#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
বিকেলে স্মিতা প্রিসার বাসাই চলে আসে।দুজনেই কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।স্মিতা চলে যাবে তখনিই প্রিসার মনে পড়ে সকালে স্মিতা ফোনে তাকে বলেছিস যে সে কিছু বলবে।
প্রিসাঃস্মিতা শোন।
স্মিতাঃকি হয়েছো?শুন আজ আরো গল্প করলে লেট হয়ে যাবে।লেট হলে কালের ভার্সিটির পড়া কমপ্লিট করতে পারবো না।
প্রিসাঃআরে বাবা দাঁড়া দাঁড়া,আগে শুনে তো নে আমি কি বলছি।
স্মিতাঃআচ্ছা বল।
প্রিসাঃআমি কি বলবো,তুই না বলবি।সকালে ফোনে বললি না কি যেন বলবি সেটা তো বলিস নি।
স্মিতাঃসকালে….. ও আচ্ছা আমি তো একদমই ভুলে গিয়েছিলাম।শুন তোকে যেটা এখন বলবো না সেটা শুনে তুই তো ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাবি।
প্রিসাঃকি এমন কথা যেটা শুনে আমি ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাবো?
স্মিতাঃতাহলে শুন,এইদিন ওই শুভ না অশুভ তোর কাছে এসেছিল না।
প্রিসাঃশুভ!তো কি হয়েছে?তোকে কি কিছু বলেছে?এই তোর সাথে কিছু করেছে কি?স্মিতা ও যদি তোকে কিছু করে বা বলে থাকে প্লিজ আমাকে বল।(কিছুটা চিন্তিত হয়ে)
স্মিতাঃআরে বাবা শান্ত হয়,শুভর এতো সাহস আছে নাকি আমার সাথে কিছু করার আর শুভ আমাকে কিছু বলেনি।আসলে ওর সাথে তো আমার দেখাই হয়নি।
প্রিসাঃতাহলে?
স্মিতাঃকিন্তু শুভর একটা খবর পেয়েছি।
প্রিসাঃকি?
স্মিতাঃকালকে রাতের আঁধারে কেউ ওকে”……” মেরে ফেলে রেখে গিয়েছে।পুরোপুরিভাবে মারা যায়নি তবে অনেকটাই জখম হয়ে আর ডানহাতটা তো পুরোটাই ভেঙে গিয়েছে।
প্রিসাঃকি!কিসব বলছিস তুই?আর এসব তুই কিভাবে জেনেছিস?
স্মিতাঃআমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি।শুভকে যেখানে পাওয়া গিয়েছে ওই জায়গাটা আমাদের বাসার কাছেই।আর তুই তো জানি আকথা-কুকথা বাতাসের থেকেও তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পরে।এই কথাটাও ছড়িয়েছে আর আমার কানেও এসেছে।পরে খোঁজ খবর করে জানতে পারি ওটা আর কেউ না ওই শুভ অশুভ।
প্রিসাঃও আচ্ছা।
স্মিতাঃকিন্তু ওই ব্যাটাকে মারলোটা কে?
প্রিসাঃজানিনা।
স্মিতাঃতা যেই মারুক না কেন একদম ঠিক করেছে,বেয়াদব শয়তান একটা।যাইহোক আমি এবার আসছি,ভালো থাকিস আর নিজের খেয়াল রাখিস।
প্রিসাঃতুইও।
স্মিতা চলে যায়।স্মিতা চলে যাওয়ার পর প্রিসা শুয়ে পরে আর চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে —-
প্রিসাঃকে মারতে পারে শুভকে?অয়ন ভাইয়াই বা কালকে আমাকে ওভাবে মারলো কেন?আবার পরে নিজেই ঔষধ ও খাওয়ালো।কি করেছিলাম যার জন্য উনি এভাবে আমাকে মেরেছে?
চোখবন্ধ করে এসব ভেবে চলছে,প্রিসা হঠাৎ প্রিসার মনে হতে থাকে কেউ তাকে দেখছে,খুব কাছে থেকে কেউ থাকে দেখছে।প্রিসা তাড়াতাড়ি উঠে বসে।উঠে যাকে দেখে তাতে তো প্রিসা অবাক না অনেক বেশি অবাক হয়।
প্রিসাঃঅয়ন ভাইয়া।(অস্ফুট স্বরে)
প্রিসা কোনদিনও আশা করেনি এভাবে মারার পর অয়ন তার কাছে আসবে।প্রিসা অয়নের ভালো করে দেখে চুলগুলো এলোমেলো,চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে,চোখগুলোও ফোলা ফোলা।
প্রিসাঃ(অয়ন ভাইয়ার চোখগুলো এরকম কেন?উনি কি রাতের ঘুমান না নাকি?আচ্ছা উনি কি কান্না করেছেন?— মনে মনে)অয়ন ভ…..
প্রিসা আর কিছু বলবে তার আগেই অয়ন তাকে জরিয়ে ধরে।হঠাৎ এরকম কিছু হওয়ায় প্রিসা ঘাবড়ে যায় কিন্তু চুপচাপ বসে থাকে।কিছুক্ষণ পর প্রিসা হালকা হালকা ফোঁপানোর আওয়াজ পাই।প্রিসা বুঝতে পারে অয়ন কান্না করছে।
প্রিসাঃআরে অয়ন ভাইয়া আপনি কান্না করছেন কেন?
অয়ন প্রিসাকে জরিয়ে ধরেই বলতে শুরু করে—
অয়নঃআই এম সরি মেঘবতী,আই এম রিয়েলি সরি।আমি তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি কিন্তু কি করবো বলো তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখে আমার ভিষণ রাগ হয়েছিল।জানো এইদিন যখন তুমি ওর সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কখা বলছিলে আমার ভিষণ কষ্ট হয়েছিল।তারপর ও যখন তোমাকে প্রপোজ করে সেটা দেখে আর নিজে সামলাতে পারিনি।আমি এতটাই রেগে গিয়েছিলাম যে আশেপাশের সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম,রাগে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।তোমাকে ওই ভাবে মারার আমার কোন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু কিভাবে যে কি হয়ে গেলো।আই লাভ ইউ মেঘবতী,আই রিয়েলি লাভ ইউ।
প্রিসা এতক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভাবছিল।তারপর অয়নকে বলে—-
প্রিসাঃঅয়ন ভাইয়া ছাড়ুন।
অয়ন প্রিসাকে ছেড়ে দেয়।প্রিসা কিছুক্ষণ অয়নের দিকে তাকিয়ে তার হাত দুটো সামনে আনে।দুটো হাতেই বেশ অনেকখানি চোট লেগেছে।প্রিসা আবার একপলক অয়নের দিকে তাকিয়ে পাশের টেবিল থেকে ফার্স্ট এড বক্সটা নেয়।অয়নও কিছু বলছেনা,সে চুপচাপ তার মেঘবতীর কাজগুলো দেখছে।প্রিসা ফার্স্ট এড বক্স থেকে সেভলন বের করে কেটে যাওয়া জায়গাগুলো পরিষ্কার করে তারপর তাকে মলম লাগাতে থাকে।
প্রিসাঃআপনিই মেরেছেন না মিস্টার শুভকে?(মলম লাগাতে লাগাতে)
প্রিসার মুখে শুভর কথা শুনে অয়ন রেগে যায়,তাও কোনভাবে নিজের রাগটাকে কনট্রোল করে সে।
অয়নঃকিসব বলছো তুমি?কে বলেছে তোমাকে এসব?
প্রিসাঃবলেছে কেউ।এবার আপনি বলুন যে বলেছে তার কথা কি ঠিক নাকি ভুল?
অয়নঃহ্যাঁ আমিই মেরেছি,তো?সে আমার মেঘবতীর দিকে চোখ তুলে তাকাবো,তাকে প্রপোজ করবে,তাকে আমার থেকে কেড়ে নেবে আর আমি বসে বসে তা দেখবো।
প্রিসা অয়নের কথাই অবাক হয় কারণ প্রিসা আন্দাজে কথাটা বলেছিল কিন্তু ভাবতে পারেনি কাজটা আসলে অয়নই করেছে।মলম লাগানো শেষ হলে অয়নের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় প্রিসা।
তারপর সবকিছু গুছিয়ে সরিয়ে রেখে অয়নের দিকে তাকাই।
প্রিসাঃমেঘবতীটা কে?
অয়নঃমেঘবতী?আমার সামনে এখন যে বসে আছে সেই আমার মেঘবতী।(হালকা হেসে)
আজ প্রিসা শুধু অবাকে উপর অবাক হচ্ছে।অয়নের কথাটা শুনে প্রিসার হার্টবিট বেড়ে যায় তাও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছে সে।
প্রিসাঃশুনুন অয়ন ভাইয়া,এটা কোন নাটক বা সিনেমা নয় এটা রিয়েল লাইফ।তাই আমাদের সবকিছু বুঝে শুনে করতে হয়।আপনার কি দরকার ছিল শুধু শুধু মিস্টার শুভ কে এভাবে মারার?
অয়নঃমেঘবতী আমি তোমার মুখ থেকে ওই রাসকেলটা ব্যাপারে আর কিছু শুনতে চাইছি না।(গম্ভীরভাবে)
প্রিসা বুঝতে পেরেছে এখন কিছু বললেই ঝামেলা আরো বাড়বে তাই চুপ করে গিয়েছে।
প্রিসাঃআপনি বলেছেন না আপনি মিস্টার শুভর সাথে আমাকে কথা বলতে দেখেছেন?
অয়নঃহুম।(গম্ভীরভাবে)
প্রিসাঃতাহলে ওইদিন আপনি ওখানে কি করছিলেন?
অয়নঃওই আসলে…. এটার জন্য গিয়েছিলাম।
একটা কাগজ প্রিসার সামনে এগিয়ে দেয়।কাগজটা দেখে প্রিসা মাথা নিচু করে ফেলে।অয়ন মুচকি হেসে প্রিসাকে বলে—-
অয়নঃএটা তুমিই আমার রুমে রেখেছো তাই না?
প্রিসাঃহুম।
আসলে এইদিন প্রিসা অয়ন আর সায়নের রুমে যে কাজটা রেখে এসেছিল সেটাতে অয়ন আর সায়নের স্কেচ ছিল,যেটা প্রিসা নিজের হাতে ড্র করেছিল।
অয়নঃআই লাভ ইউ মেঘবতী।
প্রিসা চমকে অয়নের দিকে তাকাই কিন্তু মুখে কিছু বলেনা।
অয়নঃকি হলো?জবাব দাও।
তবুও প্রিসা কিছু না বলে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।
অয়নঃশোনো আমি আমাকে ভালোবাসো আর না বাসো এতে আমার কিছু যায় আসেনা।আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই অনেক।আমার শুধু তোমাকে চাই।আমার সুখে,দুঃখে,আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে আমার পাশে চাই,আমার মেঘবতী কে আমার পাশে চাই,এতেই আমার হবে।আসছি,পরে আবার দেখা হবে।
এটা বলেই প্রিসার কপালে একটা কিস করে চলে যাই অয়ন।এদিকে এসব কিছু এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে একজন।কেউ তাকে দেখার আগে সেই ব্যক্তিটি সেখান থেকে চলে যায়।
এদিকে,অয়ন চলে যাওয়ার পর বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পরে প্রিসা।এতক্ষণ তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।প্রিসা উঠে আস্তে আস্তে বারান্দায় চলে যায়।আকাশের দিকে তাকিয়ে অয়নের কথাগুলো ভাবছিল আর একটা শব্দই বারবার আওরা ছিল।
প্রিসাঃ”মেঘবতী”
চলবে……….