রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব-২০

0
3101

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২০
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

কড়া রোদ এসে পড়েছে ড্রাইনিং টেবিলে! এখনো আমার কোমরে হাত দিয়ে গরুর হাড় চিবুচ্ছেন উনি৷ থেকে থেকে চাপ দিচ্ছেন কোমোরের উপর৷আমি খাবার নিয়ে বসেই আছি৷ উনি টুপ করে আমার গালে চুমু দিলেন৷ আমি তার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই উনি ঠোঁট উচু করে চুমু ইশারা করতেই আমি তরকারির বাটি উঠিয়ে উনার দিকে ছুড়ে দিতে নিলেই সে আমায় ছেড়ে উঠে যায়৷ আমি চিল্লিয়ে কিছু বলার আগেই আবার আমার ওড়না টেনে নিজের মুখ মুছেন৷ আমি টান দিতেই আমাকে টেনে তার সাথে রুমে নিয়ে যান৷ আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম,
–‘ এতো এমন কেন আপনি?’
–‘ কেমন? ‘
–‘ জানি না..! বিরক্ত করেন কেন আমাকে? ‘
–‘ আর কিছুক্ষণ সহ্য কর৷ তারপর তোর ছুটি৷ ‘
আমি থমকে দাঁড়ালাম৷ আজ বুধবার৷ মনে হতেই চুপ হয়ে যাই৷ আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ কখন যাবেন আপনি? ‘
উনি আমার কাছে..! একদম কাছে এসে দাঁড়ালেন৷ আমি সরলাম না৷ উনি স্থির ভাবে বললেন,
–‘ বিকেলে..ফ্লাইট রাত একটায়৷ ‘
–‘ ওহহ..! ‘
আমার দিকে আরো আগাচ্ছেন উনি৷ আমি পিছিয়ে গেলাম এইবার৷ পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকলাম৷ উনি তার এক হাত আমার পাশে রেখে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন,
–‘ নীতু..!’
তার মুখে নাম শুনে অন্যধরণের ভালোলাগে৷ আমি শুধু চোখ তুলে তাকালাম৷ উনি আমার কোমড়ের পিছন দিয়ে হাত দিয়ে একদম তার সাথে মিশিয়ে নেন৷ আমি চমকে উঠলাম৷ চুপ করে তার হার্টের প্রত্যেকটা শব্দ শুনলাম৷ উনি আমায় জড়িয়ে রেখেই পাশে থেকে হাত বাড়িয়ে পানি নিয়ে গাছে পানি দিতে থাকলেন৷ আমি তার মুখের উপর তাকিয়ে আছি৷ সূর্যের আলোতে তাকে সোনালি লাগছে৷ আমার দিকে না তাকিয়ে উনি বললেন,
–‘ যত ইচ্ছা,মন প্রাণ ভরে দেখে নে৷ ‘
আমি চমকে উঠে তার দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম৷ আজ বুধবার আমার মনে ছিলো না৷ সে সত্যিই চলে যাবে..! কষ্ট লাগছে কেন এতো?
বাইরে থেকে ফুঁপার ডাক শুনেই আমায় ছেড়ে উনি বাইরের দিকে চলে গেলেন৷ আমি পিছু পিছু যাই৷ ফুঁপা আর আব্বু দাঁড়িয়ে আছে..! তাকে কিছু কাগজ দিয়ে ফুঁপা বলল,
–‘ সিনান,রাহুল ওরা তোমায় দিতে যাবে৷ আর সব দিকে খেয়াল রেখো৷ নিজের যত্ন নিয়ো৷ ‘
আব্বুও একই কথা বলে চলে গেলেন৷ আমায় দেখে উনি মুচকি হাসলেন৷ বললেন,
–‘ সেবা কর নীতু, স্বামী সেবা..! ‘
–‘ পারি না আমি..! ‘
উনি আমায় আবার টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেন,
–‘ আয় শিখিয়ে দেই..!’
আমি উনার কথা শুনে থমকে গেলাম৷ বাইরে বেরুনোর জন্য বাহানা খুজতেই উনি জোর করে আমাকে বসিয়ে দিয়ে,কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন৷ আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম৷ উনি হাত টেনে তার বুকের মাঝে নিয়ে চোখ বুজে শুয়ে রইলেন৷ এতোটা স্নিগ্ধ কেন লাগছে তাকে?

বিকেলের হালকা রোদের আলো চারদিকে ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ সবার সামনে কাব্য ভাইয়া আমার কঁপালে উষ্ণ পরশ দিতেই আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকি৷ তার কোনো বাঁধা নেই! সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ সিনান ভাইয়া কিছু বলার আগেই রাহুল ভাইয়া থামিয়ে দেন৷ কাব্য ভাইয়া আমার দুই বাহুতে হাত দিয়ে ধরতেই আমি উনার মুখের দিকে তাকাই৷ তার চোখে-মুখে উদাসীনতা৷ মূহুর্তে আমার বুকের মাঝে একটা কষ্টের সুর তুলে৷ মানুষটা চলে যাবেন..!
–‘ নীতু,
শীতল কন্ঠের ডাক শুনেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি৷ উনি আমায় আবার ডাকতেই চোখ খুলে তাকাই৷
–‘ কথা বলবি না আমার সাথে? ‘
চোখের কোণে পানির আভাস পেতেই আমি লুকাতে চেষ্টা করে বললাম,
–‘ নি..জের যত্ন নিবেন৷ ‘
–‘ আর কিছু? ‘
–‘ ভালো থাকবেন..! ‘
–‘ মিস করবি না আমায়? ‘
আমি এইবার হু-হু কেঁদে দিলাম৷ মিস করবো কিনা সেইটা আবার জিজ্ঞেস করছেন উনি৷ এতো খারাপ কেন? আমি টেনে টেনে বললাম,
–‘ ম..মি..স কর ব বো কেন? আপনার তো যাওয়ার ছিলো৷ আর,, আর..’
উনি আমার মুখের উপর ঝুঁকে বললেন,
–‘ আর? ‘
আমি কাঁদছি! উত্তর দিচ্ছি না একদম৷ উনি আমায় টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন৷ আশেপাশের কেও দেখছে কিনা সেটা মাথায় একদম নেই আমার৷ আমি কান্না করে যাচ্ছি অনবরত৷ সে হাসছে..! মাথা দুলিয়ে হাসছে৷ আমার কান্না দেখে তার হাসি পাচ্ছে৷ আমার পিঠের উপর তার হাত সে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে আমায়৷ ফিসফিস করে বললেন,
–‘ সবাই কিন্তু আমাদের রোমান্টিক দৃশ্য দেখছে৷ ‘
উনার এতোটুকু কথায় তাকে ছেড়ে দূরে যেতে নিলেই হা হা করে হেসে বললেন,
–‘ প্রাইভেসি দিয়ে সবাই চলে গেছে মিসেস. কাল রাতের যে কাজটা করেছিলি সেটা এখন করতেই পারিস৷ এই দেখ আমার চোখ বন্ধ৷ ‘
মূহুর্তেই আমার কান্না থেমে যায়৷ উনার কাছে থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছুটোছুটি করছি৷ সেই কাজটা করা ঘোর অন্যায় হয়েছে তোর নীতু..! ঘোর অন্যায়৷
–‘ উম্ম..তাহলে আমি নিজেই নিয়ে নেই কি বলিস?’
আমি আবার মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলি৷ আঙুলের সাইড দিয়ে তার হাসি মুখ দেখতেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠি৷ উনি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ তার চোখের দৃষ্টিতে এতো মুগ্ধতা কেন? কেন এতো আকুলতা..! এই চোখের দিকে তাকিয়ে প্রেমের কবিতা অনায়াসে লিখা যায়৷ আমি কি কবিতা লিখবো তার চোখ নিয়ে?
হাতের উপর তার ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই আমি হাত নামিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে৷ এই লোক ভারী অসভ্য…! শেষে কিনা হাতের উপর দিলো৷
–‘ তোর আঙুল ধোঁকা দিয়েছে তোকে! তারা ঠিক ভাবে তোর লজ্জায় রাঙা মুখ ঢাকতে পারে নি৷ আমার কি দোষ বল তো? ‘
উনার হাত আমার কোমোরের উপর এখন৷ আমি তার হাতের উপর হাত রেখে থেমে থেম বললাম,
–‘ ছাড়ুন ত তো। ‘
–‘ ওকে, ছেড়ে দিচ্ছি..! ‘
উনার স্বাভাবিক কথা শুনে একটু অবাক হলাম আমি৷ এতো সহজে মেনে নিলেন কি করে? আমার নামানো চোখের উপর চুমু দিয়েই তিনি ছেড়ে দেন আমায়৷ এইটা কি হলো? চোখের উপর হাত দিতেই উনি চলে যায়।
ইরা আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে৷ হাসতে হাসতে বলল,

–‘ হাও রোমান্টিক কাব্য ভাই..! ইশ! তুই গাঁধি, রেসপন্স করবি কি উল্টে উনায় ছাড়তে বলিস৷ আমি হলে,,! ‘
আমি ওর হাত ছাড়িয়ে পিছনে ঘুরে রাগী স্বরে বললাম,
–‘ তুই হলে কি? লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখছিলি? ছিঃ! নির্লজ্জ৷ ‘
ইরা ভয় পাওয়ার বদলে আরো হাসে৷ পিছনের দিকে ইশারা করে বলল,
–‘ ফ্রি তে আমরা সবাই সিনেমা দেখেছি..! ‘
ওর হাতের ইশারা দেখে তাকিয়ে দেখি সিনান ভাইয়া আর দাদু দাঁড়িয়ে! আমাকে তাকাতে দেখেই তড়িঘড়ি করে অন্যদিকে ঘুরে যায়৷ কাদের পাল্লায় পড়েছি আমি? ইশ! কি ভাবছে সবাই৷ আজ উনি চলে না গেলে… চলে যাবেন? এই কথাটা মনে হতেই সব ভুলে আবার শূন্য লাগছে৷ ইরা হাসছে,আমি আর কিছু না বলে সামনে তাকিয়ে দেখি সে ফুঁপি কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি ধীর পায়ে সে দিকে এগিয়ে যাই৷ উনি একহাতে আমাকেও টেনে নেন৷ তার শরীরে কেমন ভরসার ছোঁয়া পাচ্ছি৷ এতো কষ্ট হচ্ছে কেন সে চলে যাবে বলে৷ আবারও চোখের কোণায় পানির আভাস পেতেই উনার গালের ছোঁয়াও পাই৷ সে ইচ্ছা করে তার গাল দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দেন৷ আমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠে৷ এতো কেয়ারিং কেন সে? তার মায়ায় এতো বাঁধছেন কেন আমাকে৷
_______________________
রাতের গভীরতা! সেই সাথে কাব্য ভাইয়ার ঘরের শূন্যতা৷ বুক চিরে কেমন দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে থেকে থেকে৷ আমি আমার রুম থেকে তার রুমে এসে পড়েছি৷ তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার লাগানো গাছ গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি৷ আজ সকালেও সে পানি দিয়েছেন গাছে৷ সেই পানির ফোঁটা আমার হাতে লাগতেই আমার চোখের পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে৷ তাকে কি আমি ভালোবেসে ফেলেছি? যাকে দেখলে ভয়ে পালিয়ে বেড়াতাম! আর দুইঘন্টার ব্যবধানে তাকে দেখতে পাবো না ভেবে কান্না পাচ্ছে৷ এই দুই ঘন্টা আমার কাছে দুই বছরের মতো কেন মনে হচ্ছে? আল্লাহ..! কতোদিন তাকে না দেখে থাকবো? তার গলার আওয়াজ শোনার জন্য নিজেকে পাগল পাগল লাগছে৷ সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করেও শান্তি পাচ্ছি না৷ কাব্য,,কাব্য,,এই একটা নাম এই একটা মানুষকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কেমন বিলীন লাগছে আমার৷ তার ছোঁয়া যেখানে আছে সেখানে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি আজ৷ এতোটা ডেস্পারেট হয়ে পড়লাম কেন আমি? এই জন্যই বুঝি বাবা আর রেদুয়ান ফুঁপা শর্ত দিয়েছিলেন তাকে? উফফ! তাকে কেন দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে! সামনে থাকলে দূরে ঠেলে এখন কেন এতো শূন্য লাগছে৷ আচ্ছা,উনার কি আমার কথা মনে পড়ছে না? সোফার সামনে ধপ করে বসে পড়ি৷ কান্না পাচ্ছে..! দরজা ধাক্কানোর শব্দে চুঁপ করে বসে থাকি আমি৷ জিনিয়া ডাকছে৷ জবাব দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে না৷ ফুঁপি এসে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
–‘ নীতু, আম্মু..! আমি জানি তুই কাব্যের রুমে৷ দেখ জিনিয়া তোর জন্য কাঁদছে! তোর ফুঁপা আর বাবা না খেয়ে বসে আছে তোর জন্য৷ আমাদের কি ভালো লাগছে বল, কাব্যকে ছাড়া? মেনে নিতে হবে যে! ‘
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,
–‘ ফুঁপি, তোমরা খেয়ে নাও৷ আমি পড়তে বসেছি! ক্লাস টেস্টের অনেক পড়া বাকি৷ ‘
ফুঁপি আর কিছু বলল না৷ হয়তো তার মন আমার চেয়ে খারাপ বেশী৷ আবার দরজা ধাক্কানোর শব্দে নড়েচড়ে বসি আমি৷ জিনিয়া আর ইরা চিল্লিয়ে বলছে,
–‘ ভাইয়া ফোন করেছে। নীতু নামক কাওকে চাচ্ছে৷ কিন্তু সে তো নেই৷ ভাইয়া ফোন কেটে দাও..’
উনি ফোন করেছে শুনেই ওড়না হাতে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে একটানে মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে ধপ করে ওদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেই৷ ব্যাপার টা এতো জলদি হয়েছে ওরা অবাক চোখে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দেয়৷ হাসুক..! ফোন নিয়ে বুকের সাথে চেঁপে ধরে দাঁড়িয়ে আছি দরজায় ঠেস দিয়ে৷ দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই৷ ফোন কানে নিতেই গাড়ির শব্দ সাথে সিনান,রাহুল আর মোস্তাকিম ভাইয়ার হাসির শব্দ৷ ফোন কাঁনে নিয়ে উনার নিশ্বাসের শব্দ শুনছি৷
–‘ তোর হার্টের শব্দ তো গানের চেয়ে মারাত্মক নেশা লাগানো৷ ‘
উনার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যাই৷ কথা ঘুরানোর জন্য বললাম,
–‘ এয়ারপোর্টে পৌছে গেছেন? ‘
–‘ না..! রাস্তায় এখনো৷ ‘
–‘ ওহ..!’
আবার নীরবতা৷ নিশ্বাসের ফিসফিস৷ তার গলার আওয়াজ শোনার জন্য এতো আকুল হয়ে ছিলাম এখন কোনো কথা খুজে পাচ্ছি না৷ আমার চুপ থাকা দেখে সে নিজেই বলল,
–‘ কাঁদছিস কেন? ইউ মিস মি? ‘
আমি চমকে উঠলাম৷ উত্তর খুজে পেলাম না৷ উনি আবার বলল,
–‘ দুইঘন্টায় বউ আমার কেঁদে কেটে নদী বানাচ্ছে৷ বাংলাদেশ থেকে এখনো যাই নি এতেই এই অবস্থা..! না জানি বছরের পর বছর থাকলে এসে দেখবো সিলেট তার চোখের পানিতে ডুবেই গেছে৷ ‘
রাহুল ভাইয়া ভয়ার্ত ভাবে ফোঁড়ন কেটে বলল,
–‘ নীতু,বেহেনা! তোর কাব্য ভাইয়ের জন্য কেঁদে সমুদ্র বানিয়ে আমাদের ভাসিয়ে দিস না প্লিজ৷ আমরা সিঙ্গেল ভাই ব্রাদার বিয়ে না করেই ডুবে মরতে হবে যে৷ ‘
আমি হেসে ফেললাম৷ হাসির শব্দ শুনে কাব্য ভাইয়া বললেন,
–‘ হাসিস না..! আমার কষ্ট হয় যে৷ ‘
–‘ পৌছে ফোন দিয়েন৷ ‘
উনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন৷ সিরিয়াস ভাবে বললেন,
–‘ আই মিস ইউ লট..! রাতের খাবার খেয়ে নে জলদি৷ আর ফোন এইটা তোর৷ প্লেনে উঠার পর আর কানেক্টেড থাকতে পারবো না তাই ফোন রাখিস না৷ ‘
আমিও ফোন কানে রাখলাম৷ খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না৷ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূর আকাশ দেখে চলেছি আর উনি ফোনে৷ কথা বলছেন না৷ আমিও বলছি না৷ এখন একটু শান্তি লাগছে৷ চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে যাবেন উনি৷ আমি ধীর কন্ঠে নীরবতা ভেঙে বললাম,
–‘ আই মিস ইউ..! ‘
–‘ কি বললি শুনতে পেলাম না! ‘
রাগ হলো আমার৷ সিরিয়াস মোমেন্টে হেয়ালি না করলে হয় না উনার৷
–‘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ‘
–‘ জানি না। তবে ভালো লাগছে না৷ সব কিছুতে আপনাকে খুজে বেড়াচ্ছি কেন বলতে পারবেন? ‘
অজান্তেই কথা গুলো বলে চুপ হয়ে গেলাম৷ তবে বলতে পেরে ভালো লাগছে সাথে লজ্জা৷ লজ্জা পেয়েও আজ হাসলাম৷ কারণ লজ্জায় পড়লে সে দেখতে পাবে না সাথে আবার লজ্জায় ফেলতেও পারবে না৷
উনি ফিসফিস করে বললেন,
–‘ এই তোর নিশ্বাস কিছু একটা বলছে..!’
আমি ভ্রুকুচকে বললাম,
–‘ কি বলছে? ‘
–‘ ফিরে আসেন..! ফিরে আসেন..! মন যে নিয়ে গেছেন লাগেজে করে..! ‘
হাসলাম আমি৷ লোকটা পারেও বটে৷ সত্যি কি আমার মন নিয়ে গেছেন উনি? আমি বিরবির করে বললাম, ‘ সত্যি যদি ফিরে আসতেন..! ‘
জানি না সে আমার কথা শুনেছে কি না তবে উনি সুর টেনে বললেন,
— ‘ আসবো ফিরে এই আমি,
তোমার মনের দরজার কোণে,,
দোর খুলে দেখো,,
দাঁড়িয়ে আছি হাত বাড়িয়ে..! ‘
কাব্য ভাইয়ার বলার মাঝেই সবাই ‘ বা বা! ‘ করে উঠলেন৷ আমি ফোন রেখে দেই৷ লজ্জা লাগছে অনেক৷
উনি আবার ফোন দিলেন৷ আমি ধরলাম না৷ তিন চারবার বাজতে বাজতে কেটে যেতেই আমার বুকের মাঝে হু হু করে উঠে৷ আর কিছুক্ষণ তার পরেই চলে যাবেন বহু দূর৷ আর চাইলেও তাকে ছুঁতে,, চোখের সামনে দেখতে পাবো না৷ কতোদিন? কত ঘন্টা? আমি যে তিন ঘন্টার দূরত্ব মেনে নিতে পারছি না৷ শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ এতো কষ্ট কেন লাগছে৷
জোনাকিপোকার আলোয় চারদিক চিকচিক করছে৷ সেই রাতারগুলের রাতের মতো৷ আজ তো সে পাশে নেই..! কেন?কেন?
এই অন্দকার বারান্দায় আজ বসে থাকতে একদম ভয় লাগছে না৷ মনের কোণে শূন্যতা থাকলে ভয় বুঝি লাগে? একদম না..!
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর ফোনের ভাইব্রেশনে কেঁপে উঠি আমি৷ কাব্য ভাই কলিং… এইবার আর দেরি করলাম না একদম৷ ফোনটা ধরতেই ওপাশে নিস্তব্ধতা৷ কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ প্লেনে বসে গেছেন বুঝি? আমি যে বিদায় দিতে পারবো না৷ ‘
–‘ নীচে নেমে আয়৷ ‘
সিনান ভাইয়ার কন্ঠ..! নীচে নামবো কেন? বুকের মাঝে ধক করে উঠলো৷
–‘ কাব্য ভাইয়ার ফোন আপনার কাছে কেন?’
–‘ নীচে আয় নীতু,,
–‘ এই সিনান ভাইয়া, নীচে নামবো কেন? কি বলছেন উল্টো পাল্টা৷ ‘
ওইপাশ থেকে জবাব এলো না৷ লাইন কেটে গেছে৷ আমি ওড়না খুজে এক দৌড়ে গেটের সামনে যাই৷ বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা করছে৷ হঠাৎ নীচে আসতে কেন বললো৷ আর কাব্য ভাইয়া? তার ফোন সিনান ভাইয়ের কাছে কেন৷ অজানা ভয়ে দরজা খুলে বাগানে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়ি আমি,,,
চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে