মেঘের আড়ালে পর্ব-০৪

0
3153

#মেঘের আড়ালে 💞
#পর্ব__০৪
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা

০৯.
কিরে নাতবউ যাচ্ছিস তো সেইই দুই দিন এর জন্য তাহলে এতো বড় ব্যাগ সাথে করে নিয়ে যাচ্ছিস যে।।

সেই তুমি বুঝবা না দীদা সিঁড়ি দিয়ে ব্যাগ টেনে টেনে নামতে নামতে কাজ আছে তাই নিয়ে যাচ্ছি।।

—–সেই যাহ, কিন্তু তারাতারি বাড়িতে আসা চাই, এই দুইদিন তোর গল্পের ঝুড়ি খুব মিস করবো রেয়।।

—-দোয়া করো দীদা আর যাতে না আসা লাগে মনে মনে।হ্যা এসে পরবো চিন্তা করো না দীদা আর হ্যা তোমাকেও আমি খুব মিস করবো জড়িয়ে ধরে।

“ইয়াদ কোথায় নূর”??

” পিছে তাকিয়ে দেখি আংকেল, আমি তো জানিনা।”

—- ও কি বাসায় নেই, ছেলেটা কে কতো করে বললাম তোমাদের সাথে করে আজ যেতে কে শুনে কার কথা।এখন তোমার আব্বুকে কি জবাব দিবো বলতো আম্মু !!(চিন্তিতো হয়ে)

ইফরানঃ আব্বু চিন্তা করো না, ভাইয়া বাহিরে গাড়িতে বসে আছে, আর এই যে শালিকা নাক আলতো করে টেনে ।তুমি আমার ভাই এর খবর জানবা কি করে তুমি তো তোমার গল্প ঝুড়ি নিয়ে বসেছো,এখন চলো জলদি করে তোমার আপু আর বর বসে আছে গাড়িতে।

আসিফ আংকেলঃ সাবধানে গাড়ি ড্রাইভ করবি,আর শুন ইফরান বাসায় পৌছে আমাকে ফোন দিবি।।

ইফরানঃ আচ্ছা আব্বু।

.

.
“গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি মনটা আমার খুব ফুরফুরে হয়তো বাড়ি যাচ্ছি তাই।মাএ দুইদিন হলো এই বাসায় আছি কিন্তু মনে হচ্ছে এক যুক পরে যাচ্ছি। হয়তো এটাকে ফিলিংস বাবা বাড়ি টু শশুড় বাড়ি বলে। গাড়ির ব্রেক হতেই কল্পনা জল্পনা ধ্যান থেকে বাহিরে আসলাম, তাকিয়ে দেখি বাসায় এসে পরেছি।আচ্ছা শুনেন,,,,,,,,, (গাড়ি থেকে বের হতে হতে)

এভাবে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছেন কেনো , আপনাকেই বলছি মশায়।।

.

বলো কি বলবে।। (বিরক্তি শুরে)

.

আসার সময় না আমার ব্যাগটা সাথে করে নিয়ে আসবেন।।(৩২ বাতি বের করে)
.
আমার ঠ্যাকা,,,,,,, কে বলেছিলো তোমাকে এতো বড় বস্তা সাথে করে নিয়ে আসতে, এখন নিজেই তার ভার বহন করো।।। (ভাব নিয়ে)

.

দেখুন ভাইদের কাজ হলো বোনদের ভালো করে দেখে শুনে রাখা কথায় কথায় খোঁটা দেওয়া না বুঝালেন , আর এই ভাব কাকে দেখাছেন। (কমোড়ে দুই হাত দিয়ে)

.
হোয়াট রাবিশ।।।। আমি তোমার ভাই হই???

.

নাতো,,,, চিন্তার ভঙিতে আপনিতো আমার ভাই প্লাস পয়েন্ট সাইকো জামাই চোখ টিপ দিয়ে।।( কথাটা বলেই এক দৌড় )

.

নূরররররররররররর আমি তোমাকে কাচা চাবিয়ে খাবো ফাজিল মেয়ে।।।( ধমক এর শুরে)

“সেই তো খাবেনই আপনি যে মানুষ রুপি আস্তা রাক্ষস”।।

১০.
“কিরে জামাই কই? আর এভাবে দৌড়াছিস কেনো??”

বাহ আম্মু মেয়ে এতোদিন পরে এসেছে, কোথায় জিজ্ঞেস করবে কেমন আছিস তা না জিজ্ঞাস করে করছো কি, জামাই কই?? কিছুটা অভিমান এর শুরে।। বাহ দুই দিনে এতোটা আমাকে পর করে দিলে আম্মু।।। এতোদিন ভাবতাম আপু হয়তো মিথ্যা কথা বলতো যে আমাকে ট্রেন স্টেশন থেকে কুড়িয়ে এনেছো, এখন তো মনে হচ্ছে সত্য কথা,,,,, আজ যদি আমার আম্মু থাকতো ,,,,,,,,

.

তুই এতো ড্রামা কোথা থেকে শিখেছিস বলতো(কান টেনে)।।।

.

আর কোথা থেকে শিখবে তোমার স্টার জলসা থাকতে আর কোথাও থেকে শিখার দরকার পরে।।।।

.
কি বললা তুমি ইশারার আব্বু (রেগে)

.
কই কি বললাম, এখন সরতো আমাকে আমার মা দুইটার সাথে কথা বলতে দাও।। কেমন আছিস,,

ইশারাঃ ভালো আব্বু জড়িয়ে ধরে, তুমি কেমন আছো?

আব্বুঃ তোদের ছাড়া কি আর ভালো থাকতে পারি।বাবাইটা কেমন আছিস,, কথা বলবিনা আব্বুর সাথে,,বাবাইটা কি এখনো রাগ তার আব্বুর উপর??

নূরঃ ভালো না।অভিমান এর শুরে।।।

আব্বুঃ কেনো কেনো!!

নূরঃ কি করে আর ভালো থাকবো, তুমি যে মিরজাফর এর মতো কাজ করেছো আমার সাথে।।

আব্বুঃ মুচকি হাসি দিয়ে,,মাঝে মাঝে সন্তানদের ভালোর কথা চিন্তা করে একটু আকটু মিরজাফর হতে হয়।।(মাথায় হাত দিয়ে) তা বাবাইরা ইরফান আর ইয়াদ বাবা কোথায় দেখছিনা যে??

“আমরা এইখানে আব্বু ”

আব্বুঃ এইইই কি তোমাদের হাতে এতো ব্যাগ কেন।।

ইফরানঃ কোথায় এতো ব্যাগ আব্বু সামান্য তো, আর এটাকে এতো বললে কিন্তু মামনি আর আব্বু রাগ করবে আপনার উপর।

আব্বুঃ ওফফফফ এই আসিফ বেটা আর ভাবি কে বলে আর পারি না, আমরা কি পর যে যখনই আসবা তখনই গিফট সাথে করে নিয়ে আসতে হবে।।। এখন বাবারা যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, তারপর এক সাথে সবায় জমে বসে গল্প করে লাঞ্চ করবো।

১১.

রাত দশটা বাজে সব কাজিন রা ছাদে একজোট হয়ে গল্প আসর নিয়ে বসেছে।।। সবায় সবার দুইদিনে জমিয়ে রাখা কথা গুলো বলছে একে অপরকে মনে হচ্ছে দুইদিন না পাক্কা দুই বছর হয়ে গেছে এদের কথা শুনে তাই মনে হচ্ছে🙄 ,,,, নিরব দশকে এক প্রকার বাধ্য হয়ে তাদের মাঝে বসে ইয়াদ আর ইফরান কে শুনতে হচ্ছে এই কাজিন নামক টেপ রেকর্ড এর কথা গুলা,,,,

দিপ্তঃ অনেক তো গল্প হলো,, চল এভার গানের কলি খেলি এই শীতের মধ্যে খেলতে ভালো লাগবে,, আর সাথে তো আজ নতুন দুইজন সদস্য ও আছে।।

নূরঃ এই বাচ্ছা পোলাপানদের খেলা বাদ দেও তো।।। এসব ফালতু গেইম ভালো লাগেনা।। অন্য কিছু খেলি চলো।

অনিকঃ অরে আমার ৮০ বছর এর বড় বুড়িটারে দেখি তো,,, তা বুড়ি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি নিজেকে বড় মনে করছো,,, এইখানে যদি কেউ বাচ্চা হয় তাহলে কিন্তু নিতান্ত তুমি ভুললে চলবে পুচকি।।

নূরঃ ভাইয়য়য়য়য়া,,,,,,,(রেগে) আমি মোটে ও অতো ছোট না now i’m 20+ বুঝছো। তাই পুচকি বলবানা।ভাব নিয়ে।

দিপ্তঃ অরে আমার 20+ রে, তা 20+ আমরা কিন্তু এইখানে সব ২৫ এর উপরে বাবু চোখ টিপ দিয়ে।আর আমি বুঝতে পারছি ঠিক আর কেউ বুঝতে না পারলেও, তুই যে গান গাইতে পারিসনা তাই বলছিস বাদ দিতে। কি মনে হয় সব নিঞ্জা টেকনিক তুই জানিস আর কেউ জানে না।শুন যেহেতু তুই এইখানে সবার থেকে ছোট তাই তুই দুতভাত যাহ,,,,,, তুই ও কি মনে রাখবি আমাকে এই দিপ্তকে।।।।

ইশারাঃ আচ্ছা ইয়াদ ভাই, আমি শুনেছি আপনি খুব ভালো গান করতে পারেন,,, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতেও আপনি সব সময় ফাংশনে গান করতেন আজ আমাদের একটা গান গেয়ে শুনাবেন,,,,,,,, প্লিজ ভাইয়া না করবেন না,,,,প্লিজ্জজ্জজ্জ,,,,,,,,

ইফরানঃ হ্যা ভাই ধর না একটা গান প্লিজ,,,অনেক দিন ধরে তোর কোনো গান শুনি না, আজ একটা গান গেয়ে আমাদের শুনা না,,,,,,,,

ইয়াদঃ আজ ভালো লাগছেনা ইফরান কোনো আর একদিন, আজ তোরা গান গায় আমি শুনি,,,,

নূরঃ এতো ভাব নিচ্ছেন কেন,,,,বললেই হলো আপনি গান পারেন না,,,,হুহ( মুখ বাঁকিয়ে)

“দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মলিন হেসে সবার দিকে তাকিয়ে”

মনটা আমার ভীষন খারাপ
চার দেয়ালে বন্দী
ইচ্ছে নেই আর করতে নতুন
ভালো থাকার সন্ধি ।

মনটা আমার ভীষন খারাপ
চার দেয়ালে বন্দী
ইচ্ছে নেই আর করতে নতুন
ভালো থাকার সন্ধি। (আকাশের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে)

আমার আমি যেমন আছি
তেমন আছি ভালো
তোমাদের রঙ অনেক রঙিন
আমার প্রিয় কালো।

আমার আমি যেমন আছি
তেমন আছি ভালো
তোমাদেত রঙ অনেক রঙিন
আমার প্রিয় কালো। (আমার দিকে তাকিয়ে)

স্বপ্ন এসে এ দুচোখ তারায় করে খেলা
সব হারিয়ে খুঁজে পেলাম হারানোদের মেলা।

স্বপ্ন এসে এ দুচোখ তারায় করে খেলা
সব হারিয়ে খুঁজে পেলাম হারানোদের মেলা।

একলা থাকার একলা আমি একলা ভালো থাকি
মন খারাপের সময় গুলো নিজের কাছেই রাখি।

একলা থাকার একলা আমি একলা ভালো থাকি
মন খারাপের সময় গুলো নিজের কাছেই রাখি।

মনটা আমাত ভীষন খারাপ
চার দেয়ালে বন্দী
ইচ্ছে নেই আর করতে নতুন
ভালো থাকা সন্ধি।

“আমার আমি যেমন আছি
তেমন আমি ভালো
তোমাদের রঙ অনেক রঙিন
আমার প্রিয় কালো”(চোখের পানি গুলো আড়ালে মুছে)

ইয়াদঃ আমি আসছি একটু ( বলেই উঠে নিচে চলে গেলো)

“সবার মুগ্ধ নয়নে ইয়াদ এর গান এতোক্ষনে শুনছিলো ,কিন্তু কেউ বুঝতে পারলো না গানের ভেতরে ইয়াদ এর লুকিয়ে রাখা আব্ধ কষ্ট গুলো। আর কেউ না বুঝলেও ইফরান ঠিকই বুঝেছে তার ভাইয়ের কষ্ট গুলো তাইতো তার চোখে ও পানিতে চিকচিক করছে “।

“উনার মনে এতো কিসের কষ্ট আমাকে জানতে হবে(নূরের চোখেও পানি),,,,,,,,,,,,,,
চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে