মেঘময় চাঁদ পর্ব-০৩

0
541

#মেঘময়_চাঁদ
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা

ওর অনেক শখ হয়েছে বিয়ে করার বুঝলে। তাই ভার্সিটির প্রথম দিনেই ক্রাশ খেয়ে চিঠি দেয়া শুরু করছে ছেলেদের কে।
শুভ্র ভাইয়ের এরুপ কথা শুনে আমি তার দিকে বিষ্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলাম।
এদিকে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে।
আমার গলায় খাবার যেনো আটকে গেছে। ওই চিঠিতে বিয়ের কথা লিখা ছিলো।
ভয়ে আমার চেহারা নীল বর্ন ধারন করেছে।
ডাইনিং এ উপস্থিত থাকা সবাই এখনো তাকিয়ে আছে।
বড় বাবাই কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনি শুভ্র ভাই বলে উঠলেন
আরে আমি তো মজা করছিলাম।
ও খাচ্চিলো না তাই ও যাতে দ্রুত খেয়ে নিতে পারে তাই বলেছি।
আমাদের তরী করবে প্রপোজ তাও আবার ছেলেদের এটা তোমরা বিশ্বাস করতে পারলে।
এবার যেনো সবাই একটু স্বস্তি পেলো।
কিন্তু আমার ভেতরের ভয়টা যেনো আরো বেশি করে বেড়ে গেছে।
আমি কিভাবে শুভ্র ভাইয়ের সামনে যাবো।
আর কেউ না জানলেও তো আমি জানি ঘটনাটা সত্যি।
আমার আনমনা ভাব দেখে এবার ভাইয়া নিচু স্বরে বললেন খাবার শেষ করে বেলকনিতে আয় তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
বলেই শুভ্র ভাই উঠে দো তলার দিকে চলে গেলেন।
আমার খুব টেনশন হচ্ছেশুভ্র বাই কি যে বলবে
আমার মা আমাকে বসে থাকতে দেখে বলরেন কিরে তরী তোর কি খাবার ভালো লাগছেনা, তাহলে বল নতুন করে বানিয়ে দেই, আর হ্যা খেয়ে রেডি হোস তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে তো।
আচ্ছা মা। বলেই আমি উঠে উপড়ে চলে আসলাম। কারন ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে শুভ্র ভাই আমাকে কি বলবে।

শুভ্র ভাইয়ের কথা মতো বেলকনিতে গিয়ে দেখি সে তার রুমের বেলকনিতে একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে সকালের সূর্যের তাপ নিচ্ছেন।
আমি বারান্দায় গিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি, কি বলবো বুঝতে পারছি না।
শুভ্র ভাই হয়তো কালকের বিষয় নিয়ে রেগে আছেন।

অনেক্ক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ শুভ্র ভাই বলে উঠলেন এভাবে মূর্তির মতো আর কত সময় দাড়িয়ে থাকবি? তোকে কেনো আসতে বলেছি সেইটা জানতে চাইবিনা।
যানি জানতে চাইবিনা। কারন তুই আমাকে ভয় পাস। তুই যখনি এসেছিস তখনি বুঝতে পেরেছি, আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো আমাকে ডাকবি। কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুই নিজে থেকে যেচে পড়ে কথা বলতে পারিস না।

আসলে ভাইয়া আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো বিরক্ত বোধ করবে তাই আর কিছু বলিনি।
তুই যে আহাম্মক সেইটা আমার বোঝা উচিত ছিলো। তুই তো নিজ থেকে কিছু বলতে পারিস না।
আচ্ছা বাদ দে। কালকে তোকে কে দিয়েছিলো ওই কাগজটা।
জানি রেগিং করা হয়েছে তোর সাথে।
ভাইয়ার প্রশ্নে আমি আরো বেশি অসস্থি ফিল করছি, আমি ভার্সিটিতে প্রথম দিন গিয়েই উল্টা পাল্টা কাজ করে বসেছি। আর মেয়েটার চেহারা দেখলে চিনবো বাট ভাইয়া কে বলবো কিভাবে।

কিরে চুপ করে আচিস কেন? কিছু জানতে চেয়েছি।
আসলে ভাইয়া, আমি ইচ্ছে করে তোমার কাছে যেতে চাই নি, কিন্তু মেয়েটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে তোমার কাছে পাঠিয়েছে।
হ্যা আমি জানি এখন বল কোন মেয়ে?
আমি তো নাম জানিনা।
চেহারা দেখলে চিনতে পারবি।
হুম চিনতে পারবো, কিন্তু ওরা তো সিনিয়র যদি পড়ে কোনো সমস্যা করে।
সেসব তোকে ভাবতে হবে না।
আর শোন নিজেকে বদলা। এবাবে নিজেকে গুটিয়ে নিলে সবাই তোকে শুধু চেপেই ধরবে। নিজের জায়গা নিজেকে করে নিতে হয়। কেউ কারো জায়গা ছেরে দিবে না।বুঝলি পাগলি।
আজ যেয়ে কাজ নেই বিশ্রাম নে। সুস্থ হয়ে যেই দিন যাবি দেখবি সবাই কি করে।
হুম। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই মিছিং।
এহ্ আসছে আমার মিছিং রে, কাল রাতে যে একশো তিন ডিগ্রির উপরে জ্বর উঠে ছিলো সে বেলায়।
আসলে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। অত মানুষ দেখে।
হ্যা সেতো আমি জানি।
সরি ভাইয়া,চিঠি তো আমার ছিলো না। আমি তোমাকে দিতে চাইনি। আর জানতাম ও না যে কি লেখা ছিলো।
না জেনে দিয়েই ভালো করেছিস।(মনে মনে)
কিছু বললে ভাইয়া?
না তো কই কি বলেছি। যা তারাতাড়ি তৈরি হ, তোকে ডক্টর দেখিয়ে আমি আবার মেসে চলে যাবো।
আচ্ছা ঠিক আছে।
নিচ থেকে মায়ের গলার আওয়াজ আসছে,
কিরে তরী তোর হলো, আর কত সময় লাগবে রে মা।
এই তো মা আসছি।
শুভ্র ভাইকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি রুমে চলে গেলাম তৈরি হওয়ার জন্য।
আলমারি থেকে একটা মেরুন রং এর থ্রি পিছ নিয়ে পড়ে নিলাম৷ আর সাথে একটা হেজাব, এতো কিছুর পরও আমাদের বাড়ির মেয়েদের আবার হিজাব পড়ে বেড় হওয়ার একটা নিয়ম আছে। যার বাইরে আমরা কখনো যাই না।
রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেলাম মামনি বড় ফুপির সাথে ফোনে কথা বলছেন।
আমাকে দেখে ফোন সাইডে দিয়ে বললেন, তোর বড় ফুপি আসছে সাথে উর্মি রুমিও আসবে। কত দিন পর মেয়ে দুটো এবাড়িতে আসছে বল।
তোর ফুপি তোর অসুস্থতার কথা শুনে একেবারে অস্থির হয়ে গেছে।
সাবধানে যাস।
আমি মামনিকে জড়িয়ে ধরে বললাম, তোমার মমতা আমার সাথে আছে না।
হ্যা হ্যা সব ভালোবাসা তোমার তরী কেই দেও, আমি তো বানে ভেসে এসেছি।
শুভ্র ভাইয়ার গলার আওয়াজ শুনে আমি মামনী কে ছেরে চুপচাপ সরে দাড়ালাম।
হ্যা তুই বানের জলে ভেসেই তো এসেছিস।
আরে বুবু কি বলছো, আমার মেয়ের অনিয়মের জন্য আজ শুভ্রর কত ক্ষতি হলো বলোতো। ওর এসাইনমেন্ট গ্যাপ পড়েছে কালকের, আবার সামনে তো ইলেকশ কত কাজ ছেলেটার বলো তো।
এই রাজনৈতিক ব্যাপার কি আমাকে না বলরে হয় না।
ও হ্যা লাবনি বড় আপা আসছেন সাথে জমজ দুইটাও আসবে, হসপিটাল থেকে আসার পথে একটু বাজর থেকে বড় মাছ, আর সবজি নিয়ে আসিও তো।
ঠিক আছে আপা।
বাহ্ ভালো তো উর্মি রুমিকে পেলে তরী রানি তো একদম ভালো হয়ে যাবে। যাই হোক,
মা আমি তরী কে হসপিটালে দিয়ে ওখান থেকে একটু কাউন্সিল অফিসে যাবো তারপরে মেসে চলে যাবো। আমার এসাইনমেন্ট গ্যাপ দেয়া যাবেনা। সামনে আবার ভার্সিটিতে নবিন দের বরনের পিপারেশন আছে।
তাই বলে তুই একটু বাড়িতেও আসবিনা বাবু।
আজ তোর ফুপি আসবে। তাদের সাথে দেখা করবি না।
মা ফুপি তো এসে কয়েকদিন থাকবে। আমি নাহয় ফ্রাইডেতে এসে দেখা করে যাবো। আজ থাকতে বলো না।
কি আর করবো বল তোরা এখন বড় হয়েছিস এখন চাইরেো তো তোদের কিছু বলতে পারি না। তার উপর তোর পড়া লেখার বিষয়ে আমি কিইবা বলবো। তোর যা ভালো মনে হয়।
আমি জানি শুভ্র ভাই যদি না থাকে আজ তাহলে মামনী কে কথা শুনতে হবে।
বড় ফুপি এখনো মামনী কে ছেরে কথা বলেন না।
এই এভাবে সং এর মতো দাড়িয়ে আছিস কেন। যাবিনা নাকি।
ছোট মা তুমি তরী কে নিয়ে এগুও আমি গাড়ির কাছে যাচ্ছি। আজ আবার ড্রাইভার ছুটি নিয়েছে, তার বউয়ের নাকি শরীর খারাপ।
আমি আর মা মামনীর থেকে বিদায় নিয়ে শুভ্র ভাইয়ার জন্য বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম।
কিছু সময় পর ভাইয়া গাড়ি নিয়ে আসলে আমি আর মা উঠে পড়ি।
হ্যারে বাবু তুই একটু কষ্ট করে তরীকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে যেতে পারবি না। আমি বড় আপা আসবে আমি একটু বাজার যেতাম।
ছোট মা তুমি তরী কে নিয়ে হসপিটালে যেও আমি এদিকে বাজার থেকে সব কিনে দিয়ে যাবো নে।
তোমাদের কাজ শেষ হলে ফোন দিয়ো দুজন কে এক সাথে ড্রপ করে তারপরে আমি হলে যাবো।
এর মাঝেই শুভ্র ভাইয়ের ফোন বেজে ওঠে। ওপাশের লোক কি বলছে তা শুনতে না পারলেও লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখি তার চোখ দুইটা ধীরে ধীরে লাল হচ্ছে।
তোরা রেডি থাক আমি দু ঘন্টার মধ্যে আসছি,,,

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে