রঙধনু পর্ব সাত (Season 02)

0
1922

রঙধনু?

দ্বিতীয়বার

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব সাত

?

দুইদিন পর,

সকাল থেকে ফাজ ম্যানশন খুব জোরসে পুরা বাড়ি সাজানো হয়েছে,আর অনেক মানুষ কাজ করছে..মোহ জানালা দিয়ে দেখছে,এতো সাজ আর এতো মানুষ কখনো দেখে নাই সে..সকাল সকাল ওমন ঘটনার পর থেকে মোহ ঘর থেকে আসে নাই,তার মনে এটাও চলছে তার এখানে থাকা ঠিক হবে না..যদি উনার ক্ষতি করে দেয় বা এই পরিবারের..এই পরিবারে সে সবরকম আদর ভালোবাসা পেয়েছে এখন তার কারনে যদি এইসব মানুষদের ক্ষতি হয়ে যায়, এটা ত সে চায় না..ফারিশের মুখের সামনেও সে আসে নি, তার প্রচন্ডভাবে নিজের উপর ঘেন্না আসছে এই ভেবে যে নিজের ভালো দেখতে যেয়ে সে এই ফ্যামিলির ক্ষতি করতে পারে না।।

মোহ আর সাত পাঁচ না ভেবে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সবার আড়ালে,উদ্দেশ্য তার রেলস্টেশনে যাওয়ার।।

মোহ যে কাপড়ে ছিলো সে কাপড়ে বের হয়ে গিয়েছে।।

এদিকে ফারিহাকে ঘরে পাঠিয়েছে এভ্রিল যে মোহকে রেডি করিয়ে দিতে সন্ধ্যার জন্য..দুজন একসাথে রেডি হবে আর আলোচনাও করবে।।

ফারিশ ও মোহর সামনে আসে নি এই ভেবে যে হয়তো শকে আছে,এই পরিস্থিতি বা তাকে মেনে নিতে সময় প্রয়োজন এইজন্য..কিন্তু কে জানতো মোহ অন্য প্ল্যান করে বসে আছে।।

ফারিহা ঘরে এসে বসে আছে আর মোহ কে খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না,আধাঘন্টা ধরে খুজে যাচ্ছে সে কিন্তু মোহর কোন দেখা নাই।।

নিচে যেয়ে নার্ভাস হয়ে এভ্রিলকে জানালে সে তাৎক্ষণিকভাবে সুলেমানকে ইনফর্ম করে।।

সুলেমান ফারিশকে জানানোর আগে নিজে একবার খুজে দেখার ট্রাই করলো কিন্তু কোন হদিশ নেয় মোহর..সবার মুখে অন্ধকার নেমে আসছে,ফারিশ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সবার দিকে যে কি হলো।।

“ভাইয়া ভাবীকে পাওয়া যাচ্ছে না” ফারিহা ভয়ে ভয়ে জানালো।।

“পাওয়া যাচ্ছে না মানে?কোথায় যাবে সে??” পাল্টা প্রশ্ন ফারিশের।।

“জানি না ভাইয়া..এক ঘনটা ধরে আমি আর মা,বাবা খুজছি” ফারিহার উত্তর।।

“এক ঘন্টা ধরে খুজছিস আর এখন জানাচ্ছিস আমায়?” চিল্লিয়ে বলছে ফারিশ

“শান্ত হ??এইভাবে না চিল্লিয়ে খুজি কোথায় গেলো মেয়েটা” এভ্রিল চিন্তিত সুরে বললো।।

“ওকে যদি কেও নিয়ে যায় তাকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো!!আর ও যদি স্বইচ্ছায় যেতে চায় তাহলে ওর কি হাল করবো আমি নিজেও জানি না” ফারিশ রেগে কথাগুলো বলে উপরে গেলো।।

এভ্রিলের ভেতর ধুক করে উঠলো,কারন সে জানে তার ছেলে রাগলে কতটা হিংস্র হয়ে যায়।।

ফারিশ মোহর রুমে গেলো,যেয়ে নিজের মাথার চুলগুলোকে মুঠ ধরে আছে,চোখগুলো রক্তিম বর্ন হয়ে আছে।।

“হুয়াই ড্যাম ইট??” ফারিশ সোফায় লাথি দিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো।।

ফোন বের করে গার্ডকে কল দিলো,”এই দেড় ঘন্টার সকল ফুটেজ আমি দেখতে চাই, এখুনি আমার সামনে”।।

গার্ড ফুটেজ নিয়ে ফারিশের সামনে আসলো..ফুটেজ যখন ল্যাপটপে চেক করলো..কিছুক্ষন বাদেই দেখতে পেলো,একটা মেয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে,কাজের লোকদের সাথে হাড়ি হাতে ধরে বেরিয়ে গেলো।।

আরেকটু জুম করে দেখলে ফারিশের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,কারন মোহর ডান হাতে দুইটা তিল আছে একটু গ্যাপ রেখে..হাড়ি তুলার সময় ওড়নাটা সরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে তিল স্পষ্ট।।

ল্যাপটপটাকে একটা আছাড়া দিয়ে গুড়িয়ে দিলো..সাথে সাথে ফোন বের করে কল দিলো তার পারসোনাল গার্ড কে।।

“লোকা,প্রাইভেট আর যত রেলস্টেশন, বাসস্টেশন আছে সব অফ করা হোক..দরকার পরলে টাকা দাও,আটকাও কিন্তু কোনকিছু যেন না চলে..আর তোমার কাছে একটা ছবি পাঠাচ্ছি লোকদের সেট করো জানাও ২০মিনিটের মাঝে এই কোথায়” অনেকটা শক্ত করে জবাব দিলো ফারিশ।

অপরপক্ষে কিছু জবাব শুনার আগেই ফোন কেটে দিলো সে।।

“হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান,ইট উইল বি ভেরি হেভি ফর ইউ সুন বেবি…ইউ উইল রিগ্রেট ফর টুডে,এন্ড হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান” ফারিশ বাকাভাবে বললো।।

২৫মিনিট পর,

ফারিশ মোহর রুমে ছিলো..কলের অপেক্ষা করছে সে মাথায় দুই আঙ্গুল ভর দিয়ে।।

কল বাজছে,ফারিশ ফোন পিক করলো।।

“এনি নিউজ?” ফারিশ জিজ্ঞেস করলো।।

“………….”

“ওকে আ’ম কামিং ইন ফাইভ মিনিটস” ফারিশ জবাব দিলো।।

ফারিশ নিচে নেমে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পরলো আর তার মাকে জানালো আজকের পার্টি ক্যান্সেল করতে,আজকের পার্টি কখন হবে ডেট জানিয়ে দিবে প্রেস কে জানিয়ে দিতে বললো।।

“কোথায় যাচ্ছিস তুই?” সুলেমান জিজ্ঞেস করে।।

“পাখিকে খাচায় বন্দি করতে” ফারিশ জবাব দিয়ে গাড়ি নিয়ে টান দিলো তার গন্তব্যে।।

রেলস্টেশন,

মোহ অপেক্ষা করছে ট্রেনের কিন্তু পাচ্ছে না,আশেপাশে অনেক মানুষ কিন্তু টিকেট নাকি কাটা বন্ধ দিয়ে দিয়েছে..হুট করে কি হলো যে বন্ধ দিয়ে দিলো??

চোখের সামনে একটা লোকাল বাস দেখতে পেলো মোহ,হাতে নিজের পার্স টা নিয়ে এগোলো বাসের দিকে..যখনি বাসে উঠতে যাবে,কেও হ্যাচকা টান দিয়ে সজোরে গালে এক থাপ্পড় দিলো..মোহ থাপ্পড় খেয়ে নিচে ছিটকে পরলো..আশেপাশের মানুষ হা হয়ে তাকিয়ে আছে এইটা দেখে।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

ফারিশকে তার গার্ড ফোন করে জানালো যে, উনি যে ছবি পাঠিয়েছেন সেই মেয়েটি কমলাপুর রেলস্টেশনে বসে আছে বেঞ্চের উপর।।

বর্তমান,

ফারিশ সেইটা শুনে এসে মোহর কাছে আসে..মোহ গালে হাত দিয়ে,টলমল চোখে ফারিশের দিকে তাকালে ফারিশের লাল চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায় সে।।

ফারিশ মোহকে তুলে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়,উস্কুখুস্কু চুলে ফারিশকে কেমন বিদধস্ত লাগছে..ফারিশ নিজের গাড়ির দরজা খুলে মোহকে ধাক্কা দিয়ে সিটে বসালো,সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো,ঘুরে এসে নিজেও গাড়িত্ব বসলো..মোহ থরথর করে কাঁপছে,ফারিশের এমন ভয়ংকর রুপ দেখে।।

ফারিশ খুব জোরে ড্রাইভ করছে,মোহ ভয়ে কিছু বলতে পারছে না..হাত দিয়ে চোখের পানি মুছেই যাচ্ছে।।

ফারিশ আধাঘন্টা পর ড্রাইভ করতে করতে একটা ফার্ম হাউসে আসলো..মোহকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ওই ফার্মহাউসের ভিতর।।

একটা রুমে যেয়ে ফারিশ মোহকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলো..মোহ কব্জিতে ব্যাথা পেলেও টু শব্দ করলো তার জান শুকিয়ে যাচ্ছে ফারিশের এমন আচরণে..কারন ফারিশের এমন রুপের সাথে সে পরিচিত নয়।।

“খুব শখ না উদারতা দেখানোর??খুব শখ দূরে যাওয়ার??খুব শখ আমার সেদিনের কথাগুলোর অবাধ্য হওয়ার??সব শখ মিটাচ্ছি তোর আমি” চিল্লিয়ে কথাগুলো বলছে ফারিশ।।

ফারিশের এমন চিল্লানিতে মোহর ভিতর মনে হচ্ছে কে খামচে ধরে আছে,আর কান ভৌ ভৌ করছে তার।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে