#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ব্রিজের উপর বসে একের পর এক সিগারেটের টানে ভেতর, ঠোঁট পোড়াচ্ছে নির্জন।
সাজ্জাদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে।
নির্জনঃ এভাবে আমাকে দেখার কি আছে.? আগে কখনো দেখিসনি..??
সাজ্জাদ নিজেও সিগারেটে টান বসিয়ে ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে দিলো।
সাজ্জাদঃ কি করছিস তুই..? কেনো করছিস.?
নির্জন উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না।
সাজ্জাদ রেগে গেলো।
সাজ্জাদঃ তোর সমস্যা কি.? মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস এখানে নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস! ভালোই যদি বাসিস তাহলে অন্য কেউকে বিয়ে কেনো করছিস.?
নির্জন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ কে বলেছে ভালোবাসি!.? ও ওই মেয়েদের মতোই যাদের সাথে খেলা করা যায় বিয়ে নয়।টাইম পাস ছিল আর কিছু নয়।’
সাজ্জাদ নির্জনের কলার চেপে ধরলো,’ছিঃ তুই আমার বন্ধু ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা আসছে। ছোঁয়ার সাথে প্রেমের অভিনয় কেনো করেছিস! ওকে কেনো ঠকালি.? তোকে বন্ধু ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে। এমন একটা নিষ্পাপ, পবিত্র ফুলকে কেনো ছুঁড়ে ফেলে দিলি!.? মেয়েটার কথা একটা বার ভাব, সব শেষ করে ফিরে যা। কি সমস্যা খুলে বল। মেয়েটা তো তোর কাছে আসেনি তুই গিয়ে ছিলি। আল্লাহ না করুক এমন একটা দিন,রাত তোর জীবনে না আসুক। এলিনা মেয়েটা কেমন আমি খুব ভালো করেই জানি। বিয়ে করছিস কর আজ এই মুহূর্তে আমাদের বন্ধুত্ব শেষ।
নির্জন সাজ্জাদের হাত কলার থেকে ছাড়িয়ে ব্রিজ থেকে নেমে বাইকে উঠে বসলো।
সাজ্জাদ পেছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ একদিন তুই বুঝবি কি হারিয়েছিস! খুব ভালো করে বুঝবি। তবে সেই দিন কোনো লাভ হবে না। আঘাতে আঘাতে মানুষ পাথর হয়ে যায় চাইলেও সেই পাথরে আর ফুল ফুটানো যায় না। এখনো সময় আছে সব ঠিক করে ফেল।
নির্জন আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখে চশমা পড়ে বাইক নিয়ে এক টানে চোখের আড়ালে চলে গেলো।
_____________
ছোঁয়া এলোমেলো হাতে ডায়েরি খুঁজে বের করলো। কাল থেকে নিজের ভাবা মানুষটা অন্য কারো কিভাবে সহ্য করবে ছোঁয়া! এতো সুন্দর পৃথিবীটা কেমন দমবন্ধকর লাগছে। সুন্দর ভালো একটা পৃষ্ঠা দেখে লেখতে শুরু করলো,
” শেষবার যখন তীব্র আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলাম,
“তুমি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারো না”।
উত্তরে তুমি বলেছিলে “এরকম বহু মানুষ ঠকে”।
অতঃপর বুঝেছিলাম, ছেড়ে যাওয়াই তোমার উদ্দেশ্য ছিলো। বাকি সবতো নিছক অভিনয় মাত্র..
তুমি আজ এমন ভাবে ভুলে আছো যেনো আমাদের কখনো দেখাই হয়নি, আমি চোখ বন্ধ করলে এখনো তোমাকে দেখতে পাই,যেভাবে তৃষ্ণার্ত ক্লান্ত পথিক বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে দেখে মরীচিকা। আমি বার বার বলে ছিলাম,” আমাকে ভালোবাসতে এসো না।
যেদিন থেকে আমায় ভালোবাসবে, সেদিন থেকে তোমার পৃথিবীতে যুদ্ধ শুরু হবে।”
কিন্তু আজ দেখো তোমার পৃথিবীতে কতো শান্তি আর আমার পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি আমি প্রতি নিয়ত, বেঁচে থাকার যুদ্ধ।
এখন তুমি আমার কাছে এক অপরিসীম হাহাকার, যে হাহাকার সমর্পিত হয়ে রচিত হয়েছে শেষ গল্পের উপসংহার,এদিকে দরজার এপাশে আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে তোমার ফিরবার অপেক্ষায়। ক্যালেন্ডারের কয়েকটা পাতা পিছনে উল্টালেই ভেসে উঠে আমাদের অনড় প্রেমের দৃশ্য।
তোমার বাড়ি থেকে যখন আমাদের মা মেয়েকে অপমান করে বের করে দেয় তোমার মা। আমি শুধু চাতক পাখির মতো চারপাশে তোমাকে খুঁজেছি। যখন বলছিল খুনির মেয়ে আমার ছেলের বউ হতে পারে না তখন আমি তোমার অপেক্ষা করেছি। মৃত মানুষকে আর কিভাবে শাস্তি দেওয়া যায় বলবে!!.?
তুমি এসেছো পাঁচ বছরের লুকোচুরি ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটাতে।
এ শহরে যারা স্বপ্ন দেখে তাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে নিকৃষ্ট একটা সত্তা, খুনির মেয়ের হয়তো স্বপ্ন দেখা সাজে না। তুমি তো সব জানতে!
অথচ আজ সব মিথ্যা অভিযোগ আমার উপর দিয়ে দিলে। আজ খুব করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে ” কখনো ভালোবেসেছ কি..?”
আমি আজ আর কান্না করি না, আমার সকল কান্না জমিয়ে রেখেছি তোমার জন্য, আমি সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছি, যেদিন তোমারও ঠিক আমার মত বিষাদে ছেয়ে যাবে মন,আর হৃদয় হবে রক্তাক্ত, সে দিন আমি তোমার জন্য কাঁদবো, তোমায় হারিয়ে ফেলেছি ভেবে কাঁদবো না, আমার বিষাদের একটুকরো তুমি অনুভব করেছো বলে কাঁদবো।
আমার বিষাদের রঙ নীল নয়, নিকষ কালো। ”
ছোঁয়া ডায়েরিটা বন্ধ করে, কলম পাশে রেখে টেবিলের উপর চোখ বন্ধ করে নিল। মানুষটা তার না কখনো তার ছিল না।
____________
মহুয়া নিজের কাজ শেষ করে আলভির পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
মিম বই হাতে নিয়ে চশমা ঠেলে মহুয়ার রুমে নক করলো।
মহুয়াঃ দরজা খুলা আছে চলে আয়।
মিম রুমে এসে এদিক ওদিকে তাকালো।
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মিম দাঁত বের করে হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপা আজ কি হয়েছে জানিস.??’
মহুয়ার কোনো আগ্রহ দেখলো না জানার, তাও মিম চশমা উপরে তুলে আয়েশ করে বিছানায় বসলো।
মহুয়াঃ জলদি বলে বের হ অফিস জেতে হবে সকালে।
মিমঃ আগে শুনবি তো কি হয়েছে। আজ ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে দেখি সামনে যেই বাড়িটা আছে না, মাঝে মাঝে ছাঁদে কাঁথা সেলাই করে, পান খেয়ে দাঁত লাল করে রাখে মহিলাটা। তোকে দেখলেই মুখ কালো করে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
মহুয়াঃ কি বলবি সেটা বল।
মিম মুচকি হেঁসে বললো, ‘ উনি আজ তোর জন্য বিয়ে নিয়ে এসেছে। ‘
মহুয়া বিরক্ত হলো, বিয়ে নিয়ে এসেছে মানে কি.? আমার একটা চার বছরের বাচ্চা আছে। নাকে নাকফুল হাতে চুড়ি তাও মহিলার সমস্যা কি!.??
মিমঃ তাতে কি! উনার ছেলের নাকি তোকে পছন্দ। মহিলা তো সারা এলাকা বলেছে তোর জামাই নাকি মদ গাঞ্জা খেয়ে রাতে বাড়িতে এসে মারধর করে, কোনো কাজ করে না সেই জন্য তুই ছেড়ে দিয়েছিস। আরেকজন তো এই কথা শুনে বলে উঠলো ” প্রিন্সেস ডায়না ও সুন্দরী ছিল কিন্তু তাও স্বামীকে আঁচলে বাঁধতে পারেনি তুইও ত সুন্দরী ঠিক প্রিন্সেস ডায়নার মতো তাও নাকি স্বামীকে ঠিক করতে পারিসনি৷ প্রিন্সেস ডায়না আর তোর কপাল নাকি একই, সুন্দরী মেয়েদের স্বামী ভালো থাকে না, সংসার হয় না। এইগুলো শুনলে রাগ হয় না বল!.? আমিও দুই চারটা কথা শুনিয়ে দিয়েছি।
মহুয়াঃ ওই মহিলা আমাকে পছন্দ করে না মিম সেটা তুই সহ পুরো পাড়ার লোক জানে। আমরা কারো সাথে তেমন মিশি না যে যা ইচ্ছে বলুক তাতে কান না দিয়ে চুপ থাকবি। একদিন দুইদিন তিন দিনের দিন এমনিতেই রেসপন্স না পেলে চুপ হয়ে যাবে।
মিমঃ উনি তো তোকে হিংসে করে, উনার মেয়ে কুচকুচে কালো আর তুই দেখতে পরীর মতো স্বাভাবিক সব মহিলা, মেয়েরাই হিংসে করবে। মজার বিষয় কি জানিস!!.’
মহুয়াঃ না বললে জানবো কিভাবে।
মিমঃ মহিলা পান খেয়ে দাঁত বের করে সারা পাড়া তোর সৌন্দর্য নিয়ে এটা সেটা বলে বেড়ায়, আর ঘরে বেডির ছেলেই তোর সাথে বিয়ে না দিলে খাবার খাবে না বলে অনশন শুরু করেছে।
বলেই মিম হাসতে শুরু করলো, মিমের সাথে মহুয়াও হাসলো। ছাঁদে উঠলেই ছেলেটাকে দেখা যায় । সে জেনো নোট করে নিয়েছে মহুয়া কখন বাড়ি থেকে বের হয়, কখন ছাঁদে যায়। মিম তো নাম দিয়েছে চার চোখ ওয়ালা গাধা, চশমা ঠেলে তাকিয়ে থাকে মহুয়ার দিকে যদিও এখনো মহুয়ার সাথে কথা হয়নি আজ পাঁচ বছর ধরে দেখে আসছে। ছেলে বোকা টাইপের দেখতেই বুঝা যায়।
মিমঃ আম্মা তো একদম মুখের উপর বলে দিয়েছে আমার মেয়ে রাজি থাকলে আমার আপত্তি নেই তবে মেয়ে রাজি না হলে আমি আগাতে পারবো না৷ সকালেই দেখবি তোর হাতে পায়ে ধরছে।
মহুয়া আলভির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওকে সাবধানে রাখবি৷ আমি পারলে ওকে আমার সাথে অফিসে নিয়ে যেতাম। জানিসই তো আমাদের বস কেমন!.?আমি কাল অন্য কোথাও আমাকে বদলি করে দেওয়ার জন্য লেটার জমা দিব।
মিমঃ কেনো.?? এখানে আজ পাঁচ বছর ধরে আছি আপু। আবার অন্য কোথাও কেনো.? নিজের শহর ছেড়ে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা তো কোনো দোষ করিনি তাও কেনো এতোকিছু!!.??
মহুয়াঃ এটা যে আমার পাপের শাস্তি, ভালোবাসার মতো বড় পাপ করে ছিলাম তার শাস্তি। কারো বিশ্বাস ভাঙার শাস্তি। মৃত্যু পর্যন্ত এই শাস্তি আমার পিছু ছাড়বে না।
মিমঃ আহনাফ ভাইকে সবটা বলে দিলে হয়তো…
মহুয়াঃ যা রুমে যা অনেক রাত হয়েছে।
মিম চশমা ঠেলে বই হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
মহুয়া মিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের কোনের পানিটা মুছে নিল। আজ ওর এই পরিস্থিতি ও নিজে তৈরি করেছে। আহনাফের বিশ্বাস ভেঙেছে, লোকটা আজও ওকে এক আকাশ সমান ঘৃণা করে। যেই চোখে ভালোবাসা ছিল সেই চোখে ঘৃণা কিভাবে সহ্য করবে মহুয়া! তাই ত পালিয়ে বেড়াচ্ছে। উনি কি বিয়ে করেছে.? আজ একবার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মানুষটাকে। মহুয়া কি একবার কল দিবে!.? আজ পাঁচ বছর পর মানুষটির কন্ঠস্বর শুনে নিবে! আজ যার জন্য আকাশ সমান দূরত্ব তাকে কিছুতেই ছাড়বে না মহুয়া। খুব শাস্তি পেতে হবে তোমাকে, নিজ থেকে ফাঁদে পা দিতে চাচ্ছ। আমি নিজ হাতে তোমাকে শাস্তি দিব!! আমার থেকে আমার স্বামীকে কেঁড়ে নেওয়ার শাস্তি। পাঁচ বছর আগের হিসাব সব চুকিয়ে নিব! এই পাঁচ বছরে হারানো সব কিছুর হিসাব ফিরিয়ে দিব, বুঝিয়ে দিব কাছের মানুষ হারানোর যন্ত্রণা!!
_______________
রাত ২টায় বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ালো আহনাফ।
দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে আমেনা বেগম। চোখে মুখে ছেলেকে দেখার ব্যাকুলতা।ছেলেকে দেখতেই জড়িয়ে ধরে রাখলেন।
আহনাফ এক হাতে মা’কে জড়িয়ে ধরলো। কতো বছর পর বাড়িতে পা রাখতে যাচ্ছে। বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। বাড়িতে আসতেই বুক কেমন ফাঁকা মনে হলো। সবার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো।
কেউ ঘুমায়নি, আহনাফ আসছে শুনেই বাড়িতে আনন্দের শেষ নেই তার মধ্যে বাড়ি ভর্তি মেহমান।
আহনাফ এতো মানুষ দেখে কিছুটা অবাক হলেও প্রকাশ করলো না। সবার সাথে টুকটাক কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
আমেনা বেগম ছেলেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বললো। কেমন শুকিয়ে গেছে নিশ্চয়ই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেনি, নিজের যত্ন নেয়নি। আজ নিজ হাতে খাইয়ে দিবেন ছেলেকে।
শ্রাবণ নিজেও ভীষন খুশি হলো আহনাফ কে দেখে। মেঘলাকে জোর করে ঘুম পারিয়েছে এই সময় রাত জাগলে বাবুর সমস্যা হবে।
নির্জন বাসায় আসলো ৩টার দিকে। বাড়িতে এসে সবাইকে জেগে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়ে বললো,’ আগামীকাল আমার বিয়ে তোমাদের চোখে ঘুম নেই! কি আজব। যার বিয়ে তার খবর নেই বাড়ির মানুষের ঘুম নেই।
আমেনা বেগম রেগে তাকালো নির্জনের দিকে।
নির্জন চুপ হয়ে গেলো। বড় মা ইদানীং নির্জনের সাথে তেমন কথা বলে না। বিয়ের কথা উঠলেই রেগে যান।
নির্জন এক গ্লাস পানি খেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে থমকে যায়, চোখ কচলে আবার তাকায়। না সে ভুল দেখছে না ওর সামনে আহনাফ দাড়িয়ে।তাহলে কি আহনাফ ওর বিয়ের খবর পেয়ে বিয়ের জন্য এসেছে..!!
নির্জন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আহনাফ কে।
আহনাফ নিজেও বুকে জড়িয়ে ধরলো নির্জন কে।
নির্জন আহনাফের সাথে বসে টুকটাক কথা বলে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য উঠতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ ফুপিমণি আর ছোঁয়া কোথাও!.? ওদের দেখলাম না ঘুমিয়ে আছে মনে হয়।
আমেনা বেগমের হাত থেমে গেলো। নির্জন পা বাড়াতে গিয়ে থমকে গেলো।
হালিমা বেগম আহনাফের জন্য খাবার টেবিলে সাজিয়ে বলে উঠলো, ‘ খাবার খেতে আসো আহনাফ এইসব বিষয় পরে কথা হবে। আজ এসেছো রেস্ট নাও আস্তে ধীরে সব জানতে পারবে, সবার বিষয় জানতে পারবে।’
আহনাফ কথা বাড়ালো না, রেস্ট নিতে হবে। বাড়িটার দিকে একবার তাকালো। কতো বদলে গেছে বাড়ি। এতো সাজগোজ বাড়িটা দেখতে বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে, সবাই বেশ ভালো আছে। বাড়িতে কি কারো বিয়ে!.? আহনাফ মাথা না ঘামিয়ে টেবিলের দিকে চলে গেলো। বাড়িতে যা ইচ্ছে হোক আহনাফ যেই কাজের জন্য এসেছে তা শেষ করেই চলে যাবে।
________
নির্জন মায়ের রুমে প্রবেশ করে গুটিশুটি মেরে মায়ের কোলে মাথা রাখলো।
হালিমা বেগম ছেলের মাথায় হাত রাখলেন।
নির্জন ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আম্মু একবার ভেবে দেখো না, এখানে তো ওর দোষ নেই। তোমাকে সব সময় ভালো রাখতে চেয়েছে। প্লিজ আম্মু এতো পাষাণ হইয়ো না। আমি ওকে ছাড়া বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে যাচ্ছি। এমনটা হতে থাকলে আমি শেষ হয়ে যাব। তোমার কসম তুমি ফিরিয়ে নাও। ওকে ফিরিয়ে আনো, এতোটা কঠিন ত তুমি না, তাহলে আজ কেনো হতে চাইছো? এতে তো ওদের দোষ ছিল না। তুমি জানো এলিনা কেমন মেয়ে ওর সাথে সংসার করার চেয়ে আমাকে মেরে ফেলো। আজ আমি তোমার সামনে ভীষণ অসহায় আর এই কঠিন খেলার অভিনয় করতে পারছি না।
হালিমা বেগম চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে।
____________
শ্রাবণ রুমে এসে দেখে মেঘলা কেমন এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে।
শ্রাবণ মেঘলার চুলগুলো সরিয়ে বেঁধে দিল। একটা কাপড় পানিতে ভিজিয়ে এনে মেঘলার হাত, পা, গলা, মুখ আলতো করে মুছে দিল।
মানুষ বলে সময়ের সাথে নাকি ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়। শ্রাবণ ত দিন দিন এই মেয়েটার ভালোবাসায় ডুবে যাচ্ছে যেখান থেকে ফিরে আশা শ্রাবণের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়৷ আমি প্রতিদিন নতুন ভাবে আপনার প্রেমে পড়ি৷ চাইলে এক জনকেই হাজার ভাবে ভালোবাসা যায়। আমি আপনার মাঝেই নিজের সুখ,শান্তি খুঁজে পাই৷ অফিস থেকে এসে আপনার মুখ দেখলেই আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মেঘলার গরম একটু বেশিই লাগে শরীরে ঠান্ডা পেয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে।
শ্রাবণ মেঘলার কপালে গভীর একটা চুমু দিয়ে বলে উঠলো, ‘ জীবনের শেষ দিনেও আপনাকে আমার পাশে চাই,বৃদ্ধ বয়সে যখন চশমা খুঁজে পাব না আপনি হাতে তুলে দিবেন৷, আর বলবেন তুমি বড্ড মন ভুলা। ‘
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।