পর্ব-০৭
#মেঘের_আড়ালে_চন্দ্রলোকিত💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
— ঠিক আছেন আপনি ?
আমান মৃদু হাসে,
— তোমার ত এখানে থাকার কথা না ।
— কেন ?
— তুমি আমার এতো খারাপ ব্যবহার সহ্য করেও কেন এখানে এসেছো আমি হলে আসতাম না।
— আপনি কেন এসব বলছেন চুপ থাকেন এখন এসব এর সময় না।
— মেঘ তুমি
— হুস,
মেঘের হাত আমানের মুখে দেয়,
— এসব কথা এখন না শুধু রেস্ট নিবেন সুস্থ হবেন তার পর দেখা যাবে।
আমান হেসে দেয় মেয়েটা পাগল,
মেঘ আমানের হাত মুখ ধুইয়ে দেয়,
তার পর আমানকে খাইয়ে দেয়,
আমানের হাতে একটু বেশি সমস্যা হয়েছে,
ডান হাতটা ভেঙে গেছে,
ডক্টর বলেছে সময় লাগবে,
মেঘ আমান কে খাইয়ে দিয়ে আমানের বুকে চাদর টেনে দেয়,
–ঘুমান।
–উহু ঘুম আসছে না।
–কেন?
–শুধু কাউকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে,
–কাকে?
–আছে কেউ,
–আপনি কি সত্যি অসুস্থ?
–কেন?
–না মানে অসুস্থ হয়ে কেউ রোমান্টিক হয়ে যায় জানতাম না।
–তুমি ভিশন পাজি।
–এহ উনি ভিশন ভালো ঘুমোন ত।
মেঘ আমানের চোখে হাত দেয়,
আমান হেসে চোখ বন্ধ করে নেয়,
কিছু সময় পর ঘুমিয়ে যায়,
সারা আসে তখন,
–ভাইয়া ঘুম?
–হুম
–চল তুই খেয়ে নিবি আজ পুরো ২ টা দিন না খাওয়া তুই এখন ত ভাইয়া সুস্থ আয়,
মেঘ সারার দিকে তাকায়,
–হুম চল,
মেঘ উঠে আসে,
ওরা দুজন বাইরে চলে আসে,
কিন্তু আমান জেগে ছিল,
মেঘ আর সারার কথা গুলো শুনে ফেলে,
–ও আমায় সত্যি ভালোবাসে।
মেয়েটা না খেয়ে ছিল এই দুই দিনন।
অথচ আমি একটা বার প্রশ্ন ও করলাম না তুমি খেয়েছো কি না।
আমান এসব ভাবতে ভাবতে ই ঘুমিয়ে যায়,
,
,
কেটে গেল দুই দিন,
আমান আজ বাসায় এসেছে,
মেঘ আমানের পুরো যত্ন নিছে এই দিন গুলোতে,
আমান সত্যি ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভিশন ভাবে,
আমান বসে আছে,
মেঘ পানি নিয়ে এসেছে,
–কি হবে এটা দিয়ে?
–আপনাকে ধৌত করা হবে।
–ওহ এখন।
তুমি না মাত্র এলে। একটু রেস্ট নেও,
–আমার রেস্ট থেকে বেশি আপনার সুস্থতা।
মেঘ কাপড় ভিজিয়ে আমানের হাত পা মুছে দেয়,
তার পর পানি ওয়াশরুম ফেলে নিজে গোসল করে বেরিয়ে আসে,
মেঘ একটা হালকা গোলাপি রঙা গোল ফ্রক পরেছে,
মেঘ আয়নার সামনে এসে চুল শুকাচ্ছে,
আমানের চোখ মেঘের দিকে,
ভেজা চুলে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পরছে,
পিঠের কিছু অংশ ভিজে গেছে,
চোখের পাপড়ি গিলোতেও বিন্দু পানি কনা জমা হয়েছে,
অসাধারণ এক বাতাস মেঘের চুল ছুয়ে দিচ্ছে,
মেঘের প্রতিটি মুহূর্তের কাজ আমানের চোখোর সামনে যেন স্লো স্প্রিড এ চলছে,
ভালোবাসলে সব কিছু কি এমন নতুন লাগে নাকি তা আমানের জানা নেই,
মেঘ চুল শুকিয়ে ওড়না ঠিক করে বাইরে আসতে গেলে আমন মেঘের হাত ধরে বসে,
মেঘ পেছনে তাকায়,
–হুম।
–কোথায় যাচ্ছেন?
–খাবার আনতে,
–বসেন এখানে,
–নাহ আগে খাবার তার পর ঔষধ,
–মেঘ আমি বলেছি বসতে এদিকে এসো,
মেঘকে আমানের পাশে বসায় আমান,,
–কি বলুন।
–ভদ্রমহিলা ভদ্রতা শিখো নি হুম? কি ভাবে স্বামীর সাথে কথা বলতে হয়।
–এহ আপনার ঔষধ এর সময় হচ্ছে,
–হ্যাঁ ত৷
–হ্যাঁ ত আমায় যেতে হবে
–উফ,
–কি?
আমান কাউকে ফোন করে,
–খাবার দিয়ে যাও উপরে,
ওপাশের কথা শুনতে পায় না মেঘ,
আমন ফোনটা কেটে দিয়ে মেঘের কোলে মাথা দেয়,
মেঘের চোখ রসগোল্লা হয়ে যায় সাথে হৃৎস্পন্দনের বেগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়,
–ক কি করছেন?
–ঘুমাচ্ছি।
–ও মা।
কিছু সময় পর সার্ভেন্ট এরে খাবার দিয়ে যায়,
মেঘ আমান কে খাইয়ে দেয়,
আমান মেঘকে নিজের সামনে খেতে বলে মেঘ বাধ্য হয়ে খেয়ে নেয়,
আমানের খাওয়ার পর মেঘের কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে যায়,
ঘুমিয়ে গেলে ছেলেটাকে পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগে,
লোকটার হাসিটা এতো সুন্দর,
মেঘ মৃদু হাসে,
,
,
কেটে যা আরও দুই দিন,
আমন এখন সুস্থ মেঘ এই দিন গিলোতে আমানের প্রতিটা কাজের খেয়াল রেখেছে প্রতিটা কিছু প্রতিটা খাবারের খেয়াল সব কিছুর খেয়াল রেখেছে,
আমান ও বুঝতে পেরেছে মেয়েটা তেমন নয় যেমন সে ভেবেছিল,
মেয়েটা সত্যি ভালো,
আমনের অফিসে যেতে সবাই তার সুস্থতার জন্য শুভকামনা জানায়,
আজ রাতে আমান জলদি অফিস থেকে ফিরে আসে,
মেঘ বসে আছে নিজের পড়া শেষ করে ফোন ঘাটছে,
এর মধ্যে আমান চলে আসে,
আমান কে দেখে বেশ অবাক হলো মেঘ,
–আপনি এতো জলদি,
–এমনি ভালো লাগছে না তাই চলে এলাম
–ওহ একটা প্রশ্ন করতে পারি?
–হুম পারো,
–আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন
–ওকে,
আমান ফ্রেশ হতে যায়।
আমানের হাতের ব্যান্ডেজ টা এখনো আছে,
মেঘ আমান কে সব কিছুতে সাহায্য করে দেয়,
আমান এসে বসতে মেঘ খাবার নিয়ে আসে,
–তুমি কিছু বলবে,
–হুম খেয়ে নিন
আমান খেয়ে নেয়,
খাবার শেষ করে মেঘ আমানের সামনে বসে,
–বলুন ত আমাদের বিয়ের প্রথম দিন আপনি ওই কথা বলেছিলেন কেন?
আমান কিছুটা চুপ হয়ে যায়,-
–প্লিজ বলুন আমি দোটানে আর থাকতে পারছি না।
–তোমার এসএসসি পরিক্ষার সময় একটা সমস্যা হয়েছিল সেই সমস্যার কথা কি তোমার মনে আছে?
–হ্যাঁ আছে ওটা আমি ভুলতে পারবো ন কখনো কিন্তু আপনি কি করে জানলেন,
–আমি সেই ডিউটিতে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট,
–কি।
–হ্যাঁ,
মেঘের মাথা নিচু হয়ে যায়,
–বলো ত সে দিন কি করেছিলে?
ফ্লাসব্যাক,
আমানের ম্যাজিস্ট্রেট হবার পর প্রথম ডিউটি,
এসএসসি পরিক্ষার হল প্রদর্শন,
আমান ছোট থেকেই একটু বেশি ট্যালেন্টড,
ওর সামনে কিছুই অগচর থাকে না,
ও কাউকে দেখলে বলে দিতে পারে সে কেমন,
যদি কেউ তার সামনে অন্যায় করে তাকে সে কখনো ক্ষমা করে না,
সে দিন এমনি একটা ঘটনা ঘটেছিল,
আমান হল প্রদর্শন করতে এসে দেখতে পায় একটা মেয়ে নকলের কাগজ লুকাতে ব্যাস্ত,
আমানকে দেখতে বেশ বাচ্চা বাচ্চা তাই ওকে দেখে বুঝে ওঠা সম্ভব নয় সে ম্যাজিস্ট্রেট,
সে নতুন ডিউটিতে হওয়া টিচার রাও এটা বুঝে নি,
আমান ওকে দেখে ফেলে তখন টিচার্স রা তার দিকে তাকায়,
তারা প্রথমে বুঝতে পারে না কিন্তু কিছু সময় পর তারা আমানের পেছনে গার্ড দেখে বুঝতে পারে সে ম্যাজিস্ট্রেট,
স্যার টা ঠিক হয়ে যায়,
–এই মেয়ে দাঁড়াও,
আমান পকেটে হাত দিয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
মেয়েটার হাত পা কাঁপছে,
মেয়েটা তাও শক্ত হয়ে দাড়ায়,
–জি স্যার,
–ওর খাতা দেও আমায়,
এক জন স্যার মেয়েটার খাতা নিয়ে দেয় আমান কে,
আমান সেখানে লাল কালি বসিয়ে দেয়,
–মেয়েটা এক্সপেল্ড,
আমনের কথায় মেয়েটার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়,
–স্যার আপনি কি দোষে আমায় এক্সপেল্ড করলেন?
–তুমি দোষ করে আমার উপর কথা বলছো,
–জি না স্যার আমি কোন দোষ করি নি,
–তুমি কোন দোষ করো নি,
–হ্যাঁ আমি কোন দোষ করি নি,
আমানের ভিশন যিদ উঠে যায়,
–ওকে চেক করো,
এখনি,
আমনের চিল্লানো শুনে সবাই ভয় পেয়ে যায়,
–ওকে স্যার যদি আমার কাছে কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে?
–যদি কিছু না পাওয়া যায় তবে এই লাল কালি উঠিয়ে তোমায় ফ্রিতে এই পরিক্ষায় + দিয়ে দেওয়া হবে আর যদি তোমার কাছে পাওয়া যায় কিছু তবে তুমি এই বছর কেন জীবনে কখনো পরিক্ষা দিতে পারবে না।
আমানের কথায় মেয়েটি কনফিডেন্সে এর সাথে আমানের মাস্ক এর উপরের চোখ দুটোর দিকে তাকাশ
–হুম আমি রাজি,
–টেক হার মেক সিউর ওর প্রতিটা কিছু চেক করা হবে,
চলবে