#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
প্রিসা গেট পার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।এদিকে স্মিতা তাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।
স্মিতাঃওই তুই কোথাই যাচ্ছিস?
সায়নঃআরে এসেছো তুমি,আমরা কতক্ষণ যাবত তোমার অপেক্ষা করছি।
আসলে প্রিসার অবাক হওয়ার কারণ গেটের বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অয়ন আর সায়ন।গাড়ির ডিকির উপর বসে ফোন টিপছিল সায়ন আর বাইরে গাড়ির সাথে হেলান গিয়ে অয়ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে গেমস খেলছিল।এদিকে তাদের আশেপাশে হাজারটা মেয়ে তাদের চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে অবশ্য খাওয়ারিই কথা কারণ দুটোই যে সাদা মুলা আর হ্যান্ডসাম দেখতে।
স্মিতাঃহ্যাঁরে প্রিসা এ দুটো সাদা মুলা মানে এই দুটো কেরে?(ফিসফিস করে)
প্রিসাঃএরাই হচ্ছে সে উজবুকগুলো যাদের কথা তোকে বলেছিলাম।(ফিসফিস করে)
স্মিতাঃওমা তাই নাকি কিন্তু যাই বলিস না কেন দুটোই কি হেব্বি জোস।
প্রিসাঃআস্তে কথা বল আর এসব কি শব্দ ব্যবহার করছিস তুই?দিন দিন তুই অনেক শয়তান হয়ে যাচ্ছিস কিন্তু।
অয়নঃওই তোমরা কি এত ফিসফিস করছো?
প্রিসাঃও কিছু না।এবার এটা বলুন এখানে কি করছেন আপনারা?
সায়নঃতোকে দেখার জন্য….. না মানে তোমার কাছে এসেছিলাম।
প্রিসাঃকেন?(ভ্রু-কুচকে)
অয়নঃআসলে প্রিসা উই আর সরি প্রিসা।
প্রিসাঃসরি কেন?
সায়নঃকালকের জন্য।আসলে আমরা জানতাম না তুমি এতোটা ভয় পেয়ে যাবে।যদি জানতাম তাহলে আমরা এরকম কিছু করতাম না।
অয়নঃআসলে দোষটা আমার,আমিই ওকে এরকম করতে বলেছিলাম।
প্রিসাঃআরে এতে এতো সরি বলার কি আছে শুনি?আমি কালকের ঘটনাটা ভুলে গিয়েছি সো আপনারাও ভুলে যান।
সায়নঃতার মানে সরি এক্সপেক্টড?
প্রিসাঃইয়েস।(হালকা হেসে)
সায়নও প্রিসার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
অয়নঃওকে তাহলে চলো।
প্রিসাঃকোথাই?
সায়নঃআজকে আমরা তিন ঘুরবো আসলে তুমি আমাদের ঘুরাবে মানে আমাদের শহরটা ঘুরে দেখাবে।
প্রিসাঃআমি?আমি পড়বো না আরে আমি নিজেই তো কিছু চিনিনা।
অয়নঃকিছু হবে না চলো তো।
সায়নঃআচ্ছা ও কে?(স্মিতাকে নির্দেশ করে)
স্মিতা এতক্ষণ দর্শকের মতো এদের দিকে তাকিয়ে ছিল,সায়নের কথাই ও তার দিকে তাকাই।
প্রিসাঃআরে পরিচয় করিয়ে দিতেই ভুলে গিয়েছিলাম।ও হচ্ছে স্মিতা আমার বেস্টু।
অয়নঃহ্যালো স্মিতা।
সায়নঃহ্যালো তিতা সরি স্মিতা।
স্মিতাঃহ্যালো।(স্মিতা অয়নের সাথে কুশল বিনিময় করে সায়নের দিকে চোখ ছোট করে তাকাই।)
সায়নঃসরি সরি একটু মজা করলাম ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।
স্মিতাঃইটস ওকে,প্রিসা তাহলে আমি আজ আসছি।
অয়নঃআরে তুমি কোথাই যাচ্ছো?তুমিও চলো আমাদের সাথে।
স্মিতাঃনা ভাইয়া,আজ না অন্য কোনদিন।আজ এমনিতেও দেরি হয়ে গিয়েছে।
অয়নঃআচ্ছা ঠিক আছে,সাবধানে যেও।
স্মিতাঃহুম,প্রিসা আসছি।
প্রিসাঃঠিক আছে পরে কথা হবে।
এরপর স্মিতা চলে যায় আর অয়ন,প্রিসা আর সায়নও শহরভ্রমণের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।প্রিসা পেছনের সিটে বসে আর অয়ন,সায়ন সামনে।প্রথমে তারা একটা রেস্টুরেন্টে যাই লাঞ্চ করার জন্য তারপর সেখান থেকে আশেপাশে কয়েকটা জায়গায় যায় ঘুরতে।বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় তাদের।যেহেতু বাসাই প্রিসার বাবা-মা জানতো তাই আর কোন সমস্যা হয়নি।
______________________________________
বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে প্রিসা।মাঝে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে।সেইদিনের পর থেকে অয়ন আর সায়নের সাথে প্রিসা অনেকটাই ফ্রী হয়ে গিয়েছে।দুজনে এখনো তার সাথে দুষ্টমি করে কিন্তু এমন কোন কাজ করেনা যেটাতে প্রিসা ভয় পায় বা হার্ট হয়।প্রতিদিন নিয়ম করে দুজনে তাকে পড়াতে বসাই এখন।একদিন অয়ন পড়ালে আরেকদিন সায়ন পড়াই।
এসব ভাবছিল প্রিসা তখন কেউ পেছন থেকে হাত দিয়ে তার চোখ চেপে ধরে।প্রিসা বুঝতে পেরে যায় এটা কে।
প্রিসাঃকেন এসেছেন এখানে?চোখ ছাড়ুন আমার।
—- আমার পাখিটা বুঝি রাগ করেছে?
প্রিসাঃহ্যাঁ রাগ করেছে খুব খুব রাগ করেছে।
—- ওলে বাবারে,আমার সোনা পাখিটা এতো বেশি রাগ করেছে।
প্রিসাঃআহ্ আপুনি চোখ ছাড়ো তো এবার,আমার চশমাটা না আবার ভেঙে যায়।
যে প্রিসার চোখ চেপে ধরেছিল সে হচ্ছে প্রিসার চাচাতো বোন মিলা(আপন)।মিলা প্রিসা থেকে দু’বছরের বড়।মিলার কোন ভাইবোন না থাকাই সে প্রিসাকে নিজের ছোট বোনের মতো আদর করে।তাই তো মিলার নামের সাথে মিল রেখে প্রিসার নাম অসমিলা চৌধুরী প্রিসা রাখা হয়েছিল।মিলা আর প্রিসারা একই সাথে থাকে শুধু পার্থক্য এটাই মিলারা উপরে তালাই থাকে আর প্রিসারা নিচের তালায়।
মিলাঃতা আমার পাখিটা কেমন আছে?
প্রিসাঃএখন কেন জিজ্ঞেস করছো?নানাবাড়ি গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গিয়েছিলে।(মুখ ফুলিয়ে)
মিলাঃকে বলেছে ভুলে গিয়েছিলাম তোকে কি আমি ভুলে থাকতে পারি?
প্রিসাঃতাহলে ফোন দাওনি কেন?যেদিন গিয়েছিলে সেদিনই একবার ফোন দিয়েছো এরপর তো আর দাওনি।
মিলাঃএতে আমার কি দোষ বল এটা তো নেটওয়ার্কের দোষ।তুই তো জানিস গ্রামের নেটওয়ার্কের অবস্থা।(মন খারাপ করে)
প্রিসাঃআরে আপুনি তুমি মন খারাপ করো নাতো,আমি তো এমনিই বলছিলাম।
মিলাঃচাচির কাছ থেকে শুনলাম তোদের বাসাই কে জানি এসেছে?
প্রিসাঃহুম শান্ত মামার ছেলেরা,অয়ন আর সায়ন ভাইয়ারা।
মিলাঃও আচ্ছা।শুনলাম আমেরিকায় ছিল নাকি ওরা?
প্রিসাঃহুম আমাকে তো তাই বলেছে।
মিলাঃও আচ্ছা তার মানে বিদেশি মুলা।
প্রিসাঃহাহাহা…. বিদেশি মুলা।সবাই ওনাদের বলে সাদা মুলা আর তুমি বলছো বিদেশি মুলা।
মিলাঃহুম ইউ নো না আমি সবার থেকে আলাদা।
প্রিসাঃইয়েস আই নো,হাহাহা।আচ্ছা এবার চলো চাচা-চাচির সাথে দেখা করে আসি।
মিলাঃআচ্ছা চল,তোর জন্য অনেক কিছু এনেছি আমি।
প্রিসাঃতাই নাকি?তাহলে তাড়াতাড়ি চলো।
প্রিসা আর মিলা নেমে মিলাদের বাসাই চলে যায়।
সন্ধ্যাবেলা,
প্রিসাঃভাইয়া আজকে না পড়লে হয়না?
সায়নঃকেন?(গম্ভীরভাবে)
প্রিসাঃভালো লাগছে না।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
সায়নঃঠিক আছে।(গম্ভীরভাবে)
বলে সায়ন চলে যায়।সায়ন চলে যাওয়ার পর প্রিসা বই বন্ধ করে টেবিল মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।কিছুক্ষণ পর কারো আওয়াজে মাথা তুলে প্রিসা।
অয়নঃসায়ন বলেছে তুমি নাকি আজ পড়বে না।
প্রিসাঃহুম।(মাথা নিচু করে)
অয়নঃকেন?
প্রিসাঃভালো লাগছে না।
অয়নঃশরীর খারাপ লাগছে?মাথা ব্যথা করছে কি?
প্রিসাঃনা,এমনিই ভালো লাগছে না।
কিছু একটা ভেবে অয়ন প্রিসার দিকে কিছুক্ষণ তাকাই,প্রিসা তখনও মাথা নিচু করে রয়েছে।
অয়নঃআচ্ছা ঠিক আছে শুয়ে পরো আর বেশি খারাপ লাগলে আমাকে নয়তো অন্য কাউকে ডেকো।
প্রিসাঃহুম।
অয়ন চলে যাওয়ার পর প্রিসা শুয়ে পড়ে আসলে তার প্রচুর চোখ এবং মাথা ব্যথা করছে।সকাল থেকেই করছিল তবে সেটাকে ওতোটা গুরুত্ব দেয়নি তবে এখন বেশি করছে।
পরেরদিন সকালে,
কারো হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায় পিটপিট করে চোখ খুলে প্রিসা।চোখ খুলে যেটা দেখে তাতে প্রিসা ভুত দেখার মতো চমকে যাই,প্রিসা তাড়াতাড়ি উঠে বসে।আশেপাশে হাতড়ে চশমাটা খুঁজে তাড়াতাড়ি সেটা পড়ে নেয় কিন্তু না এখনও দেখতে পাচ্ছে সে।প্রিসা এবার নিজের হাতে চিমটি কাটে,ব্যথা পেয়েছে তার মানে এটা সত্যি।প্রিসা খুশিতে চিৎকার করে উঠে।
প্রিসাঃভাইয়া।(জরিয়ে ধরে)
—- আরে ফুল আস্তে আস্তে।
এটা হচ্ছে প্রিসার ওয়ান এন্ড অনলি বড় ভাই অন্য চৌধুরী স্নিগ্ধ।বেশ কয়েকবছর দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছে তারপর দেশে এসে বাকিটা কমপ্লিট করেছে দেন এখন নিজের বিজনেস র্স্টাট করেছে।কিছুদিন আগে বিজনেসের কাজে কয়েকদিনের জন্য আবার দেশের বাইরে গিয়েছিল।
প্রিসাঃভাইয়া তুমি কখন এসেছো?তোমার না আরো কয়েকদিন পরে আসার কথা?আর এলে তো এলে আসার আগে আমাকে একবারো বললে না কেন?
অন্যঃফুল(প্রিসা)আস্তে আস্তে এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি কোনটার উত্তর দেবো।
প্রিসাঃএকটা একটা করে সবগুলোর উত্তর দাও।
অন্যঃআমি ভোরেই এসেছি,তুই ঘুমিয়েছিলিস তাই তোকে ডাকিনি।আমার কাজ আগে শেষ হয়ে গেছে বিদায় তাড়াতাড়ি চলে এলাম আর তোকে বলেনি কারণ ভেবেছিলাম তোকে একটা সারপ্রাইজ দিয়।
প্রিসাঃহু… পচা।(মুখ ফুলিয়ে)
অন্যঃওরে আমার মিষ্টি ফুল(গাল টেনে)।আচ্ছা এবার তুই তাড়াতাড়ি নিচে আয় তোর জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে।
প্রিসাঃকি সারপ্রাইজ?(কৌতূহল হয়ে)
অন্যঃতুই তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় তাহলে দেখতে পাবি।(যেতে যেতে)
প্রিসা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়।নিচে এসে যেটা দেখে তাতে তো সে প্রচুর অবাক।
প্রিসাঃমামা-মামি তোমরা?
প্রিসার মামাঃআরে আমার প্রিন্সেস,কতোদিন পরে দেখলাম।
প্রিসার মামীঃমামণি তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।মাশাল্লাহ দেখতেও খুব সুন্দর হয়েছে।
প্রিসাঃকেমন আছো তোমরা?আর কখন এসেছো?
প্রিসার মামাঃআলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি,তুমি কেমন আছো প্রিন্সেস?
প্রিসাঃআমিও ভালো আছি।তোমরা কখন এসেছো আর কে তোমাদের এয়ারপোর্টে থেকে ড্রপ করেছে?
অন্যঃআমি করেছি আসলে আমরা একি ফ্লাইটেই এসেছি।
অয়নঃআব্বু-আম্মু?(অবাক হয়ে)
সায়ন আর অয়ন গিয়ে তাদের বাবা-মাকে জরিয়ে ধরে।
সায়নঃকখন এসেছো তোমরা?আর আমাদের জানাওনি কেন?তাহলে আমরা নিয়ে আসতাম।
প্রিসার মামীঃআমরা কিছুক্ষণ আগেই এসেছি।
অয়নঃতোমাদের অনেক মিস করেছি।
সায়নঃএন্ড আমিও।
প্রিসার মামীঃআমরাও করেছি।
সায়নঃআচ্ছা তোমাদের কে নিয়ে এসেছে?
প্রিসার মামাঃকে আবার আমাদের অন্য।
অয়নঃআরে ব্রো কেমন আছিস তুই?কতদিন পর তোকে আবার দেখতে পেলাম।
সায়নঃএখানে এসে তো আমাদের ভুলেই গিয়েছিস।
অন্যঃআরে ধুর কে বলেছে ভুলে গিয়েছি।
প্রিসাঃভাইয়া তুমি ওনাদের আগে থেকেই চেনো?
অন্যঃহ্যাঁ,আসলে আমি বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম না তখন আমরা একিই সাথে পড়াশোনা করেছি।এরা আমার ভাই কিন্তু তার আগে আমার বেস্টফ্রেন্ড।(দু’জনকে একহাতে জরিয়ে ধরে)
সায়নঃইয়াপ।
প্রিসাঃ(সবাই এনাদের আগে থেকেই চিনতো শুধু আমিই চিনতাম না — মনে মনে)
এরপর সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।অন্য,সায়ন,অয়ন অন্যের রুমে চলে যায়,প্রিসার বাবা আর মামা যায় বাজারে আর প্রিসার মা আর মামী রান্নাঘরে।বেচারি প্রিসায় একা রয়ে যায়,তাই সে নিজে নিজে বকবক করতে করতে রুমে চলে যায় আর ভার্সিটির জন্য তৈরি হতে থাকে।
চলবে……….