#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩২
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
সুন্দর সকাল গুলো সুন্দর ভাবেই শুরু হয়৷ সিনেম্যাটিক ভাবে৷ বাইরে কোথাও পাখির ছুটোছুটি,ঝড়ো হাওয়া৷ সূর্যের আলোর মাখামাখি৷ আর প্রিয় মানুষটার বাহুডোরে আবদ্ধতা৷ লজ্জা মাখা সকাল৷ একরাশ ভালোবাসাময় সকাল৷ সে এখনো ঘুমিয়ে আছেন৷ আমি পিটপিট চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ তার উষ্ণ আলিঙ্গনে থাকতে বেশ লাগছে৷ বাইরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে৷ মাথার পাশের থাই গ্লাস টা রাতে খুলে রাখি৷ সেখান থেকে চাঁদের আলো এসে ঘর আলোকিত করে৷ আর প্রতিদিন সকালে সূর্যের সকালের ফ্রেশ আলোক রশ্মিটাকেও উপভোগ করা যায়৷ সেই খোলা জানালা দিয়েই হাওয়া আসছে৷ ব্লাঙ্কেটের ভেতর দিয়ে হাওয়া ঢুকে ঠান্ডা শিহরণ দিচ্ছে৷ আমি আরেকটু এগিয়ে তার বুকের সাথে মিশে গেলাম৷
–‘ আপনার মাঝে কিছু একটা খুজে পাই আমি৷ ‘
সে উত্তর দিলেন না৷ শুধু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন৷ দিনে দিনে কেমন পাগল হয়ে যাচ্ছি৷ তার মাঝে আসক্ত হয়ে যাচ্ছি৷ কিছুক্ষণ পর সে চোখ মেলে তাকালো৷ আমার দিকে তাকিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি দিলো৷
–‘ ভালোবাসাময় মনিং মহারাণী৷ ‘
আমি হাসলাম৷ তার সব কিছুতে ভিন্নতা৷ আমি একগাল হেসে বললাম,
–‘ শুভ সকাল৷ ‘
–‘ প্রত্যেকটা সকাল শুভ কিন্তু আজকেরটা ভালোবাসাময়৷ ‘
আমি কিছু বললাম না৷ সব কিছু সপ্নের ন্যায়৷ সেদিনের জেদের জন্যই আজ আমি তার আর সে আমার৷ আমিরের সাথে কেমন থাকতাম,কি হতো ভেবেই একটু শিউরে উঠলাম৷ তবে সব কিছুর জন্য আমির নামক মানুষটার ধন্যবাদ প্রাপ্য৷ তার খাম খেয়ালি কাজের জন্য কাব্য ভাইয়ার জেদ৷ জীবনটা ট্রাজেডি৷ সব কিছুর ভেতরে সুখের খোজ থাকে বলেই এতোটা ট্রাজেডি৷ তবে সব কিছুর মূলে এতোটা সুখ আছে সেটা আমি ভাবতেই পারি নি৷ আমাকে হঠাৎ অন্যমনস্ক হতে দেখে সে বললো,
–‘ মুখটা হঠাৎ শুকিয়ে যাওয়া রসগোল্লার মতো করে রেখেছিস কেন৷ ‘
–‘ মানে?’
উনার আজব কথা শুনে ভ্রু কুচকে এলো৷ শুকিয়ে যাওয়া রসগোল্লা৷ হাও ফানি৷ আমাকে সিরিয়াস হতে দেখে হেয়ালি করে বললেন,
–‘ তোর ছোট মাথায় এতো কিছু ঢুকবে না৷ ‘
–‘ কেন ঢুকবে না৷ অবশ্যই ঢুকবে৷ আপনার মতো আস্ত এক মানুষের সব সহ্য করতে পারলে ছোট একটা কথা কেন বুঝবো না বলেন তো? ‘
উনি বড়সড় একটা ধাক্কা খেলেন মনে হয়৷ ধাক্কা খাওয়ার কারণ খুজতে কোন কথার মানে কি বের করেছেন আল্লাহ মালুম৷ আমি উনার থেকে উঠে বসার জন্য তাড়া দিলাম৷ উনি দুষ্টুমি করার মুডে আছে এখন৷ উঠতে গেলে আবার আটকে ফেলছেন৷ আমি বিরক্ত হলেও প্রকাশ করছি না৷ মূহুর্ত গুলো যে দামী..! ‘
__________________
হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা৷ এখানে থেকে সম্পূর্ণ ভার্সিটি দেখা যাচ্ছে৷ সবাই ফরেনার৷ আমি আজ জিন্স আর কামিজ পড়ে এসেছি৷ নিজেকে কেমন অচেনা লাগছে এই আধুনিকতার ভীড়ে৷ আর সে,ব্লু জিন্স,হোয়াইট টি শার্ট, চোখে সানগ্লাস ঝুলিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমি উনার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে আছি৷ দিনে দিনে আরো হ্যান্ডসাম আর কিউট হচ্ছেন৷ তার কিউটনেস দেখে মহা বিরক্ত লাগলো আমার৷ বিদেশিদের সাদা চামড়ার ভীড়েও তাকে ধবধবে সাদা লাগছে৷ হোয়াইট জার্মানি ক্যাট৷ ভেবেই বিরক্তিতে হাসি পেলো৷ ধূসর বর্ণের মণি গুলো সানগ্লাস খুলতেই নজরে পড়লো৷ আমি বিরবির করছি, ‘ বউকে ভার্সিটি তে দিতে আসে নি নিজেই ভর্তি হতে এসেছেন মনে হচ্ছে৷ ‘
–‘ কোথাও জ্বলে যাওয়ার গন্ধ পাচ্ছি৷ ‘ উনি হাত দিয়ে বাতাস করে বললেন৷ কথাটা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা সেটা আমি বুঝতে পারছি৷ আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
–‘ সাদা বেড়াল চেনেন? আপনাকে সাদা বেড়াল লাগছে৷ ‘
উনি হো হো করে হাসলেন৷ মাথা দুলিয়ে৷ আমি রেগে ফেটে পড়ছি৷ ওয়েট এন্ড সি..! আপনাকে আপনার ট্রিকসে পুড়াবো মিস্টার কাব্য৷
আজব নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে পড়েছি৷ ভাষা আয়ত্ত করতে বেশ বেগ পেতে হবে মনে হচ্ছে৷ ইংরেজি টা চলে কিন্তু জার্মান ভাষা৷ সেটা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ আমি অবাক চোখে তাকিয়ে শুধু শুনেই যাচ্ছি৷ ক্লাস শেষে আজ ভাষা শিখবো৷ উফফ! এতো ঝামেলা জানলে আমি আসতাম না৷ অফ পিরিয়ডে বিশাল করিডোরে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছি৷ নির্জন, কোলাহল মুক্ত৷ সবাই ডিসিপ্লিনের মধ্যে চলে৷ কথা বলতে গেলেও বোধহয় ভেবে নেয় সবাই৷ আমি উদাস চোখে তাকিয়ে আছি৷ নিজের ভাষা আর আর কোলাহল মিস করছি৷ নিজের দেশ মানেই স্বাধীনতা৷ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ালাম৷ কবে যাবো আবার সেই মাটিতে? জ্যাম হোক বা দূষণ সব কিছু মিস করছি৷
–‘ ক্যান আই টক টু ইউ?’ পাশে থেকে পুরুষ কন্ঠে শুনে ঘুরে তাকালাম৷ ছিপছিপে গড়নের শ্যাম বর্ণের একটি ছেলে৷ মুখে বাঙালি ছাঁপ৷ আমি কথা বললাম না৷ ঘুরে ফেরত আসতে গেলে আবার বললো,
–‘ হেই ম্যাম, আপনি কি বাংলাদেশী৷ ‘
আমি এইবার ঘুরে তাকালাম৷ মিষ্টি হেসে জবাব দিলাম৷ নিজের দেশের কাওকে পেয়ে হঠাৎ করেই ভুলে গেলাম সে ছেলে৷ উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে সালাম দিলেন৷ সচারাচর এমন দেখা যায় না৷ আমিও সালামের জবাব দিলাম৷ সে ভদ্র ভাবে বললো,
–‘ ক্যান্টিনে যাবেন? আপনাকে দেখেই বাঙালি মনে হয়েছিলো৷’
ইতস্তত করে আমি তার সাথে গেলাম৷ অস্বস্তি হলেও এখন ঠিক লাগছে৷ উনার নাম রাতিব৷ চিটাগাং থাকেন আমার ডিপার্টমেন্টেই পড়েন৷ সব ডিটেইলস শুনে মূহুর্তেই ফ্রী হয়ে উঠলাম তার সাথে৷ ছেলেটা মিশুক৷ ভালো৷ এর আগের ক্লাসের সমস্ত নোটস আমাকে দিলো৷ ক্লাস শেষ করে তার সাথেই ক্যাম্পাস থেকে হেটে মেইন গেইটের কাছে গেলাম৷ কাব্য ভাইয়া নিরলস ভাবে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমায় দেখে সানগ্লাস শার্টের মাঝে গুজে দিলেন৷ আমি রাতিবের সাথেই তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ উনি কিছুটা অবাক হয়েছেন৷ তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
–‘ ক্লাস কেমন হলো? ‘
আমি মুচকি হেসে জবাব দিলাম, ‘ ভালোই..! আপনার ক্লাস আর মিটিং? ‘
উনি কিছু বললেন না৷ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালেন আমার বেশ লাগছে৷ সকালে ওভার স্মার্ট সাজার ছোট একটা শাস্তি দেওয়া যায়৷ রাতিব উৎসুক চোখে তাকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ উনি কে৷ ‘
আমি দাঁত বের করে হেসে জবাব দিলাম,
–‘ ওওও,,মিট হিম৷ আমার কাজিন ব্রাদার৷ ‘
উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকালেন৷ রাতিব মাথা দুলিয়ে “ওহ ” বলতেই আমার হাসি পেলো৷ উনি গম্ভীর ভাবেই আমাকে একটানে উনার কাছে নিয়ে বললেন,
–‘ ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমার মিসেস. সে৷ হুটহাট ভুলে যাওয়ার রোগ আছে তাই আমাকেও ভুলে যায়৷ আমি ড্যাম সিউর কাল আপনাকেও ভুলে যাবে৷ ‘
আমি উনার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম৷ উনি আবার আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
–‘ তাই না বেইব? ‘
আমি উপায় না পেয়ে ” হ্যাঁ ” বলতেই উনি আমাকে কোলে উঠিয়ে নিলেন৷ রাতিব তাকিয়ে আছে৷ আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম৷ ছিঃ! ও কি ভাবছে৷ উনি গাড়িতে আমাকে বসিয়ে জোরে গাড়ি টান দিয়ে শুধু বললেন,
–‘ কাজিন ব্রাদার..! বাহ.. আজ ব্রাদারের ভূমিকা পালন করবো সিস্টার৷ ‘
আমি মানে বুঝলাম না৷ ব্রাদারের ভূমিকা মানে৷ আমি তাকিয়ে আছি উনি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন,
–‘ ওয়েট সিস্টার৷ সর্যি কাজিন সিস্টার৷ ‘
চলবে,,,,
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩৩
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
নতুন দিগন্তের প্রবাল হাওয়া৷ স্বচ্ছ কাঁচের মতো পরিষ্কার সব৷ গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে শাঁ শাঁ করে শিহরণ জাগানো বাতাস ঢুকছে৷ কেঁপে উঠার মধ্যেও ভালোলাগার শিহরণ দিচ্ছে৷ গাড়ি হাই স্পিডে ছুটে চলেছে৷ কোথায় যাচ্ছি,যাবো সেটা জানি না৷ ছুটে চলা গাছের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমাদের কলোনীর দিকে যে যাচ্ছি না সেটা বুঝতে পারছি৷ লুকিং গ্লাসের লুকোচুরি খেলাটা জমে উঠেছে৷ তবে উনার স্থির শান্ত দৃষ্টি৷ আমি বুঝেও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি৷ বোরিং টাইম বোধহয় এইটাকেই বলে৷
–‘ কাঁচ উঠিয়ে দে৷ ‘
–‘ এইভাবেই ভালো লাগছে৷ ‘ উনার কথা উপেক্ষা করার সাহস নেই৷ তবুও সাহস নিয়ে বললাম৷ উনি আমার দিকে ঝুঁকে কাঁচ উঠিয়ে দিলেন৷ আমি আঁড়চোখে তাকিয়ে আছি৷ রেগে বললাম,
–‘ আমার অক্সিজেনের প্রয়োজন৷ আমি কাঁচ খোলাই রাখবো৷ রাখবো মানে রাখবোই৷ ‘
–‘ সাহস থাকলে খুলে দেখা৷ ‘ উনি কাঁচ লাগিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে বললেন৷ আমি খুলতে গেলে একহাত টেনে স্ট্রারিং এর উপর রেখে নিজের হাত আমার হাতের উপর রাখলেন৷ আমি অন্যহাত দিয়ে আবার চেষ্টা করতে গেলে গাড়ি ব্রেক করলেন উনি৷ আরেকটু হলে আমার হার্ট বেরিয়ে যেত৷ এতো জোরে কেও ব্রেক ধরে৷ আমি গরম চোখে তাকাতেই উনি চোখ মেরে বললেন,
–‘ কাজিন সিস্টার কি ভয় পেয়েছে?আজ আমার বউ থাকলে কোলের উপর উঠিয়ে ড্রাইভ করতাম৷ বাট আফসোস সে তো আমার সিস্টার৷ ‘
আমি ভড়কে গেলাম৷ বলেন কি? আমার কথা আমাকে শুনাচ্ছেন৷ আমাকে জবাব না দিতে দেখে লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে নিজের চুল হাত দিয়ে ব্রাশ করছেন৷ নিজেই নিজেকে দেখে বললেন, ‘
‘ পারফেক্ট৷ ‘
–‘ ক্লিয়ার করে বলেন তো,যাচ্ছি কোথায় আমরা?’ আমি নিজের রাগ সংযত করে বললাম৷ আজ নির্ঘাত ঝগড়া হবেই হবে৷ উনি গাড়ি থেকে নেমে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ গার্লফ্রেন্ড যোগাড় করতে৷ যাবি? ‘
আমি রেগে বের হয়ে এলাম৷ তার সামনে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে বললাম,
–‘ মানে৷ ‘
–‘ সিস্টার নিয়ে আর কয়দিন থাকবো?এইবার তো বিয়ে শাদী করা দরকার৷ চুল যে সাদা হয়ে যাচ্ছে৷ ‘
উনার নির্বিকার উত্তর শুনে আমি তার দিকে এক পা এগিয়ে গেলাম৷ মিইয়ে যাওয়া সুরে বললাম,
–‘ দেখুন..! ‘
–‘ হ্যাঁ,দেখেছি৷ ‘
আমি কথার মাঝেই থেমে গেলাম৷ বিরক্ত লাগছে৷ নিজের মনে কথা গুলো সাজিয়ে আবার বললাম,
–‘ আপনার ড্যাম কেয়ার ভাব আমার একদম ভালো লাগে না৷’
–‘ জেলাস? ‘ উনি আমাকে ঘুরিয়ে গাড়ির মধ্যে ঠেস দিয়ে আমার উপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রইলেন৷ আমি পুরো লেগে গিয়েছি গাড়ির সাথে৷ আচমকা এমন হওয়ার একটু ভয় পেয়ে গিয়েছি৷ আমার গলা কাঁপছে৷ মনে হচ্ছে সে,সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিক৷ প্রতিনিয়ত তাকে নতুন ভাবে উপলব্ধি করি কেন৷ আমি কি বলবো খুজে পেলাম না৷ উনাকে ছাপিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেও আছে কিনা৷ সম্পূর্ণ নির্জন জায়গা৷ আশেপাশে গাছের সারি৷ অনেকে দূরে একটা চার্জের উপরের অংশ দৃশ্যমান৷ পাহাড়ের ঢালুর উপর৷ হঠাৎ মনে হলো,সেখানে যাওয়া দরকার৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বললাম,
–‘ ব্রাদার সিস্টার গেম পড়ে খেলবো৷ চলুন ওই চার্চে যাই৷ ‘
–‘ তার আগে স্বামীর দায়িত্ব পালন না করলে ঘোর অন্যায় হবে যে৷ ‘
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম৷ এখানে আবার কিসের দায়িত্ব৷ উনি কাছে এসেই ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন৷ কিছু মূহুর্ত, কিছুটা পরিবেশের উষ্ণতা, দূরে চার্জের ঘন্টার আওয়াজ একটা ছোট মূহুর্তকে ভিন্ন ভাবে উপভোগ করালো৷ আমার শরীরে রক্ত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে৷ হঠাৎ প্রবাহ হাওয়ার মতো শীতল স্পর্শ৷ বার্লিনের এই নাম না জায়গা টা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷
__________________
সব কিছুর জন্য নিজেকে পূর্ণতার খাতায় ফেলতে বা লিখতে ইচ্ছা হয়৷ কখনো না চাইতেও অনেক কিছুই হয়ে যায়৷ আর সেই হওয়াটা সুখের হয়৷ হাতে হাত ধরে হাটার মানুষটা যদি পার্ফেক্ট হয় তাহলে উঁচু চড়াই কেও সমতল লাগে৷ হাতে হাত ধরেই উঁচু ঢাল উঠে চলেছি৷ উঠতে কষ্ট হলেও মানিয়ে নিচ্ছি৷ উঠার আগে উনি একটা কথা বলেছিলেন,
” জীবনটাকে এই উঁচু রাস্তার মতো মনে কর,আমি তোর পাশে আছি! চাইলে কোলে করেই উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারি৷ কিন্তু জীবনটা তো সহজ নয়৷ তাই পাশে থাকা সবকিছুকে অবলম্বন করে নয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব কিছু মোকাবেলার চেষ্টা করবি৷ ”
আমি উনার হাতটা শক্ত করে ধরে উঠার চেষ্টা করছি৷ তার কথা গুলোর মানে সহজ কিন্তু আমার কাছে বরাবর প্রচন্ড কঠিন লাগে৷ মনে হয় কিছু একটা হবে৷ যা বিশ্রী৷ আমার কল্পনার বাহিরে৷ কিন্তু সবটা উপভোগ করে নিতে চাচ্ছি৷ তার সাথে, তার পাশে থেকে,হাতে হাত ধরে৷
চার্চের বাইরে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছি৷ হাঁপিয়ে গিয়েছি৷ আর তাকে দেখো,মনে হচ্ছে এক পা হেটেছেন৷ কোনো প্রতিক্রিয়া নেই৷ আমি ধপ করে ইট বিছানো রাস্তায় বসে পড়লাম৷ আর পারছি না৷ কি জন্য এসেছি? এখন নামতে হবে ভেবেই শরীরে জ্বর চলে আসার উপক্রম৷ আমার সামনে এসে সে নিজেও বসে পড়লো৷ আদুরে সুরে বললো,
–‘ ঠিক আছিস? ‘
আমি জোরে শ্বাস টেনে নিয়ে বললাম,
–‘ আপনার কষ্ট হচ্ছে না? ঠিক আছেন কি করে? ‘
উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়ালেন৷ আমি দাঁড়াতেই কোলে উঠিয়ে নিলেন৷ চার্চের ভেতরে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন,
–‘ তোর জন্য৷ ‘
তার একটা কথায় আবারো সব কিছুতে ভালোলাগার ছোঁয়া বয়ে গেলো৷ শক্ত করে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম৷ উনি আলতো হাতে ধরে রেখেছেন৷ মনে হচ্ছে,আমি ব্যাথা পাবো মনে হচ্ছে তার ধরায়৷ আমি মুচকি হেসে বললাম,
–‘ আপনার সব কিছুতে এতো মোহ কেন? এতো কেন ভালো আপনি৷ ‘
উনি একটা উঁচু বারান্দায় মতো জায়গায় এসে আমায় নামিয়ে দিলেন৷ তারপর আমার কোমড় ধরে তার বুকে আমার পিঠে রেখে সামনে তাকাতে বললেন৷ আমি তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম৷ সামনে নীল স্বচ্ছ আকাশ৷ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে হাজারো গাছ৷ আর দূরে ঝরণা আছড়ে পড়ছে নিচে৷ সুর তুলছে পানির৷ মনে হচ্ছে,নীল আকাশ ভেদ করে পানির সারি নিচে নেমে পড়ছে৷ রঙধনু সাদা গুচ্ছ মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে৷ আমি শান্ত চোখে তাকিয়ে আছি৷ দৃষ্টি কাঁপছে৷ উত্তেজনায় গলা থেকে আওয়ার ফিরে যাচ্ছে৷ উনার হাত খামচে ধরে শুধু বললাম,
–‘ আপনার ভালোবাসার মতো সবটা সুন্দর৷ উপভোগ্য৷ সবকিছু স্নিগ্ধতার চাঁদরে মোড়া৷ ‘
উনি আমার ঘাড়ে চুমু খেলেন৷ মোহ তে আছি তবুও তার স্পর্শ হৃদয়ে লাগলো৷ আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম৷ মাথার উপর ছাদ নেই৷ দেয়ালে লাল রাঙা ফুলের লতাপাতা জড়ানো৷ সামনেই চার্জ৷ এখন টা অন্ধকার তবে আলোকিত৷ হুট করে একটুকরো রোদের সাথে মেঘেরা নেমে পড়লো দল বেঁধে৷ উনি আর আমি ভিজে যাচ্ছি৷ উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছেন৷ আজও রৌদ্দুরে বৃষ্টি হচ্ছে..! আমার আর তার প্রেমের বৃষ্টি৷ ভালোবাসায় মোড়ানো স্নিগ্ধতার বৃষ্টি৷
মুখের ভাবটা পাংশুটে করে রেখেছি আমি৷ জ্বরে মুখ তেঁতো হয়ে উঠছে৷ গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে৷ মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটছে মনে হচ্ছে৷ আর উনি আমাকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ উনি কিচেনে আর আমি তার গলা জড়িয়ে পিঠের উপর ঝুলে আছি৷ হঠাৎ করে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য জ্বর এসেছে৷ উনি কিছু একটা বানাচ্ছেন৷ আমার বিরক্ত লাগছে৷ মাথা ঘুরাচ্ছে৷ আমি উনার সামনে গিয়ে হাতের নিচ দিয়ে বুকের উপর মাথা রেখে দাঁড়ালাম৷ উনি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন৷ আমার করা বিরক্তিতেও তার ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না৷ আমি তার বুকেত উপর চুমু খেলাম৷ উনি তাকালেন আমার দিকে৷ বললেন,
–‘ রুমে যাও আমি আসছি৷ ‘ তার মুখে তুমি শুনে জ্বরের মাঝেও মাথা তুলে অবাক চোখে তাকালাম৷ ইশ! কি মিষ্টি লাগে শুনতে৷ আমি আবার তার বুকে ঠোঁট ছোয়ালাম৷ উনি একহাতে আমার মাথা চেপে ধরলেন৷ আমি চোখ বুজে বললাম,
–‘ এই তুমি,,আমাকে তুমি করে বলতে পারেন না? কতো মিষ্টি লাগে৷ জানিস? আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা হয়৷ ‘
–‘ কি খেতে ইচ্ছা হয়? ‘
আমি উনার বুকে নাক ঘষে বললাম,
–‘ তোকে না তোমাকে না না আপনাকে৷ ‘
আমি কি বলছি সেটা নিজেও জানি না৷ শুধু বলার দরকার বলে চলেছি৷ উনি আমাকে ধরে ওভেন বন্ধ করে কিছু একটা নিয়ে আমাকে উঠিয়ে বসালেন৷ আমি উনার টি শার্ট আঁকড়ে ধরলাম৷
–‘ আমাকে ফেলে কোথায় যাচ্ছেন৷ যাবেন না৷ আমি ঘুমাবো৷ আপনার সাথে৷ ‘
–‘ হ্যাঁ,ঘুমাবা তো৷ আগে ছাড়ো আমাকে৷ আসছি আমি৷ ‘
–‘ উহু,ছাড়বো না৷ আপনার সাথে যাবো৷ ‘
উনি আমার থুতনিতে হাত দিয়ে উঁচু করে কপালে চুমু খেয়ে বললেব,
–‘ আসছি তো বাবা৷ ‘
আমি ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিলাম৷ উনি আমাকে রেখে খাবার রুমে নিয়ে গেলেন৷ তারপর আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে এলেন কোলে করে৷ বেডে বসিয়ে দিয়ে খিচুড়ি ধরলেন আমার মুখের সামনে৷ আমি নাক-মুখ কুঁচকে ফেললাম৷ তারপর উনার হাত ধরে বললাম,
–‘ সেদিনের মতো খাবো আমি৷ ‘
–‘ কোনদিনের মতো? ‘
–‘ আপনি খাবেন আমি আপনার থেকে খাবো৷ ‘
উনি নিজের কপাল কুঁচকালেন৷ সেদিন রাতের কথা মনে হতেই আমাকে জোর করলেন হাত থেকে খাওয়ার জন্য৷ আমি মানতে নারাজ৷ খাবো আমি তার ট্রিকসে৷ উনি হাঁপিয়ে গেছেন আমাকে বুঝাতে বুঝাতে৷ আমি হাসছি৷ খিলখিল করে৷ হাসির ছন্দ গুলো জ্বরের ঘোরেও জানান দিচ্ছে,
” সুখের মূহুর্ত না ফুরিয়ে যাক৷ চিরকাল এইভাবেই থাকুক৷ ”
চলবে,,,