রংধনু পর্ব ২

0
1810

রঙধনু?

তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)

পর্ব দুই

?

কিচেনে এক ধ্যানে শাশুড়ির জন্য চিকেন ভুনা করছে মোহ..আজ এভ্রিলের হসপিটালের নাইট আছে..মোহ প্রতিদিন কিছু না কিছু রান্না করে ফেলে সবার জন্য..এভ্রিল মোহকে নিজ হাতে সব শিখিয়েছে রান্নার ব্যাপারটা.. সে যেন পিছিয়ে না থাকে কোনকিছু থেকে..মোহকে তিনি কত ভালোবাসেন যে মোহর মনেই হয় না সে এতিম।।

টিফিন ক্যারিয়ারে সব খাবার প্যাক করে ড্রাইভার কে দিয়ে গাড়িতে রেখে দিলো মোহ..

“তোর কি লাগবে মা এইবার??” সুলেমান জিজ্ঞেস করলো চা খেতে খেতে মোহকে

“না বাবা কিছু লাগবে না ত..সব ত দিচ্ছো ই” মোহ শান্ত স্বভাবে বলে উঠলো

“ওই ত কিছু চাইতে জানে কি??আমি ঠেলে ঠেলে ওকে জিনিস কিনে দি” ফারিহা চিপস চিবুতে চিবুতে বললো

এভ্রিল উপর থেকে নামছে এপ্রোন পরে,চা খেয়ে বেরিয়ে পরবে..এভ্রিল নিচে আসাতে মোহ চা দিলো..

দীদাও হজ্জে গেছে এইজন্য বাসাটা আরো বেশি ফাকা ফাকা লাগছে এই কয়দিন..

“নতুন সেমিস্টারের বই আর লাগবে তোর?” এভ্রিল চায়ে চুমুক দিয়ে বলে উঠলো

“না মা সব ত সেদিনই কিনে দিলা তুমি” মোহ বলে উঠলো

এভ্রিল মোহকে পরিষ্কার বলে দিয়েছে তাকে মা ভাবলে তাকে তুমি করে ডাকতে হবে,যেমন তাকে সে নিজের মেয়ে ভাবে..

“আসলে ফারিশের কোম্পানি আবারো হিট খেয়েছে..গ্র‍্যান্ড পার্টি দিচ্ছে আমেরিকায়.. ফ্যামিলিকে দেখতে চায়” আমতা আমতা করে বলে উঠলো সুলেমান

কারন সে জানে ফারিশের নাম উঠলে মোহ অনেক কষ্ট পায়..ফারিশের ছবি যেন দেখতে না পায় এইজন্য এভ্রিল সব সরিয়ে রেখেছে..তবুও মোহ একটা ছবি কেমনে পেয়ে গেছে ওইটাই দেখে সারাক্ষণ.. ফারিশের রুমেও মোহকে এভ্রিল রাখে না কারন সে চায় না ফারিশের এমন ফেলে চলে যাওয়া কোন খারাপ স্মৃতি মোহকে তাড়া দিক..ফারিহার সাথে মোহ ঘুমায়..

এভ্রিল কিছু বলছে চুপচাপ চায়ের দিকে মনোযোগ.. ফারিহার ও চিপ্স খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে..মোহ লিভিং রুম ছেড়ে চলে গেলো কিচেনে..

“কিছু বললা না” কোনমতে বললো সুলেমান

“ত?” এভ্রিল চোখ না তুলেই বললো

“না মানে বলছিলাম আমারো ত বিজনেসের কাজে যাওয়া লাগে মাঝেমধ্যে ” তাই আর কি সুলেমান বললো

“আমার হাসপাতালের ডিউটি ছেড়ে এরকম সো কলড জায়গাতে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই??” এভ্রিল কথাটা বলেই বের হয়ে গেলো

মোহ আড়াল থেকে সব শুনলো কিন্তু কিছু বললো না,নিঃশব্দে চোখের জল ফেললো..সে ত জানে তার জন্য তাদের ছেলের ঘরে না ফেরা কারন..সে ত অনেকবার চলে যেতে চেয়েছে কিন্তু এভ্রিল কসম দিয়ে রাখছে যদি সে যায় তার মরা মুখ ও কখনো সে দেখতে পাবে না…এই পরিবারের প্রতিটা সদস্যই তার কাছে প্রিয় কারন প্রতিটা মানুষ তাকে অসম্ভব ভালোবাসে..

মোহর মাথার তেল থেকে হাতের আইফোন পায়ের স্যান্ডেল সব এভ্রিল করে দেয় কিছু বলতে হয় না তাকে..মোহর এইভাবে তিন বছর ধরে দেখে আসছে অনেকেই, অনেক ফ্যামিলি মোহকে বাড়ির বউ করার উঠে পরে লেগেছিলো কিন্তু সুলেমান অনেক বড় পলিটিশিয়ান+বিজনেসম্যান.. তাদের ফ্যামিলি প্লট স্ট্রং থাকার জন্য আরো চাহিদা আসতো,যারা প্রপোজাল দিতো তারাও রিচ ফ্যামিলি থেকে বিলং করতো কিন্তু বিয়ের প্রপোজাল আসলে মোহর চোখভর্তি পানি থাকতো..সে ত তার স্বামীকে ভালোবাসে যতই সে তাকে ফেলে চলে যাক..তার বুকে এক সমুদ্র ভালোবাসা শুধু না দেখা ওই ফারিশের জন্য..

ফারিশ যদি একটাবার জানতো যে তার বউ কত অপ্সরী..একটাবার পিছন ফিরে তাকাতো তার বউ রঙধনুর মতো সুন্দর..একটা জলজ্যান্ত পুতুলকে সে যদি দেখতে পারতো তার বাসর রাতে খাটের মাঝখানে বসে তার জন্যই অপেক্ষার প্রহর গুনছে..

ফারিহাকে ধরে মোহ কত হিচকি তুলে কেদেছে..সাথে ফারিহাও কেদেছে ছোট হলেও মোহর সব কান্নার সাক্ষী ফারিহা,এভ্রিলের সামনে মোহ কাদতে পারে না কারন জানে সে কাদলে এভ্রিল নিজেকে এমনিতে অপরাধী ভাবে আরো ভাববে কাদা মুখ দেখে..ফারিহা ছোট হলে মোহকে সে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসে..মোহর কষ্ট দেখে সেও একসময় কথা বলা বন্ধ করে দেয় তার ভাইয়ের সাথে

কিন্তু মোহ বলে,

“আমার জন্য তোমরা কথা বলা বন্ধ করলে আমি মরে যাবো কারন উনার না হয় মনে নাই তার জীবনে কোন নারীর সাথে বিয়ে হয়েছিলো,খোজ নেয়া ত দূরেই থাক..আমি ত জানি আমি বিবাহিত তোমাদের মাধ্যমে খোজ পাই আমি আর তোমরাও যদি কথা না বলো”

এইসব ভাবতে ভাবতে মোহ ক্লান্ত শরীরের পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে..

ফারিহা আর সুলেমান চুপচাপ বসে আছে তারা আসলে এই পরস্থিতি দেখে অভ্যাস কিন্তু আজকের টা ঘোলাটে হয়ে গেছে বেশি.

“বাবা এইভাবে চলবে না..কিছু একটা করতেই হবে এইবার” ফারিহা বললো

“কি করবি??দেখলিনা তোর মা কিভাবে চলে গেলো??সুলেমান গালে হাত দিয়ে বললো

” আমার বার্থডে কয়দিন পর..ভাইকে আমি ডাকবোই বাংলাদেশে যে করেই হোক..ভাবীর সাথে দেখা হোক ত,যদি ভাবী দেখে ভাইয়া একবারের জন্য হলেও ভালোবাসে??” ফারিহা বসে বললো

“কিন্তু ফারিশ কি আসবে??ওই ত কখনো বিয়ে নামক কোন কিছু জড়াতে চায় না বলে এস.এস.সি র পর বাহিরে জোর করে চলে গেছে” সুলেমান বলে উঠলো

“ভাই আমার কোন কথা ফেলতে পারে না..এইবার জোর করবোই..ভাবীকে এইভাবে দেখতে পারছি না আমি..ভাবী ভাইকে অনেক ভালোবাসে বাবা..এমন পুতুলের মতো বউ ফেলে কেমনে যায়??ফারিহা জিজ্ঞাসু ভাবে বললো

” যা পারিস কর..মোহর জন্য আমি তিন বছর ধরে ওর চোখে চোখ রেখে সঠিকভাবে তাকাতে পারি না..নিজের মেয়ে মনে করি আমি ওকে..হেল্প লাগলে জানাবি”বলে সুলেমান চলে গেলো..

ফারিহা এইসব সিরিয়াস মুডে এসে প্ল্যান করতে লাগলো..এইবার যে করেই হোক প্ল্যান সাকসেস করতে হবে..

এভ্রিল ওয়ার্ডের ভিজিট শেষ করে ডিনার করতে কেবিনে আসলো..টিফিন ক্যারিয়ার খুলে নিজের পছন্দ দেখে মুচকি হাসলো..সে জানে মোহ ফেভারিট কিছু বানিয়ে দেয় যখন নাইট ডিউটি শুরু হয় তার..

ফারিশের কথা মনে পরলো এভ্রিলের..ছেলের সাথে কথা না বলে এই তিন বছর ধরে তিনি নিজেকে খুব কষ্টে সামলেছে..কোন মা চায় তার সন্তান তার কাছে আসুক??

কিন্তু মোহর দিকে তাকালে আর ইচ্ছা জাগে না..ফারিহা আর ফারিশ দুই সন্তান তার..ফারিহা অহংকার সবার সাথে দেখালেও মোহর কাছে একদম পানি সে,আর ফারিশ তার নিজের রুপ স্ট্যাটাস, গেট আপ,এটিটিউড সবকিছু ছোটবেলা থেকে অহংকার করে…ইচ্ছা হইলে কথা বলবে না হইলে না,..এভ্রিলের ননদ তার মেয়ের সাথে ফারিশের বিয়ে দেয়ার জন্য এখনো প্রস্তুত..মোহ তার চোখের বিষ..উনি আসলে এভ্রিল মোহকে ধর থেকে বের হতে দেয় না..

এভ্রিলে মা নেয়.. মোহর আচার আচরণ তাকে মা ভাবে এভ্রিল..এভ্রিলের এতো যত্ন নেয় সে..

সকালবেলা,

বিছানার উপর চিত হয়ে শুয়ে আছে ফারিহা..চিন্তা করছে অনেকক্ষন যাবত..ভাবছে কল দিবে কি না তার ভাইকে..কিছু না ভাইবাই কল দিলো,ভিডিও কল দিলো..

ফারিশ বেডে তখন উপুত হয়ে শুয়ে আছে,ড্রিংকসের নেশা এখনো ছুটে নাই.কল আসাতে দেখলো তার প্রানপ্রিয় বোন কল করছে..রিসিভ করে বলে উঠলো,

“এতো সকালে ফোন দিছোস??ফারিশ ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো..

” ভাই সকাল এটা??বেলা ১২টা বাজে অলরেডি”ফারিহা বললো

“আই নিড টু স্লিপ..কল ইউ লেটার” ফারিশ বললো

“নো..আই নিড টু টক..একচুয়েলি আই ওয়ান্ট সামথিং ফর ইউ” ফারিহা বললো

“কি?ফারিশ বলছে

” প্লিজ আগে প্রমিস করো তুমি যে দিবা আমি যা চাইবো”ফারিহা বললো

“ব্ল্যাকবেইল মারা বন্ধ কর.. বল তোর কি চাই??ফারিশ চোখ তুলে তাকালো..

” আমার বার্থডে কয়দিন পর..আর আমার ফেভারিট কালারে ড্রেস নিয়ে ডিজাইনার দিয়ে করিয়ে তোকে এখানে আসতে হবে”ফারিহা এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো

“ইমপসিবল!!তুই এখানে আয়..যা চাইবি তাই পাইবি!!” ফারিশ বললো

“ভাই একটা কিছু চাইলাম দিলা না?আমি ত তোমার কাছে কিছু চায় না..এইভাবে নানান ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলো” ফারিহা

“স্টপ বাটারিং অন মি..ওকে আই উইল কাম” ফারিশ বলে উঠলো

ফারিহা ফারিশের সাথে কানে হেডফোন গুজে ছিলো,ওই সময় ফারিহা দেখলো মোহ গোসল করে চুল মুছছে ব্যালকনিতে

ফারিহা ব্যাক ক্যামেরা দিলো..

মোহর চুল ত অনেক বড় বড়..চুল ঝাড়তেছে..পিছন দিক দেখে ফারিশে উঠা থেকে বসে গেলো..বুকটা ধুক করে উঠলো..কত মেয়েকে দেখেছে কিন্তু এই মেয়েকে দেখে তার বুক এইভাবে ধুক করে উঠলো ক্যানো??কে এই মেয়ে??

ব্যাকসাইড দেইখা তুমি এরকম করো ভাই,ফ্রন্টে আইসা দেখলে তোমার ত খবরই হয়ে যাবে ফারিহা মনে মনে বললো

ফারিশ কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে,ফারিহা আগে বিদায় নিয়ে ফোন কেটে দিলো+ওয়াইফাই অফ করে দিলো..

ফারিশকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না..সে জানে তার ভাই এখন ফিদা হয়েছে মোহর ব্যাক দেখে..তার ভাইয়ের প্রতি অনেক মেয়ে নেশাক্ত থাকলেও,তার ভাই কখনো কোন মেয়ের প্রতি নির্ভর ছিলো না…তার ভাই যে ফিদা হয়েছে এক পলক দেখাতে সে বুঝতে পারছে..প্ল্যান সাকসেস হওয়ার ধাবিতে সে খুশিতে বক্স ছাইড়া নাচা শুরু করছে,বাকি প্ল্যান ফারিশ আসার পর সাকসেস করবে..

এদিকে ফারিশ হতভম্ভ হয়ে গেছে ফারিহার কল কাটা দেখে..অনেকবার কল দিলো কিন্ত ডাটা অফ..মেয়েটি কে??দেইখা আমি হ্যাং হয়ে গেছি??

ভাবতে পারছে না আর সে..শাওয়ার নিতে চলে গেলো ফারিশ।।

চলবে?

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে