#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ১৩(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
স্মিতাঃকিরে এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন?কখন থেকে দেখছি চুপচাপ বসে কি যেন ভাবছিস।কি হয়েছো?
প্রিসাঃকিছু না।
স্মিতাঃমন খারাপ নাকি?
প্রিসাঃনা।
স্মিতাঃতাহলে এরকম চুপচাপ কেন?তুইতো আমার সাথে কোনদিন এরকম চুপচাপ বসে থাকিস না।তাহলে আজ কি হয়েছে?
প্রিসাঃকই কি হয়েছে?কিছুই হয়নি,কথা বলার কোন বিষয় নেই তাই চুপ করে আছি।
স্মিতাঃএই শুন তোকে আমি ভালো করে চিনি,তাই আমাকে মিথ্যা বলতে আসিস না।কিছু তো হয়েছে, এখন কি হয়েছে সেটা তুই আমাকে সোজাসুজি বল নয়তো থাপ্পড় দিবো।
প্রিসা এতক্ষণ ধরে এটাই ভাবছিল যে কি করে সে কথাগুলো স্মিতাকে বলবে।প্রিসা জানে এগুলো স্মিতা জানলে কষ্ট পাবে তাই বলতে চাইছে না কিন্তু না বলেও যে সে থাকতে পারবে না।স্মিতাও এদিকে প্রিসাকে জোর করছে কি হয়েছে সেটা বলার জন্য।অবশেষে প্রিসা শুভর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে কি কি হয়েছে তার সাথে সবকিছু স্মিতাকে বলে।বলার পর প্রিসা খেয়াল করে তার গাল ভেজা,হাত দিয়ে দেখে তার চোখ থেকেই পানি পড়ছে।চোখমুছে প্রিসা স্মিতা দিকে তাকাই,তার চোখও ভেজা।
স্মিতাঃতার মানে সেইদিন অয়ন ভাইয়ার মারের কারণে তোর জ্বর এসেছিল?
প্রিসাঃহয়তো।
স্মিতাঃসব বুঝলাম কিন্তু একটা বিষয় বুঝলাম না শুভর সাথে কথা বলার জন্য অয়ন ভাইয়া তোকে মারলো এরপর তোকে ভালোবাসিও বললো আবার পরে নিজেই সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে তোরিই চাচাতো বোনেকে বিয়ে করার প্রস্তুতি দিয়েছে।ব্যপারটা কেমন যেন লাগছে,কোথাও একটা গন্ডগোল আছে মনে হচ্ছে।
প্রিসাঃকিছু গন্ডগোল নেই সবঠিক আছে।আমি উনার মোহ ছিল আর আপুনি উনার ভালোবাসা,এটা বুঝতে পেরেই উনি নিজে থেকেই সরে গিয়েছেন।
স্মিতাঃআচ্ছা মিলা আপুর সাথে উনার পরিচয় কিভাবে?
প্রিসাঃপরিচয় কিভাবে তা জানি না তবে আপুনি বলেছে আমার যখন পরীক্ষা চলছিল তখন কোন এক কারণে নাকি উনি আপুনিকে ফোন দেয়।এরকম মাঝেসাঝে আরো কয়েকবার কথা হয়েছে তারকিছু দিন পর থেকেই তারা রেগুলার কথা বলতে শুরু করে।তারপর নাকি তারা রিয়েলাইজ করে তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে,তাই তারা দুজন ঠিক করে বিয়ে করে ফেলবে।
স্মিতাঃতার মানে এর কারণে অয়ন ভাইয়া তোর সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছিল।
প্রিসাঃহুম।
স্মিতাঃআচ্ছা তুই সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হলি কেন?
প্রিসাঃকারণ বাবা-মা চাই আমি যাতে ওনাকে বিয়ে করি।যেহেতু আমার মনে এখন কেউ নেই আর সেটা ছিল সেটাও একতরফা ভালোবাসা এখন, তাহলে বাবা-মার কথা অনুযায়ী কাজ করাটাই বেটার।আর একটা কারণ সায়ন ভাইয়া সবটা জানে তাই উনি কখনই আমাকে এই বিষয়ে কিছু বলবে না বা খোঁটা দেবে না।অন্যকেউ হলে যদি কখনো এই বিষয়ে কিছু জানে তাহলে আমাকে যে কোন কাজে আমার অতিত নিয়ে খোঁটা দেবে।
স্মিতাঃতুই অয়ন ভাইয়ার কথা সবাই বলে দিসনি কেন?
প্রিসাঃকি হতো বলে?কোন কিছু হতো না।আমি যদি এসব বাড়িতে বলি তাহলে উনি কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না,ছোট হয় যাবেন।হয়তো সবাই জোর করে উনার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিতেন কিন্তু উনি কখনো আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিতেন না আর না ভালো ব্যবহার করতেন।আর সবচেয়ে বড় কথা এসব কিছু আপুনি জানলে কষ্ট পেতো,আমি চাই না আমার জন্য আপুনি কষ্ট পাক।
স্মিতাঃকিন্তু তোর কি হবে?তুই যে কষ্ট পাচ্ছিস।
প্রিসাঃআল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।আমার বিশ্বাস কোন কিছু খারাপ হবেনা,সব ঠিক হয়ে যাবে।
স্মিতা আর কিছু বলতে পারছে না,কি বলবে তার বলার মতো কিছুই নেই।স্মিতার খুব কষ্ট হচ্ছে প্রিসার জন্য,সে জানে বাইরে থেকে প্রিসা নিজেকে স্ট্রং দেখালেও ভেতরে ভেতরে সে ভেঙে পড়েছে।এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস নেই স্মিতা।
________________________________________
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।আপাতত ঘরোয়াভাবে তাদের বিয়ে হবে,প্রিসার পড়াশোনা শেষ হলে তারপর বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে।ঘরোয়াভাবে হলেও মানুষ মোটামুটি ভালোই এসেছে।প্রিসা বউবেশে নিজের রুমে বসে আছে।কি মনে করে যেন প্রিসা আয়নার সামনে দাঁড়াই,নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।
প্রিসাঃআমি আজ বউ সেজেছি কিন্তু আপনার জন্য নয় অয়ন ভাইয়া আপনার ভাইয়ের জন্য।কিন্তু আমি তো সেটা চাইনি,আমি তো আপনার জন্য সাজতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি তা হতে দিলেন না।খুব কি বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো আমাকে ভালোবাসলে?আমি যদি ইমম্যাচিউর হয়ে থাকি তাহলে কেন আমাকে ভালোবাসি বলেছেন?কেন আমায় আপানাকে ভালোবাসার জন্য বাধ্য করেছেন?
কথাগুলো বলতে বলতে প্রিসার চোখ থেকে আপনা-আপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে।প্রিসা চোখের পানি মুছে নেয়।
প্রিসাঃনা আমি কান্না করবো না,কার জন্য কান্না করবো যে কখনো আমার ছিলনা।কি লাভ তার জন্য কান্না করে।
দেখতে দেখতে বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো।একহাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে প্রিসা কিন্তু এটা সে দেয়নি তার মা তাকে দিয়ে দিয়েছে।বিয়ে পড়ানোর সময় প্রিসা খেয়াল করে এখানে বউ দুজন না তিনজন কিন্তু সে আর মিলা বাদে আরেকজনটা কে সেটা বুঝতে পারছেনা প্রিসা।প্রিসা এতটায় চিন্তায় বিভোর ছিল যে বিয়ে পড়ানোর সময় বর বউ কারো নামেই ঠিক মতো শুনেনি।
বাসর ঘরে,
এখনো একহাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে একটা ঘন্টা যাবত বসে আছে প্রিসা।এখন এসবকিছু তার বিরক্ত লাগছে কিন্তু বিরক্ত লাগলেও কিছু করার নেই।প্রিসার ভাবনার মাঝে দরজা খোলার আওয়াজ হলো,প্রিসা বুঝতে পেরেছে সায়ন এসে গিয়েছে।
প্রিসাঃশুনুন সায়ন ভাইয়া,আমি জানি আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে কিন্তু আমার এসব মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে।আমি জানি আপনি সবটা জানেন তাও বলছি আমি এখনো অন্য কাউকে……
—- ভালোবাসো তাই তো?
গলার আওয়াজটা শুনে প্রিসা চমকে যায়।তাড়াতাড়ি ঘোমটা তুলে দেখে তার সামনে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে।বরবেশে অয়নকে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু পরক্ষণে প্রিসার মনে পরে অয়ন এখন অন্য কারো।
প্রিসাঃঅয়ন ভাইয়া আপনি এখানে কেন?আপনি হয়তো ভুল রুমে চলে এসেছেন।
অয়নঃআমি ঠিক রুমেই এসেছি।
প্রিসাঃকিসব বলছেন আপনি?(অবাক হয়ে)
অয়ন প্রিসার সামনে বসে তারপর কপালে থাকা ছোটছোট চুলগুলোকে কানের কাছে গুঁজে দিয় বলে—
অয়নঃবলেছি আমি ঠিক রুমেই এসেছি।আমার তো এখানেই আসার কথা কারণ আমার বউ তো এখানেই আছে।
বলে প্রিসা গালে হালকা করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়।প্রিসা রেগে গিয়ে অয়নকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
প্রিসাঃআপনি এখানে কেন এসেছো?আমাকে একবার কষ্ট দিয়ে আপনার শান্তি হয়নি?কেন আবার এসেছেন আমার কাছে?আমি তো নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম,তাহলে কেন আবার এসেছেন?আপনি চলে যায় এখান থেকে,আপুনি দেখলে কষ্ট পাবে।চলে যান আপনি।(কান্না করতে করতে)
অয়নঃকান্না বন্ধ করো প্লিজ।
প্রিসাঃআপনাকে আমি কি বলেছি শুনতে পাননি।চলে যান এখান থেকে,চলে যায়।
অয়নঃমেঘবতী প্লিজ কান্না বন্ধ করো,আমার কথাটা আগে একটু শুনো প্লিজ।
প্রিসাঃকি বলবেন আপনি হ্যাঁ?কি বলবেন?বলার আর কি বাকি রেখেছেন আপনি?আর আপনি আমাকে মেঘবতী কেন বলছেন?বলবেন না আমাকে মেঘবতী,আমাকে মেঘবতী ডাকার অধিকার আপনার নেই।(রেগে)
প্রিসা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই অয়ন নিজের ঠোঁট দিয়ে প্রিসার ঠোঁট বন্ধ করে দেয় যার কারণে প্রিসা আর কিছু বলতে পারেনা।অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও প্রিসা নিজে ছাড়াতে পারেনি।কিছুক্ষণ পর অয়ন নিজেই প্রিসার ঠোঁট ছেড়ে দেয়।
অয়নঃতোমাকে মেঘবতী ডাকার অধিকার আছে আমার কারণ তুমি আমার মেঘবতী।(প্রিসার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে)
প্রিসা রেখে অয়নের হাত সরিয়ে দেয়।
প্রিসাঃনা আপনার কোন অধিকার নেই,আপনি আমাকে মেঘবতী ডাকার সেইদিন হারিয়ে ফেলেছেন যেদিন আপনি এটার অধিকার অন্যকাউকে দিয়ে দিয়েছেন।
অয়নঃকাকে দিয়েছি?
প্রিসাঃআমি যেদিন ছাদে আপনার আর সায়ন ভাইয়ার সব কথা শুনে নিয়েছিলাম।
অয়নঃজানি আমি।(মুচকি হেসে)
প্রিসাঃমানে?
অয়নঃমানে আমি আর সায়ন দুজনেই জানতাম যে তুমি আমাদের কথা শুনছো।
প্রিসাঃসে যাই হবে হোক নিজের বউয়ের কাছে যান, আপুনি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
অয়নঃআমি তো নিজের বউয়ের কাছেই আছি।
প্রিসাঃমানে?
অয়নঃমানে তোমার সাথেই আমার বিয়ে হয়েছে।তুমি কি ভেবেছিলে আমি আমার মেঘবতীকে এতো সহজে অন্য কারো হাতে তুলে দেবো আর অন্য কাউকে আমার মেঘবতীকে মেঘবতী বলে ডাকার অনুমতি দেবো,কখনোই না।মেঘবতী শুধু আমার,আমি তাকে কখনই নিজের থেকে আলাদা করবো না।
প্রিসাঃতাহলে এসব কি?(অবাক হয়ে)
অয়নঃপ্রথমে তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো তারপর সব বলছি।
অয়ন প্রিসাকে একটা ড্রেস দেয় কারণ প্রিসা শাড়ি পড়তে জানেনা।ফ্রেশ হয়ে এসে প্রিসা দেখে অয়ন রুমে নেয়।
অয়নঃএদিকে এসো মেঘবতী।
প্রিসা পেছন ফিরে দেখে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে অয়ন।আস্তে আস্তে প্রিসা বারান্দায় যেয়ে অয়নের পাশে দাঁড়ায়।
প্রিসাঃবলুন।
অয়নঃতুমি প্রশ্ন করো,আমি উওর দিচ্ছি।
প্রিসাঃআমার বিয়ে কার সাথে হয়েছে?
অয়নঃআমার সাথে।
প্রিসাঃতাহলে আপুনির সাথে কেন প্রেম করলেন?
অয়নঃআমার আর মিলার মধ্যে কখনই কিছু ছিলনা,আমরা একে অপরকে শুধু বন্ধুই ভাবতাম।তুমি যা দেখেছো সবকিছু প্রিপ্লেন নাটক ছিল।
প্রিসাঃকি!(অবাক হয়ে)তাহলে ওই ফোন ক’লসগুলো কি ছিল?
অয়নঃওইদিন ফোনটা আমি ইচ্ছে করেই করেছিলাম,আমি জানতাম ফোন মিলা না তুমিই রিসিভ করেছো।তুমি তো জানোই ওই সময় মিলা তোমার সামনে ছিল না কিন্তু মিলা দরজার বাইরেই ছিল।ওই আমাকে অন্য ফোন থেকে ফোন করে বলেছে যে তুমি ওর রুমে আছো,তাই আমি ইচ্ছে করিই ফোন দিয়েছি।
প্রিসাঃতাহলে এর আগে যে আপনারা দুজন এতোটা সময় ধরে কথা বলেছেন সেটা?
অয়নঃহুম আমরা কথা বলেছি তবে সেটা সর্বোচ্চ এক মিনিট।
প্রিসাঃমিথ্যা কথা বলবেন না।আমি কল রেকর্ড চেক করে দেখেছি আপনারা পনেরো-বিশ মিনিট বা তার থেকেও বেশি সময় নিয়ে কথা বলেছে।
অয়নঃহুম ওটা ঠিক তবে আমি মিলার সাথে বা মিলা আমার সাথে কথা বলি নিয়।আমি যখন ওকে ফোন দিতাম তখন ও তোমার কাছে চলে যেতো,ও তোমাকে কথায় ডুবিয়ে রাখতো আর আমি আমার মেঘবতীর কন্ঠ শুনতে পেতাম।(মুচকি হেসে)
প্রিসাঃতাহলে মেয়ে দেখতে আসা?(অবাক হয়ে)
অয়নঃওটাও একটা সাজানো নাটক বলতে পারো যেটা সম্পর্কে তুমি ছাড়া সবাই সত্যিটা জানতো।
প্রিসাঃতাহলে ওইদিন কেন এসেছিলেন?আর এসব কিছু সম্পর্কে বাসার সবাই আগে থেকে জানতো?
অয়নঃহুম আর কেন এসেছিলাম ওটা একটু পড়েই জানতে পারবে।
প্রিসাঃআচ্ছা আপুনি আর সায়ন ভাইয়ার কি হয়েছে?আর একটা কথা বিয়ে পড়ানোর সময় আমি খেয়াল করেছিলাম ওখানে আমি আর আপুনি বাদে আরেকজনও ছিল,ওটা কে?
অয়নঃএকমিনিট।(হালকা হেসে)
অয়ন তার পকেট থেকে ফোনটা বের করে কি কি যেন করলো তারপর ফোনের স্ক্রিনটা প্রিসার দিকে ঘুরিয়ে দিলো।প্রিসা তাকিয়ে দেখে অয়ন ভিডিও কল দিয়েছে।প্রিসা অয়নের দিকে তাকাই,অয়ন ইশারায় প্রিসা ফোনের স্ক্রিনে দেখতে বলে।প্রিসা তাকিয়ে দেখে এখানে সে এবং অয়ন ছাড়া সায়ন,মিলা এবং আরো দুজন ছেলে-মেয়েও আছে।সায়নের পাশে থাকা মেয়েটার দিকে তাকাই প্রিসা,কেন যেন মেয়েটাকে তারা চেনা চেনা লাগছে।হঠাৎ প্রিসা মনে পড়ে মেয়েটার ছবি সে সায়নের ফোনের ওয়ালপেপারে দেখেছে।এবার প্রিসা মিলার ওখানে তাকাই কিন্তু মিলার সাথে যাকে দেখে তাতে তো প্রিসা যেন আকাশ থেকে পড়ে।কারণ এটা ওই ছেলেটা যে সেদিন পাত্রপক্ষ হিসেবে অয়নদের সাথে এসেছিল।
—- হ্যালো আপু।(সায়নের পাশে থাকা মেয়েটা)
—- হ্যালো শালিকা।কেন দিলাম সারপ্রাইজ?(মিলার সাথে থাকা ছেলেটা)
প্রিসাঃতারমানে ওনাদেরও?(অয়নের দিকে তাকিয়ে)
অয়নঃহুম।
প্রিসা আবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাই।
সায়নঃ দেখো প্রিসা আমি জানিনা ভাই তোমাকে কতটুকু বলেছে তবে আমি তোমাকে একটা কথা বলি আমি তোমাকে সবসময় নিজের বোনের চোখে দেখেছি,এর বাইরে আমি কোনদিনও কিছু ভাবনি তোমাকে।
প্রিসা চুপ করে আছে।অয়ন ফোনটা নিজের দিকে করে নেয়।
অয়নঃআজ অনেক ধকল গিয়েছে আর রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো তোমরা,পরে কথা হবে।
অয়ন ফোনটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।
প্রিসাঃএসব কি?
অয়নঃআমি ক্লিয়ার করে বলছি।সায়নের সাথে যে মেয়েরটাকে দেখেছো,ওর নাম মৌ।ওরা দুজন-দুজনকে অনেক দিন ধরে ভালোবাসে।তোমার মনে আছে একদিন তুমি ভার্সিটি থেকে এসে বাসায় কাউকে দেখতে পাওনি কিন্তু আমার সাথে ঘুরতে যাওয়ার পরে তুমি তাদের সবাইকে তোমার বাসায় দেখেছো,ওইদিন সবাই গিয়েছিল সায়ন আর মৌ এর বিয়ের কথা পাকা করতে।কিন্তু এটা তোমাকে কেন বলেনি সেটা আমি জানিনা তবে এটা পরে আমার অনেক কাজে এসেছিল।
প্রিসাঃতাহলে আপুনিরটাও একই?
অয়নঃহুম,ছেলেটার নাম সিদ্ধার্থ।মিলা আর সিদ্ধার্থও একে অপরকে ভালোবাসতো।সেইদিন মিলাকে আমার জন্য না সিদ্ধার্থের জন্য দেখতে আসা হয়েছিল।সবাই সত্যিটা জানতো যে পাত্র আসলে আমি না সিদ্ধার্থ,তবে তোমার সামনে নাটক করেছিল সবাই।কিন্তু এটাও সত্য সিদ্ধার্থ আর আমার বাবা একে অপরের বন্ধু।
প্রিসাঃতাহলে সবকিছু প্রিপ্লেন ছিল।তাহলে এই রেস্টুরেন্টের ঘটনাও আপনি জেনে বুঝে করেন,তাইনা?
অয়নঃকোন রেস্টুরেন্টে?আর কোন ঘটনার কথা বলছো তুমি?
প্রিসাঃকিছুদিন আগে আপনি আর একটা মেয়ে ” ……… ” এই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন না?
অয়নঃহুম।
প্রিসাঃআপনি কি জানতেন আমি ওখানেই ছিলাম?
অয়নঃকি!তুমি ওখানে ছিলে?(অবাক হয়ে)
প্রিসাঃহুম।কেন আপনি জানতেন না?
অয়নঃনাতো।
প্রিসাঃতারমানে ওইদিনের ঘটনাগুলো সত্যি।
অয়নঃকিসের ঘটনা?আর কিসব বলছো তুমি?
প্রিসাঃওইদিন আপনার সাথে ওই মেয়েটা কে ছিল?
অয়নঃআরে ওই মেয়েটা আমার একটা ক্লাইড ছিল,সেইসাথে আমার ফ্রেন্ডও।
প্রিসাঃতাহলে ওই মেয়েটা আপনার হাতে হাত রেখেছিল কেন?
অয়নঃআরে ওটা কথায় কথায় টাচ হয়ে গিয়েছে।
প্রিসাঃতাহলে আমার ফোন ধরেনি কেন?
অয়নঃআসলে প্রথমে আমি খেয়াল করিনি কিন্তু পরে যখন রিভিউ করতে যাবো তখন দেখি ফোনের ব্যাটারি লো,পরে দেখি ফোনটাই অফ হয়ে গিয়েছে।বাসায় এসে তোমাকে ফোন দেবো ভেবেছিলাম কিন্তু তখনি মিলা আমাকে ফোন দিল আর এরপরের টাতো তোমাকে আগেই বলেছি।
প্রিসাঃকিন্তু এতো কিছু কেন করলেন?আর আমাকে এভয়ডও কে করেছিলেন এতোদিন?
অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো—-
অয়নঃএসব কিছু করার পেছনে একটাই কারণ ছিল আর সেটা হচ্ছে তোমার মনে আমার জন্য জায়গা সৃষ্টি করা।আমি জানতাম আমাকে তোমার ভালোলাগতো কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবাসতে না।ভালোলাগা আর ভালোবাসা দুটোই আলাদা,আমি চেয়েছিলাম যাতে তুমি আমাকে ভালোবাসো।জানো যখন আমি তোমাকে ভালোবাসি বলতাম আর তুমি তার প্রতিউওরে চুপ থাকতে তখন আমার খুব কষ্ট হতো।একদিন সায়ন আমাকে আমাদের কথা জিজ্ঞেস করে তখন ওকে আমি সব বলি।তারপর সায়ন আর মিলা মিলে এসব প্লেন করে।অন্যসময় তোমাকে এভয়ড করতে পারতাম না কারণ তখন কোন ভালো রিজেন পেতাম না তাই তোমার পরীক্ষার বাহানা দিয়েই তোমার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়,তারপর সব তো তুমি জানো।
প্রিসাঃবলুন এবার।
অয়নঃকি বলবো?(অবাক হয়ে)
প্রিসাঃএইযে যার জন্য এতোকিছু করলেন।
অয়নঃকিন্তু তুমি তো…..
প্রিসাঃআপনাকে বলতে বলেছি আপনি বলবেন,এতো কিন্তু কিন্তু কেন করছেন?
অয়নঃআই লাভ ইউ মেঘবতী।
প্রিসা মুচকি হেসে অয়নকে জরিয়ে ধরে।
প্রিসাঃআই লাভ ইউ টু।
অয়নঃসত্যি?(অবাক হয়ে)
প্রিসাঃহুম।
অয়নঃআমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমার মেঘবতী আমাকে ভালোবাসি বলেছে।
প্রিসাঃআচ্ছা আপনি আমাকে মেঘবতী কেন বলেন?
অয়নঃএকদিন অন্যের ফোনে আমি একটা পিচ্চি মেয়ের ছবি দেখেছিলাম,যে সদ্য কিশোরী বয়সে পা দিয়েছিল।যার পড়নে ছিল মেঘের মতো সাদা একটা ফ্রগ সাথে চুলগুলো দুটো জুটি করা,চোখে চশমা,পুরোই বাচ্চা বাচ্চা লাগছিল আর সেই পিচ্চি বাচ্চা বাচ্চা দেখতে মেয়েটা ছিল আমার মেঘবতী।
প্রিসাঃতারমানে আপনি আমাকে আগে থেকেই..?
অয়নঃহুম,তোমাকে আমি তখন থেকে ভালোবাসতাম যখন আমি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিলাম।তুমি যখন অন্যের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাম,অন্যের ফোন থেকে তোমার ছবি নিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলাম।
প্রিসাঃএতো ভালোবাসেন আমায়।
অয়নঃনিজের চেয়েও বেশি।আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা মেঘবতী,আমি শেষ হয়ে যাবো।বেঁচে তাকলেও তোমাকে ছাড়া আমি জীবন্ত লাশে পরিণত হবো।
প্রিসাঃকিসব বলেন আপনি,এরকম কথা আর কখনো বলবেন না।আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না,কখনো না।(জরিয়ে ধরে)
——————- সমাপ্ত—————