#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব১৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
আমার কাছে আশার চেষ্টা করলে এটা তোর গলায় চালিয়ে দিব! আমার থেকে দূরে থাক।
নির্জন অবাক হয়ে বললো, ‘ এটা কোথায় পেলি..?’
ছোঁয়াঃ বাসা থেকে আসার সময় ফলের ঝুড়ি থেকে নিয়ে এসেছি।
নির্জনঃ কি সাংঘাতিক বউ তুই! বিয়ের রাতে স্বামীর গলায় ছুরি চালাবি!!
ছোঁয়াঃ আমার থেকে একশো হাত দূরে থাক।
ছোঁয়ার হাতের চাকুর দিকে তাকিয়ে নির্জন মুখ গোমড়া করে বললো,’ এটা ঠিক না ছোঁয়া৷ বিয়ে ত একবারই মানুষ করে বাসর রাতও একবার আসে তুই আমার সব কিছু মাটি করতে পারিস না। আমাদের ত এই রাত নিয়ে কতো…
ছোঁয়া কানে হাত চেপে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ চুপপপপ!! একম চুপপ! না হলে তোর মুখ সেলাই করে দিব।
নির্জনঃ গুন্ডি বউ।
ছোঁয়াঃ কি বললি.?
নির্জনঃ ক… কই কিছু না।
ছোঁয়াঃ চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যা।
নির্জন একবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিন্তু রুমটা ত আমার’
ছোঁয়াঃ আমি তোর কে.?
নির্জনঃ বিয়ে করা একদম টাটকা নতুন বউ।
ছোঁয়াঃ বউ এর বিপরীত কি.?
নির্জনঃ কি!.?
ছোঁয়াঃ আমি তোকে জিজ্ঞেস করছি!!
নির্জনঃ জামাই.??
ছোঁয়াঃ তাহলে তুই আর আমি ত এক, তোর রুম আমারও রুম। যা এবার বের হ।
নির্জনঃ তুই আর আমি এক হলে এক সাথেই থেকে যাই!
ছোঁয়াঃ খবর্দার এই রুমে শুধু আমি থাকবো।
নির্জনঃ তাহলে আমি.?
ছোঁয়াঃ বাড়িতে অনেক রুম খালি আছে।
নির্জনঃ মানুষ কি ভাববে.? আমি সোফায় শুয়ে পড়ি..?
ছোঁয়াঃ আমি তোকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না।
নির্জনঃ তাহলে চোখ বন্ধ করে রাখবি।
ছোঁয়া বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে নির্জনের দিকে ছুড়ে মারলো।
নির্জন সরে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল।
________________
মহুয়া ব্যাগ গুছিয়ে নিল। সকাল সকাল বের হতে হবে না হয় ট্রেন পাওয়া যাবে না।
আলভি একবার মায়ের দিকে আরেকবার দরজার দিকে তাকালো।
ছোট বাচ্চা হয়তো মায়ের এমন হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণে ভয় পেয়েছে।
মহুয়া ছেলের গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,’ কিছু খাবে.?’
আলভি মাথা নেড়ে না বুঝালো।
মহুয়া লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।
বারান্দায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে মিম। কিছুতেই চোখ বন্ধ করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করলেই রাফির চোখ ভর্তি জল, কষ্টে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ভেসে উঠছে।
মিম কি ভুল কিছু করেছে.? একজনের পূর্নতা দিতে গিয়ে অন্য জনের মন ভেঙেছে? ছেলেটা এখন কেমন আছে.? ঠিক আছে ত.? এইসব ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে নিজের চুল টেনে ধরে মাথা নিচু করে নিল।এতোটা অশান্তি, ছটফট লাগছে কেন.?
আহনাফ মহুয়ার রুমের সামনে এসে রুমের চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
মহুয়া আলভিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
মিম দরজা খুলার শব্দ পেয়ে রুমে এসে আহনাফ কে দেখে চোখ বড় বড় করে নিল।
আহনাফ ইশারায় চুপ থাকতে বলে আস্তে করে মহুয়ার পাশে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
মিম ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সবার জীবনে সুখ নেমে আসুক বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ভুলে সবাই সুখী হোক। মিম গিয়ে আলভির পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
আহনাফ ছাঁদে এনে মহুয়াকে দোলনায় শুইয়ে দিল। চাঁদের আলোয় মহুয়ার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আহনাফ মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো মহুয়ার দিকে।
মহুয়ার মুখের উপর কয়েকটা চুল এসে বিরক্ত করছে। আহনাফ হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিল।
আহনাফঃ আমার ভুল হয়ে গেছে মেহু,অনেক বড় ভুল,আমি কিভাবে এই ভুল সুধরে তোমাকে আমার করে নিব.? কিভাবে তোমার মনের ঘৃণা সরিয়ে ভালোবাসায় পরিণত করবো! আদৌও কি তুমি আমাকে ক্ষমা করবে.? সব কিছু কি আগের মতো হবে.? আমি কিভাবে পারলাম নিজের মানুষটার উপর সন্দেহ করতে! কিভাবে নিজের সন্তান কে অস্বীকার করলাম! আমার কেন আজ নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে! আমি তোমাদের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই।
আহনাফের চোখে পানি টলমল করছে, আজ এক এক করে সব কিছু তার মনে পড়ছে, কিভাবে পারলো সে এমনটা করতে! মহুয়া পবিত্র, মহুয়া ফুলের মতো পবিত্র ছিল কিভাবে কলঙ্কিত করলো সেই ফুলকে! আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ দূর আকাশের চাঁদের গায়ে কলঙ্কের দাগ থাকলেও আমার বউয়ের গায়ে নেই,আমার বউ পবিত্র ফুল। আমার বউয়ের কাছে এই চাঁদের আলো ফিকে,আমার বউ সবচেয়ে সুন্দর মনের অধিকারী , আমার বউ সবচেয়ে সুন্দরী। আমি সব ঠিক করে নিব। যেভাবেই হোক সব ঠিক হবে আমার সন্তান বউ আমার বুকে ফিরে আসবে।
___________
সকালে ছোঁয়া উঠলো দশটায়। ঘুম থেকে উঠে দেখে রুমে কেউ নেই। আস্তে করে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল।
আমেনা বেগম মন খারাপ করে বসে আছেন৷ দেখেই মনে হচ্ছে কান্না করেছেন। বাড়ির সবার মন খারাপ। সে কিছু বুঝতে পারলো না, বুঝতে চাইলোও না,সোজা চলে গেল রান্না ঘরে। কফি হাতে নিয়ে মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,’ কি হয়েছে মন খারাপ কেন.?’
মেঘলাঃ মহুয়া চলে গেছে।
মহুয়া চলে গেছে শুনে খুব কষ্ট পেল ছোঁয়া। ওকে একবার বলে যেতে পারতো! একবার ত বলতো চলে যাচ্ছি অথচ মহুয়া ওকে আপন মনে করে না। সবাই দেখলো শেষ বার ও দেখতে পারলো না। কফি হাতে নিয়ে সোজা উপরে চলে গেল ছোয়া।
আহনাফ বাসায় আসতেই আমেনা বেগম রাগী চোখে তাকালো।
আহনাফ বুঝলো মা কেন এতো রেগে আছে।
আহনাফ মায়ের পাশে বসতেই আমেনা বেগম মুখ অন্য দিকে করে ফেললো।
আহনাফ মায়ের হাতে হাত রেখে বললো,’ মাত্র কয়েকদিন আম্মু একটু অপেক্ষা করো। ওরা নিজ থেকে আসবে। ‘
আমেনা বেগম কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল। আহনাফ সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে নিজের রুমে চলে গেল।
মহুয়া ট্রেনে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু ফেলে যাচ্ছে। ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, চোখে অজান্তেই পানি এসে জমা হচ্ছে, মনে হচ্ছে মন আকাশে মেঘ জমেছে এখনি টুপ করে বৃষ্টি শুরু হবে।
আলভি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিম রেগে বলে উঠলো, ‘ এতো কষ্ট হলে আশার কি দরকার ছিল.?’
মহুয়াঃ কিসের কষ্ট.?
মিমঃ শাক দিয়ে মাছ ডাকতে হবে না,তোমার চোখে মুখে স্পষ্ট কষ্টের ছাপ।
মহুয়াঃ আমাদের মধ্যে সব শেষ। কি পরিচয়ে থাকতাম, আর এমন মানুষের সাথে থাকার কল্পনা ও করি না।
মিমঃ আমি জানি কিছু শেষ হয়নি, না আহনাফ ভাই সাইন করে ছিল আর না তুমি। মানুষের ভুল হয় আপু, জীবনে ভুল থেকেই ত আমরা শিক্ষা পাই। সব ভুলে আলভির দিকে তাকিয়ে সব ঠিক করে নাও।নিজেও কষ্ট পাচ্ছ ভাইয়াকেও দিচ্ছ আর তোমাদের জন্য আমার ছোট আলভি বাবার ভালোবাসা পাচ্ছে না।
মহুয়া চুপচাপবাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই টপিক বাদ, আজকের পর আর কখনো এই বিষয় কথা হবে না, ফেলে যাচ্ছি সব অতীত এখানে। ‘
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।