পর্ব-১১(শেষ))
#মেঘের_আড়ালে_চন্দ্রলোকিত💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
পরের দিন সকালে,
সকালের সূর্য উকি দিতে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়,
কাল সারা রা ঘুম হয় নি।
কেন জানি না মনটা ভিশন বিষন্ন ছিল,
ধোয়াসা,
যেন কোন রং নেই শুধুই ছাই রঙের বসত
ভালোলাগার ত কোন দিক ই নেই,
কেন এতো কষ্ট হচ্ছিল তা মেঘের জানা নেই,
কিন্তু হচ্ছিল কষ্ট ভিশন কষ্ট,
মেঘ সকালের কাজ কর্ম সেরে নামাজ আদায় করে নেয়,
দুপুর ১ টদ মেঘ একটু সংবাদ নিয়ে বসে,
টিভিতে সিরোনাম হয়েছে আজ থেকে ২০ বছর আগে মৃত মাফিয়া ডন মিস্টার খান এর। উপর লাগা প্রতিটা অপবাদ মিথ্যা হিসাবে প্রমাণিত হলো,
তার ভালো কাজের মাসুলে প্রায় ১০০ পরিবার খাবার পেয়েছে প্রতিদিন,
তাদের জীবন বদলে দিয়েছিল অরফান খান,
সবার সামনে বেআইনি হিসাবে থাকলেও সে কখনো কোন বেয়াইনি কাজের সাথো নিজেকে জড়ায় ই নি,
মানুষের ভালো করার জন্য ভেবেছে,
মানুষ কে ভালোবাসে শিখিয়েছে।
আরফান খান এর সত্যি আজ ২০ বছর বের হলো,
তাও তার এক মাত্র ছেলে আমান খানের জন্য আজ সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে,
মেঘ সংবাদ দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে
বাসার ছাদে চলে আসে,
মনে পরে যায় আমানের সাথে কাটানো কিছু মুহুর্তের কথা,
ছেলেটার অবস্থা এতোই খারাপ ছিল যে ১৫ দিন ত মেঘ ই খাইয়ে দিয়েছে,
সব কিছুই করেছিল তার প্রতিটি কাজে প্রতিটি মুহূর্ত সাহায্য করে কাছে ছিল
মেঘ জানে না কেন তার আত্মসম্মান এ লাগে নি এমন একটা ছেলেকে সাহায্য করতে যে তাকে এতো ভাবে অপমান করেছে,
কিন্তু মেঘ সবি করেছে কোন কথা না বলে,
–মেঘ,
হটাৎ কারোর ডাক শুনে মেঘ পেছনে তাকায়,
পেছনের মানুষ টাকে দেখে মেঘ চমকে উঠে,
–কি হয়েছে তুই এখানে কেন?
–এমনি তোরে ছাড়া ভালো লাগে না,
–ইস আমারে ছাড়া এখন থেকে থাকতে শিখ,
আমি চলে যাবো।
–কোথায়,
–বাইরে চলে যাবো সারা,
পড়ালেখা শুরু করে দিছি স্কলারশিপ নেওয়ার চেষ্টা করছি,
–মেঘ কি বলিস,
–হুম কারোর জন্য জীবন কে থামিয়ে রাখা কি খুব দরকার,
আমারো জীবন আছে আমারো বাঁচার অধিকার আছে তাই না।
–কিন্তু মেঘ,
–কি বলবি বল,
–তুই এই ডিসিশন কবে নিলি,
–নিলাম এই এখনি নিলাম,
আমি তোর ভাসুর কে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো।
–মেঘ,
–হুম বল,
–তুই,
–কি বলবি সারা। কিছু বলার আছে কি আদও?
–তুই কি খুশি হবি তাকে ডিভোর্স দিয়ে,
–হুম অফটারঅল আমারো বাঁচার অধিকার আছে,
আমিও মানুষ।
–কিন্তু,
–সারা কিছু বলবি?
–মানে,
–কি হয়েছে তোর (বেশ বিরক্তি নিয়ে)
–কি কিছু না,
–এতো আমতা আমতা করিস কি জন্য,
–কিছু না তোর যাতে খুশি আমিও সেটাই মেনে নিবো,
–হুম,
মেঘ চলে আসে,
কথা গুলো।বলতে ভিশন কষ্ট হচ্ছিল মেঘের, ভিশন কষ্ট কিন্তু কথা গুলো এমন ভবে বলতে পারলো মেঘের নিজের ই বিশ্বাস হচ্ছে না।
মেঘ রুমে চলে এলো,
তার পর কেটে গেল দুই দিন,
সারা চলে যায় আবার,
আমানের কোন খোঁজ আর মেঘ নেয় নি,
না আমান,
দুজনি ভেতর থেকে মরে যাচ্ছে কিন্তু অনেক দুরে,
এভাবে কেটে গেল অনেক দিন,
প্রায় ২ বছর,
দু’জন দু’জন থেকে বিচ্ছেদ এর ২ বছর কেটে গেছে,
মেঘ এখন ভার্সিটিতে পড়ে,
সারাও,
মেঘ স্কলারশিপ এর জন্য পরিক্ষা দিয়েছিল আজ তার রেজাল্ট,
মেঘ চিন্তায় আছে,
এই দুই বছর মেঘ যেন ভিশন চুপ হয়ে গেছিলম,
যেন একট প্রানি যে হাঁটে চলে কথা বলে খায় দায় কিন্তু প্রান হিন,
কোন রকম প্রানের অস্তিত্ব নেই তার মাঝে,
এ জেন এক ধোঁয়ায় ঘেরা জীবন,
টেবিলে বসে আসে মেঘ মেঘ এর গেটাপ পুরাই চেঞ্জ হয়ে গেছে,
চোখে চশমা,
হাতে ঘড়ি,
স্টান্ডার সেজে সব সময় নিজেকে প্রস্তুত করে রাখে,
আজ সারার শ্বশুর বাড়িতে যাওয় লাগবে,
সারা ৭ মাসের প্রেগন্যান্ট,
ওর সাদ করা হবে,
মেঘ যেতে চাইনি প্রথম কিন্তু মা আর ছোট মায়ের জোড় জবরদস্তি তে রাজি হয়েছে,
আর রাি হবেই বা না কেন।
আজ রেজাল্ট দিলে কাল হয়ত প্রসেস হয়ে যাবে সব,
মেঘ চলে যাবে তার ৭-৮ দিনের মধ্যে লন্ডনে।
মেঘ নিজেকে তৈরি করে নেয়,
একটা হালকা গোলাপি রঙা টপ আর জিন্স হাতে ঘড়ি,
চুল গুলো ছাড়া,
এই ২ বছরে মেঘ অনেক শক্ত হয়ে গেছে৷
এতোটাই শক্ত হয়ে গেছে যে আমনের মতো হাজার জনকে সামাল দিতে পারবে,
আর মনের মাঝে একটা কথা গেথে গেছে যে ভালোবাসা নামে কিছু হয় সবি শুধুমাত্র মোহ,
মেঘ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছিল হটাৎ তার ফোনটা বেজে ওঠে,
ফোন পিক করতে ওপাশ থেকে মেঘের মা বলে ওঠে,
–হ্যা মা।
–তুই কই কতো সময়ে আসবি?
–এইত মা কিছুক্ষণ আসছি,
—-জলদি আয় সারা বসে আছে তোর জন্য,
–আচ্ছা মা আসছি,
মেঘ বেরিয়ে যায়,
গাড়ি বের করে নেয়,
নিজেই ড্রাইভ করে সারার বাসায় পৌঁছে যায়,
এ বাসায় পৌঁছে মেঘের ভেতর টা ধক করে উঠে,
এই সেই বাড়ি যেটা তার কঠিন হবার এক মাত্র কারন,
মেঘ হেটে ভেতরে যায়,
সারার শ্বাশুড়ি মা (অনিলা বেগম)
মেঘের দিকে এগিয়ে আসে,
–কেমন আছিস মা।
–আলহামদুলিল্লাহ আন্টি আপনি কেমন আছেন?
–আন্টি বললি?
–ক্ষমা করবেন কিন্তু এটাই ভালো হয়৷
–তুই অবেক বদলে গেছিস রে মা।
–সময় ই ত সব করলো।
–মেঘ,
–আন্টি সারা ডাকছে
মেঘ সারার কাছে চলে যায়,
সারার বেবি বাম এ হাত দেয়,
–শুভকামনা অনেক,
–তুই নকি চলে যাবি ( ছলছল দৃষ্টিতে)
–হুম যাবো ত রেজাল্ট ত দিক,
–আমি জানি তুই চান্স পাবি।
–তাহলে ত ভালোই হয়,
–মেঘ,
–হুম বল,
–তুই.
–কি বল,
–তোর সাথে আমার কথা আছে,
–কি সম্পর্কে?
–তুই আবার প্রশ্ন করছিস কোন সম্পর্কে?
তুই ত কখনো এমন ছিলি না মেঘ,
–তুই এমন বিহেব করছিস কেন সারা,
–মেঘ কারন তুই ভুল করতে যাচ্ছিস সেই জন্য,
–কিসের ভুল,
–তুই চল আমার সাথে,
সারা মেঘকে টানতে টানতে নিয়ে আসে উপরে,
সারার রুমে দরজা বন্ধ করে দেয়,
–কি হলো,
–তুই জানিস ভাইয়া কতোটা কষ্টে আছে?
–কোন ভাইয়া?
–মেঘ,
সারা গোড়া থেকে সব খুলে বলে,
আমানেরের সাথে এ পর্যন্ত যা যা হয়েছে।
সব কিছু বলে,
মেঘের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে,
–ক কিন্তু
–সে দিন ভাইয়া তোকে নিতে গেছিল কারন সব সমস্যা সে দিন সমাধান হয়ে গেছিল।
–তাহলে সে দিন কেন কিছু বলে নি,
–কারন তোর আর আমার সব কথা শুনে নিয়েছিল ভাইয়া,
সে যাকে এতো ভালোবাসে চায় নি সে তাকে দুরে যাক কিন্তু যদি সে ভালো থাকে তবে দুরত্ব ই শ্রেয়,
আমি হাজার বার তোকে বলার চেষ্টা করেছি তুই জানিস তুই কখনো আমা শুনিস নি,
ভাইয়া এতো টা খারাপ অবস্থা আমি কখনো দেখি নি,
কাল রাতে ওনাকে অঝরে কাদতে দেখেছি তোর ছবি বুকে নিয়ে,
মেঘের চোখ দিয়ে পানি পরাছে,
–ও কোথায়
–নিজের রুমে।
মেঘ দৌড়ে যায়,
রুমের দরজা খুলতে দেখতে পায় আমান বসে আছে,
আমন হটাৎ মেঘকে দেখে চমকে যায়
মেঘ কিছু না বলে গিয়ে আমান কে জড়িয়ে ধরে
–আমায় ক্ষমা করে দেও প্লিজ,
আমায় ক্ষমা করে দেও আমার ভুল হয়ে গেছে
তোমায় ভুল বুঝতে বুঝতে জীবনের ২ টা বছর পার করে দিলাম,
তোমার অবস্থা কখনো কল্পনাও করি নি,
আম সরি আমান,
–তুমি ফিরে এসেছো মেঘ আমার মেঘ তুমি ফিরে এসেছো,
–হ্যাঁ ফিরে এসেছি আমি আর কখনো তোমায় ছেড়ে যাবো না আমান,
–হুস কেঁদো না,
–আমায় ক্ষমা করে দেও,
–তুমি আমায় ক্ষমা করো,
–তোমার কোন দোষ নেই স্ত্রী হিসাবে আমার তোমায় বোঝা উচিত ছিল,
আমান মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
মেয়েটাকে এতো বেশি ভালোবাসে যে ওকে হারাতে পারবে না কখনো।
,
,
,
দু দিন পর,
দুই পরিবারের মতে আবার ওদের বিয়ে হয়, মেঘে আমানের জন্য বসে আছে সেই একি রুমে,
যেখানে দু বছর আগে বসে ছিল সেই বেনারসি পরে,
আমান রুমে এসে নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে দেখে হেসে দেয়,
মেঘের কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়,
–কি করছেন?
–ভালোবাসতে চাইছি।
–মানে,
–মানে
আমান মেঘকে নিয়ে একটু বেলকনিতে এসে চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবে তার পর রুমে এনে খাটে শুইয়ে দেয়,
–ভালোবাসা 💖
মেঘের আড়ালে চন্দ্রালোকিত 💖
সমাপ্তি