#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৫
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
ঘুমের মাঝে অনুভব হচ্ছে কেও আমার ঘরজুড়ে অস্থির ভাবে হাটাহাটি করছে৷ একটু আগে চোখটা লেগেছে!কান্নার ফলে মাথা ব্যাথা করছে যার ফলে হাজার চেয়েও চোখ খুলে তাকাতে পারছি না৷ পায়ের আওয়াজ না পেয়ে ঘুমিয়ে যেতেই কারো ঠান্ডা হাতের ছোয়া আমার গালে পেতেই বিরবির করে বললাম,
–‘হাত বুলিয়ে দিবেন আমার গালে? অনেক জ্বলছে জানেন!’
ঘুমের ঘোরে সত্যিই কেও হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷তার হাতের ছোঁয়ায় জাদু আছে৷ শান্তির ঘুম হবে!যেখানে থাকবে না কোনো দোটানার পাহাড়৷গালের হাতের ছোঁয়া হঠাৎ মাথায় পেতেই টনক নড়ে আমার৷ এতো রাতে ঘরে কে?গভীর ঘুম ছুটে যায়৷ আমার যতদূর মনে পড়ে দরজা বন্ধ৷ তাহলে কি ওই আপুর আত্মা? চোখ খুলে তাকাতে ভয় হচ্ছে৷ চোখ খুললেই মনে হয় ভয়ানক চেহারা দেখতে পাবো৷ আল্লাহ বাচাও আমায়!দিনে কাব্য ভাইয়ের ভয় আর রাতে ভুতের৷ আমার ভাগ্যে আর কি রেখেছ তুমি? আমি ভয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে বিরবির করে বললাম,
–‘দেখুন আপু,আমি আপনার কোনো ক্ষতি করি নি৷ আমার ঘরে থেকে চলে যান প্লিজজজ!আর কাওকে ধরতে হলে আমার পাশের রুমে কাব্য ভাইয়া আছে উনায় ধরতে পারেন৷ উনি ভুত অনেক ভালোবাসে৷’
–‘কাব্য ভুত ভালোবাসে আর আমিই জানি না!হাও পসিবল৷’
কাব্য ভাইয়ের কন্ঠস্বর শুনে একচোখ খুলে দেখি সে আমার দিকে ঝুকে বসে আছে৷ উনায় দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে উনার মাথায় বাড়ি খাই৷ এতো শক্ত মাথার বাড়ি খেয়ে আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেছে । মাথায় হাত দিয়ে ঘষে উনার থেকে সরে বসি৷ ব্যাথা পেয়ে নিজের ভুল ধারণা চলে গেছে৷ আমার ঘরে হাটাহাটি করা উনিই হচ্ছে জিন্দা আত্মা৷ উনি নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–‘এতো তাড়াহুড়ো কেন তোর সব বিষয়ে৷’
–‘আপনি আমার রুমে কি করছেন?’
–‘তোর জানার দরকার আছে?’
আমি চিল্লিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগে উনি আমার মুখে তার হাত দিয়ে নিচু স্বরে বলল,
–‘আস্তে কথা বলতে পারলে কথা বলবি৷আম্মুর প্রেশার বেড়েছে তোর চিন্তায় চিন্তায়৷ একটু আগে ঘুমিয়েছে তাই একদম চিৎকার করবি না৷’
আমি উনার হাত আমার মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে রাগী ভাবে বললাম,
–‘আপনি কি আমায় আবার মারতে এসেছেন?তাহলে নিন মারুন সমস্যা নেই৷ আপনার হাতের পুতুল আমি তাই যেইভাবে খুশি ব্যবহার করতেই পারেন আপনি৷ থাপ্পর মেরে চলে যান!আমায় একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিন৷ নাকি আমার ঘুমও আপনার ইশারায় চলবে?’
উনি আমার গালে হাত বুলিয়ে শান্তভাবে বললেন,
–‘খুব বেশী কি ব্যাথা পেয়েছিস নীতু?’
উনার এতোটুকু কথায় আমার কান্নারা পাল্লা দিয়ে আছড়ে পড়লো৷ তার সাথে বড্ড অভিমান এসে জড়ো হলো৷ আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,
–‘হ্যাঁ!পেয়েছি এখন আমার ব্যাথা কি আপনি কমাতে পারবেন?’
–‘ব্যাথা যাতে না হয় সেই জন্যই তো এসেছি৷’
–‘আপনার এতো ঠেকা কেন পড়েছে?আমাকে আমায় মতো থাকতে দিন৷আর আপনি রুম থেকে বেরিয়ে যাবেন এখুনি৷ কোন অধিকারে অন্য একটা মেয়ের রুমে এসেছেন আপনি৷’
–‘আমার বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো৷ তোকে কৈ…..
কাব্য ভাইয়ের অসম্পূর্ণ কথাটা শুনে আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
–‘কৈফিয়ত কেন দিবেন আমাকে৷ এইটা একটা সুন্দর পয়েন্ট কাব্য ভাই।আপনাকে বলছি কেন দিবেন আপনি৷’
উনি আমার কথার মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘রাত বিরাতে ঝগড়া করার মুড একদম আমার নেই নীতু৷ দরজা বন্ধ করে বসেছিলি বিকেল থেকে তাই ভাবলাম মরে টরে গেলি নাকি একটু দেখে আসি৷ শত হোক আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষ কেও আমার সামনে এমন মরার মতো থাকলে আমার আবার প্রচুর কষ্ট লাগে৷ আর তুই তো আমার অনাগত বাচ্চার “মা” তোর জন্য তো আমার সেই পরিমাণের কষ্ট হয়৷’
আমি বেড থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
–‘পয়েন্ট টু বি নোটেট কাব্য ভাই! আপনার বাচ্চার “মা” আমি কবে হলাম?আপনার সাথে আমার সম্পর্ক আছে?তাহলে এই মিথ্যা কেন বলেছিলেন৷’
উনি আমার বই খাতা নেড়েচেড়ে দেখছেন গভীর ভাবে৷ ম্যানেজমেন্টের নোট বের করে বললেন,
–‘লেনদেন বুঝিস তুই?’
সিরিয়াস কথার মাঝে উনার আজব কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি৷ আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বই দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মেরে বললেন,
–‘এইভাবে তাকিয়ে থাকিস না তোর নজর লাগবে আমার৷ আর উত্তর দে বুঝিস কি না?’
উনার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললাম,
–‘আমি ম্যানেজমেন্টের স্টুডেন্ট কাব্য ভাই৷’
–‘গুড! লেনদেন কাকে বলে ছোট করে আন্সার দে ঝটপট৷’
–‘কোনো কিছুর বিনিময়ে অন্য কিছু নেওয়াকে লেনদেন বলে৷ বাট এর অনেক বড় সংজ্ঞা আছে৷’
উনি বই ঘাটতে ঘাটতে বললেন,
–‘আমার বিয়ের পর বাচ্ছা হবে রাইট? আর তোর বিয়ের পর তোর বাচ্চা হবে৷’
–‘তো?’
–‘আমার বাচ্চাকে তোর কাছে তোর বাচ্চার বিনিময়ে লেনদেন করলে তুই আমার বাচ্চার মা হবি আর আমি তোর বাচ্চার বাবা রাইট?’
আমি বোকার মতো দুদিকে মাথা দুলাতেই উনি আমার মাথায় হালকা টোকা দিয়ে বই আমার হাতে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি হেসে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়৷ আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হিসাব মিলাচ্ছি৷ উনার লেনদেন কি সঠিক?না আবারও আমায় বোকা বানিয়ে চলে গেলেন উনি!
___________________________________________
সূর্যের হালকা কিরণ আমার বারান্দা জুড়ে বিচরণ করছে৷ ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি আমি৷ সারা সিলেট এখনো ঘুমিয়ে আছে৷ রাস্তায় মানুষের আনাগোনা নেই৷ ফুপি দের বাড়িটা তিনতলা৷ নিচের দুই প্লট ভাড়া আর উপরের পুরোটা ফুপিরা থাকে৷ পূর্ব দিকের দুটো রুমে আমি আর কাব্য ভাইয়া থাকি আর পশ্চিমের দুটো রুমের একটি কবিতা আপুর আর একটি ফুপির৷ কবিতা আপুর বিয়ে হয়েছে একবছর আগে৷ বর্তমানে সে ইটালি তে আছে৷ একটা প্রজাপতি উড়ে এসে আমার হাতের উপর বসতেই আনন্দে আমার মন নেঁচে উঠে৷ ইশ!ওর মতো দুটো পাখা থাকলে আমিও ফুলের বাগানে উড়ে বেড়াতাম৷ যেখানে থাকতো না কোনো ঝামেলা৷ সারাদিন ফুলের সৌরভে মাতামাতি করে কোনো এক ফুলের পাশে চুপটি মেরে বসে থাকতাম৷ আজগুবি সব চিন্তা ভেবেই হাসি পেলো৷ সাথে একরাশ মন খারাপ এসে ভর করলো৷ জীবনের গন্ডি থেমে গেছে অজানা কোনো সুতোর মাঝে৷ আমি চোখ বন্ধ করতেই কানে ভেসে এলো,
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে,
রাতের স্রোতে ভেসে!
শুধু তোমায় ভালোবেসে৷
আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে৷
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে!’
হঠাৎ গানের আওয়াজ বন্ধ হতেই পাশ ফিরে কাব্য ভাইয়ের বারান্দায় তাকিয়ে দেখি সে গিটার হাতে গান থামিয়ে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ তার চোখের ভাষা পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ উনার গানের আওয়াজ এখনো আমার কানে বাজছে৷ আমি অস্ফুটস্বরে উনার বারান্দার কাছে গিয়ে বললাম,
–‘থামলেন কেন?অনেক সুন্দর গাইছিলেন তো৷’
–‘আমার ইচ্ছে৷’
–‘শুনতে ভালো লাগছিলো৷’
উনি গিটার পাশে রেখে বাঁকা ভাবে বললেন,
–‘তোকে শুনাতে আমার ভালোলাগছিলো না৷ কেন এসেছিস বারান্দায়?আমাকে ডিস্টার্ব না করলে শান্তি হয় না তোর?নিজের ইচ্ছা মতো কোথাও গানও গাওয়া যায় না৷’
উনি বিরক্ত হয়ে উঠে চলে যাওয়ার আগে বললেন,
–‘হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আম্মুর সাথে কাজে হাত লাগাতেও তো পারিস৷ এইখানে নিয়ে এসেই ভুল হয়েছে৷ অসহ্য একটা৷’
আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি৷ সুন্দর সকাল হঠাৎ করেই কেমন জঘন্যতম মনে হতে লাগলো আমার কাছে৷ উনি এমন করেন কেন আমার সাথে? কখনো মিষ্টি রৌদ্দুর কখনো আবার কাঠ ফাটা রৌদ্দুর৷ আমি উনার উত্তাপে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি৷ সব কেমন পোড়ানো লাগছে আমার৷ চোখে পানির অস্তিত্ব পেলাম না তবে গলার কাছে একদলা কষ্ট পাঁকিয়ে আঁছে৷ সেইটা বৃষ্টির মতো ঝড়াতে পারলে শান্তি লাগতো৷ থাকবো না আর এই বাড়িতে!
কোনোকিছু না ভেবেই ড্রয়িং রুমে কাওকে দেখতে না পেয়ে গেইট খুলে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম৷ সব মেনে নেওয়া যায় তবে এতো অপমান?যেখানে আমার কোনো দোষ নেই৷
চারদিকে গুমোট পরিবেশ৷ সকালের নিস্তব্ধতা ছাড়িয়ে কোলাহল পূর্ণ হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট৷ ঘুরেফিরে আমার কানের মাঝে এসে বাড়ি খাচ্ছে কাব্য ভাইয়ের তীক্ষ্ণ কথা গুলো৷ আমার মনের দেয়ালে দেয়ালে বিষাদের ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আমার নিজেকে নিজে মনে হচ্ছে৷ কি করবো!কোথায় যাবো? নানা প্রশ্নে অস্থির হয়ে উঠছে মনের কোঠায়৷ কাব্য ভাইয়া!কাব্য ভাইয়া এই একটা নাম আমার জীবন রৌদ্দুরের তীক্ষ্ণ আলোয় জ্বলসে দিয়েছে৷ যেইখানে কোনো নিজের অস্তিত্ব নেই!নেই কোনো প্রশ্নের জবাব৷ হেটে চলেছি অজানা কোনো পথের উদ্দেশ্যে!তবে সেই অজানার ঠিকানা কোথায়??
চলবে………
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৬
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
মাথার উপর সূর্য তার নিজস্ব রৌদ্দুর খোলা মাঠের প্রান্তরে ছড়িয়ে দিয়েছে৷ রোদের উত্তাপ বেশি নাকি কম তা বুঝার উপায় নেই৷ সামনের নদী থেকে হালকা মৃদু মন্দ বাতাস এসে সমস্ত জায়গার গরম ভাবটা কমিয়ে দিয়েছে৷ নদীর শান্ত পানির দিকে তাকিয়ে আছি আমি৷ এই নদীটার যেমন স্রোত নেই আমার জীবনেরও কোনো স্রোত নেই৷ সব শান্ত!যাকে বলে,সব কিছু শেষ হওয়ার পথে৷ কাব্য ভাইয়া নামক মানুষটা আমার কাছে ধাঁধার মতো৷ যার ভেতরে উত্তর আছে তবে অজানা৷ বাসায় ফিরবো না আর৷ কিন্তু কোথায় যাবো?বাবার বাসায়?
নদীটা কাব্য ভাইয়াদের বাসা থেকে এিশ মিনিট দূরত্বে। এইখানে কেন দাঁড়িয়ে আছি সেটাও জানা নেই আমার৷ মন বলছে, কাব্য ভাইয়া আসবে আমায় নিতে৷ কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে,’ছিঃ নীতু তুই এতো বেহায়া কেন?এতো অপমানিত হওয়ার পরও তার আশায় বসে আছিস৷’ উহু!তার আশায় নয় যাওয়ার জায়গা নেই এই জন্য দাঁড়িয়ে আছি৷ বাবার বাসায় যেতে সাহস হচ্ছে না৷ কেন হচ্ছে না তাও জানি না!হয়তো তার সামনে দাঁড়াতে পারবো না কারণ কাব্য ভাইয়া আমার সম্মান নিয়ে অদ্ভুত এক খেলায় মেতে উঠেছে৷
–‘তোর মাথায় কি আদেও মস্তিষ্ক নামক জিনিস টা আছে?’
কাব্য ভাইয়া রক্ত লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটি ছুড়ে দিলেন৷ উনায় দেখে কি রিয়াকশন দিবো ভেবে পেলাম না৷ উনায় সম্পূর্ণ ইগ্নর করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ উনি আমার হাত ধরে নিজের সামনে ঘুরিয়ে বললেন,
–‘কথা কানে যায় না তোর?বাসা থেকে একা একা বের হয়েছিস কেন৷ উত্তর না দিলে ঠাটিয়ে এক চড় মারবো৷’
আমি নিরুত্তাপ ভাবে বললাম,
–‘হাত ছাড়ুন কাব্য ভাই!আমার লাগছে৷’
উনি আরো শক্ত করে ধরলেন চেঁচিয়ে বললেন,
–‘লাগার জন্যই ধরেছি৷ তোর সাহস কি করে হলো একা একা বের হওয়ার?তোর জন্য আম্মু অসুস্থ হয়ে গেছে৷ ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে এসেছি আমি৷ বাই এনি চান্স আম্মু সুস্থ না হলে তোকে মেরে এই নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিবো৷’
–‘আমার জন্য আপনাদের চিন্তা করতে বলেছি আমি?’
–‘মুখে মুখে তর্ক করলে তোর খবর আছে নীতু৷ বেশি বুঝিস তুই?’
আমি উনার হাত সরানোর চেষ্টা করে বললাম,
–‘আমার ইচ্ছা হয়েছিলো তাই বের হয়েছি৷ এইবার ছাড়ুন৷’
–‘ছাড়বো না কি করবি তুই?’
আমি কিছু না বলে চিল্লাতে শুরু করলাম৷ দূরে বসে থাকা কিছু ছেলে আমার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসতেই কাব্য ভাই আমাকে তার সাথে একদম মিশিয়ে নেয়৷ ছেলেগুলোর একজন কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই কাব্য ভাইয়া বললেন,
–‘তোদের ভাবীর চোখে কি যেন পড়েছে তাই এমন চিৎকার করছে৷’
আমি উনার বুক থেকে মাথা উঠানোর চেষ্টা করতে উনি আরো জোরে চেপে ধরেন৷ ছেলেগুলো আর কিছু বলার আগে উনি আবারও বললেন,
–‘এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি আমাদের রোমাঞ্চ দেখবি তোরা? স্যারের রোমাঞ্চ দেখতে লজ্জা করে না তোদের৷ এখুনি যা এখান থেকে না হলে আজ প্রাইভেট পড়ানোর সময় সব কয়টাকে রাস্তায় এনে কান ধরে উঠবস করাবো৷’
ছেলেগুলোর মধ্যে একজন যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো,’ভাই আপনি বিয়ে করেছেন?কই আমরা তো কিছু জানলাম না৷’
উনি রাগী স্বরে বললেন,
–‘সব কৈফিয়ত কি তোদের দিবো আমি?গলির চিপায় সিগারেট খাস আমি কি সেই কৈফিয়ত তোদের কাছে চেয়েছি!তবে আজ চাইবো না তবে সবগুলোর বাসায় খবর পৌছে যাবে৷’
উনার কথা শুনে সব গুলো চুপ হয়ে না বলার অনুরোধ করে চলে যায়৷ ওরা চলে যাওয়ার পরও উনি আমার মাথা তার বুকে থেকে উঠাতে দেয় নি৷ দম বন্ধ বন্ধ লাগছে আমার সেই সাথে অস্থিরতা৷ এতোটা কাছে কোনোদিন আসি নি উনার৷ তবে উনার বুকে আজ কেমন ভালোলাগার ছোয়া আছে৷
–‘তোর হৃদপিন্ড ঢাক ঢোল পেটাচ্ছে কেন?লাফিয়ে মনে হচ্ছে বের হয়ে আসবে আমার হৃদপিন্ডের কাছে এখুনি৷’
আমি উনাকে দূরে সরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি এর মাঝে হঠাৎ উনার এমন কথায় লজ্জা পেয়ে যাই৷
আমি উনাকে আবারো দূরে সরাতে গেলে উনি বললেন,
–‘আমি না ছাড়লে ছাড়া পাবি তুই আমার বাঁধন থেকে!’
এই কথা বলেই উনি আমায় ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়৷ আমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকি৷ আর একটু হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম৷ আমি জোরে শ্বাস টেনে বললাম,
–‘আপনি প্রচুর অসভ্য কাব্য ভাই যাকে মারাত্মক অসভ্য বললেও ভুল হবে৷ উনাদের আপনি বউ বলে কেন পরিচয় দিলেন!আর কতো মিথ্যা বলবেন আপনি? আমাদের সত্যবাদী “দ্যা গ্রেট কাব্য” ভাই বিশিষ্ট মিথ্যাবাদী হলো কবে থেকে৷ আপনি মিথ্যার বেড়াজালে কেন জড়াচ্ছেন আমায়৷ কবে মুক্তি পাবো আমি?আর কবেই বা পাবো এই সবকিছুর উত্তর৷’
–‘যতদিন শর্ত না শেষ হয় ওই দিন পর্যন্ত৷’
আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
–‘কিসের শর্ত!’
উনি পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে ঘুরে যেতে যেতে বললেন,
–‘সেইটাও একটা শর্ত!’
উনি কিছুদূর যাওয়ার পর পিছু ফিরে বললেন,
–‘কোলে করে নিয়ে আসবো না কি তোকে? এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। ওয়েট আমি আসছি কোলে নিতে।’
উনি আসার জন্য পা বাড়াতেই আমি দৌড়ে উনার দিকে যাই। এমনি কিসের শর্ত তা নিয়ে আরেক মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে।এখন রাস্তার মাঝে কোলে তুললে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে। এই ছেলের ভরসা নেই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছে উনায়?
________________________________
টানা চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেছে এখনো কাব্য ভাইয়ার দেখা নেই৷ দেখা নেই বললে ভুল হচ্ছে সে ইচ্ছা করেই আমাকে দেখা দিচ্ছেন না৷ আমার জীবনে সবচেয়ে ভালো মূহুর্ত এই চব্বিশ ঘন্টা ছিলো৷ উনাকে দেখলেই আমার প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা হয়৷ আর উনাকে না দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি৷ অন্য কিছুতে ব্যাস্ত রাখতে পারি৷ কাল সকালে আঙ্কেল আসবে৷ আর এই খবর টা শোনার পর থেকে আমার ভয় আরো বেড়ে যাচ্ছে৷ অন্যসব সময় হলে আনন্দের সীমা থাকতো না বাট কাল যদি কাব্য ভাই উল্টাপাল্টা কথা বলেন তাহলে আঙ্কেলর চোখে কতোটা নিচু হয়ে যাবো তা ভাবার বাইরে৷ আমার বাবার পর “রেদুয়ান আঙ্কেল”আমার আরেকটা বাবা৷ আমি চোখ বন্ধ করে এই মানুষটাকে বিশ্বাস করতে পারি,ভরসা করতে পারি৷ উনার চোখে আমি খারাপ হতে চাই না৷ কিন্তু কাব্য ভাইয়া?উনি কি করবেন! পাশের রুম থেকে আজও গিটারের আওয়াজ সাথে কাব্য ভাইয়ের সুন্দর কন্ঠের গান ভেসে আসছে৷ উনার গানের গলা অনেক ভালো৷ মায়ায় পড়ে যাওয়া কন্ঠ তার৷ যেকোনো গান তার গলায় মানায়৷ তবে আজ গানের মাঝে কেমন বিষাদের ছায়া৷ অনেক কিছু বলার আকুতি৷ কিন্তু কাকে বলার? উনায় গিয়ে জিজ্ঞেস করবো!লেখিকা,রুবাইদা হৃদি সকালের কথা মনে হতেই রাগ হলো৷ নীতু তোর এতো ভাবতে হবে কেন?তুই কে উনার৷ যা ইচ্ছা তাই করুক তোর কি তাতে৷
–‘নীতু আম্মু তুই কি পড়তে বসেছিস?’
ফুপি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল কথাটা৷ আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললাম,
–‘কিছু বলবে ফুপি!’
ফুপি বেডে বসে আমাকে পাশে বসতে দিয়ে বলল,
–‘গল্প করতে আসলাম তোর সাথে৷’
–‘অনেক দিন একসাথে বসে গল্প করা হয় না তাই না ফুপি৷’
–‘হ্যাঁ অনেক দিন৷’
ঘরের মাঝে হঠাৎ নিস্তব্ধতা নেমে এলো৷ কাব্য ভাইয়ের গলায় ভেসে এলো,
‘ছায়া মেলে জড়ো হয় আকাশে যায় না কিছুতে সরানো!’
‘প্রিয় রঙ হয়ে যায় ফ্যাকাসে হয় না দুহাত জড়ানো৷’
ভুলে বেঁচে থাকা,নোনা জ্বল চোখে মাখা
সুখ নেই… সুখ নেই, পৃথীবির কারখানায়৷
(তাহসান)
ফুপি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলো৷ আমার হাতে হাত রেখে বলল,
–‘ছেলেটার গানের গলা অনেক ভালো তাই নারে নীতু?’
–‘হু!কাব্য ভাইয়া স্টেজে গান গাইলে ভাইরাল হয়ে যাবে৷’
–‘আমার ছেলেটার সুখ নেই জানিস৷’
আমি অবাক হয়ে ফুপির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ দিব্যি হাসি-খুশি আর আমাকে জ্বালানো কাব্য ভাইয়া নাকি সুখে নেই৷ কথাটা হাস্যকর লাগগো আমার৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,
–‘কেন ফুপি?উনাকে দেখলে তো সব ঠিকঠাক লাগে৷’
–‘উপরে ভালো থাকলেই কি সবাই ভেতরে ভালো থাকে?তুই কি ভালো আছিস!সবার ভেতরে একটা চাপা কষ্ট থাকে আর সেই কষ্টের ভাগীদার সেই মানুষটার মন হয়৷ মন খুলে কারো সামনে দেখানো যায় না কিন্তু উপরের হাসি মুখটা সবাইকে দেখানো যায়৷ আর সেই ঢেকে থাকা মনের একটা কষ্টের গল্প থাকে৷ সেই গল্পটা হয় কষ্টে মোড়ানো৷ যেটা কাওকে দেখানো যায় না বলেই মানুষ ভাবে তুমি ভালো আছো!তোমার সুখের সীমা নেই৷’
আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ফুপির দিকে৷ প্রত্যেকটা কথা নিদারুণ সত্য৷ ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–‘তোকে আজ কিছু সত্যি বলবো৷ যেই সত্যিটা কাব্যের ভেতরকার৷ সাথে এতোসব কিছুর৷ কিন্তু সেই সত্যিটা শুনে কাওকে বলবি না৷ আর সত্যিটার বিচার বিবেচনা তুই করবি৷ আমি জানি তুই পারবি সত্যিটা মেনে নিতে৷ কি পারবি না?’
চলবে….