মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৪

0
1995

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_04
#Writer_NOVA

অফিসে আসার পর থেকে ফিহার ভালো লাগছে না।মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে।অনিকে বেবি দোলনায় শুইয়ে দিয়ে টেবলেট কে বললো।

ফিহাঃ টেবলেট অামার মাম্মাম -এর দোলনাটা আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে দে তো।আমার মাথাটা এতো ব্যাথা করছে কেন বুঝতে পারছি না। একটু খেয়াল রাখিস ওর।আমি বোধ হয় মাঢা ঘুরিয়ে পরে যাবো।

ফিহার কথা শুনে টেবলেট দৌড়ে টেবিলের দিকে গেল।সেখানে ছোট দুইটা ড্রয়ার আছে।একটা ড্রয়ারের উপরে আঁচড় কাটতে লাগলো।এর মানে হলো টেবলেট সেটা খুলতে চাইছে।ফিহা সেটা খেয়াল করে ওর কাছে এগিয়ে গেলো।

ফিহাঃ কি হয়েছে টেবলেট? তুই এখানে কি খুঁজছিস? তুই সামনে থেকে সর আমি দেখছি।

টেবলেট সরে গেল।ফিহা ড্রয়ার খুলে সেখানে মাথা ব্যাথার বাম দেখতে পেলো।মুখটা এমনি খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেল।ফিহা যত টেবলেট কে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। সাথে ভালবাসার পরিমাণটাও বেড়ে যাচ্ছে। একটা বোবা প্রাণী যে মানুষকে কতটা হেল্প করতে পারে সেটা টেবলেটকে দেখে বোঝা যায়।আসলেন এটা সত্যি। কারণ আপনি মানুষ কে তিনবছর জান-প্রাণ দিয়ে সাহায্য করবেন। কিন্তু সে তিনদিনও মনে রাখবে না।অথচ এই বোবা প্রাণীটাকে তিনদিন সাহায্য করবেন তারা তিন বছরের বেশি আপনাকে মনে রাখবে।ফিহা খুশি হয়ে টেবলেটকে কোলে নিলো।

ফিহাঃ তোর মালিক তোকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে।যত দেখি তোকে ততই মুগ্ধ হয়ে যাই।তুই সবসময় আমার ও অনির সাথে থাকবি।তুই সাথে থাকলে অনেক ভালো লাগে।আমি আগে বামটা কপালে লাগিয়ে নেই।তারপর তোর সাথে কথা বলি।

বাম লাগানো শেষ হতেই অনিয়া হাত পা তুলে গগণ বিদারক চিৎকার শুরু করলো।ওর সামনে কাউকে না দেখে সে তার একাকিত্ব জানান দিচ্ছে। ফিহা দৌড়ে গিয়ে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো।

ফিহাঃ ওরে আমার জাদু। কি হয়েছে তোমার লক্ষ্মীটা?তোমার মাম্মাম এখানেই আছে।আমি কি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি?মা কি তার মেয়ে ছেরে চলে যাবে।যে যাই বলুক তুমি আমার মেয়ে।মা কি শুধু জন্ম দিলেই হয় যায়।মা হতে তো কতগুলো দায়িত্ব লাগে।আমি না হয় জন্ম না দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করে তোমার মা হয়ে থাকবো।আমি তোমার আর্দশ মা হয়ে দেখাবো।তুমি আমার পরিচয়ে বড় হবে।এখন আমার মানিক, একটু কান্না বন্ধ করো।তোমার মা তোমার সাথেই আছে,আর সাথেই থাকবে।আমার মা-মণির কি খুদা লেগেছে।মাম্মাম পঁচা তাই না মা-মণি।তোমার খিদে পেয়েছে এখনো খাবার দেইনি।এক্ষুনি দিচ্ছি সোনা মণি।

ফিহার গলার আওয়াজ পেয়ে অনিয়ার কান্না বন্ধ হয়ে গেছে।তখনি কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলো আবদুল আজিজ সাহেব।

আবদুলঃ আসতে পারি ছোট বউমা।
ফিহাঃ আরে চাচা আসুন।এটা তো আপনাদের অফিস।অনুমতি নেওয়ার কি আছে।
আবদুলঃ অনি দিদিভাই।কি হয়েছে তোমার?মায়ের কোলে সবসময় বসে থাকলে মা কাজ করবে কি করে?মা সারা দিন কত কাজ করে।তুমি যদি মায়ের কোলে উঠে বসে থাকো তাহলে মায়ের কাজ করতে সমস্যা হবে।তুমি তো ভালো মেয়ে।ভালো মেয়েরা কখনও মা-মণিকে জ্বালাতন করে না।

আবদুল সাহেবের কথা শুনে খিল খিল করে হাসছে অনিয়া।এমন ভাবে হাসছে মনে হয় সব কিছু সে বুঝতে পেরছে।ফিহা ফিটার তৈরি করছে।
আবদুলঃ দাও ছোট বউমা।আমার কাছে দিদিভাইকে দেও।তুমি ওকে নিয়ে কাজ করতে পারবে না।আমি দিদিভাইকে রাখছি। তুমি ফিটার তৈরি করো।
ফিহাঃ না পারলেও অভ্যাস তো করতে হবে চাচা।আমি আমার মেয়ের গায়ে একটা ফুলের আঁচড়ও লাগতে দিবো না।এখন যে আমার অনেক দায়িত্ব। অনিয়াকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে।সারা পৃথিবীর কালো ছায়া থেকে ওকে রক্ষা করতে হবে।তা না হলে আমি যে মা হয়ে ব্যর্থ হয়ে যাবো।

ফিহা অনিয়াকে আবদুল সাহেবের কোলে দিয়ে কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেল।
আবদুলঃ মা গো তোমার মতো যদি সবাই বুঝতো।তাহলে হয়তো কোন বাচ্চা আজ এতিমখানায় থাকতো না।যখনি কোন দম্পতির সন্তান না থাকে তাহলে আমরা আফসোস করি।কিন্তু কোন এতিমখানার বাচ্চার বাবা -মা না থাকলে আমাদের মনে আফসোস হয় না।আমরা ভাবি সে তো এতিমখানায় আছে তার মানে ভালো আছে।সন্তান ছারা বাবা-মায়ের কষ্টের চেয়ে যে বাবা-মা হীন সন্তানের কি কষ্ট সেটা আমরা উপলব্ধি করি না।যদি করতাম তাহলে হয়তো মনবতা নামক বস্তুটা আরো উচ্চ মর্যদায় থাকতো।

ফিহাঃ বাবা-মা হীন থাকা যে কি কষ্টের সেটা আমি জানি চাচা।প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে কুঁড়ে কুঁড়ে কষ্ট দেয়।মাথার ওপর একটা ছায়া নেই। পায়ের নিচে মাটি নেই। মুখ মুছে দেওয়ার জন্য কোন আঁচল নেই। মাঝে মাঝে বেঁচে থাকতেও ইচ্ছে হয় না।তারপরও বেঁচে থাকতে হয়।সেজন্য আমিও চাই না অনি তার মা ছারা বাঁচুক। আমি শুধু মাত্র এই ছয় মাসের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে এখানে এসেছি।আমি একটা মা হীনা মেয়ে হয়ে অন্য বাচ্চাকে তো মায়ের অভাব বুঝাতে দিতে পারি না।তাই আমি ওকে আমার সর্বস্ব দিয়ে বড় করবো।

হাতের ফিটার টাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে কথাগুলো বললো ফিহা।আবদুল সাহেবের কোল থেকে অনিয়াকে নিয়ে ফিটার খাওয়াতে লাগলো।
ফিহাঃ চাচা, কোন দরকার ছিলো?
আবদুলঃ কতগুলো ফাইলে তোমার সাইন লাগতো।
ফিহাঃ দিন আমি করে দিচ্ছি।
আবদুলঃ তুমি আগে অনি দিদিভাই কে ফিটার খাইয়ে নেও।তারপর সব কাজ।
ফিহাঃ আমাকে এখন একসাথে সব সামলাতে হবে চাচা।এক হাতে আমার মেয়ে আরেক হাতে অফিস।এখন থেকেই সব অনুশীলন করে রাখতে হবে।

ফিহা একহাতে অনিকে ধরে আরেক হাতে সাইন করে দিলো।আবদুল সাহেব অবাক চাহনিতে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে দিনকে দিন শুধু মুগ্ধ হচ্ছে। আচার,ব্যবহার, মন-মানসিকতা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।নিজের মেয়ে নয়,নিজের অফিস নয়।তারপরও নিঃস্বার্থ ভাবে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।অবিবাহিত হয়েও মায়ের অধিকার নিয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়ার পাশে।
ফিহাঃ নিন চাচা,হয়ে গেছে।
আবদুলঃ মা গো তোমায় দেখলে মনটা ভরে যায়।মেয়ে জাতির প্রতি শ্রদ্ধাটা আরেক ধাপ বেড়ে যায়।

সত্যি তোমার মতো মেয়ে যদি ঘরে ঘরে থাকতো।
ফিহা এত কথার বিনিময়ে শুধু মুচকি হাসলো।আবদুল সাহেব ফাইল কমপ্লিট করে খুশি মনে চলে গেল।ফিহা অনিয়াকে খাইয়ে ঘুৃম পারাতে লাগলো।কিছু সময়ের মধ্যে অনিয়া ঘুমিয়ে পরলো।অনিয়াকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে টেবলেটকে এক প্যাকেট বিস্কুট এগিয়ে দিলো।এত সময় ধরে টেবলেট দোলনার পাশে ঘাপটি মেরে বসে ছিলো।বিস্কুট পেয়ে টেবলেট খুশি মনে খেতে লাগলো।

বাসায় এসে আনিস চৌধুরীর সাথে বসে রাতের খাবার খেলো। তারপর অনিয়াকে এক হাতের ওপর নিলো।ফিহা নিজের ও অনির গায়ে চাদর টেনে দিয়ে ঘুমের দেশে পারি দিলো।গভীর রাতে অনিয়া নড়েচড়ে উঠলো।ওর নড়াচড়া ফিহা ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারলো। অনিয়া কান্না করতে নিলেই ফিহা ঘুমের ঘোরে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।যাতে করে অনিয়া আর কান্না করলো না।ঠোঁট ফুলিয়ে রাখলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে