#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
” এ আমার ছেলে নয় আম্মু! আমার রুম থেকে নিয়ে যাও”
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমেনা বেগম।
আমেনা বেগমঃ আহনাফ কি বলছো নিজে জানো.?
আহনাফ কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নিল।
আমেনা বেগমঃ একবার ওর দিকে ভালো করে তাকাও.. এই ছোট্ট বাচ্চাটার মাঝে কি নিজেকে দেখতে পাচ্ছ না.?
আহনাফঃ আমার রুম থেকে ওকে নিয়ে যান আম্মু।
আমেনা বেগমঃ নিজের এই অযথা রাগের জন্য একদিন পস্তাবে।
আমেনা বেগম আলভিকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আলভি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো আহনাফের দিকে।
আহনাফ নিজেও আমেনা বেগমের অগোচর তাকিয়ে রইলো আলভির দিকে খুব ইচ্ছে হলো আলভিকে একটু ছুঁয়ে দেখার কিন্তু নিজের রাগ, অভিমানের জন্য সেটা পারলো না।
আলভিকে পেয়ে বাড়ির প্রতিটা সদস্য ভীষণ খুশি। শুধু দেখা নেই নির্জনের।
আলভি অসুস্থ হয়েও এক মিনিট এক জায়গায় থাকছে না, সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ওকে দেখে মনেই হচ্ছে না এই বাড়িতে ও প্রথম এসেছে। বাচ্চারা হয়তো এমনি আদর, ভালোবাসা পেলে সেই জায়গা আর মানুষ দুইটাই আপন ভাবতে শুরু করে।
মহুয়া বসের কাছে কল দিতেই লোকটা রেগে এটা সেটা শুনিয়ে দিলো।বেতন কেটে রাখবে। এক দিনের ভেতর অফিসে না গেলে জব থেকে বের করে দিবে বলে হুমকি দিয়ে কল কেটে দিলো৷
মহুয়া মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো৷ বসটা খুব রাগী ওর কথা না শুনেই এতোগুলা কথা শুনালো বেয়াদব লোক। বেটার বউ যে শুধু শুধু তারে ডিভোর্স দেয় নাই এটাই তার প্রমাণ, এইসব লোকের সাথে দুই মিনিট থাকা যায় না আর সেখানে সারাজীবন থাকার কথা ভাবা ত…
মহুয়া মিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ সকালেই আমরা বাড়িতে চলে যাব। ‘
মিমঃ আচ্ছা, আমার ভার্সিটি আর তোর অফিস আছে।
মহুয়াঃ হুম, অফিসে গিয়ে আরও কতো কথা শুনতে হবে।
মিমঃ তোর ওই বজ্জাত বসকে একটা শিক্ষা না দিলে ঠিক হবে না।
মহুয়াঃ খবর্দার উল্টা পাল্টা কিছু করবে না কিন্তু।
মিমঃ উল্টা পাল্টা কিছু করবো না, উনার ত একটা কিউট বোকা ছেলে আছে তাই না.? আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে আমার সিনিয়র।
মহুয়াঃ ত!..?
মিম হাই তুলে বলে উঠলো, ‘ না, না কিছু না।
মহুয়াঃ কোনো ঝামেলা করো না, যাদের দেখতে হাবলা, বোকা মনে হয় তারা আসলেই বিপরীত মুখি হয়।
মিমঃ আরে আপু কিছুই করবো না তুমি এইসব নিয়ে চিন্তা করো না।
মহুয়াঃ মনে থাকে জেনো! আমি কিন্তু তোমাকে খুব ভালো করে চিনি।
মহুয়া মোবাইল রেখে আলভির কথা জিজ্ঞেস করলো।
মিমঃ আলভি তোর শশুরের কাছে।
শশুর এসেছে শুনে মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আজাদ চৌধুরী মহুয়াকে দেখে বেশ খুশি হলো তাও মুখে গম্ভীরর্য এনে বললো,’ এতোদিন কোথায় ছিলে.? হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলে! এতো খুঁজেও কেউ কোথাও পায়নি।
মহুয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আজাদ চৌধুরী মহুয়াকে বসতে বললো।
মহুয়া বসলো।
আজাদ চৌধুরীঃ স্বামী স্ত্রী মধ্যে ঝগড়া, ভুল বুঝাবুঝি হয় তার মানে এই নয় দূরত্ব তৈরি করবে।অন্তত আমাদের কথা একবার ভাবতে! সবাই তোমাকে কতোটা ভালোবাসে সেটা ভাবতে। ঝগড়া হলে ইচ্ছে মতো ঝগড়া করে নিতে কিন্তু এটা কেমন হলো আজ পাঁচটা বছর তোমার কোনো খুজ নেই, আহনাফ হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে দেশ ছাড়লো। যা হয়েছে তা ভুলে যাও আমাদেরও বয়স হয়েছে এখন নাতিনাতনিদের সাথে খেলা করার সময়। অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে আমি চাই এখন থেকে তুমি এখানে থাকো, আমাদের নাতি আমাদের বুকে থাক।
মহুয়া মাথা নিচু করে বলে উঠলো, ‘ আব্বু আমার কাল বাড়ি ফিরতে হবে, অফিসে ঝামেলা হচ্ছে। আমি আবার আসব,মাঝে মাঝে আলভি আসবে আপনারাও গিয়ে দেখে আসবেন।
আমেনা বেগম মাঝ থেকে বলে উঠলেন,’ আমি কিছুতেই আমার নাতি কে যেতে দিব না। মহুয়া আমাদের কি কোনো কিছুর কম আছে.? তোমার কেনো অফিস করতে হবে! অনেক কষ্ট করেছো আর না।
মহুয়াঃ প্লিজ আম্মু..
আমেনা বেগম কিছু বলতে গেলে আজাদ চৌধুরী থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমার অফিসের নাম বলো।’
মহুয়া অফিসের নাম বলতেই আজাদ চৌধুরী হেঁসে বললো,’ কোনো টেনশন নেই আমি তোমার ছুটি নিয়ে নিচ্ছি কয়েকদিন এখানে থাকো আমরা আমাদের নাতির সাথে সময় কাটাই।
মহুয়া আর কিছু বললো না, তবে মনে মনে বলে উঠলো, ‘ কার জন্য থাকবো.? যাকে ভালোবেসে হাত ধরলাম সেই অবিশ্বাস করে সব শেষ করে দিল! আমার যে তাকে দেখলেই দমবন্ধ হয়ে আসে।’
______________
আহনাফ আলভির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আলভি আহনাফ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আহনাফ আলভির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এতোটা মিল কিভাবে হতে পারে!.? একে দেখলে আমার অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায়, কতোটা আপন নিজের মনে হয়, কাছে এনে ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে হয়, বুকে জড়িয়ে রাখতে মন চায়, কিন্তু এমনটা কেনো হয়!.? তাহলে কি আমি ভুল করছি.?আহনাফের তখন শ্রাবণের বলা একটা কথা খুব মনে পড়লো,’ আহনাফ ভালো করে বাচ্চাটার দিকে তাকা! কি দেখতে পাচ্ছিস.? এই যে আমাদের ছোট আহনাফ। তুই যা করেছিস, করছিস সবটা ভুল আগে সত্যিটা জানার দরকার ছিল। এখনো সময় আছে সবটা জানার চেষ্টা কর। বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে দেখ নিজের মনে হয় না.? মহুয়া কেমন সেটাও তুই ভালো করে জানিস! তারপর ও তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করলি.?
আহনাফ কি তাহলে সত্যি ভুল করছে.? আবার আলভির দিকে তাকালো। চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে আবার ঠিক করলো।
মহুয়া আলভিকে খুজতে খুঁজতে আহনাফের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো।
দরজা নক করতেই আহনাফ বিরক্ত হলো। সে তার ছেলেকে মন ভরে দেখছে কেনো কেউ ডিস্টার্ব করবে!
আহনাফ দরজা খুলে মহুয়াকে দেখেই থমকে গেলো।
মহুয়া আমেনা বেগমের একটা শাড়ি পড়েছে, ভেজা চুল কি স্নিগ্ধ লাগছে মহুয়া কে।
আহনাফ সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়ালো।
মহুয়া উঁকি দিয়ে বিছানায় আলভিকে দেখে রুমে ঢুকে পড়লো। বিছানার পাশে গিয়ে আলভিকে কোলে নিতে চাইলে আহনাফ ওর হাত ধরে ফেললো।
মহুয়া রেগে হাত ছাড়তে বললে আহনাফ আরও দ্বিগুন রাগ দেখিয়ে বললো,’ আলভি ঘুমাচ্ছে। ‘
মহুয়াঃ আমার ছেলেকে এখানে কে এনেছে.?
আহনাফঃ আমি।
মহুয়াঃ কেনো.?
আহনাফঃ আমার ইচ্ছে।
মহুয়াঃ আমার ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকবেন।
আহনাফঃ যদি না থাকি.?
মহুয়াঃ আমি ঘুমাবো।
আহনাফঃ তোমাকে ধরে রেখেছে কে যাও ঘুমাও..
মহুয়া আলভিকে নিতে গেলে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আলভি আমার সাথে ঘুমাবে।’
মহুয়াঃ আলভি আমাকে ছাড়া আর কারো সাথেঘুমায় না।
আহনাফঃ অথচ আলভি আমার সাথে ঘুমাচ্ছে।
মহুয়াঃ আপনার সাথে আমি ঝগড়া করতে চাচ্ছি না।
আহনাফঃ আমারও কারো সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই। আলভির ঘুম ভেঙে যাবে চুপচাপ চলে যাও।
মহুয়াঃ এখন কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে!
আহনাফঃ তুমি চলে গেলেই হয়।
মহুয়াঃ কেনো আমি চলে গেলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে সুবিধা হবে তাই.?
আহনাফের ভীষণ রাগ হলো তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে উঠলো, ‘ কি বলছো এইসব!.?
মহুয়াঃ আপনি ত বলে ছিলেন এই সন্তান আপনার নয়! যেখানে সন্তানের কথা শুনলে অন্যন্য বাবারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সেখানে আমার সন্তান কি পেয়ে ছিল.? আমি কি অপবাদ পেয়ে ছিলাম.?
আহনাফঃ মিথ্যা ত বলিনি!
মহুয়া রেগে চোখ গরম করে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আলভিকে কোলে তুলে নিল। দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে পেছন ফিরে বলে উঠলো, ‘ একদিন এইসব কিছুর জন্য আপনি পস্তাবেন! সেই দিন আপনার আপসোস আর্তনাদ আমার কান পর্যন্ত যাবে না।’
________________
ছোঁয়া বাসায় এসে অবাক হলো। চেয়ারে বসে আছে রাফি। রাফির সাথে একজন মহিলা আর একটা মেয়ে।
ছোঁয়া কে দেখে রাফি হেঁসে তাকালো বিনিময়ে ছোঁয়াও হাসলো। ওইদিন পর আজ আবার দেখা কিন্তু বাসা চিনলো কিভাবে.? আর এখানে কি করছে.?
মহিলাটা ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এদিকে আসো মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।’
ছোঁয়া কিছু বুঝতে পারছে না বোকার মতো হেসে মহিলার পাশে গিয়ে বসলো।
মেয়েটা বলে উঠলো, ‘ ভাবি আপনাকে দেখার জন্য আজ এক সপ্তাহ ভাইকে ভীষণ জ্বালিয়েছি, ভাই কিছুতেই দেখাতে চাইছে না, আমি বললাম আমার নজর খুব ভালো তাও দেখাবে না হুট করে আজ আমাদের নিয়ে এসে সারপ্রাইজ দিল। ‘
ছোঁয়া মনে মনে বলে উঠলো, ‘ ভাবি!’
রাফি চোখ গরম করে তাকাতেই মেয়েটা মুখে আঙ্গুল দিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো বসে রইলো।
নিরুপমা রান্না ঘরে তাদের জন্য রান্না করছেন।
মহিলাটা উঠে রান্না ঘরে গিয়ে নিরুপমার সাথে কথা বলতে শুরু করলো, দেখা গেলো কিছু সময়ে তারা খুব ভালো বান্ধবী হয়ে গেছে একজন রান্না করছে ত আরেকজন এগিয়ে দিচ্ছে।
রাফি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কেমন আছো.? ‘
ছোঁয়াঃ ভালো,আপনি.?
রাফিঃ এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না, তোমাকে দেখে সুস্থ হয়ে গেছি।
ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে নিল।
~ দেখেছো ভাবি আমার ভাই কতো রোমান্টিক আগে ভাবতাম এই রসকষহীন ছেলেকে কে বিয়ে করবে! নিরামিষ একটা।
ছোঁয়াঃ আপনি আমাকে ভাবি কেনো বলছেন.?
মেয়েরা হিহি করে হেঁসে বললো,’ আমি রিমি।’
ছোঁয়াঃ আমি ছোঁয়া।
রিমিঃ তোমাকে ভাবি কেনো বলছি শুনতে চাও.?
ছোঁয়াঃ হু..
রিমি কিছু বলার আগেই রাফি গম্ভীর কণ্ঠে রিমির নাম নিতেই রিমি ভয়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে গেলো।
ছোঁয়া একবার রাফি আরেকবার রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনার বোন.?’
রাফিঃ আপন নয় তবে আপনের থেকেও বেশি। চাচাতো বোন, চাচা চাচি না থাকায় আমাদের কাছেই বড় হয়েছে।
ছোঁয়াঃওহ্..
ছোঁয়াঃ আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।
রাফিঃ হুম যান..
ছোঁয়া যেতেই রিমি আঙ্গুল সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ জান! তুমি এখনি জান ডাকতে শুরু করেছো!.? হাউ রোমান্টিক!! ‘
রাফি চোখ গরম করে তাকালো কিন্তু এবার মেয়েটে ভয় না পেয়ে মুখ ভেংচি কাটলো।
রাফি আর ওর পরিবার চলে গেছে অনেক সময় হলো। ছোঁয়া থমথমে মুখে বসে আছে। নিরুপমা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বিয়ের জন্য নিজেকে তৈরি করো, আমার কথাই হবে শেষ কথা।’
ছোঁয়া চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো।
নিরুপমা সবকিছু গুছিয়ে রাখছেন।
ছোঁয়ার ভীষণ কান্না পাচ্ছে সে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিরুপমা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। মা’য়েরা ছেলে মেয়ের ভালোটাই চায়,আর ছোঁয়ার শান্তি এখানেই।
নির্জন বাড়িতে এসে ড্রয়িং রুমে পিচ্চি দেখে অবাক হলো। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে পিচ্চি গিয়ে ওর পায়ে গ্লাস ফেললো সাথে সাথে গ্লাসটা ভেঙে গেছে সাথে নির্জনের পা অনেকটা কেটে গেছে।
নির্জন রাগ না দেখিয়ে পায়ের দিকে একবার পিচ্চির দিকে একবার তাকালো তারপর মনে মনে বলে উঠলো, ‘ বুকের ভেতর যেই ব্যথা নিয়ে আছি সেই ব্যথার কাছে এটা নিতান্তই ক্ষুদ্র ব্যথা। ‘
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।