রাত বিকেলে প্রেমের কুঞ্জন পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
499

গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১০ ( শেষ পর্ব )

সন্ধ্যার আকাশটায় আজ আলো ফুটেছে। রাত হলেও চারদিকে আলো। হবেই না বা কেন? পূর্ণিমার রাত যে।বাড়িতে একটা টু শব্দও হচ্ছে না। সবার উপর দিয়ে যে ধকল টা গিয়েছে। পুরো শান্ত পরিবেশ। হালকা বাতাসও বইছে চারদিকটায়। বারান্দায় দাড়িয়ে আছে মধুমিতা। খোলা চুলগুলো দুলছে। বারান্দায় থাকা ড্রিম কেচার টাও দুলে দুলে হালকা আওয়াজ করছে। অনেকটা পিয়ানো বাজানোর মতো।

পাশেই দাড়িয়ে আছে সোহান। কোনো এক খেয়ালে হাড়িয়ে থাকায় কখন যে পাশে কেউ এসে দাড়িয়েছে তা দেখেই নি মধুমিতা। এইদিকে অনেকক্ষণ যাবৎ হাতে মলম নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে শেষে নিজেই গিয়ে মধুমিতার হাতটা ধরল। মধুমিতা পাশ ফিরে তাকায়। সোহানের বুকটা ধক করে উঠে। চোখে এখনও দুফোটা পানি টলটল করছে। কেদেছে হয়ত খুব। নাকটাও একদম টকটকে লাল হয়ে গিয়েছে। গোলাপী ঠোঁট দুটো বারবার কাপছে। সোহান সাথে সাথে চোখ সড়িয়ে নেয়। আর তাকানো যাবে নাহ। নয়ত এই নেশাকে আর আটকানো যাবে না। নিশ্চিত একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে সোহান আজ রাত। নিরবতা ভেঙে সোহানই বলতে লাগল।

সোহান : মলম নিয়ে এসেছিলাম। রেখে যাচ্ছি মনে করে লাগিয়ে নিও। আর কাদবে না একটুও।

এই বলে যেইনা সোহান যেতে নিবে মধুমিতা ওর হাতটা ধরে ফেলল শক্ত করে। এই প্রথম মধুমিতা নিজে থেকে সোহানকে আটকালো। সোহান আবারও ওর দিকে তাকিয়ে চোখ সড়িয়ে নেয়।

সোহান : কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো। তাড়া আছে আমার। যেতে হবে।
মধুমিতা : থেকে গেলে হয়না। খুব একা লাগছে। সব খারাপ শুধু আমার সাথেই হয় কেন? মায়েরও আজ মন ভালো নেই। কার কাছে গিয়ে কাদব আমি? একটু থেকে যাননা প্লিজ।
সোহান : কিন্তু মধু..

মধুমিতা আর কিছু না বলে হঠাৎ সোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কেন জানি এই মানুষটার প্রতি এক প্রকার অন্ধ বিশ্বাস জমে গেছে মধুমিতার মনে। সোহানের বুকে যেন মাথা রেখে তার সব দুঃখ শেষ। এইদিকে সোহান কি করবে বুঝছে না। না পারছে নিজেকে এই মেয়ের থেকে দূরে সড়াতে না পারছে পুরোপুরি নিজের করে নিতে। আর মধুমিতারও আজ কোনটা ভুল কোনটা সঠিক বুঝার অবস্থা নেই।

সোহান : মধুমিতা।
মধুমিতা : হুমম।
সোহান : এখন একটু ঘুমাও। ভালো লাগবে। যা বলার সকালে বলো। আমি এখন তোমার সাথে এভাবে থাকতে পারব নাহ।
মধুমিতা : আমার সাথে থাকেন।
সোহান : বাচ্চাদের মতো আবদার করো না। প্লিজ। তোমার অবস্থা এখন ভালো না।
মধুমিতা : একটা আবদার পূরণ করা যায়না বুঝি।
সোহান : না যায় নাহ।

সোহান নিজেকে মধুমিতার থেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে নেয়। কি যেনো ভেবে আবার ফিরে এসে মধুমিতার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। এরপর নিজের রুমে চলে যায়। আর এক মুহূর্ত থাকা যাবে না এই মেয়ের সামনে। মধুমিতাও আস্তে করে খাটে শুয়ে পড়ে।
…..

মুক্তা : মা আসব।
মরিয়ম : আয় মা। জিগ্যেস করার কি আছে। কিছু বলবি।
মুক্তা : সোহান আর মধুমিতার ব্যাপারে কিছু বলব।
মরিয়ম : জানি কি বলবি। আমি খেয়াল করেছি সব।
মুক্তা : ওরা আজকালকার ছেলেমেয়ে। যদি কিছু..
মরিয়ম : সোহানের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। ও এমন কিছু করবে না।
মুক্তা : কিন্তু মা..
মরিয়ম : কাল তোর মামা আসবে বুজলি?
মুক্তা : এর মাঝে মামা আসলো কোথা থেকে।
মরিয়ম : আসেনি। আসবে। কাল মধুমিতা আর সোহানের বিয়ে।
মুক্তা : কি? এতো তাড়াতাড়ি। আর ওদেরকেও তো বলা হয়নি।
মরিয়ম : আমি জানি ওরা একে অপরকে পছন্দ করে। রহিমা মধুমিতাকে কালকেই মানিয়ে নিবে। আর সোহানতো পুরো পাগল। এখন বললে ও এখনই রাজি।
মুক্তা : হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ?
মরিয়ম ( একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) : একবার এক সন্তানের ভালোবাসার পথে কাটা দিয়ে নিজের মতো জোড় করে অন্যজনের সাথে ঘর বেধে দিয়েছিলাম। তার ফল যে খুব তেতো হয়েছে। আর কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা।

মুক্তা দেখল তার মায়ের চোখে পানি। ঠিকই তো এসবের জন্য কিছুটা হলেও তার মা দায়ী। তার মা তার আর মিরাবের ব্যাপারটা জানত। তবে সমবয়সী হওয়ায় ব্যাপারটা তিনি মানতে চাননি। জোড় করে বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তার শাস্তি হয়ত পুরো পরিবার পাচ্ছে। সেই ভুলটা হয়ত দ্বিতীয়বার করতে চাননা মরিয়ম বেগম।

মরিয়ম : সোহান আর মধুমিতার পর তোর আর মিরাবের ব্যাপারটাও সবাইকে জানিয়ে দিস। সবাই খুশি বইকি কষ্ট পাবে না।
মুক্তা : তা দেখা যাবে।

মুক্তা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো। ঐদিকে বাড়ির বাকিরা আগে থেকেই সোহান আর মধুমিতার বিয়ে দিতে চাওয়ার ব্যাপারটা জানে। কারো কোনো আপত্তি নেই। শুধু একজন দূর আকাশে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে। নিজের ভাগ্যের প্রতি দয়া হচ্ছে ঝুমুরের। তবে অভিযোগ নেই কোনো। হয়ত এটাই ভাগ্যে ছিল। সবটা এবার হাসিমুখে মেনে নিবে সে।

…… পরেরদিন সকালে ….

মধুমিতা ঘুম থেকে উঠে দেখে বাড়িটাকে আজ অন্যরকম লাগছে। কিছু পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়রাও এসেছে। মধুমিতাকে নিয়ে ওর মা রুমে আসে। সোহান আর মধুমিতার বিয়ের ব্যাপারে সবটা জানায় ওকে।

মধুমিতা : আমার এই বিয়েতে আপত্তি নেই। কিন্তু। মা জানোইতো গতবার কি হয়েছিল। নিজের পায়ে দাড়াতে চাই আমি।
রহিমা : তাইতো সাধামাটা ভাবে বিয়েটা দিতে চাচ্ছি। আর বিয়ে উপলক্ষে ভাবছি অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের খাইয়ে দিব। আগে বলতো সোহানকে তোর কেমন মনে হয়?
মধুমিতা : একজন ব্যক্তিত্ববান পুরুষ। যার মনে হয়ত আমার প্রতি সমুদ্র সমান প্রেম আছে।
রহিমা : তোরকি মনে হয় এমন ছেলে এমন কিছু করবে যাতে তোর মত নেই?
মধুমিতা :…..
রহিমা : তুই নিশ্চিত থাক। সোহান রায়হানের মতো না।
মধুমিতা : ওর নামটা না উঠালেও পারতে। জীবনে দুই ধরনের পুরুষ দেখলাম। এক রিয়াদ,রায়হানের মতো। আরেক সোহান, মিরাবদের মতো।
রহিমা : রায়হানের অবস্থা ভালো নেই। পাপের সাজা পৃথিবীতেই পাচ্ছে।
মধুমিতা : মানে?
রহিমা : তোর মামির বোনের মেয়ের সাথে বিয়েটা হয়েছিল। কিন্তু মেয়ের নাকি চরিত্র ভালো না। অন্য কার বাচ্চা পেটে নিয়েছে। ওদের কথা বাদ। এই লাল শাড়িটা পড়ে আয়তো। একটু পর মুক্তা ওরা এসে সাজিয়ে দিয়ে যাবে তোকে।

রহিমা চলে গেল। মধুমিতা শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নিল। এটা তো সত্যি নিজের অজান্তেই সে সোহানকে ভালোবাসে। এমন প্রেমিক পুরুষকে না করাটা নিছক বোকামি। একটু পর মুক্তা ওরা এসে হালকা করে সাজিয়ে গেলো মধুমিতাকে। ঐদিকে সোহানও একটা সাদা পানজাবি পড়ে তৈরি হয়েছে । ধার্মিক রীতিতে তাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
…….

এক হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে মধুমিতা। ঐদিকে মিরাব, সিনহা ওরাতো সোহানের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তবেই ছেড়েছে ওকে। সোহান এর আগেও কতবার এই রুমে এসেছে। তবে এইবারেরটা স্পেশাল। রুমে এসে দেখে তার বউ ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। কি করবে বুঝছে না বেচারা। কাছে গিয়ে দেখে মধুমিতা ঘুমিয়ে গিয়েছে।

সোহান : আজকের রাতেও ঘুমকে ছাড়লে না।
মধুমিতা তখনও পুরো ঘুম দেয়নি। সোহানের আস্তে বলা কথাটায় সে নড়ে উঠে। পাশে সোহানকে দেখে এক লাফে খাট থেক্র নেমে পা ধরে সালাম করে নেয়।

সোহান : আরে আরেহ। পাগল হলে নাকি। কি করো?
মধুমিতা : না মানে। বড়আম্মু বলছিল করতে তাই।
সোহান : এসব করতে হবে না। আর বড়আম্মু না আজ থেকে আম্মুকে শুধু আম্মু বলেই ডাকবে। আর আমরা কি অপরিচিত নাকি যে বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো এত বড় ঘোমটা দিয়ে রাখছ। এখনকি আমাকে বাংলা সিনেমার নায়কের মতো সোফায় ঘুমাতে হবে।

মধুমিতা কি বলবে বুঝছে না। এই ছেলে সব সময় তাকে কথার জালে পেচিয়ে দেয়। সোহান বুঝে মুচকি একটা হাসি দিয়ে মধুমিতাকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়। আকষ্মিক এমন কিছু হওয়াতে ও স্টেচু হয়ে গিয়েছে।

সোহান : এখন কি বাংলা সিনেমার মতো কথাই বলব শুধু। নাকি হলিউড সিনেমার মতো কিছু করব।

মধুমিতা লজ্জায় আর কিছু বলছে না। এই ছেলে এমন ঠোটকাটা কেনো? কোনো কথা মুখে বাজে নাহ। সোহান নেশাভরা চোখে কতক্ষণ মধুমিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।

সোহান : মধু..
মধুমিতা : হুমম।
সোহান : তোমার মাঝে হাড়ানোর অনুমতি দিবা?

মধুমিতা কিছু না লাজুক মুখে চোখ বন্ধ করে আছে। আর শক্ত করে সোহানের পিঠটা ধরে আছে। সোহানও বুজলো মধুমিতার না নেই। আর তারপর…

তারপর জেনে কি করবেন? আমি বাবা সিঙ্গেল। কাপলদের বাসরঘরে উকি দেইনা। আপনারাও জান। টাটা।

~ #সমাপ্ত ~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে