#ময়না পাখির কথাগুলো।
#পর্বঃ- ০৩
সাইফুল শুধু মাথা না ঘুরিয়ে সম্পুর্ন শরীর ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি কেউ মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে। সাইফুল কখনো এসব ভূত প্রেত বিশ্বাস করে না তাই সাহস একটু বেশি হচ্ছে মনের মধ্যে। কিন্তু সাথে একটা মেয়ে আছে তাই হচ্ছে যত নষ্টের গোড়া।
মোবাইলের বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে সাইফুল স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই অপরিচিত সাদা বস্তুর দিকে লক্ষ্য করে বললোঃ-
– আমি জানি আপনারা মানুষ তাই আপনাদের মূল উদ্দেশ্য জানতে পারলে ভালো হতো। কারণ আমরা শহর থেকে এসেছি আপনাদের সঙ্গে বেশি সময় নষ্ট করতে চাই না। তবে সাবধান করে দিচ্ছি যে খারাপ মতলব যদি থাকে তাহলে পরিত্যাগ করে স্থানান্তর হয়ে যান।
– এবার সাইফুল এবং মিলি দুজনেই অবাক হয়ে গেল কারণ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা পোশাকের মধ্যে থেকে তিনটা মানুষ বেরিয়ে এলো। তিনজন মিলে তখন বললোঃ- সঙ্গে যা কিছু আছে সেটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
– সাইফুল বললো, এই ব্যাপার? এভাবে ভিক্ষা করার জন্য এমন শীতের রাতে বসে আছেন? বাহ্ লজ্জা করে না?
– একজন বললো, লজ্জা যদি না থাকতো তাহলে তো দিনের বেলা করতাম। কিন্তু লজ্জা আছে বলে তো রাতের আধারে ছিনতাই করি, এখন হিরো সাহেব সবকিছু দিয়ে দেন। এ কথা বলে তাদের মধ্যে একজন একটা গ্রাম্য ব্যবহৃত ভারি কিছু একটা বের করলো।
সাইফুল দেখলো যে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই, আবার এত সহজে হার মানতে মন চায় না। কিছু একটা করার দরকার কিন্তু এই মুহূর্তে কোন বুদ্ধি খুঁজে বের হচ্ছে না।
এমন সময় একটা কান্ড ঘটলো। রাস্তার কুয়াশা ভেদ করে জ্বলন্ত বাতি জ্বালিয়ে একটা গাড়ি আসতে দেখা যাচ্ছে। ওর দুজন দ্রুত রাস্তার ঠিক মাঝখানে উঠে গেল আর গাড়ি ঠিক এসে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। সাইফুল পিছনে তাকিয়ে দেখে লোকগুলো অনায়াসে চলে গেছে। হঠাৎ করে গাড়ির মধ্যে থেকে কে যেন বললোঃ-
– তালুকদারের নাতি সাইফুল আছেন এখানে?
– সাইফুল বললো, হ্যা আমি।
– তাড়াতাড়ি গাড়িতে আসুন, আপনার দাদাজান চিন্তিত হয়ে গেছে আপনার জন্য আর আপনি তার কল রিসিভ করেন না কেন?
সাইফুলের হঠাৎ করে মনে হলো যে সে বাটন মোবাইল দিয়ে সবসময় কথা বলতো। তার দাদার কাছে বাটন মোবাইলে ব্যবহৃত সিমের নাম্বার আছে কিন্তু সেই বাটন মোবাইল সাইলেন্ট করে ব্যাগের ভেতর রেখেছে সে।
– মিলির দিকে তাকিয়ে বললোঃ- আপনি কোন যায়গা যাবেন? যদি অসুবিধা না হয় তাহলে তো আমার সঙ্গে যেতে পারেন, আপনার গন্তব্য যদি বলেন তবে পৌছে দেবো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– মিলি গ্রামের নাম বললো। সেই গ্রামের নাম শুনে গাড়ির মধ্যে থেকে একজন বললো, সেটা তো আমরা যেখানে যাবো সেখান থেকে আরো তিনটা গ্রাম পরে। আর মাঝখানে একটা ছোট্ট খাল আছে সেটা পার হতে হবে। কিন্তু সেই খালের উপর কাঠেরপুল ছিল সেটা ভেঙ্গে গেছে।
– সাইফুল বললো, আপনার যদি সমস্যা না হয় তাহলে আমার সাথে চলেন। কারণ যায়গাটা বেশি ভালো মনে হচ্ছে না তাই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে ভালো হবে।
মিলি মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, তার মোবাইল হারিয়ে গেছে একটু আগে। এখানেই পরেছে কিন্তু খুঁজে বের করতে হবে, সেটা হয়তো বেশি সমস্যা নয়। কিন্তু তার মায়ের কথা ভেবে বেশি কষ্ট হচ্ছে কারণ আজকে বিকেল থেকে তার মা বারবার কল দিচ্ছিল তাকে। সকাল বেলা মিলি যখন ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে তখনই সে জেনেছে যে তার মায়ের শরীরটা ভালো না। বিকেল থেকে তার মা শুধু বারবার তার পথের কথা জিজ্ঞেস করেছে। মিলি বলেছিল বাসস্ট্যান্ডে কেউ একজন যেন অপেক্ষা করে তার জন্য কিন্তু কেউ আসে নাই। মায়ের অবস্থা এখন কেমন সেটা সে জানে না, তবে বারবার শুধু মনে হচ্ছে ” দেখা হবে তো? ”
– সাইফুলের ডাকে ভাবনা ভেঙ্গে গেল মিলির। সে তাকিয়ে দেখে সাইফুল নিজেও গাড়ির মধ্যে উঠে তার জন্য অপেক্ষা করছে। মিলি বললো, আমার মোবাইলটা যদি একটু খুঁজে পেতাম।
সাইফুল আবার গাড়ি থেকে নামলো, যারা গাড়ি নিয়ে এসেছে তাদের কাছে বড় টর্চ ছিল সেখান থেকে আলো জ্বলে উঠেছে। দশ মিনিটের মধ্যে মোবাইল পাওয়া গেছে কিন্তু সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। ডিসপ্লে খানিকটা ভেঙ্গে গেছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে মোবাইলটা মারাত্মক এক্সিডেন্ট করে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। ভাঙ্গা মোবাইল হাতে নিয়ে মিলি সাইফুলের সঙ্গে গাড়িতে উঠে বসলো।
মিনিট পাঁচেক সবাই নীরব ছিল, শীতের রাতে গাড়িতে হুহু করে বাতাস বইছে। শরীর কম্পন বয়ে যায় তবুও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়।
– সাইফুল নীরবতা ভেঙ্গে বললো, এদিকে কোন যায়গা শ্মশান আছে নাকি?
– যিনি এতক্ষন ওদের সাথে কথা বলেছেন তিনি বললেন, তারমানে আপনার দাদার ধারণা ঠিকই আছে। তিনি ভেবেছিলেন আপনি নিশ্চয়ই এই সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে গেছেন।
– মানে?
– মানে হচ্ছে খুব সহজ, এদিকে একটা শ্মশান আছে ঠিকই কিন্তু সেটা বহু প্রাচীন। আমাদের এই এলাকার কিছু খারাপ চক্র আছে তারা বাসস্ট্যান্ড থেকে যেসকল যাত্রী রাতের বেলা গাড়ি পায়না, তাদের কে এদিকে নিয়ে আসে। তারপর যাকে যেমন পারে সেভাবেই শ্মশানের ভয় দেখিয়ে রেখে চলে যায়। আর তাদের কিছু লোকজন থাকে তারা যেকোনো সময় যেকোনো উপায়ে ওই মানুষের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে তারা সবসময় নতুন মানুষ বা দুর গ্রামের মানুষ বেশি টার্গেট করে।
– আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।
মিলি চুপচাপ তাদের কথোপকথন শুনে যাচ্ছে তাই কিছু বলার দরকার হলো না।
—–
সাইফুলের দাদাবাড়ির সামনে যখন গাড়ি এসে থামলো তখন সবাই এক এক করে নামলো। কিন্তু মিলিও যখন নেমে যাচ্ছিল তখন সাইফুল বললো,
– আপনি কি এখন যেতে চান?
– গাড়ির একজন বললো, কীভাবে যাবে? খালের সেই পুল ভাঙ্গা তাই দিনের বেলা সেখান থেকে ছোট্ট নৌকা করে পার হতে হবে। শীতের কনকনে ঠান্ডার মধ্যে তো এতরাতে মাঝি বসে নেই।
– মিলি বললো, যদি আপনাদের অসুবিধা নাহয় তাহলে আমি আপনার সঙ্গে যেতে পারি। আপনি মনে হয় আমার মতো নতুন এসেছেন, তবে এই এলাকায় আপনার গুরুত্ব আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে।
– আমার কথা ভিন্ন, এটা আমার দাদার বাড়ি তাই এখানে আমার কদর বেশি হবে সেটাই স্বাভাবিক।
– তাহলে আমি নাহয় আপনার সাথে আপনার দাদা বাড়ি যাবো, সকাল বেলা আমাকে পথটা চিনিয়ে দিলেই হবে।
– ঠিক আছে চলুন।
সাইফুলের দাদা বাড়ির পরিবেশ আর সকলের এক প্রকার আনন্দ আগ্রহ দেখে মিলি অবাক হয়ে গেল। সবাই কেমন যেন আগ্রহ নিয়ে ছোটাছুটি করছে অথচ তাকে কেউ চেনে না। বাড়ির মধ্যে মানুষ কমপক্ষে ৮/১০ জন হবে কিন্তু সঠিক তথ্য মিলির কাছে নেই। মিলি তার বাবার নাম্বারে কল দিল সাইফুলের মোবাইল থেকে এবং পথের যেই বিপদ সেটা সংক্ষিপ্ত আকারে বললো। সকাল বেলা সে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবে সেটাও জানিয়ে দিল।
সকাল বেলা মিলির ঘুম ভেঙ্গেছে আটটার দিকে। শীতের সকালে ঘুম ভাঙ্গতে একটু দেরি হবে এটা নতুন কিছু নয় তাছাড়া মিলি গতকাল সারাদির জার্নি করে এসেছে।
নাস্তা করতে গিয়েও সাইফুলের সঙ্গে তার দেখা হলো না, মনে হয় এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই বা অনেক আগে উঠে গ্রাম দেখতে গেছে। শেষের কথা ভেবে তার লজ্জা লেগে গেল কারণ সে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে।
,
,
সাইফুলের সঙ্গে যখন দেখা হলো তখন মিলি বললো, “আমি আমার মায়ের কাছে চলে যাবো। যদি একটু ব্যবস্থা করতেন খুব উপকার হবে।”
– হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, আমি এক্ষুণি ব্যাবস্থা করবো।
কিছুক্ষণ পরে সাইফুল একটা লোক নিয়ে এসে হাজির হলো। তার কণ্ঠ শুনে মিলি বুঝতে পেরেছে ইনি গতকাল রাতের কেউ নয়।
– লোকটা বললো, কার বাড়ি যাবেন?
– গ্রামের নাম সানাইপাড়া, সেই গ্রামের মাহাতাবুর রহমান মুহিত সাহেবের বাড়িতে যাবো। তিনি খুব সম্ভবত একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
– লোকটা কিছু একটা বলবে তার আগেই হঠাৎ করে গতকাল রাতের গাড়িতে থাকা একজন এসে উপস্থিত হলেন। তিনি এসেই মিলির দিকে তাকিয়ে বললো ” আপনি মুহিত সাহেবের বাসায় যাবেন তাই না? ”
– মিলি বললো, জ্বি।
– তার স্ত্রীর নাম কি সাজেদা বেগম?
– হ্যাঁ হ্যাঁ।
– সেই গ্রামে আমার এক আত্মীয় আছে তার কাছে শুনলাম মুহিত সাহেবের স্ত্রী মারা গেছে আজ ভোরবেলায়। তখন হঠাৎ করে আমার মনে পরে গেল আপনার কথা, তারপর নাম জিজ্ঞেস করে জানলাম যে সাজেদা বেগম নাকি মারা গেছে।
– মিলির মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। সে শুধু তার মুখ থেকে একবার অস্ফুটে বললো, কি বললেন? আমার মা মারা গেছে?
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাইফুল লক্ষ্য করে দেখলো মিলি টলমল করছে। মনে হচ্ছে একটু পরেই মিলি দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে পরে যাবে।
চলবে…..
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)