মেঘবতী পর্ব-০১

0
6825

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

— আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেবোনা।মেয়েটা আমাদের তাই সিদ্ধান্তটাও আমাদের।

— আপনি এতো কথা কেন বলছেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না।আমরা যখন বলেছি বিয়ে হবে তারমানে হবেই,তাও আজ।

কি হলো কিছুই বুঝতে পারলেন না তো।আচ্ছা ঠিক আছে আমি প্রথম থেকে বলছি।চাচাতো বোনের বিয়েতে এসেছিল প্রিসা কিন্তু এটাই যেন তার কাল হয়ে দাঁড়ালো।প্রিসার চাচাতো বোন সায়নি,সায়নি প্রিসার আপন চাচাতো বোন না দূরসম্পর্কের চাচাতো বোন।আসলে সায়নির বাবা প্রিসার বাবার চাচাতো ভাই।সায়নির সাথে অর্ক নামের একটা ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সায়নিকে আর পাওয়া যাচ্ছে না মানে সায়নি কারো সাথে পালিয়ে গিয়েছে।এখন সবাই প্রিসাকে চেপে ধরছে সায়নির জায়গায় অর্ককে বিয়ে করার জন্য।প্রিসা কখনই আসতো না শুধুমাএ তারা বাবার জন্য এসেছে।প্রিসার বাবা-মা কোন মতেই তাদের এই সিদ্ধান্তে রাজি নয়।এখানে প্রিসা তার বাবা-মা ছাড়া কাউকেই চিনেনা।ইম্প্যাক্ট তাকেও কেউ চিনেনা কিন্তু সবাই তার জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরেছে।

—- শোন,আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে।এই মেয়ের সাথেই অর্কের বিয়ে হবে।এর থেকে বেশি আমি কিছু শুনতে চাইছি না।(গম্ভীরভাবে)

এই কথাটা যিনি বলেছেন তিনি হচ্ছে রোকেয়া হাসান,সায়নির দাদী।এই মহিলাকে প্রিসা মোটেও সহ্য করে পারেনা এখন।কেন পারেনা চলুন সেটা একটু জেনে আসি।

ফ্ল্যাশব্যাক…….

কোণায় একটা চেয়ারে বসে ফোন টিপছে প্রিসা।আপাতত তার আশেপাশে তার বাবা-মা কেউ নেই।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কোথা থেকে যেন একজন বয়স্ক টাইপের মহিলা এসে তার পাশে বসলো,সে আর কেউ না রোকেয়া হাসান।প্রিসা সেদিকে মন না দিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।

—-তুমি আকাশের(প্রিসার বাবা)মেয়ে না?(গম্ভীরভাবে)

প্রিসা এবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে রোকেয়া হাসানের দিকে তাকাই কিন্তু কিছু বলেনা।

রোকেয়া হাসানঃকি হলো?কথা বলতে পারো না নাকি?

প্রিসা ভ্রু-কুচকে ওনার দিকে তাকাই।

প্রিসাঃজ্বি,আমি আকাশ চৌধুরীর মেয়ে।

রোকেয়া হাসানঃহুম।তা কি করো তুমি?

প্রিসাঃপড়াশোনা।(বিরক্ত নিয়ে)

রোকেয়া হাসানঃও বাবা,তুমি এখনও পড়াশোনা করো।(অবাক হওয়ার ভান করে)

প্রিসাঃচুপ।

রোকেয়া হাসানঃতা বিয়ে-টিয়ে করেছো নাকি?

প্রিসাঃনা।(গম্ভীরভাবে)

রোকেয়া হাসানঃকেন?কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক-টম্পর্ক আছে নাকি?

এ কথাটা প্রিসাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।প্রিসা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মা তাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে গেলো।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড…..

কারো কথাই প্রিসা বর্তমানে ফিরে আসে।

প্রিসার মাঃআমি আমার মেয়েকে যেখানে-সেখানে হুট করে বিয়ে দেবোনা।

রোকেয়া হাসানঃজয়নাব(সায়নির বাবা)ওদের দুজনকে বলে দে আমার কথাই শেষ কথা।এরচেয়ে বেশি আমি কিছু শুনতে চাইনা।

সালমা(সায়নির ফুপি)ঃহুম মা যেটা বলছে সেটা একদম ঠিক।আর এই মেয়ের জন্য অর্কের মতো এতো ভালো ছেলের সম্বন্ধ কোনদিনও আসবে বলে মনে হয়না।আমাদের সায়নি এর চেয়ে হাজারগুণ ভালো ছিল।এই মেয়ে তো চোখে কম দেখে,সেইসাথে কিছুটা বেঁটেও,গায়ের রঙটাও একটু চাপা।এই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য কোন সুদর্শন পুরুষ আসবে শুনি।তাই বলিকি অর্কের সাথেই এর বিয়ে দিয়ে দাও।তাহলে তোমাদেরই লাভ,নাহলে এই মেয়ে সারাজীবন কুমারীই থেকে যাবে আর তোমাদের ঘাড়ে বসে বসে খাবে।আর এখন জানোই তো যুগটা কি রকম।এতো বড় মেয়েকে ঘরে রাখা ঠিক না,না জানি কখন আবার তোমাদের মুখে চুনকালি মেখে দেয়।

প্রিসার মাঃমুখ সামলে কথা বলুন।(রেগে)

সালমাঃওমা,রেগে যাচ্ছেন কেন?আমি তো শুধু সত্যি কথা বলছিলাম।আসলে কি জানেন তো সত্যি কথা বললে না সবারই গায়ে লাগে।

রোকেয়া হাসানঃআহ্..আমি এতো কথা শুনে চাচ্ছি না।আমার কথাই শেষ কথা।অর্কের সাথেই এই মেয়ের বিয়ে হবে।তোমরা সবাই ওকে তাড়াতাড়ি তৈরি করে দাও।

প্রিসাঃঅসহায় দৃষ্টিতে তার বাবা-মার দিকে তাই।

প্রিসার মাঃআমি বলেছিনা আমি আমার মেয়েকে এভাবে হুটহাট কারো সাথে বিয়ে দেবো না।আর আমার মেয়েও এভাবে অপরিচিত কাউকে বিয়ে করবে না।

প্রিসার বাবাঃআর আমার মেয়ে এখনো ছোট।পড়াশোনা করছে সে এখনো।সেই সাথে তারও একটা ইচ্ছে আছে।আমরা কখনই তোমাদের বা আমাদের ইচ্ছে তার উপর চাপিয়ে দিতে পারিনা।

সালমাঃওর আবার কিসের ইচ্ছে।মেয়েদের কোন ইচ্ছেটিচ্ছে তাকতে নেই।মেয়ের কাজ হচ্ছে বড়রা যেটা বলে সেটা চুপচাপ মাথা নিচু করে মেনে চলা।আর মেয়েকে আর কত পড়াবে শুনি।এমনিতেই এত পড়িয়েছো আরো পড়ালে তো মেয়ের বিয়ের বয়সই পার হয়ে যাবে।

প্রিসার মাঃআমি…..

জয়নাব(সায়নির বাবা)ঃআকাশ প্লিজ তোরা মায়ের কথাই রাজি হয়ে যা।দেখ এমনিতেই সায়নি আমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছে,এখন যদি বিয়েটা না হয় তাহলে আমরা আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবো নারে।প্লিজ ভাই,আমাদের কথাটা একটু চিন্তা কর।

প্রিসার মাঃদেখুন,আপনাদের সমস্যা সেটা পুরোটাই আপনাদের।আপনারা নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যেই ঠিক করেনিন না।কেন আমার মেয়েটা এসবের মধ্যে টানছেন।আপনাদের সমস্যার সমাধানের জন্য কেন আমার মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।আর আমার মেয়েকে আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবোনা।বিয়ে দিয়ে সংসার করার জন্য তো আমরা ওকে এতো পড়াশোনা করাই নিয় আর না ও বিয়ে করে সংসার করার জন্য এতো পরিশ্রম করে পড়াশোনা করছে।

সাইমা(সায়নির মা)ঃআমি বলিকি,ভাবি ঠিকই বলছে।কেন শুধু শুধু আমাদের ঝামেলার মাঝে ছোট মেয়েটা টানছো।

সালমাঃএই তুমি চুপ থাকো তো।তোমার থেকে কেউ কিছু জ্ঞিজ্ঞেস করেছে।(স্নিগ্ধার মায়ের দিকে তাকিয়ে)আর আপনি এই বাড়ির বউ,এতো কথা আপনার মুখে মানাই না।তাই আমরা যা বলবো তাই হবে।

প্রিসার মাঃপ্রথমত আমি আপনাদের বাড়ির বউ না আর আমি মেয়ে বলে চুপ থাকবো এটা কখনই মনে করবেন না।আকাশ চলো এখান থেকে।এখানে যত থাকবো ততই ঝামেলা বাড়বে।

জয়নাবঃভাবি প্লিজ এরকম করবেন না।আকাশ প্লিজ তুই কিছু বল।আমি জানি তোর কথা ওরা কেউ ফেলতে পারবেনা।

প্রিসার বাবাঃদেখ ভাই,তোর ভাবি যেটা বলছে সেটা একদম ঠিক।মেয়েটা এখনো ছোট,ওর এইসব বিয়ে,সংসার বোঝার সময় হয়নি।আর তাছাড়া ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন আছে,ওরও একটা স্বপ্ন আছে।আমি এভাবে ওর স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবো না।তাছাড়া ওর ভাইও এখন এখানে নেই।ও এসে যদি এসব কিছু জানতে পারে তবে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।

জয়নাবঃও আচ্ছা তাহলে এই সমস্যা।তুই আমাকে আগে বলবি না।তুই দ্বারা আমি এখুনি ওর সাথে কথা বলছি।

প্রিসার বাবাঃনা প্লিজ,তুই ওকে ফোন করিস না।ও যদি এসব এভাবে জানতে পারে তাহলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে।

জয়নাবঃধুর কিছু হবে না।আমি ওকে বুঝিয়ে বললে দেখবি ও ঠিক রাজি হয়ে যাবে।

এটা বলেই জয়নাব নিজের ফোন বের করে প্রিসার বড় ভাইকে ভিডিও কল দেয় কারণ সে এখন দেশে নেই।প্রিসার ভাইয়া এসব জানার পর প্রচুর রাগারাগি করে আর এটাও বলে সে তার বোনকে এখন কোন মতেই বিয়ে দেবেনা।

এতক্ষণ এসব চুপচাপ শুনে গিয়েছে প্রিসা।এতক্ষণে সে উঠে দাঁড়াই।সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকাই।

প্রিসার বাবাঃপ্রিসা মা কি হয়েছে?খারাপ লাগছে?

প্রিসার মাঃকি খারাপ লাগছে?তাহলে চল বাসায় চলে যাই।

সালমাঃযতসব ঢং,হু।

প্রিসার মাঃআপনি প্লিজ চুপ করুন।তুই চিন্তা করিস না মা আমরা তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করবো না।

প্রিসাঃআমি রাজি।

প্রিসার বাবাঃকি!

প্রিসার কথা শুনে সবাই অবাক।প্রিসার বাবা-মা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে।কারণ তারা জানে তাদের মেয়ে কেমন।

সালমাঃবাহ্,এই মেয়ের তো দেখছি কথাও বলতে পারে।এই তোরা সবাই ওকে নিয়ে গিয়ে তৈরি করে দে।অর্করা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।

প্রিসাঃআরে দাঁড়ান,দাঁড়ান।এতো তাড়াহুড়ো কিসের?আগে আমার পুরো কথাটাতো শুনেনিন।

সালমাঃআবার কি কথা?

প্রিসাঃআমি রাজি কিন্তু আমি আগে একবার অর্ক এবং তার বাবা-মার সাথে কথা বলতে চাই।

রোকেয়া হাসানঃওদের সাথে তোমার কি কথা?(গম্ভীরভাবে)

সালমাঃহুম সেটাই আর কিছুক্ষণ পর তো তুমি এমনিতেই ওই বাড়ির বউ হয়ে যাবে।তাই সব কথা তখন বলো এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হতে যাও দেখি।

প্রিসাঃআমি বলেছি আমি ওনাদের সাথে কথা বলবো আর যদি আপনারা সেটা করতে না দেন তাহলে বিয়ে হবে না।(বাঁকা হেসে)

অবশেষে বাধ্য হবে তারা প্রিসার সাথে অর্ক এবং তার বাবা-মায়ের আলাদা করে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর তারা বের হলো এবং বের হয়ে যেটা বললো সেটা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পরলো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে