#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ২…
√- আমিঃ না আমি যাবো না। ওই মেয়েকে আমার রুম থেকে বের করে দেও, তারপর আমি যাবো।
আব্বুঃ তার আগে যাবি না তো??
আমিঃ না…
— আব্বু, আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ এই শুভর আম্মু, আমাদের বাড়িতে মোট কয়টা রুম?
আম্মুঃ মোট চার টা।
আব্বুঃ চার টা, কার কোনটা?
আম্মুঃ একটা তো আমাদের, একটা মেয়ের, একটা ছোট ছেলের আর একটা শুভর।
আব্বুঃ শুভর রুমে তো এখন ওর বউ আছে তাই না?
আম্মুঃ হুমম। ওই রুমে শুভর নতুন বউ।
আব্বুঃ তাহলে থাকার জন্য আর কেনো রুম নেই?
আম্মুঃ আছে তো, রান্না ঘর.. (হাসি দিয়ে)
আব্বুঃ নতুন বউকে তো আর রান্না ঘরে রাখা যায় না। আর শুভ ওর বউয়ের কাছে যাবে না, তাহলে শুভকে বলো রান্না ঘরে থাকতে। বাড়ির ছেলে রান্না ঘরে হক, রাস্তায় হক, ঘুমালে সমস্যা নেই।
আম্মুঃ কি থাকবি নাকি রান্না ঘরে শুভ.?? (হাসি দিয়ে)
আব্বুঃ বউয়ের কাছে থাকতে সমস্যা, তাহলে এমন ছেলেদের রান্না ঘরে থাকা উত্তম। যাও শুভকে একটা চাদর বালিশ দিয়ে বিছানা করে দিয়ে আসো। আমি রুমে গেলাম…
~ বলে বাবা রুমে চলে গেলো। নিলা ভাবি ও আম্মু হাসছে। আমায় মনে হয় পাগল পেয়েছে তাদের হাসি দেখে মনে হচ্ছে। এমনিতে ঠান্ডা পড়তে শুরু করছে আবার আজ বৃষ্টি হয়েছে , আর আজ আমায় বলে রান্না ঘরে মেঝেতে ঘুমাতে। মেজাজ টা খুব গরম হচ্ছে ~
আম্মুঃ নিলা মা, যা তো শুভকে রান্না ঘরে বিছানা করে দে.. হা হা…
~ আম্মুও হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমার কথার কোনো দামীই নেই দেখছি। নিলা ভাবি হি হি করে হাসছে ~
আমিঃ দেখুন ভাবি, এটা কি ঠিক করলো আমার সাথে? আমায় বললো রান্না ঘরে থাকতে।
নিলা ভাবিঃ এই জন্য তোমায় কতবার বললাম যাও বউয়ের কাছে, গিয়ে বউয়ের সাথে কম্বলের নিচে গিয়ে গল্প করো। শুনলে না তো আমার কথা, এখন থাকো গিয়ে রান্না ঘরে।
আমিঃ আমি পারবো না।
নিলা ভাবিঃ এখন আর উপায় নেই গো দেবরজী, হা হা। চলো চলো তাড়াতাড়ি তোমার বিছানাটা করে দিয়ে আসি রান্না ঘরে, তোমার ভাই আবার আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমিঃ ভাবি গো ভাবি, কিছু একটা করুন। মুই রান্না ঘরে যাইতুন নো.. (কান্না সুরে)
নিলা ভাবিঃ কিছু একটা করতে পারি। যদি আমি যা বলবো, তাই করবে কথা দেও…
আমিঃ হুমম বলুন…
নিলা ভাবিঃ যদি কথা দেও তুমি তোমার বউকে আজ রাতে ভালোবাসা, আদর সব দিবে, তাহলে তোমার রুমেই তোমার থাকার ব্যবস্থা করছি, হি হি…
আমিঃ ওই মেয়ের কথা কখনো বলবেন না আমার সামনে। তার কথা মনে পড়লেই রাগ উঠে আমার। তার চেয়ে আমি রান্না ঘরে ঘুমাচ্ছি।
নিলা ভাবিঃ হায়রে দেবরজী রেগে যাচ্ছে কেনো? আচ্ছা বউকে ভালোবাসা, আদর দিতে হবে না। শুধু রুমে গিয়ে ঘুমাও কেমন?
আমিঃ এখন রুমে গেলে আমার ইজ্জত থাকবে মা-বাবা কাছে!
নিলা ভাবিঃ তুমি বলবে, ভাবি আমায় জোর করে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে আটকে দিয়েছে। তাহলে তো তুমি আর ছোট হলে না…
আমিঃ আমি মিথ্যা বলতে পারবো না।
নিলা ভাবিঃ ওলে ঢং কত। তার সমাধানও আছে আমার কাছে, হা হা..
আমিঃ কি সমাধান?
~ নিলা ভাবি জোরে করে ধাক্কা দিয়ে আমায় রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। সে বাইরে থেকে দরজা ধরে বললো ~
নিলা ভাবিঃ এই যে মিস্টার শুভ, এখন তো বলতে পারবে ভাবি আমায় জোর করে রুমে ঢুকিয়ে দিয়েছে, হা হা।
আমিঃ আপনি খুব চালাক…
নিলা ভাবিঃ হয়েছে, আর প্রশংসা করতে হবে না। এবার গিয়ে মন দিয়ে বাসর করো কেমন, হা হা…
~ বলে দরজা ঠাস করে আটকে দিলো বাইরে থেকে। আমি দরজা ভিতর থেকে লক করে দিলাম।
খাটের দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখি আমার নতুন বউ খাটের মাঝ খাটে ঘুমটা টেনে বসে আছে। হয়তো আমাদের বাইরের এতোক্ষণ যত রকমের কথা হয়েছে, সব শুনতে পেয়েছে। যদি সব শুনে থাকে তাহলে তো কান্নাও হয়তো করছে এতোক্ষণে। আমিও তো তাই চাই, আমার কথায় কষ্ট পেয়ে কান্না করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাক। কেনো জানি এই মেয়েকে একদম সহ্য হচ্ছে না।
কিভাবে এই মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়ানো যায় সেই চিন্তা করছি আর হাঁটছি খাটের পাশ দিয়ে ১০ মিনিট হয়ে গিয়েছে। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, মেয়েটা কত অসভ্য। সারাজীবন শোনে এলাম, স্বামী বাসর ঘরে ঢুকলে স্ত্রী এসে সালাম করে, আর আমি ১০ মিনিট হেটে পা ব্যাথা করে ফেললাম, তাও এসে সালাম করছে না। কত বড় পাজি মেয়ে রে বাবা। না, এর সাথে সংসার করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
সালাম যখন করবি না, তাহলে আমার সালাম লাগবেও না। আমি আবার এতো সালাম পাওয়ার লোভ করি না, মনে মনে এমন বকা দিয়ে চেয়ারের উপর গিয়ে বসে মোবাইল বের করলাম।
ফেসবুক এক্টিভ করার সাথে সাথে সয়তান বন্ধুরা এক এক মেসেজ দেওয়া শুরু করলো। কি সব বিড়াল মারা সহ আজেবাজে দুষ্টুমি করা শুরু করলো। কোন বিপদে আজ পড়লাম, ফেসবুকেও শান্তি নেই। ফেসবুক থেকে লগআউট করে ইউটিউবে গিয়ে বাংলা নাটক দেখতে লাগলাম। নাটকের কাহিনির মধ্যে এমন ভাবে ঢুকে গিয়েছি, রুমে যে নতুন বউ আছে ভুলেই গিয়েছি। হঠাৎ মনে পড়লো, বউয়ের কথা।
ঘুরে তাকিয়ে দেখি বউ এখনো ওই ভাবে খাটের মাঝে বসে আছেই । ঘড়িতে দেখি রাত তখন ১ টার ও বেশি ~
আমিঃ আপনি এখনো ঘুমান নাই?
~ তার কোনো উত্তর নেই ~
আমিঃ আপনার কি ঘুম এসে নাই?
~ এখনো কোনো কথা নেই ~
আমিঃ কি হলো? কথার উত্তর দেন না কেনো? ঘুমান নাই কেনো এখনো..?..(ধমক দিয়ে)
বউঃ ইয়ে মানে…
আমিঃ ইয়ে মানে কি? (ধমক দিয়ে)
বউঃ আমি কোথায় ঘুমাবো?..(নরম কন্ঠে)
আমিঃ কোথায় ঘুমাবেন মানে? এসেই তো আমার খাট টা দখল করে বসে আসেন। দখল করে যখন বসে আছেন, তাহলে ওখানেই ঘুমান…
~ বউ মাথা নেড়ে “হুম” বললো ~
আমিঃ এই যে মেয়ে, আপনার ঘুমটা তুলুন তো।
বউঃ আমি তুলবো?
আমিঃ তাহলে কি আমি গিয়ে তুলবো নাকি। তুলুন…
~ কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুমটা তুলে ফেললো। মেয়েটা দেখতে ভালোই মায়াবী, চোখ দুটোও খুব মায়াবী, চোখের পাপড়ি গুলোও খুব সুন্দর। কিন্তু শরীরের রং কালো। মুখটাও কালো ~
আমিঃ আপনি কি কান্না করছেন?
বউঃ না তো।
আমিঃ বাইরে যত কথা হয়েছে, আপনি কিছু শুনেন নাই?
বউঃ ইয়ে মানে…
আমিঃ ইয়ে মানে কি? শুনছেন নাকি শুনেন নাই বলুন..?
বউঃ শুনেছি।
আমিঃ তাহলে কান্না করেন নাই কেনো?
বউঃ কান্না তো আসে নাই।
~ এই মেয়ে বলে কি, এতো সাহস করে বাবার মুখের উপর কথা বললাম, উনাকে কালো কালো সহ কত কিছু বললান, তাও নাকি কান্না আসে নাই। আমি আরো ভাবছি এতোক্ষণে কান্না করে চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজিয়ে ফেলছে, সকালেই বাড়ি থেকে পালাবে, কিন্তু মেয়ের মুখে দেখি কান্না করার কোনো আলামত নেই। বুঝতে আর বাকি রইলো না, এই কালো বউ বাড়ি থেকে বিদায় করতে আমার খুব কষ্ট আছে কপালে ~
আমিঃ শুনুন, আমি এতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারি না। তাই সরাসরি বলে দিচ্ছি, আপনাকে আমার পছন্দ হয় নাই। আপনাকে আমি কখনো বউ হিসাবে মানতে পারবো না, এমনকি স্বামী হিসাবে আমার থেকে কখনো আদর, ভালোবাসা পাবেন না।
~ মেয়েটা চুপ করে আছে ~
আমিঃ চুপ করে থেকে কেনো লাভ নেই। আপনার জন্য ভালো হবে, আপনি আগামী কাল সকালেই আমাদের বাড়ি থেকে চলে গেলে। কারন, আমি আপনাকে কখনো গ্রহণ করবো না।
~ তার চোখ ফুলে উঠেছে চোখের জলে । তার চোখে পানি দেখে কেমন যেনো নিজের মনের মধ্যে খারাপ লাগতে লাগলো। তাহলে মেয়েটাকে কি বেশি বেশি বলে ফেললাম। হয়তো প্রথমেই এই ভাবে আঘাত দিয়ে কথা বলা উচিত হয় নাই ~
আমিঃ আপনার চোখে পানি কেনো?
বউঃ ইয়ে মানে.. (চোখে মুছতে মুছতে)
আমিঃ আপনি কি সব কথায় ইয়ে মানে ইয়ে মানে বলেন.?
বউঃ ইয়ে মানে, আপনার থেকে আমি কখনো আদর ভালোবাসা চাইবো না। আপনি না চাইলে আপনার চোখের সামনেও কখনো আসবো না, কিন্তু প্লিজ আমায় তাড়িয়ে দিবেন না। আপনার পায়ের কাছে আমায় একটু জায়গা দিবেন… (কান্না চোখে)
~ কেনো জানি মেয়েটার কান্না মুখ দেখে আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো ~
আমিঃ আজ পায়ের কাছে, তারপর দুইদিন পর বুকে জায়গা চাইবেন, এমন মতলব করছেন ঠিক না..?
বউঃ বিশ্বাস করুন, আমি তেমন কেনো মতলব করি নাই। আমায় তাড়িয়ে দিলে আমার ভবিষ্যৎ জীবন বলতে আর কিছু থাকবে না। আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না।
আমিঃ কেনো আপনার পিতার বাড়ি..?
বউঃ ইয়ে মানে.. (কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেলো)
আমিঃ চুপ হলেন কোনো?
বউঃ আপনি যদি আমায় আপনার পায়ের কাছে একটু জায়গা দেন, আমি কথা দিচ্ছি আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। শুধু বাড়ি থেকে তাড়াবেন না। যদি আমি ভুলেও আপনার কাছে জোর করে ভালোবাসা বা আদর দাবি করি, তাহলে আমায় তখন তাড়িয়ে দিয়েন..(বলে খুব কান্না করে দিলো)
~ মেয়েটি হঠাৎ এই ভাবে কান্না করে দিবে বুঝতে পারি নাই। না, মেয়েটার কান্না দেখে খুব খারাপ লাগছে ~
আমিঃ এই আপনি কান্না করছেন কেনো? প্লিজ কান্না বন্ধ করুন…
~ মেয়েটি কান্না থামিয়ে চোখ মুছতে লাগলো ~
আমিঃ অনেক রাত হয়েছে, আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।
বউঃ আপনি ঘুমাবেন কোথায়.?
~ সেটায় তো কথা, আমি ঘুমাবো কোথায়। মেয়েটার মুখে দেখে মনে হচ্ছে খুব ভালো, হয়তো আমি নিচে শুইতে চাইলে সে জোর করে আমায় বিছানার উপর শুইতে দিয়ে সে নিচে ঘুমাবে। তাহলে তো আমার সব দিক দিয়ে লাভ ~
আমিঃ এক কাজ করুন, ওই পাতলা কম্বল, সাথে ওখানে চাদর আছে,ওখান থেকে একটা চাদর ও সাথে একটা বালিশ দিন, আমি নিচে বিছানা করে ঘুমাবো।
~ সে তার শরীরের লাল বেনারসি ঠিক করতে করতে খাট থেকে নেমে আমার দেখানো ওয়ারড্রব থেকে থেকে একটা চাদর বের করে বিছানা পাতলো। সাথে পাতলা কম্বল ও দিলো। পরে একটা বালিশ দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি তো মনে মনে হেব্বি খুশি। মনে হয় এখুনি বলবে, আপনি উপরে ঘুমান, আমি নিচে ঘুমাবো, হা হা ~
বউঃ আপনার আর কিছু প্রয়োজন আছে?
আমিঃ না না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন তাহলে।
~ “আচ্ছা” বলে বালিশ টা আমার হাতে দিয়ে সে গিয়ে খাটের উপর মোটা কম্বল দিয়ে শুইয়ে পড়লো। এটা কি হলো, আমায় একবারো বললো না কেনো খাটের উপরে থাকতে।
এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। এই ঠান্ডার মধ্যে আমি নিচে শুইলে তো নিশ্চিত ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যাবো, সে নাকি আমার বউ, তাহলে একবারো ভাবলো না আমার কথা ?
ঠান্ডার কথা মনে পড়লে আমার কান্না চলে আসছে। ওমা গো, বিয়ে করে আমার জীবন তেজপাতা হয়ে গেলো।
বালিশ নিয়ে মন খারাপ করে নিচে শুইয়ে পড়লাম। বউ খাটের উপর শুয়ে তার ডেবডেবে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গরম কম্বলের নিয়ে শুয়েছে তো, আরামে আছে মনে হচ্ছে । যত কষ্ট শুধু আমার ~
আমিঃ আপনি আমার দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? অন্য দিকে ঘুরে ঘুমান..(জোরে ধমক দিয়ে)
~ সে আমার ধমক খেয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। ১০ মিনিট পরেই আমার অবস্থা খারাপ হতে লাগলো ঠান্ডায়। নিচ থেকে ঠান্ডা উঠে হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার উপর রাগ ও হচ্ছে, তার জন্য আমার আজ এমন কষ্ট করতে হচ্ছে। কোনো ভাবে ঘুম আসছে না, আর এতো ঠান্ডায় ঘুম আসার কথাও না সহজে।
প্রায় ১ ঘন্টার বেশি সময় হয়ে গিয়েছে ঘুমানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু ঘুম কোথায় যে গিয়েছে, খোঁজই নেই। মনে মনে চিন্তা করলাম, মেয়েটাকে কি আরেকবার ডেকে উঠাবো নাকি, যদি এবার খাটের উপর শুইতে বলে। নাহলে তো ঠান্ডায় জমে যাবো। যেই ভাবনা সেই কাজ.. ~
আমিঃ আপনি কি জেগে আছেন?
~ কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর আমার দিকে ঘুরে তাকালো ~
বউঃ আপনি আমায় কিছু বলছেন?
আমিঃ আপনার কাপড় ঠিক করুন।
বউঃ মানে…
আমিঃ আপনি আমার দিকে ঘুরতে গিয়ে আপনার শরীর থেকে কম্বল সরে গিয়েছে। সাথে আপনার পেট থেকে কাপড়ও সরে গিয়েছে। পেট দেখা যাচ্ছে…
~ সে নিচ দিকে তাকিয়ে দেখে পেটে কাপড় নেই, তাড়াতাড়ি কাপড় দিয়ে পেট ঢেকে নিলো। খুব লজ্জা পেয়েছে তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ~
আমিঃ আপনার নাম কি.?
বউঃ আপনি আমার নাম জানেন না?
আমিঃ জানলে কি আর বলতাম নাকি। নাম মনে নেই, বলুন…
বউঃ তুরী..
আমিঃ তুরী নাকি তরী..?
বউঃ তুরী..
আমিঃ আমি যদি তুরীর জায়গায় তরী বলি তাহলে সমস্যা আছে আপনার?
বউঃ না..
আমিঃ আবার রাগ হলেন নাকি? মাতব্বরি করে আমি নাম পাল্টিয়ে দিলাম বলে…
বউঃ না না, রাগ হবো কেনো। বাসর রাতে স্বামীর থেকে নতুন নাম পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।
আমিঃ আপনাকে না বললাম আমায় কখনো স্বামী বলবেন না।
বউঃ তাহলে কি বলবো.??
আমিঃ এখন থেকে আমায় ভাইয়ার নজরে দেখবেন। সব সময় শুভ ভাইয়া বলবেন, ওকে…
তরীঃ(আমার বউ)… আচ্ছা
আমিঃ হুমম মনে থাকে যেনো। আচ্ছা, আপনাদের বাসায় একটা মেয়েকে দেখলাম অনেক সুন্দরী। সে আপনার কি হয়.??
তরীঃ আপনি কি তোরার কথা বলছেন?
আমিঃ আজ বিয়ের সময় খাবার শেষে যে দই এনে দিলেন।
তরীঃ ওই তো তোরা। আমার ছোট বোন। খুব সুন্দরী তাই না?..(খুশি মনে)
আমিঃ দেখতে তো খুব সুন্দরী…
তরীঃ হুমম। ওকে দেখার জন্য তো প্রায় দিনই ছেলে পক্ষ আসে আমাদের বাসায়। অনেক ছেলের পরিবার তো তরীকে বউ করে নিতেও জোর করছে। শুধু আমার বিয়ের জন্য ওর বিয়ে আটকে ছিলো। এবার আমার বিয়ে হয়েছে, ঠিক ওর বিয়েটাও হয়ে যাবে এবার।
আমিঃ ওহহ।
তরীঃ জানেন, ওর সাথে প্রেম করার জন্য অনেক ছেলেরা পিছনে পিছনে ঘুরে। অনেক কিছু গিফট দেয় ছেলেরা ওকে। এমনকি দামি দামি চকলেট বক্সও দেয় তোরাকে। সেগুলো তোরা বাসায় এসে খায়, আমাকেও খেতে বলে, কিন্তু আমি খায় না।
আমিঃ তারমানে আপনার বোন পাজি..?
তরীঃ একটু দুষ্টু। কিন্তু মনটা অনেক ভালো। সব সময় সবার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলে, কাউকে কষ্ট দেয় না।
আমিঃ তাহলে অন্য ছেলেদের গিফট এনে খায় কেনো?
তরীঃ আমি তো ওকে অনেক বুঝায়, সে বলে লুচ্চা ছেলেদের এমন করাই উচিত। কিছু ছেলেরা নাকি শুধু প্রেমের প্রস্তাব দেয়, আর রাস্তায় বিরক্ত করে। তাই তোরা বলে, এমন ছেলেদের এমনি করা উচিত। বিয়ে করবে না, শুধু প্রেম করতে চাই, তাই শিক্ষা দেয়…
আমিঃ আপনার বোনতো অনেক চালু…
তরীঃ একটু চালু….
~ বলে নিজের ছোট বোনের প্রশংসা করতে শুরু করলো। তার বোনকে শাড়িতে কেমন লাগে, মেকআপ করলে কেমন লাগে এমন হাজার কথা বলতে লাগলো। আমার তো মেজাজ গরম হচ্ছে, যেই জন্য ডেকে তুললাম যেনো আমায় খাটের উপর গিয়ে শুইতে বলে, তা না বলে বোন এটা বোন ওটা বলেই যাচ্ছে। আমার তো বকবক শোনতে শোনতে মাথায় রক্ত উঠে গেলো ~
আমিঃ এই আপনি চুপ করেন তো। সেই কখন থেকে বকবক করছেন থামার নামই নেই। যান চুপ করে ঘুমান.(ধমক দিয়ে)
~ তরী চুপ হয়ে অন্য দিকে ঘুরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, আমার জায়গা আজ আর খাটে হচ্ছে না। অনেক কিছু কল্পনা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি মনে নেই।
সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো, দেখি মোটা কম্বলটা আমার শরীরে দেওয়া। সেই জন্য হয়তো শেষ রাতে একটু ভালো ঘুম হয়েছে। কিন্তু তরী কম্বল দিলো কখন আমার শরীরে, কিছু বুঝতে পারলাম না। মেয়েটা এমনি অনেক ভালো আছে, সব কথা মানে। কিন্তু যত ভালোই হক, ওই সাদিয়ার সাথে জিতলে হলে মেয়েকে আমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সুন্দরী একটা মেয়ে বিয়ে করতেই হবে।
বিছানা থেকে উঠে বাইরে থেকে ব্রাশ করে যখন রুমে আসলাম, দেখি নিচে করা বিছানা তরী গুছিয়ে ফেলছে। আমায় বললো, “শুভ ভাইয়া আপনি বসুন, আমি গোসল করে এসে আপনার নাস্তা দিচ্ছি”
বসে সে গোসল করতে চলে গেলো।
১০ মিনিট পর গোসল করে নতুন একটা শাড়ি পড়ে মাথায় তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমে আসলো। আমি চোখ সরাতে পারছি না, কালো মেয়েও এতো কিউট হয় আগে জানতাম না। এতো মায়াবী তার তাকানো, মনে হচ্ছে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।
সে এসে আমার থেকে একটু দূরে খাটের উপর বসে চুল আঁচড়াতে লাগলো ~
আমিঃ আপনি কি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে সাজগোজ করেন.?
তরীঃ আমি তো সাজগোজ করি না। গোসল ও প্রতিদিন দুপুরেই করি, আজ শুধু সকালে করলাম। সাজগোজ বলতে মাথায় শুধু তেল লাগায়, তাছাড়া কিছু না।
আমিঃ তাহলে সাজগোজ করেন না কেনো?
তরীঃ আমিতো এমনিতে অনেক কালো। তারপর আবার সাজগোজ করলে হয়তো আরো বিশ্রী দেখতে লাগবে।
আমিঃ ওহহ।
~ তারপর আমি সকালের নাস্তা করে রুম থেকে বের হবো, এমন সময় আম্মু ডাক দিলো ~
আম্মুঃ কোথায় যাচ্ছিস শুভ.?
আমিঃ কোথায় যাচ্ছি মানে, প্রতিদিন যেখানে যায়, সেখানে। আমার কাজে আমি যাচ্ছি…
আম্মুঃ পাগল হলি নাকি তুই। গতকাল বিয়ে হয়েছে, আর আজ কাজে যাচ্ছিস..?
আমিঃ আর বিয়ে, আমি ওই বিয়ে মানি না। বিয়ে বিয়ে করে আমার এতো নাচার টাইম নেই।
আম্মুঃ বউমাকে নিয়ে আজ তার বাপের বাড়ি যেতে হবে তোর, তুই জানিস না.?
আমিঃ আমি পারবো না।
আম্মুঃ ঝামেলা করিস না শুভ। একটু পর বউমাকে নিয়ে ওর বাপের বাড়ি যা বলছি।
আমিঃ যেতে হলে তাকে একাই যেতে বলো, আমি পারবো না।
আম্মুঃ তোর বাবাকে ডাক দিবো..
আমিঃ যাও, দেও ডাক। তাও আমি পারবো না। আর শোনে, তাকে বলো বাপের বাড়ি গিয়ে ওখানেই থেকে যেতে, আমার জীবন জ্বালাতে আবার যেনো ফিরে না আসে।
~ বলে আমি বাসার বাইরের দিকে হাটা দিলাম। তরীকে দেখলাম মন মরা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আম্মু তো খুব রেগে আছে। এমন কথা না বলেও উপায় ছিলো না আমার।
সারাদিন রেস্তোরাঁর কাজেই ব্যস্ত থেকে বিকালে বাসায় আসলাম। রেস্তোরাঁর কাজ বলতে, ছোট রেস্তোরাঁ তো, একজন বাবুর্চী আছে সে রান্না করে দেন, আর আমি শুধু ক্যাশ সামলায়, আর ২ জন কর্মি আছে । তাছাড়া আমি রান্না করি না, ও রান্না পারিও না করতে। আজ সারাদিন বাসায় আর কোনো ফোনও করলাম না।
বাসায় এসে সব রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম তরী কোনো রুমে নেই। তাহলে কি তরী চলে গিয়েছে বাড়ি ছেড়ে। গেলে তো ভালোই হয়েছে, এক দিনের মধ্যে ঝামেলা বিদায় হলো। খাটের উপর শুয়ে শুয়ে ভাবছি তরীর চলে যাওয়ার কথা, আর মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছি। এর মধ্যে আমার ছোট বোন মায়া রুমে এলে ~
মায়াঃ ভাইয়া তুমি একা একা হাসছো কেনো?
আমিঃ ওই মেয়েটা অবশেষে পালিয়ে গিয়েছে তাই না, হা হা…
মায়াঃ ওই মেয়ে মানে..?
আমিঃ আরে তরীর কথা বলছি। গতকাল থেকে এতো এতো কথা শুনিয়েছিলাম যে আজই আমাদের বাসা থেকে পালিয়েছে, হা হা। এতো তাড়াতাড়ি এতো বড় কাজে সফল হবো বুঝতে পারি নাই রে।
মায়াঃ ভাইয়া তুমি এতো খারাপ। শেষ পর্যন্ত ভাইয়া তুমি ভাবিকে বাপের বাড়ি…………………. (..#চলবে..)