখা করতে, তাই ভাবলাম আমি গিয়ে এই সুযোগে দুলাভাইয়ের সাথে প্রেম করে আসি।
আমিঃ হা হা ভালো।
তোরাঃ এই যে আপনি প্রেম করতে পারেন তো নাকি? আমি কিন্তু প্রেমে পাক্কা খেলোয়াড়। নরমাল খেলোয়াড়ের সাথে প্রেম করে মজা পায় না, হা হা…
আমিঃ হুম বুঝলাম। তাই কয়টা করছেন প্রেম.??
তোরাঃ অনেক গুলো। হিসাব নেই..
আমিঃ এমন তো করা ভালো না। কারো মন নিয়ে খেলা করা ঠিক না বুঝলেন সালিকা।
তোরাঃ আমি কি ভালো ছেলেদের মন নিয়ে খেলা করি নাকি? যেই গুলো হারামজাদা সয়তান, সারাদিন শুধু অনেক গুলো মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের সাথে প্রেম করে মজা দেখায়। আর ভালো ছেলেরা প্রপোজ করলে মানা করে দেই, কারন তাদের মন নিয়ে খেলা করতে চাই না।
আমিঃ হুম বুঝলাম। কিন্তু সালিকা, ছেলেদের মজা দেখাতে গিয়ে নিজের চরিত্রে যে দাগ পড়ে যাচ্ছে সেটা খেয়াল আছে। পরে তো সবাই আপনাকে দেখলে বলবে, এই মেয়ে ভালো না, অনেক ছেলেদের সাথে সম্পর্ক, তখন…
~ তোরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ~
তোরাঃ আপনি তো দুলাভাই ঠিক বলেছেন। আগে তো এমন করে ভাবি নাই। আর প্রেম করবো না আমি।
আমিঃ এই তো গুড গার্ল।
তোরাঃ শরীর বুঝি খুব ক্লান্ত আপনার দুলাভাই.?
আমিঃ হুম একটু। গাড়ি ড্রাইভ করে এসেছি তো তাই।
তোরাঃ নেকা করতে হবে না। নতুন বিয়ে হলে শরীর যে ক্লান্ত হয়, এতো ছোট না যে সেটা বুঝি না।
আমিঃ ও তাই নাকি.? তাই কেনো ক্লান্ত হয় শুনি.?
তোরাঃ আমি আপনার সালিকা বুঝলেন, বউ না যে সব বলবো। কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।
আমিঃ তুমি যেটা ভাবছো, তেমন কিছু হয় নাই।
তোরাঃ আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো গো দুলাভাই.?
আমিঃ মিথ্যা না সত্যি বলছি।
তোরাঃ তেমন যদি কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তুরী বুবু এতো খুশি কেনো.? আমি এই প্রথম দেখলাম বুবু এতো খুশি।
আমিঃ খুশি কেনো আমি জানি না। কিন্তু তরীর সাথে আমার তেমন কেনো সম্পর্ক এখনো হয় নাই।
তোরাঃ কেনো দুলাভাই.?
আমিঃ সত্যি শুনবে..?
তোরাঃ হুম বলুন।
আমিঃ আসলে তরী কে আমার পছন্দ হয় নাই। এমনকি এই বিয়ে আমায় জোর করে করানো হয়েছে। সত্যি বলতে আমি তরীকে কখনো বউ হিসাবে মানতে পারবো না।
তোরাঃ কেনো?
আমিঃ কারণ তাকে আমার একদম পছন্দ হয় নাই। তার জায়গায় তুমি হলে আমি আপত্তি করতাম না। কিন্তু তাকে আমি বউ হিসাবে মানি না। আমি তো তরীকে বলে দিয়েছি, তাকে আমার পছন্দ না। খুব তাড়াতাড়ি তাকে ডিভোর্স দিবো।
~ তোরা মুখ দেখে বুঝা গেলো তার মন খারাপ হয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো ~
তোরাঃ আমি আরো বুবুর হাসি মুখ দেখে মনে করছি বুবুর জীবনে একটু হলেও সুখের ছোঁয়া পেয়েছে। কিন্তু বুবুটার এতো পোড়া কপাল যে, তার জীবনে আর সুখ কি জিনিস বুঝতে পারলো না..(চোখের পানি মুছতে মুছতে)
আমিঃ কি হয়েছে তোরা, তুমি কান্না করছো কেনো..?
তোরাঃ আমার বুবুটার জীবনে আর সুখ এলো না..(কান্না করে)
আমিঃ সুখ এলো না মানে? কি হয়েছে তোমার বুবুর..
তোরাঃ শুধু মাত্র গায়ের রং কালো বলে সারাজীবন কষ্ট করে গেলো। আচ্ছা দুলাভাই কেউ কি ইচ্ছা করে নিজের গায়ের রং কালো করে.??(চোখে পানি)
আমিঃ না তো। আল্লাহ যাকে যেমন দিয়েছে, তার গায়ের রং তেমন। আচ্ছা তোমার বুবুর কিসের কষ্ট করছে, আমায় একটু বুঝিয়ে বলবে…
তোরাঃ দেখুন ভাইয়া, বুবু কিন্তু নামাজ কালাম পড়ে, রোজা থাকে, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। কেউ যদি বুবুকে বাজে কথা শুনাই তাও কিন্তু বুবু তার উপর হেসে কথা বলে।
আমিঃ হুমম ঠিক।
তোরাঃ আর বুবুর জীবনে বুবু কতটা কষ্ট করছে সেটা শুধু আমি জানি। ছোট বেলা থেকে বুবুকে বাবা দেখতে পারে না, বুবুকে দেখলেই বাবা আজেবাজে কথা বলে গালি দেয়। সব সময় বুবুকে খাওয়ার খোঁটা দেন। এমন কোনো দিন নাই বুবু কয়টা ভাত খেতে গিয়ে গালি শুনে নাই। বাবার সাথে মাও মাঝে মাঝে গালাগালি করে, কালি পেত্নী সহ আরো অনেক কিছু বলে। বুবু প্রতিদিন ভাত খেতে বসে, আর তারা বকা শুরু করে। চোখের পানির ফোটা গুলো ভাতের মধ্যে পড়ে, আর বুবু চোখ মুছতে মুছতে সেই ভাত গুলোই খায়। একটা কথার প্রতিবাদ করতে গেলে বুবুর সেই দিন আর রেহাই নেই। জানেন, বুবুর মুখের হাসিটাও কেউ সহ্য করতে পারে না, কখনো একটু হাসি দিলেই এমন ভাবে কথা শোনাবে, আর কখনো হাসতে ইচ্ছে হবে না.. (তোরার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে)
~ একটা মেয়ে এতোটা কষ্ট নিয়ে কিভাবে হাসি মুখে বেঁচে থাকে। আমায় দেখলে তরী একটা হাসি দেয়, সেই কারনে আমি আরো তরীকে ধমক দেয়। একবারো বুঝতে চেষ্টা করি নাই, তার সেই হাসির পিছনে কতটা কষ্ট জরিয়ে আছে। যে কিনা দুইদিন আগেও ভাত খেতে বসেও কান্না করছে, আর সেই কষ্ট বুকে রেখে আমার সামনে হাসার চেষ্টা করছে। এগুলো ভেবে বুক ফেটে যাচ্ছে ~
আমিঃ তরীকে দেখে একবারো কিন্তু মনে হয় না, তার মনে এতো কষ্ট…
তোরাঃ বুবুর জীবনে বেশি কষ্ট শুরু হয়েছে যখন বয়স ১৬-১৭ হয়েছে। বুবুর বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যেতে লাগলো, আর বুবুর বিয়ে আর হচ্ছে না। তারপর থেকে মা-বাবার শত্রু হয়ে গেলো বুবু। কথায় কথায় গালি শুনতে হতো। জানেন, মাস খানেক আগে বুবুকে এক ছেলে দেখতে আসছিলো, পরে বুবু কালো দেখে মানা করে দেয় ছেলের পরিবার। পরে বাবা বুবুকে বকাঝকা করতে থাকে, বুবু শুধু বলে “আমি কি ইচ্ছা করে কালো হয়েছি নাকি” আর বাবা গিয়ে রান্না ঘর থেকে একটা লাঠি এনে বুবুর পায়ে জোরে একটা বারি দেয়। বুবু ব্যাথায় কান্না করে ফেলে..(কান্না করে)
~ লাঠি দিয়ে বারি দেওয়ার কথা শোনে বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো। আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলি ~
আমিঃ তারপর…
তোরাঃ তারপর আপনাদের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো। আপনার মা-বাবা বুবুকে দেখে ও আশেপাশে বুবুর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আমাদের জানালো বুবুকে তাদের পছন্দ হয়েছে। আমিতো খুব খুশি হয়েছিলাম সেই দিন। বাবা বুবুর সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করতো, সব তার নিজের ইচ্ছায় না, আশেপাশের মানুষ গুলো খুব খারাপ। সারাদিন আমাদের বাড়ি আসতো, আর বুবুকে খুঁচা দিয়ে বলতো, যেমন, এই কালা মেয়ের জীবনে আর বিয়ে হবে না সহ আরো কত কি। তারপর বাবার যেতো মাথা গরম হয়ে, আর বুবুকে বকাঝকা করতো, এই থেকে বাবা আর বুবুকে ভালো জানতো না।
আমিঃ ঠিক। প্রতিবেশী ভালো নাহলে তো এমন কষ্ট ঝামেলা জীবনে আসবেই। আচ্ছা আমার মা-বাবা যখন বললো তাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে তখন তোমার বুবু খুশি হয় নাই.?
তোরাঃ বুবুতো শোনে অবাক হয়ে গিয়েছিল। ওমন পরিবার বুবুকে দেখেও পছন্দ করছে বুবু তো বিশ্বাস করতে পারছিলো না। তারপর বিয়ের আগের দিন জানতে পারলো আপনার পছন্দ হয়নি বুবুকে।
আমিঃ তারপর তোমার বুবু কি বললো..?
তোরাঃ বুবুর মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমায় বলে, যদি ভাগ্য করে আপনার বউ হয়ে ওই বাড়ি যেতে পারে, তাহলে যত কষ্ট হক ওখানে থাকবেই। যদি আপনার তাকে পছন্দ নাহয়, তাহলে আপনাকে বলবে আরেকটা বিয়ে করে নিতে। শুধু রান্না ঘরে একটা কাজের মেয়ে ভেবে জায়গা দিলেই হবে। কারন, তার আর বাবার প্রতিদিনের গালাগালি আর সহ্য হচ্ছিল না।
আমিঃ একটা মেয়ে এতটা কষ্ট নিয়ে কিভাবে থাকে!
তোরাঃ আমার কথা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই তো…
আমিঃ তা কেনো হবে না।
তোরাঃ আমি একটা প্রমাণ দিতে পারি…
আমিঃ কি.?
তোরাঃ আমি যেটা বলবো করবেন..?
আমিঃ কি..?
তোরাঃ বুবুর কাপড় খুলে দেখবেন..
আমিঃ নাউজুবিল্লাহ
~ তোরা চোখের পানি মুছতে মুছতে হেসে দিলো ~
তোরাঃ আরে দুলাভাই, সে তো আপনার বউ। দেখলে কি হয়, হা হা…
আমিঃ তোরা দুষ্টুমি করো না। অন্য কিছু বলো…
তোরাঃ হা হা, কাপড় খুলে দেখতে বলতে বুবুর শুধু পিঠের থেকে ব্লাউজের হুক খুলে পিঠ টা দেখবেন।
আমিঃ কেনো, পিঠে কি হয়েছে…
তোরাঃ আরো দুই বছর আগে এমন পাত্র পক্ষ বুবুকে দেখে মানা করে দেয়, মা বকাঝকা করার সময় বলছিলো যে এই সাকচুন্নিকে খুনতি পুড়িয়ে ছেক দেওয়া লাগবে। আমি মনে করছি, হয়তো রুটি বানাতে গেলে যেমন ছ্যাক লাগে তেমন ছ্যাকা বলছে। আমি গিয়ে খুনতি নিয়ে চুলোর মধ্যে দিয়ে পুড়িয়ে এনে বুবুর পিঠে চেপে ধরছি। সাথে সাথে জামা পোড়ে গিয়ে বুবুর পিঠ পোড়ে মাংস চামড়া উঠে গিয়েছে। একেবারে অনেক খানিক……
~ তখনি তরী রুমে চলে এলো। তোরা চুপ হয়ে গেলো। তরী কিছুক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো। আমি মনে মনে চিন্তা করি, এতোটা কষ্ট নিয়ে মেয়েটা কিভাবে যে মুখে হাসি রাখে। আর আমি আরো এতদিন এই হাসির জন্য ধমক দিয়েছিলাম। খুব মায়া লাগছে এখন তরীর জন্য ~
তরীঃ শুভ ভাইয়া, আপনার জন্য কি নাস্তা আনবো.?
আমিঃ না। এখন কিছু খাবো না।
তরীঃ আপনি কি এখন চলে যাবেন..?
আমিঃ আম্মাকে গিয়ে বলুন, আজ আমি বাসায় যাবো না। এখানেই থাকবো।
~ তরীর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, মুখে হাসির ঝলক এলেও লজ্জায় ও আমার ভয়ে হাসতেও পারছে না। কিন্তু অনেক খুশি হয়েছে বুঝা যাচ্ছে ~
তরীঃ আপনি ভাইয়া সত্যি থাকবেন, নাকি রাগ হয়ে বলবেন..?
তোরাঃ এই বুবু দুলাভাই যখন বলছে এখানে থাকবে তো এখানেই থাকবে। এতো সুন্দরী সালিকা রেখে যে সালা চলে যায়, সে সালা হলো বলদ..হি হি..
আমিঃ হা হা…
~ সেই দিন আর বাসায় আসলাম না। সালিকা আর তরীর সাথে গল্প করতে করতে রাত হয়ে গেলো। সালিকা আমার পাশে পাশে বসলেও তরী অনেক দূরে দূরে বসে ছিলো। হয়তো এখনো ধমক খাওয়ার ভয় পায়। হয়তো এখন আর ধমক দিবো না তাকে, কারন তার জন্য কেমন যেনো মায়া লাগতে শুরু করছে। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানা করে দিলো তরী। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম ~
তরীঃ এখন কি হবে শুভ ভাইয়া..?
আমিঃ কেনো কি হয়েছে?
তরীঃ এখানে তো দুইটা কম্বল নেই। একটা লেপ আছে। এখন একটা দুইজনের হবে কিভাবে!
আমিঃ কেনো, এক লেপের নিচে আমার সাথে থাকতে লজ্জা পান.?
তরীঃ আপনি যে বলছেন দুই ফুটের মধ্যে চলে আসলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবেন। যদি রাতে আপনার হাত-পায়ের সাথে ছোঁয়া লেগে যায়, তাহলে ধাক্কা দিবেন না তো…
আমিঃ হা হা, আচ্ছা দিবো না। আমার দূরে দূরে থাকলেই হবে।
~ আমি শুয়ে পড়লাম। তরীও লেপ টেনে আমার পাশে শুয়ে পড়লো ~
তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া, আপনি আজ আমার বোনের জন্য এখানে থেকে গেলেন তাই না..?
আমিঃ মানে…
তরীঃ আমার বোন তো সুন্দরী। তাই আপনার পছন্দ হয়ে গিয়েছে। তাই আপনি আমাদের বাড়ি আজ থেকে গেলেন তাই না..?
আমিঃ এই মেয়ে, আপনি কি আপনার বোনকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করেছেন..?
তরীঃ ইয়ে মানে, আপনি তো সুন্দরী মেয়ে পছন্দ করেন, আমার বোনও সুন্দরী!
আমিঃ ইয়া আল্লাহ। আপনি দেখি আপনার বোনকে নিয়ে আমায় সন্দেহ শুরু করছেন। বোন সুন্দরী হলে কেউ স্বামীকে নিয়ে সন্দেহ করে নাকি.. (রাগী ভাবে)
তরীঃ ইয়ে মানে…
আমিঃ চুপ একদম চুপ। আপনি তাড়াতাড়ি ঘুমান তো। আপনি ঘুমালে আমার একটা কাজ আছে..
তরীঃ আমি ঘুমালে আবার আপনার কি কাজ ভাইয়া.??
আমিঃ যেই কাজ থাকুক, আপনার কি হুম। আপনাকে ঘুমাতে বলছি ঘুমান..(ধমক দিয়ে)
~ তরী ধমক খেয়ে অন্য দিকে মুখ করে চোখ বুঝলো। আমি তার কথা গুলো ভাবতে লাগলাম।
প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গিয়েছে তরী ঘুমিয়েছে। তাহলে কি এখন দেখবো নাকি তরীর পিঠে সত্যি পোড়া দাগ আছে কিনা!
তোরা যেমন দুষ্টু মেয়ে, আমায় আবার মিথ্যা মিথ্যা সব বানিয়ে বললো না তো। একবার কি দেখা উচিত কিনা!………………. (..#চলবে..)