রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব-১৬+১৭

0
3415

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৬
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

রাত ১২ঃ৩৪! চারদিকে নিস্তব্ধ অন্ধকার৷ ছাঁদে এখনো বসে আছি আমি আর কাব্য ভাইয়া৷ হলুদ দিয়ে আমায় হলুদ পরী বানিয়ে দিয়েছেন৷ এইটা উনার কথা,আমাকে নাকি হলুদে রাঙানো পরী লাগছে৷ ঘুম চোখের পাতায় পাতায় হানা দিচ্ছে৷ সোফায় হাতের কুনুই রেখে গালে হাত দিয়ে ঝিমাচ্ছি৷ আমার হাতের উপর তার হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে সোজা হয়ে বসি আমি৷ বিরক্তির সুরে বললাম,
–‘ আমি ঘুমাবো, আপনার ঘুম না আসতে পারে কিন্তু আমি তো মানুষ! আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে৷ সারারাত থাকুন আপনি৷ আর কাওকে লাগলে মশা তো আছেই ওদেরকেই না হয় হলুদ লাগাবেন৷ ‘
আমার কথায় উনার কোনো ভাবান্তর হলো না৷ আমার বা হাত তার কোলের উপর রেখে অপর সাইডে ঘুরে মোবাইলে কিছু একটা দেখছেন মনোযোগ সহকারে৷ আমি হাত টেনে আবার ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতেই উনি চিল্লিয়ে বলে উঠেন,
–‘ ধূর,এতো প্যাঁচানো ডিজাইন কেন দেওয়া লাগবে৷ মাথা ঘুরে গেলো আমার৷ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় এতো মনোযোগ দিলে আজ নাম্বার ওয়ান টপ স্টুডেন্টের খাতায় নাম থাকতো৷ ‘
আমি তার কথায় ঘুম ঘুম চোখেই কঁপাল কুঁচকে বললাম,
–‘ আপনি নাম্বার ওয়ান লিস্টেই আছেন কাব্য ভাইয়া,’
উনি আবারও আমার কথার তোয়াক্কা না করে কাঁকে একটা ফোন দিলেন৷ ওইপাশে ফোন রিসিভ হতেই গম্ভীর ভাবে বললেন,
–‘ আমার রুমের,কাবার্ডের সাইডের টেবিলের ড্রয়ারে একটা প্যাকেট আছে৷ সেইটা ইমিডিয়েটলি নিয়ে ছাদের দরজার সামনে টোকা দে৷ ‘
ফোনের অপরপ্রান্তের মানুষ যা বলল তা শুনতে না পেলেও কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যাই আমি৷ ফোন পাশে রেখে আমার হাত দেখে বললেন,
–‘ নীতু…..’
–‘ হুম,বলেন৷ আমি চোখ বন্ধ করেই উওর দিলাম৷ তার ঠোঁটের ছোঁয়া হাতে পেতেই হাত সরিয়ে ফেলতে নিলেই সে আরো টেনে নিয়ে বলল,
— ‘ আমায় তোর চোখে কেমন লাগে রে!…
আমি ভাবেলাশীন ভাবে উত্তর দিলাম,
–‘ কেমন আবার লাগবে! ভাইয়ের মতোই লাগে৷ ‘
–‘ হোয়াট…ভাই মানে? আমি তোর বর নীতু৷ কালকের পর থেকে পার্মানেন্ট হয়ে যাবো৷ ‘
আমি উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
–‘ আপনি আমায় মেনে নিবেন আপনার বউ হিসেবে? ‘
–‘ না! ‘

উনার কথা শুনে ধাক্কা খেলাম একটা৷ কষ্ট হলো৷ তাহলে জোর করে আমি তার সাথে আবদ্ধ৷
কোথা থেকে একরাশ পানির ফোঁটা ভীড় করলো চোখের কোণে৷ পানিটুকু মুছে নিলাম৷ কেন তার ” না ” মেনে নিতে পারছি না৷ হয়তো তার নিয়তি আমার সাথে অজানা কারণেই বেঁধে গেছে, এই নিয়তি নিয়েই চলতে হবে ভেবেই মানতে পারছি না৷ আচ্ছা!তার জন্য কি আগে আমার মনে অনুভূতি ছিলো? না এখন আছে?

আমার ভাবনার সুতো ছিড়লো দরজায় কারো আঘাত করার শব্দে৷ কাব্য ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে দরজার সামনে যেতেই রাহুল ভাইয়া আর সিনান ভাইয়া দরজা দিয়ে উঁকি মেরে আমাকে দেখে মস্ত এক হাসি দেয়৷ কাব্য ভাইয়া রাহুল ভাইয়ার পিঠে ধুম করে একটা থাপ্পড় মারতেই আমার হাসি পায়৷ সিনান ভাইয়া থাপ্পড়ের শব্দে সরে দাড়ান৷ রাহুল ভাইয়া পিঠে হাত দিয়ে কাব্য ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বললেন,

–‘ আজ তোমার সময় তাই বউয়ের সামনে ঠাসঠুস মারছো বন্ধু! এককালে আমরাই তোমার সব ছিলাম আর এখন বউ হয়েছে তোমার আপন৷ হারামি, বউয়ের হাতে উঠতে বসতে মার খাবি তুই৷ ‘

রাহুল ভাইয়ার কথা শুনে আমি উচ্চস্বরে হেঁসে উঠতেই কাব্য ভাইয়া আমার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকান৷ আমি মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছি৷ আর সিনান ভাই তার পিঠ বাঁচাতে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন,

–‘ হলুদ রাতেই সব শেষ করলে বিয়ের রাতে কি করবা,, ‘

উনি আর কিছু বলার আগেই কাব্য ভাইয়া মোবাইল বের করে বললেন,

–‘ তোর ছয় নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার আমার কাছে আছে! তুই যে আজ অন্য মেয়ের সাথে ফ্লাটিং করেছিস তা আমি সুন্দর করে উপস্থাপন করবো?’

সিনান ভাইয়ার হাসি মুখ মূহুর্তেই চুপসে যায়৷ সে রাহুল ভাইয়ার হাত টেনে যেতে যেতে বললেন,

–‘ অন্যের পারসোনাল টাইমে আঘাত দেওয়া বড্ড অন্যায় তুই জানিস না? এখানে আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছিস…শালা লুচ্চা! ‘

তাদের দিকে তাকিয়ে কাব্য মুচকি হেসে পড়ে থাকা প্যাকেটটা নিয়ে আমার কাছে এসে বসেন৷ আমি দ্রু কুচকে, ‘ এইটা কি ‘ জিজ্ঞেস করতেই উনি হাসি দিয়ে বলে,

–‘ নতুন বউয়ের হাতে মেহেন্দি না থাকলে তাকে নতুন বউ বউ লাগে না৷ ‘
আমি প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ এইটা কবে কার নিয়ম! আপনি বুঝি মেহেন্দি আনিয়েছেন? ‘
–‘ না ,লাল রাঙা ভালোবাসা আনিয়েছি৷ ‘

আমি কম্পিত চোখে তার দিকে তাকাই৷ ” ভালোবাসা! ” কথাটা বড্ড মোহনীয় শুনেচ্ছে তার মুখে৷ উনি আমার হাত আবার তার কোলের উপর নিয়ে প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বললেন,
— ‘ কিভাবে খুলতে হয়! আমি জানি না৷ একটু খুলে দে তো৷ ‘

আমি কথা না বাড়িয়ে টিউবটা সেট করে উনার হাতে দিতেই উনি দ্রু কুচকে ফেলেন৷ বিরবির করে বললেন,
–‘ কাব্য তোর জীবনে আর কি কি করতে হবে এইটা তার ফাস্ট নমুনা৷ ‘
–‘ আমার হাত নষ্ট হলে… ‘
–‘ হুশশ! আমি যা করি সেটা পার্ফেক্ট হয়৷ পার্ফেক্ট মিনস পার্ফেক্ট৷ ‘

আমায় আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি টিউব থেকে মেহেদী বের করার হাজার চেষ্টা করতে লাগলেন৷ তার চেষ্টা দেখে বড্ড মায়া হলো আমার৷ আমি উনার হাত থেকে মেহেদীর টিউব নিয়ে বের করে দিয়ে বলি, ‘ এইভাবে করতে হয়৷ ‘

উনি বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে আমার থেকে মেহেদীর টিউব ছিনিয়ে নিয়ে ডিজাইন করার মনোযোগ দিলেন৷ হালকা হাওয়ায় তার অবাদ্ধ সিল্কি চুল গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে৷ উনি মাঝে মাঝে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন! তার চুলগুলোকে আমি আলতো করে হাতের মুঠোয় নিই৷ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে! সেই উঁচু দাঁতের নজর কাড়া হাসি৷ উনি গালে হাত দিতেই হাতে লেগে থাকা অল্প মেহেদী তার গালে লাগতেই আমি আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে সেইটুকু মুছে দিতেই উনি চমকে আমার দিকে তাকায়৷ অনেকক্ষণ তাকায়!তার চোখের ভাষা স্পষ্ট! সেই চোখের ভাষা পড়তে পারছি আমি৷ ভাষা গুলো নীরব, কিন্তু তারা বলছে, ‘ এই আঁচলের ছোঁয়া যেন সর্বক্ষণ আমার পাশে!আমার ক্লান্তিতে ছায়া হয়ে থাকে৷ ‘

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি৷ ইশ! এই কাজটা করার কি দরকার ছিলো তোর নীতু? না করলে কি এমন হতো! না,,এই কাজটুকু না করলে এতোটা ভালোলাগার ছোঁয়া তোর মনের মাঝে আসতো বুঝি?

— ‘ ফিনিশ! ইট’স পার্ফেক্ট৷ যদিও সুন্দর হয় নি তাও আমি দিয়েছি বলে কথা৷ ‘
পুরো দেড় ঘন্টা লাগিয়ে উনি শেষ করেছেন মেহেদী দেওয়া৷ আমি জেগে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম৷ উনার চিল্লানি শুনে উঠে পড়ি৷ আমি ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি উনি একরাশ আনন্দ নিয়ে হাত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলছেন৷ আমায় হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন,

–‘ দেখ, ওই আলতু ফালতু প্যাচানো ভিডিওর চেয়ে আমারটা বেস্ট হয়েছে৷ ‘
আমি ঢুলতে ঢুলতে উনার বুকের মাঝে শুয়ে বললাম,
–‘ কাব্য ভাই সব সময় পার্ফেক্টটা করে আপনি জানেন না? তার সব কিছু পার্ফেক্ট…. ‘

সুন্দর মূহুর্ত আমার ঘুমের জন্য নষ্ট হলেও সে আমায় নিয়ে আরো অনেকক্ষণ বসে ছিলো সেই ছাদের মাঝে৷ একা! তার মতো৷
______________________
ভোরের শীতল হাওয়া চারদিকে প্রাণবন্ত ভাবে বইছে৷ তাদের ছুটোছুটি যেন নিরলস! পাখিরা নীড় ছেড়ে ব্যস্ত ভাবে উড়ছে৷ কোথায় যেন একটা কোকিল ডাকছে৷ এই সময়টা বুঝি কোকিল ডাকে?ক্ষীণ স্বরের সেই আওয়াজে আমার ঘুম ছুটে গেছে৷ আলতো চোখে তাকিয়ে নিজেকে রুমের মাঝে আবিষ্কার করি৷ নিজেকে রুমের মধ্যে দেখে অবাক হয়ে উঠতেই দেখি ইরা আমার হাত ধরে মুচকি হাসছে৷ আমি উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি হাসছে কেন৷ ও আমাকে চোখ মেরে বলল,

–‘ হাও রোমান্টিক বনু! দ্যা গম্ভীর কাব্য ভাইয়া এতো রোমান্টিক জানলে আমি কখনো উনায় তোকে দিতাম না৷ ‘

আমি ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি৷ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি, হাতজোড়া মেহেদী পড়ানো সুন্দর ডিজাইন করা৷ তার মাঝে লাভ শেপের মধ্যে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,

‘ রাতের আঁধারে আমার নীলাম্বরী তুমি,’
‘ অদ্ভুদ মোহমোয় মায়াবী তুমি! ‘
‘ জানি না, অকারণের সুখের মূহুর্ত তুমি,
‘ তোমাতে সিক্ত আমি,
‘ অকারণের ছোট অনুভূতির দোলা তুমি! ‘
‘ তুমি যে আমারি৷ ‘

তার নিচে ছোট করে লিখা, তোর কাব্য ভাই নামক বর৷ ‘
লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে উঠলো মূহুর্তেই৷ পাশের রুম থেকে গিটারের আওয়াজের সাথে ভেসে আসছে,

‘ লজ্জায় রাঙানো রূপবতী তুমি….
‘ ভালোবাসার মোহনা তুমি!’
‘ আমি যে বড্ড ভালোবাসি…..’
চলবে……

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৭
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
বাড়িতে পুরো বিয়ে বিয়ের আসর৷ মানুষের কোলাহল! এতো এতো মানুষের ভীরের মাঝে কাব্য ভাইয়া আমাকে নিয়ে ছাঁদের চিলেকোঠায় আটকে রেখেছে৷ উহু,,আটকে রাখে নি তার সো কল্ড কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে এসেছে৷ আমি দেয়ালের সাথে একদম লেগে দাঁড়িয়ে আছি আর উনি এক হাত দেয়ালে রেখে আমার দিকে ঝুকে দাঁড়িয়ে হাতের মেহেদী দেখে চলছেন৷ গভীর ভাবে দেখছেন তিনি মেহেদী! তার উত্তাপ নিশ্বাস আমার হাতের উপর পড়ছে৷ আমার হার্ট বিট ক্রমেই বেড়ে চলছে৷ লোকটা আমার কাছে আসলে হার্ট নামক যন্ত্রটা একদম কথা শুনে না সেইটা তড়িৎ গতিতে হাতুড়ি পিটতে থাকে৷ আমি কম্পিত কন্ঠে বললাম,
–‘ ফুঁপি ডাকছে আমায়..!’
–‘ তোকে বলেছে? ‘
–‘ আমি শুনতে পেলাম৷ ‘
উনি আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন৷ সরু চোখে বললেন,
–‘ মৃগী রোগীদের মতো কাঁপছিস কেন এইভাবে? আমি কিছু করেছি তোকে! ‘
আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি কাঁপছি আমি৷ উনি আমার কাধে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ কুল..এতো কাঁপাকাঁপির কিছুই হয় নি৷ তবে হবে,,আজ রাতেই হবে৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ কি হবে! ‘
উনি আমার কঁপালে চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ অনেক কিছুই হবে! তোর এতো জানা লাগবে কেন? বেশি পেকে যাচ্ছিস দিন দিন৷ এখন সোজা রুমে ঢুকবি দেন গোসল করে আমার কাছে আসবি..তোকে নিয়ে পার্লারে যাবো ভুত সাজাতে৷ এমনি তো ভুত আছিস আরেকটু না হয় বানিয়ে আনলাম৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে তাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
–‘ ভুত হলে হবে আপনার বউ৷ ‘
–‘ হ্যাঁ,,আমার বউ তো ভুত’ই! ‘
এই কথা বলে উনি হাসলেন৷ উনার হাসির জন্য দ্রু কুচকে তাকাতেই নিজের বোকামির কথা বুঝতে পারি৷ বউ তো আমি..
__________________
সকাল দশটার সূর্যের আলো আজ মোহনীয় লাগছে আমার কাছে৷ গাড়িতে করে আমি আর কাব্য ভাইয়া কোথাও একটা যাচ্ছি৷ গাড়ির পেছনের সিটে আমাকে সাজানোর জন্য সমস্ত কিছু রাখা৷ পার্লারে ফুঁপি আর ইরা নিয়ে যেতে চাইলে কাব্য ভাইয়া জেদ করে, সেই নাকি নিয়ে যাবে আমায়৷ তার প্রত্যেকটা কাজে ব্যাঘাত দেওয়া লাগবেই লাগবে৷ আমি মনমরা হয়ে বসে আছি৷ উনি লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখে আমার উদ্দেশ্য বললেন,
–‘ আজ আমাকে বড্ড হ্যান্ডসাম লাগছে! দেখেছিস? ‘
আমি জবাব দিলাম না৷ তার কি প্রয়োজন ছিলো আমার সাথে আসার সেটাই তো বুঝতে পারছি না৷ আব্বু,জিনিয়া সবাই কাব্য ভাইয়াদের বাসায়৷ গাড়ি আমাদের কলোনী তে যেতেই আমি চমকে উঠি৷ আমাদের বাসার আশেপাশে পার্লার নামক কিছু আছে বলে আমার জানা নেই৷ আমি দ্রু কুঁচকে উনায় বললাম,
–‘ এখানে এনেছেন কেন? ফুঁপি কিন্তু তিনটার আগে বাসায় পৌছাতে বলেছে৷ ‘
উনি গাড়ি আমাদের বাসার সামনে পার্ক করতে করতে বললেন,
–‘ টাইম এন্ড টাইড ওয়েট’স ফর নান৷ তোর চেয়ে টাইমের জ্ঞ্যান আমার বেশী আছে! তাই চুপ করে বসে থাক৷ ‘

উনি নেমেই জিনিস গুলো হাতে উঠিয়ে বাসার ভেতর যেতে থাকলেন৷ পাগল হওয়ার আর বাকি নেই কিছু! আজ ফুঁপির বকা একটাও মাটিতে পড়বে না৷ সাথে আমিরের হুমকি….! উনি পিছন ঘুরে বিরক্তির স্বরে বললেন,

–‘ গাড়িতে বসেই সব করতে চাস তুই? ওকে আমি আসছি৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে নেমে দাঁড়াতেই জুঁহি আপু কোথা থেকে এসে জড়িয়ে ধরলেন আমায়৷ আমি ভয় পেয়ে যাই৷ কাব্য ভাইয়া আবারও বিরক্ত হয়ে বললেন,

–‘ জড়িয়ে ধরার পরেও সময় পাবি গাঁধী! আমার বউকে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য ডেকেছি তোকে !এমন জড়িয়ে ধরার জন্য না৷ ‘

জুঁহি মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
–‘ ইউ স্টপ,,রোমান্টিক পোলা৷ হুটহাট বিয়ে করছিস আগে না জানিয়ে, বউকে সাজানোর সময় আমাকে মনে পড়েছে৷ ‘

কাব্য ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দরজা খুজে বাসায় প্রবেশ করতেই জুঁহি আপু গদগদ হয়ে বলল,

–‘ আ’ম,সো এক্সসাইটেড নীতু! আমার এই প্রফেশনে আসার পর আজ প্রথম কোনো বর তার বউকে সাজিয়ে দিবে সেটা দেখতে পাবো৷ হাও রোমান্টিক ইয়ার! ছবি তুলে আপলোড করে আজ ভাইরাল হয়ে যাবো ড্যাম সিউর৷ ‘

–‘ বর বউকে সাজাবে মানে? ‘ আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যায় জুঁহি আপু৷ কাব্য ভাইয়ার চাচ্চুর মেয়ে জুঁহি আপু৷ আমায় শুধু ফিসফিস করে বলল,

–‘ রোমান্টিক বোম পেয়েছিস তুই! সামলে রাখিস আমার ভাইটাকে৷ তোকে সে অনেক ভালোবাসে৷ ‘

আপুর কথা শুনে মূহুর্তেই দুনিয়া থমকে যায় আমার৷ আমাকে ভালোবাসে? সত্যি? তার মতো মানুষ ভালোবাসতে জানে বুঝি?
মনের কোণায় জানান দিলো, ‘ তার মতো আর কেও এতো ভালোবাসতে পারে না নীতু! সে যে কাব্য…কাব্যিক তার ভালোবাসা৷ ঠিক রৌদ্দুরে হঠাৎ আগমণ বৃষ্টির মতো৷ ‘
_____________________
আমার রুমের মাঝে বসে আছি তিনজনে৷ আমি রীতিমতো জুঁহি আপুর আর কাব্য ভাইয়ার ঝগড়ার জন্য হাঁপিয়ে উঠেছি৷ কারণে অকারণে ঝগড়া করছেন দুইজন৷ আমি অফ হোয়াইট কালারের গোল্ডেন পাড়ের লেহেঙ্গা পড়ে চুঁপ মেরে বসে আছি৷ লেহেঙ্গা নিশ্চয়ই কাব্য ভাইয়ার পচ্ছন্দের৷ উনার চয়েস এতো ভালো সেটা কখনো জানতাম না৷ হুট করে সব হলেও তিনি ঠিক আমার সপ্নের মতো করে সব করছেন৷ জুঁহি আপু কাব্য ভাইয়ার সাথে পেরে না উঠে আমার চোখে আইলাইনার লাগিয়ে রেগে চলে যায়৷ কাব্য ভাইয়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাঁসে! রহস্যময় হাসি৷ আমি ভয়ে বললাম,

–‘ আপনার জন্য আজ সব উল্টাপাল্টা হচ্ছে কাব্য ভাই..! জুঁহি আপুকে যেতে দিলেন কেন ?এইবার আমি সাজবো কি ভাবে? মানুষ জীবনে বিয়ে একবার করে আর আপনি…’

–‘ হুশ… তোকে একবার বিয়ে করবো কে বলেছে? হাজার হাজার বার তোকে..’

উনি তার কথা সম্পূর্ণ না করেই চুপ হয়ে গেলেন৷ তারপর এক গাল হেঁসে বললেন,

–‘ এই আইলাইনার ফাইলাইনার লাগানোর জন্যই ওই গাঁধী টাকে ডাকা৷ ‘
–‘ মানে? তাহলে আমাকে সাজাবে কে!’
–‘ কেন আমি..!’
আমি উনার কথা শুনে পিছিয়ে যাই৷ চোখেমুখে হাত দিয়ে ঢেকে বললাম,
–‘ এই একদম না! আপনি পারেন কিছু? শেষে আমাকে সত্যি ভুত লাগবে৷ ‘
উনি আমার সামনে এসে হাত সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,
–‘ ইউ ট্রাস্ট মি? ‘
তার কন্ঠে কিছু একটা ছিলো৷ আমি দুদিকে মাথা দোলালাম৷ উনি মুচকি হেসে বললেন,

–‘ তাহলে আমাকে আর জ্বালাস না প্লিজ..! আমার কাজ করতে দে৷ এইটা আমার সপ্ন৷ নিজের বউকে নিজের হাতে সাজাবো আমি৷ ‘

নিজের বউ! কথাটা শুনে আমার হার্ট অনেক জোরে বিট করে উঠলো৷ না চাইতেও ভালো লাগলো অনেক৷ উনি উঠে গিয়ে কালো গোলাপ, লাল গোলাপ, গোলাপি গোলাপ নিয়ে আসলেন সেই সাথে নাম না জানা অনেক ফুল৷ আমি দ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ উনি নিজে একমনে আমাকে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছেন৷ আমি নড়তেই বারে বারে ধমকে উঠছেন উনি৷ আমার কান্না পাচ্ছে সেই সাথে অদ্ভুদ সুখ৷ এমনটা আগে কখনো হয়েছে কারো সাথে?এমন সৌভাগ্য বুঝি আমার কঁপালেই লিখা ছিলো? উনি পিছন ঘুরতেই তার মোবাইল দিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে নেই আমি৷ আজ আমার রাজ্যের সুখ লাগছে৷ আজ মনে হচ্ছে, সেদিন কাব্য ভাইয়া আমাকে বিয়ে করে ভালো করেছিলেন৷ তা না হলে আজকের কাব্য ভাইয়া আমি পেতাম কোথায়৷ উনায় আঁকড়ে ধরে রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে!
___________________
কাব্য ভাইয়াদের বাসায় পৌছাতেই আরেক দফা ভালোলাগার ছোঁয়া মনেপ্রাণে বয়ে যায়৷ গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই বাসার সবাই হই হই করতে করতে এগিয়ে আসে৷ সেই সাথে উপর থেকে ফুলের বর্ষণ৷ ফুলের বৃষ্টি৷ আমি খুশিতে কাব্য ভাইয়ার হাত চেঁপে ধরি৷ উনিও মুচকি হাসেন৷ এতোটা সুন্দর আজকের দিনটা না হলেই পারতো৷ সব কিছু সাজানো গোছানো সপ্নের মতো৷ আর সেই সপ্ন তৈরি করেছেন কাব্য ভাইয়া৷

বাসার সবাই আমাদের দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । সিনান ভাইয়ারা চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

–‘ মামা তো পুরোই রোমান্টিকের ডিব্বা । ইশ! আমাদের একটু শিখাতে তে পারিস । এক কাজ কর ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বউ সাজানোর দায়িত্ব নিয়ে নে । ‘

কাব্য ভাইয়া সিনান ভাইয়ার পেটে গুঁতো দিয়ে বললেন,
–‘ আমি শুধু আমার বউ সাজাতে পারি হারামির দল । সব সিক্রেট ফাঁস করার অপরাধে তোকে ফাঁসিতে ঝুলাবো বিয়ের পর।’
ফুঁপি কাব্য ভাইয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,

–‘ এতো সুন্দর করে তুই সাজিয়েছিস ওকে? মাশাআল্লাহ…!কারো নজর না লাগুক আমার ছেলের বউয়ের উপর । ‘

আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম । একটু পরেই কাজি সাহেব আমার সামনে বসতেই আমি আশেপাশে তাকাই । আমির নামক অশুভ ছায়া এলো কিনা সেই ভয়ে জড়সড় হয়ে আছি । আমাকে কবুল বলতে বললে আমি চুঁপ হয়ে থাকি । কাব্য ভাইয়া আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ যে চিন্তা করছিস সেইটা বাদ দে,,,! আর বাসরের চিন্তা কর ,তাই জলদি কবুল বলে ফেল । ‘
আমি উনার কথা শুনে কবুল বলতেই ….😶
চলবে….
ভুল গুলো ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে