রঙ বেরঙের খেলা পর্ব-০৬+০৭

0
578

#রঙ বেরঙের খেলা
#আলিশা
#পর্ব_৬+৭

ভাগ্য বুঝি সৌভাগ্য হতে যাচ্ছে সভ্যর। ফটোশুটটা দারুণ ভাবে পার হলো। সভ্যর মনোযোগ ছিল একেবারে ষোল আনাই। বেশ খুশি সকলে। ফ্যাশন মডেলটা যেহেতু প্রথম পদক্ষেপেই চমৎকার হলো। সুন্দর ভাবে ক্যামেরায় ফুটে উঠলো তার তীক্ষ্ণ, আকর্ষণীয় চোখ মুখ। তখন আর দর কমবে কি ধেই ধেই করে বেড়ে গেলো। বরং ভয়ংকর আনন্দের বিষয় অফার পাচ্ছে সভ্য এই মুহূর্তে এক ডিরেক্টর থেকে। ব্যাস্ত মাঝ বয়সী লোকটা এক খোলা মাঠেই কাজের ফাঁকে এসেছেন সভ্যর সাথে কথা বলতে। সভ্যও মাত্র ফটোশুট সমাপ্ত করেছে তিনিও মাত্র লান্সের জন্য বিরতি নিয়েছেন।

— তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। হাইট পারফেক্ট। দেহের গড়ন সুন্দর। শেষ মুহূর্তে যে ক্যামেরার সামনে হাসিটা দিলা ওটা ভুবন ভুলানো ছিল। তোমায় নিয়ে টিসিভি মডেল করতে চাই আমি।

সভ্যর বুকটা ধুকপুক করছে। সম্মুখের ব্যাস্ত মানুষটার ব্যাস্ত ভঙ্গির কথায় সে হঠাৎ দিশেহারা। যেন সবই স্বপ্ন স্বপ্ন। বেশ নাম যশের ডিরেক্টর আজগর আলী। গত পনেরো দিনে মিডিয়া জগৎ নিয়ে করা স্টাডি গুলো থেকে এটাই জানা হয়েছে। সভ্যর গলা শুকিয়ে আসছে হঠাৎ। আশ্চর্য? মাত্র তো সফলতার পথ খুঁজে পেলো। হাঁটতে হবে এখনো অনেক। এতো অপ্রস্তুত ভাব তো কিছুতেই কাম্য নয়!

— জ্বি স্যার আমি আগ্রহী।

ভেতরে চাপা উচ্ছাসের হাত পা বেঁধে রেখে সহজ গলায় বলল সভ্য। কোথাও কেউ বলেছে, সফল হওয়ার আগে একজন সফল মানুষের মতো আচরণ করা জরুরি।

— ওকে তুমি আমার এই কার্ড টা রাখো। হ্যা তোমার সাথে খুব শীঘ্রি আমার আবার যোগাযোগ হবে। ততদিনে তুমি চেঞ্জ করো নিজেকে। ফটোশুট চালিয়ে যাও।

কথাটা বলেই অস্থায়ী গড়া ছাউনির নিচ হতে উঠে পরলেন আজগর আলী। চেয়ার ছেড়ে দুপা এগিয়েই কাউকে হাঁক ছেড়ে বললেন

— রায়হান, আমাদের নিউ মডেল হতে যাচ্ছে সে। তাকে তোমার মূল্যবান জ্ঞান গুলো দান করে যাও।

সামান্য মশকরা মিশ্রিত কথা ছিল ডিরেক্টরের। সভ্য লাল, সাদা কাপড়ের বিড়াট ছাতার নিচেই বসে রইলো। একটু পর দেখা পেলো সে কাঙ্ক্ষিত রায়হানের। বয়সে সভ্যর সমবয়সী। ছেলেটা এগিয়ে এসেই মুচকি হাসি দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বসে পরলো সভ্যর বিপরীতের একটা চেয়ারে। সুদর্শন যুবকটা প্রথমেই কথা আরম্ভ করলো প্রশ্ন দিয়ে।

— নাম কি আপনার?

সভ্য ঠোঁটে চমৎকার একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল

— সাজিদ আহমেদ সভ্য।

— একদিনে ফটোশুট করতে এসেই সবার নজরে পরে গেছেন। অনেক বেশি সেনসিটিভ হয়ে কাজ করছেন?

সভ্য অপ্রস্তুত হাসলো এবার। বলে উঠলো

— ট্রাই করছি।

— ভালো ডিরেক্টরের নজরে পরেছেন। একবার যাকে ধরে তার কপাল খুলে যায়।

সভ্য কিছু বলল না। তার অস্বস্তি হচ্ছে। ছেলেটা অনিমেষ ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছে? মাঝে মাঝে পায়ের দিকেও তাকাচ্ছে। আবার কখনো মাথায়, চোখে, হাতে, গলায়, বুকে। উফ! সভ্য দরদর করে ঘেমে উঠলো। তবে এটা নিশ্চিত সে, রায়হান নামের ছেলেটা তার খুঁত ধরতে পারবে না। সভ্যর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সে ফিটফাট করেছে। জানা আছে, মডেলিং অর্থ, সবকিছু ঝকঝকে, ফিটফাট।

.
পরদিন দুপুর বেলা। সভ্য নিজের ছবি নিজে দেখলো পত্রিকায়। মনটা তার ততটা খুশি হতে পারলো না। ফটো নিয়ে মনে জরো হলো খুঁত খুঁত ভাব। মন বলে, চোখের দৃষ্টি আরো গাঢ় করা উচিত ছিল। হ্যা ঠোঁটের হাসিটা মনে হয় আরো একটু প্রশস্ত করলে চমৎকার হতো। নিজের স্বভাব বশত সে অযথাই ডুবে গেলো ডিপ্রেশনে। মুখটা শুকিয়ে গেলো। এখন একটু মা পাশে থাকলে ভালো হতো। কিন্তু তা তো হবার নয়। সে যে মাকে ছেড়ে ঢাকায় এসেছে। ভাবনার মাঝে পত্রিকা ছেড়ে সভ্য ফোন হাতে নিলো। মা’কে ফোন করার ইচ্ছে হলো। বলতে মন চাইলো মাকে

” পত্রিকায় আমি মডেল হিসেবে উঠেছি মা। দেখো তো কেমন লাগছে? আমার কাছে ভালো দেখাচ্ছে না। মনে হয় আরো সেনসেটিভ থাকা উচিত ছিল আমার। এরকম হাবভাব দিয়ে মনে হয় হিরো হওয়া যাবে না।”

কিন্তু সভ্য বলতে পারবে না। আড়ষ্টতা কাজ করবে তার মাঝে। সভ্য ফোন রেখে দিলো। এগিয়ে গেলো সে আয়নার নিকট। গতকাল রায়হান নামের ছেলেটা বলল সভ্যর মেদ বাড়ার আশঙ্কা আছে। সাবধান খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে। সফট ড্রিংকস নাকি একেবারেই খাওয়া যাবে না। সকালে শুধু ফলমূল খেয়ে নিতে হবে। সভ্যর চুলের কাটিং পাল্টাতে হবে। ফেস প্যাক লাগাতে হবে সপ্তাহে দু’বার। স্ক্রাব করতে হবে সাতদিনে একদিন। আরো অনেক অনেক কথা বলেছে ছেলেটা। মোটামুটি ধাঁচে র একটা রুটিন পড়িয়ে দিয়েছে সভ্যকে। সভ্যর দশা ওসময় ছিল রফাদফা। শুনে তার মাথা ঘুরে যায় যায় অবস্থা। তখন তার সম্মুখে যেন সাদা বড় পর্দায় ভেসে উঠেছিল এমন এক সভ্য যার মুখ ভর্তি সাদা ক্রিমে, চোখ বন্ধ শশার ছোয়ায়, গলার উপর দিয়ে তোয়ালে দেওয়া। ইশ! কি বেহাল দশা তার। মেয়েদের মতো কি অবশেষে চোখ বন্ধ করে রূপ চর্চার ধ্যানে বসতে হবে? ভাবতেই সভ্যর মুখ কুঁচকে এলো। মনে জায়গা নিলো ঝাঁক ঝাঁক অসহায়ত্ব।

এই অসহায়ত্ব যখন গাঢ় হতে যাচ্ছিলো ঠিক তখন বাঁধা দিলো সভ্যর মুঠো ফোন। আওয়াজ ছেড়ে বেজে উঠলো সে। সভ্য পায়ের পাতা অব্দি লম্বাটে ড্রেসিন হতে চলে এলো ফোনের নিকট। বিছানায় রাখা ছিল ফোন। উবু হয়ে দেখতে চাইলো সে কোন ব্যাক্তি হঠাৎ তাকে আহ্বান করলো। কিন্তু বোঝা গেলো না। আননোন নাম্বার। কুঁচকানো কপালে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করা হলো কল। কানের সান্নিধ্যে পোঁছানোর আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত বাঁক চমকে দিলো সভ্যকে।

— মডেল হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করার আগে একবার অমাবস্যার মতো চেহারার দিকে তাকানো উচিত ছিল।

বড্ড বেশিই ভারী, বড্ড বেশিই অবজ্ঞার বাক সাবিহার। সভ্য ঝট করে স্তব্ধ হয়ে গেলো। কর্ণকুহরে সাবিহার কথা পৌঁছানো মাত্র মনে হলো দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে গেলো। আবারও অপমান? গলা ধরে এলো সভ্যর। সাবিহা বলেই যাচ্ছে

— কালো শরীরে সাদা শার্ট লাগিয়েছেন। বিশ্বাস করেন সভ্য ভাই আস্ত ভুতের মতো লাগছে। আমি তো প্রথমে দেখে ভয়ই পেয়েছি। পেপার পড়াও যাবে না আজকাল দেখছি।

— সাবিহা…

শক্ত হতে গিয়ে ভেঙে গেলো গলা। সভ্য ঠোঁট কামড়ে ধরলো। আজ সহ্য হচ্ছে না। চোখ নামিয়ে দিয়েছে জল। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। হুট করে ফোন কেটে দিলো সভ্য। সাবিহা আজ এই কথাগুলো কিভাবে বলল? বিবেকে বাঁধলো না? সে কি জানে না, কানাকে কানা বলতে নেই। কষ্ট হয়। সভ্যরও অকুলান কষ্ট হচ্ছে। অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এসে বড্ড বেশি ভুল হয়ে গেছে। বিদায়ের জন্য সভ্য যেন এখন প্রহর গোণা শুরু করলো। চোখ বেয়ে কতই না জল পরছে। বুকে কি যেন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। কানে সাবিহার কথার রেশ গেঁথে আছে। সভ্য পাথর হয়ে গেলো। কাল একটা ফটোশুট আছে। মুখে ফসপ্যাক লাগানোর কথা ছিল। আরো কত কি যেন করার কথা ভেবেছিল সভ্য? সেসবের কিছুই হবে না আজ। শুধু অভিযোগ উঠবে গায়ের রং নিয়ে।

চলবে…

#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_৭

পরদিন সকালে সভ্যর ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোন কানে পৌঁছে। দু’টো ঘুমের ওষুধ গলাধঃকরণ করে অবুঝ মনকে শাসিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল সভ্য। সাবিহার অপমান নেওয়ার মতো ছিল না। তবে সভ্যর জেদ বেড়ে আকাশ ছাড়িয়ে সাত আসমানে চলে গেছে। প্রচন্ড ঘৃণা আরো প্রচন্ড হয়েছে সাবিহার উপর।

— সভ্য উঠেছিস? তুই আমাকে প্রতিদিন ভোরে ফোন করে জাগিয়ে দিতে বলেছিস বলে ফোন করলাম।

ফোন রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই মায়ের কন্ঠ। সভ্যর ঘুম ছাড়ছে না চোখ থেকে। ঘুমের ওষুধের প্রভাব আরকি! তবুও সে শোয়া থেকে উঠে বসলো। চোখ পিটপিট করলো অগণিত বার। যেন ঘুম ছাড়ে।

— থ্যাঙ্কিউ মা।

— ওয়েলকাম। এখন উঠে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে যা।

— হুম।

— আর শোন, তোর ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে বুঝেছিস? একদম নায়কদের মতোই লাগছে। ভালো করে খাওয়া দাওয়া করিস। মনোযোগ দিয়ে কাজ করবি।

মায়ের কথায় সভ্যর হঠাৎ মনে পরে গেলো গত রাতে সাবিহার বলা কথা। এই তো ঘুম পালিয়ে গেছে। দুঃখ এসে ঠেলেঠুলে সরিয়ে দিয়েছে ঘুম। সভ্য বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনিতে চলে গেলো। মাকে একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো, ” আমি কি খুব বেশি কালো মা? ” কিন্তু মনের মনের প্রশ্ন মনেই রয়ে যাবে। সে জিজ্ঞেস করতে পারবে না। কিন্তু এরই মাঝে ফারজানা বেগম হঠাৎ ফোনের ওপাশ হতে বলে উঠলেন

— সভ্য আমি আজ কি ভেবেছি জানিস? তোর জন্য শপিং -এ যাবো। দুইটা সাদা শার্ট কিনবো সুন্দর দেখে। আমি তো কাল রাতে পত্রিকা দেখার সময় অবাক। হায় আল্লাহ! আমার ছেলেকে যে সাদা শার্ট পড়লে এতে সুন্দর লাগে আগে জানতাম না। আমার কলিগও কাল রাতে ফোন করে তোর প্রশংসা করলো। ছবিগুলো সেও দেখেছে। অবশ্য তার আবার মতলব আছে। ওনার মেয়ে আছে। আগে থেকেই তোকে পছন্দ করে এখন তো আরো…..

— সাদা শার্ট পরে আমায় আরো বেশি কালো লাগেনি মা?

হঠাৎ মাকে থমকে দিয়ে কথার মাঝে সভ্য হিমায়িত কন্ঠ ছুঁড়ে দিলো। ওপাশে ফারজানা বেগমের একটু আগের উল্লাসিত কন্ঠ নিভে গেছে। সভ্য জবাবের আশায় আকাশ পানে তাকিয়ে। মা কথা বলছেন না। সভ্যর হঠাৎ চিনচিন করে উঠলো বুকটা। প্রায় পাঁচ সেকেন্ড পর সাড়া পাওয়া গেলো। মা ছেলেকে পরম আদর দিয়ে শুধালেন

— কেউ কিছু বলেছে সভ্য?

সভ্য কথা বলতে পারলো না। আসছে না মুখে কিছু। ফারজানা বেগম কি বুঝলেন কে জানে? তিনি শক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন

— গায়ের রং নিয়ে যারা খেলে সভ্য তাদের কখনো ভালো হয় না। আমার ছেলে কালো। তবে ততটাও কালো নয় যতটা কালো সাদা শার্ট পড়লে বেমানান লাগে। নিজের মধ্যে কনফিডেন্স আন। অন্যের কথায় কান দিবি না। তুই যেমন আছিস সুন্দর আছিস। আশেপাশে তাকিয়ে দেখিস তো তোর মতো ঠোঁট, নাক, চোখ আর কারো আছে কিনা? সবারই তো সবকিছু থাকে না এটাই নিয়ম।

সভ্য মায়ের কথায় মুচকি হাসলো। মনটা ঈষৎ হালকা হলো কিনা সে জানে না। তবে বিশ্বাস আসলো মনে। সে ততটাও কালো নয়। যতটা কালো মানুষকে সাদা শার্টে ভুতের মতো লাগবে। তাকে খুব জোর করে স্যামলার ঘরে ঠাঁই দেওয়া যাবে সে এমন কালো। সাবিহা তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছে।

.
সুষ্মিতা বাবার সঙ্গে এসেছে “The Beauty Hub” প্রতিষ্ঠানে। মোবারক হোসেন কথা বলছেন ডিরেক্টরের সাথে। মেয়ে তার মডেলিং শিখতে চায়। র্যাম্প (ramp) মডেল। সুষ্মিতার ছোট থেকেই ইচ্ছে সে বিখ্যাত এক র্যাম্প মডেল হবে। সুখ্যাতি ছড়িয়ে যাবে তার চারদিকে। তা বাদে একজন প্রডিউসারের মেয়ে হিসেবে তার মডেলিং নিয়ে ধ্যান ধারণা, অভিজ্ঞতা অর্জন করা একান্তই প্রয়োজন। কখনো কখনো তো দেখা যায় বাবা তাকেই পাঠিয়ে দেয় বড় বড় হিরো হিরোয়িনের সাথে মিটিং করতে। সবসময় মোবারক হোসেন বলেন, সুষ্মিতা নাকি প্রচন্ড বুদ্ধিমতী, ঠান্ড মাথার মেয়ে। তাকে দিয়ে এসব কাজ ভালো হয়। সুষ্মিতা এক দেখায় মানুষ পরখ করে ফেলে তুখোর করে। একটু হলেও চিনতে পারে, জানতে পারে মানুষের ক্যাটাগরি। কথা বলা শেষে মোবারক হোসেন মেয়েকে রেখে চলে গেলেন। সুষ্মিতা বাবাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো মহড়ার উদ্দেশ্যে। অনেক মেয়ে মহড়া দিচ্ছে। হাটাহাটি করছে ফ্যাশন শো তে যেভাবে হাঁটতে হয়। সুষ্মিতা এগিয়ে গেলো। সকলেই তাকে চেনে। একজন প্রডিউসারের মেয়েকে কে না চিনবে? তাও আবার কর্মক্ষেত্রে।

সুষ্মিতা তৈরি হচ্ছিল র্যাম্প মডেলের জন্য। কিন্তু তাকে হুট করে ডাকা হলো একটা কাপল পিকের জন্য। নতুন মডেলদের মধ্যে ভালো মেয়ে হচ্ছে না। ভালো অভিব্যাক্তি দিতে পারছে না। সুষ্মিতা চলে গেলো। সভ্য তখন তৈরি হচ্ছিল। শার্টের কলার ঠিক করছিলো আয়নায়। রুমে তখন সুষ্মিতার আগমন। সভ্য দেখেনি তাকে। কিন্তু সুষ্মিতার চোখ এড়ায়নি। সে বিস্মিত হলো সভ্যকে দেখে। প্রায় দুমিনিট লাগলো তার বিষ্ময় কেটে উঠতে। এরমাঝে সভ্য ঘুরে দাড়িয়েছে। তার চোখেও অবাকতা। কুঁচকানো কপাল আর চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। সুষ্মিতা অপ্রস্তুত হাসলো। হুট করে সে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো

— না না আমি আপনার ফোন চাইতে আসিনি। আমি মডেলিং এর জন্য এসেছি।

এ কথায় যে সভ্যর কি হেলদোল হলো তার মনে, কি ভাবলো সে সুষ্মিতা কে তা বেঝা বড় দায়। পূর্বের চাহনির কোনো হেরফের হলো না। সে সোজা সুষ্মিতাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সুষ্মিতা আবারও ধাঁধায় পরলো। মনে হলো ছেলেটার ভাবই বেশি।

.
ফটোশুট হবে একটা কাপলের। ছেলে আর মেয়ে ডিউ খাবে। একে অপরের দিকে হাসি হাসি মুখ করে। এই ছবিটা ব্যানার করা হবে। বিলবোর্ড আকারে ছাপিয়ে লাগানো থাকবে দোকানে, রাস্তার মোড়ে, বড় বড় বিল্ডিংয়ের সাথে। আগেই সতর্ক করে দিলো ডিরেক্টর। বেশ কঠিন হলো সভ্যর জন্য। একসাথে বোতল মুখের উপর নিয়ে ডিউ খেতে হবে আবার প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে কারো দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। আগের মহড়াগুলোতে দেখা গেলো সভ্যর ভালো হচ্ছে। তাল মিলছে উপরন্তু কোনো মেয়ের মিলছে না। কিন্তু সুষ্মিতার মহড়া দেখে তালগোল পাকিয়ে গেছে। এবার সুষ্মিতা সভ্যর চেয়ে ভালো করছে তার পূর্বের অভিজ্ঞতা দিয়ে। সভ্য প্রচুর চেষ্টা করছে। গত এক ‘ঘন্টা হলো রিহার্সাল নিয়েই যাচ্ছে। সব ঠিক হলেও চোখে প্রেম প্রেম ভাবটা আসছে না। কি মুসিবত! সভ্য বিরক্ত হলো নিজের প্রতি। অবশেষে একটু বিশ্রামের জন্য বসলো। সুষ্মিতা তার সাথেই ছিলো। ভাবসাব বুঝে সে আড়ষ্টতা নিয়ে একসময় সভ্যর পাশে বসে পরলো। সভ্যর দৃষ্টি নিচের দিকে ছিলো। গায়ে তার নীল রাঙা শার্ট। মগ্ন কোনো অজানা চিন্তায়। বেশ লাগছে। সুষ্মিতার বুকটা হুট করে ধ্বক করে উঠলো। আচমকা বুকের মাঝে শুরু হলো অচেনা এক ধুকপুক ধুকপুক সুর। সভ্য যে নতুন মডেল তা সুষ্মিতা জেনে গেছে। কাজের ধারা দেখেও বুঝেছিল। তার ইচ্ছে হচ্ছে সভ্যকে একটু সাহস দেওয়ার। হয়তো সে ভেঙে যাচ্ছে শট নিয়ে। মানুষিক চাপ সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা এখনো সভ্যর হয়নি। সাপোর্ট দরকার। কিন্তু সুষ্মিতা দিতে পারছে না। একটা বাঁধা। তার আত্মসম্মান।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে