রং বদল পর্ব-০১

0
7612

#রং_বদল
#IH_Iman_Haque
#সূচনা_পর্ব

প্রথম মাসে পিরিয়ড মিচ হওয়ার পরে,দ্বিতীয় মাসে জান্নাতুন এর বিয়ে হয়ে যায়।বাসর রাতে পিরিয়ড হবে জান্নাতুন এটা ভাবতে পারে নিই কখনো। পিরিয়ডের রক্তের দাগ অল্প অল্প বিছানার চাদরে ভরেছে কিছু কিছু জায়গায় ।আমি এটা ভেবেই পাচ্ছি না , আজকে তো আমার পিরিয়ড হওয়ার ডেট ছিলো না,কিন্তু কেমন করে ডেট মিচ হলো বুঝতে পারতেছি।এটা আমার প্রায় হয় প্রথম মাসে পিরিয়ড মিচ হয়ে থাকে।এটা কখনো মাকে খুলে বলতে পারি নি লজ্জায়?মানুষের থেকে শুনেছিলাম যে,একটা মেয়ের শারীরিক কোন সমস‍্যা থাকলে নাকি মাসে মাসে পিরিয়ড হয় না,এক দুইমাস পরেও হয়ে থাকে।এই বিষয় নিয়ে কখনো পরিবারে কারো কাছে শেয়ার করি নি। এখানে নতুন জায়গায় এসেছি,নতুন পরিবেশে বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম ।কাউকে ডেকে বলতেও লজ্জা পাচ্ছি,কি বলবো আমার পিরিয়ড হয়েছে, আমাকে একটা প‍্যাড দেন?নিজের মাকে কখনো বলতে পারি নি আর এখানে নতুন জায়গায় নতুন মানুষ।এদিকে আবার ভয়ও হচ্ছে আমার স্বামী দেখলে কি ভাববে?এই রকম পরিস্থিতিতে আমি কখনো পড়িনি ।এদিকে পড়নের লাল শাড়ি টাও একটু একটু ভিজে গেছে।কি করবো ভেবে পাচ্ছি না?

ও আপনাদের পরিচয়টা দিয়ে দেই এর ফাঁকে আমার স্বামী আসার আগে,আমি হচ্ছি নূরে জান্নাতুন।বাবা-মার একমাত্র মেয়ে আমি।আজকে পরিবারে পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে আমার।ছেলে নাকি ভালো সেইজন‍্য বাবা-মা জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিলো আর আমার স্বামীর নাম ঈমান হক।বর্তমানে নাকি ওনার বাবার ব‍্যবসা সামলায় শুধু এতোটুকু যানি তাছাড়া ওনার সম্পর্কে আর বেশি কিছু জানি না?ধীরে ধীরে সব পরিচয় পেয়ে যাবেন গল্পের মাধ‍্যমে।আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে দেখতেছি দরজা খুলে কেউ আসতেছে।দরজা খুলার শব্দ শুনে বুকটা ধক করে উঠলো,মনে হয় ওনি চলে এসেছেন।দরজা খুলে কে আসতেছে তা দেখে,ভয়ে আর লজ্জা মাথা উঠে দেখতে পারতেছি না, কে রুমে আসতেছে।একটু পরে কে যেনো আমাকে সালাম দিচ্ছে,

আসসালামু-আলাইকুম।

ওলাইকুমসালাম (আমি গলার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারছি এটা আমার স্বামী ঈমান।ওনার কথা শুনে ভয়ে আমি আরো জড় হয়ে চূপটি করে বসে আছি। )

কি বেপার জান্নাতুন তুমি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো কেনো বুঝতেছি না?শুনেছিলাম বাসর রাতে নাকি স্ত্রী তার স্বামীর পা ধরে সালাম করে কিন্তু তুমি আমার পা ধরে কি সালাম করবে তার চেয়ে আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো কারন টা কি?

চূপ করে আছি কারন বাসর রাতে স্বামীর পা ধরে স্ত্রী সালাম করে এটা হচ্ছে সমাজের রিতি-নিতী।কিন্তু আমি তো লজ্জায় বিছানা থেকে নামতেই পারতেছি না,আমি এখান থেকে উঠলেই ওনি বুঝতে পারবে আমার কি হয়েছে তখন আমি আরো লজ্জায় মরে যাবো তাই ওনি কি বলে বলুক কিন্তু আমি বিছানা থেকে উঠে ওনাকে সালাম করবো না কখনো।

তুমি তো দেখতেছি একটা বেয়াদব মেয়ে আমি এতোক্ষন ধরে একায় কথা বলতেছি আর ওনি চূপ করে বিছায় বসে আছে।আচ্ছা সালাম করো নাই এটা কোন সমস‍্যা নেই,কারন তুমি ছোট মানুষ তাই ভূল হতেই পারে।এখন ভালো মেয়ের মতো বিছানা থেকে নেমে আসো তারপর দুইজনে মিলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বো তারপর আমাদের সংসার জীবন শুরু করবো।

এবার তো আরো ঝামেলায় পড়ে গেলাম,এই অবস্হায় তো কখনো নামাজ পড়া যাবে না।নবি (সা:) বলেছেন মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ইবাদত করতে নিষেদ করেছে।তাহলে আমি কিভাবে এই অবস্হায় ওনা সাথে নামাজ পড়ি।

আচ্ছা তোমার হয়েছেটা কি আমাকে একটু খুলে বলবে?নাকি আমাকে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।এই রকম হলে আমাকে বলতে পারো কোন সমস‍্যা নাই (এই কথা বলে জান্নাতুন এর পাশে বিছানায় গিয়ে বসলাম )

আপনি আমার কাছে আসবেন না।

এটা আবার কেমন কথা।কেনো তোমার কাছে যাবো না,তুমি আমার স্ত্রী আমি তোমার স্বামী!তোমার কাছে যাওয়া আমরা সম্পন্ন অধিকার আছে।

আমি জানি আপনার আমার উপরে সম্পন্ন অধিকার আছে কিন্তু আমার কাছে প্লিজ আসবেন না আপনি?

আরে সমস‍্যাটা কি আমাকে একটু বলবে আমার কিন্তু মাথায় রাগ উঠে যাচ্ছে?হঠাৎ করে বিছানায় কিছু দাগ দেখতে পেলাম।এগুলো আবার কিসের দাগ,দেখে তো মনে হচ্ছে রক্তের দাগ।রক্ত আসলো কই থেকে।এই জান্নাতুন বিছানায় রক্ত আসলো কই থেকে!

এতোক্ষন ধরে যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হলো এখন কি বলবো ওনাকে?

আচ্ছা তুমি আবার হাত কাঠছো নাকি দেখি তোমার হাতদুটো।অনেক মেয়ে আছে বাসর রাতে স্বামী কে বলে আপনাকে মেনে নিতে পারবো না,আমার bfআছে যদি জোড় করে স্ত্রীর অধিকার নিতে চান তাহলে আমি এই চাকু দিয়ে হাত কেটে ফেলবো এমন ডাইলোক হাজারো মেয়ে দেয়, তেমন কি তোমারো কাহিনী নাকি?
দেখি তোমার হাত দুটো,

তারপর ওনি আমার হাত দুটো নিয়ে খুটি খুটি দেখতেছে কোথাও হাত কেটেছি নাকি।হাত না কাটলে কেমনে ওনি পাবেন।

কই দুই হাত তো ভালো করেই দেখলাম কোথাও কাটার চিহ্ন দেখতে পেলাম না।তুমি সত‍্যি করে বলো তো এই রক্তগুলো কই থেকে আসলো?

এবার বলা ছাড়া কোন উপাই পাচ্ছি না।তাই বলেই দিলাম যে আমার পিরিয়ড হয়েছে।

এই সাধারন বিষয় টা বলতেও এতো লজ্জা।বিশ্বের সব মানুষ এই বিষয়ে একটু হলেও ধারোনা আছেই।আমাকে প্রথমে বললেও তো হতো, তাহলে এতো কথা শুনতে হতো না।শরমের জিনিস হলে তো শরম লাগবে নাকি।

নিজের মাকে কখনো ভালোভাবে বলতে পারি নাই আর আপনার সাথে কিছুদিনের সম্পর্ক তৈরি হলো তাহলে কেমন করে আপনাকে বলবো আমার বাসর রাতে পিরিয়ড হয়েছে।

তাহলে বিছানায় এগুলো তোমার পিরিয়ডের রক্তের দাগ।

বুঝতেই যখন পারছেন তখন বার বার লজ্জায় ফেলতেছেন কেনো।যদি ছেলেদের পিরিয়ড আল্লাহ্ দিতো তাহলে ঠিকে বুঝতো মেয়েদের পিরিয়ড হলে কতো কষ্ট হয় বুঝলেন।

আমি কি তোমাকে বলেছি পিরিয়ড হলে মেয়েদের কষ্ট হয় না, হ‍্যা?আমি আমার বোনকে দেখেছি পিরিয়ড হলে কেমন কষ্ট হয়।

আপনার বোনের পিরিয়ড হলে কি আপনাকে বলে?আপনার লজ্জা করে না।

হুম এটা তো আমার পরিবারের সবাই জানে।আর তুমি লজ্জার কথা বলতেছো এটা আমার ভিতরে নাই বললেই চলে।ছোট থেকে ভাই বোন এক সাথে বড় হয়েছি একদম দেখলে বলবে আমরা দুইজনে বন্ধু কিন্তু আমরা ভাই বোন কেউ সহজে বুঝতে পারবে না।আমরা সব সময় বন্ধুর মতো ফ্রি,আমরা দুই জনে দুইজনার কষ্টের বিষয় গুলো শেয়ার করি,সেই ক্ষেত্রে আমি ওর সব বিষয়ে জানি এবং ও আমার।আর একটা হাস‍্যকর কাহিনী হচ্ছে ওর পিরিয়েডের প‍্যাড আমি কিনে এনে দেই।

প্রতিটা মেয়েদের পিরিয়ডের বেপারে পরিবারের লোকজনের জানা দরকার।কারন কখন কোন সমস‍্যা হয় সেটা একটা পরিবারে সদস‍্যই দেখবে।তোমার মতো হাজারো মেয়ে লজ্জায় মাকেউ বলতে পারে না পিরিয়ডের বেপারে কিন্তু ইসলাম বলে এখানে লজ্জার কিছুই নেই,তোমার পিরিয়ডের বেপারে তোমার পরিবার জানুক।

আপনি তো দেখতেছি মেয়েদের বেপারে অনেক কিছু জানেন।আর কতো কি জানেন মেয়েদের বেপারে একমাত্র আল্লাহ্ আর আপনি ভালো জানেন।

এগুলো বাদ দেও এটা বলো তোমার কি প‍্যাড লাগবে?

এতো রাতে আপনি প‍্যাড কই পাবেন।এখন তো প্রায় এগারো টা বাজতেছে দোকানো খোলা পাবেন না,তাই আপনাকে কোথাও যেথে হবে না এতো রাতে।আজকে রাতটা কোন মতে পার করতে পারবো সমস‍্যা নাই কালকে এনে দিলেই হবে।

দোকানে যেথে হবে না,দেখি এশার কাছে যাই ওর কাছে থাকতে পারে কারন ওকে একবারে বেশি করে প‍্যাড এনে দেই তো।(এশা আমার ছোট বোনের নাম)

এতো রাতে এশার কাছে যাবেন।যদি বলে কি করবেন আপনি?

কেনো তোমার কথা বলবো!

আপনি কি লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছেন নাকি, হ‍্যা?মুখে কিছুই আটকে না।

লজ্জার বিষয় না,দেখে লজ্জা পাচ্ছি না।এখন তুমি বাথরুমে গিয়ে এই ভারি শাড়ি,গহনা ইত‍্যাদি যা বিরক্ত লাগে সব খুলে এসো আমি এশার থেকে প‍্যাড আনতেছি।

আপনাকে কোথাও যেথে হবে না,আপনি এখানে বসে থাকুন আমি ফ্রেস হয়ে আসতেছি।

তুমি ফ্রেস হয়ে এসে অপেক্ষা করো এই যাবো আর আসবো।

ধূর কি এক জেদি লোক যেটা বলে ওটাই করে,আমার কথা একটুও শুনলো না?ধূর ভালো লাগে না,যাই বাথরুম ফ্রেস হয়ে আসি এগুলো বিরক্তকর জিনিস কেনো যে এতো ভারি ভারি জিনিস বিয়ের বউকে পড়ানো হয়।

#চলবে,,,,,?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে