মিষ্টার লেখক পর্ব-১১

0
1028

#মিষ্টার_লেখক(১১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
[কার্টেসি সহও সম্পূর্ণ কপি নিষিদ্ধ]

অপর প্রান্তের বেলকনিতে মেয়েটি নিরবে কাপড় মেলে দিচ্ছে রশিতে।ইমা কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে বললো, শুনছেন?

মেয়েটি বোধ হয় খেয়াল করেনি তাই নিজের মতো করে কাজ করেই যাচ্ছে।তাই ইমা আবারো বললো, এই যে শুনছেন? আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

মেয়েটি এবার শুনতে পেয়ে গ্রিলের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।ইমা কে ভালো করে লক্ষ্য করে বললো, আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে ভাবী। আজকে নিশ্চয়ই বাবার বাসায় যাবেন বলে খুব খুশি আপনি?

ইমা বললো,জ্বি অনেক খুশি আমি।
আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল বলবো?

মেয়েটি একটু ইতস্তত করে বললো,জ্বি বলেন কি বলবেন?
ইমা দ্রুত বললো,এ বাসার সাথে আপনার কি সম্পর্ক? না মানে কোন রকম সম্পর্ক আছে? আমার মনে হয় আপনার সাথে কোন যোগ সূত্র আছে এই বাসার। আপনি আমাকে সত্যিটা বলবেন প্লিজ?

মেয়েটি দ্বিধায় পড়ে গেল বলবে কিনা?
তখন রাজিয়া সুলতানা পিছন থেকে ডেকে বললেন, বৌমা তোমার পরিবারের লোকজন এসেছেন। এখানে কি করেছো তুমি?

ইমা পিছনে ফিরে শ্বাশুড়ি মাকে দেখতে পেয়ে ভয়ে ভীত চোখে তাকায়।
রাজিয়া সুলতানা আবারো বললেন, কি ব্যাপার তুমি দাঁড়িয়ে র‌ইলে যে? এসো তাদের সাথে দেখা করবে।

ইমা বললো, জ্বি মা আসছি।

তারপর রাজিয়া সুলতানা আগে চলে গেলে,ইমা পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো পাশের বেলকনিতে মেয়েটি নেই।ইমা বুঝতে পারলো তার শ্বাশুড়ি মা আসায় মেয়েটি রুমে চলে গেছে।তাই ইমা আর না দাঁড়িয়ে চলে এসেছে ড্রয়িং রুমে।এসেই বাবাকে সালাম দিয়ে বললো, কেমন আছো আব্বু?
ইব্রাহিম খলিল সালামের জবাব দিয়ে বললো, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস রে মা?
ইমা উত্তরে বলে, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আব্বু। আম্মু কেমন আছে?

ইব্রাহিম খলিল মলিন মুখে বললেন, ভালো আছে, তবে তোর জন্য অনেক কান্নাকাটি করে ভাসায়। সারাক্ষণ ধরে বলে, আমি কতটা নিষ্ঠুর ভাবে মেয়েটা কে অতো দূর পাঠিয়ে দিলাম। আমার মেয়েটা নিশ্চ‌ই আমার উপর রাগ করে আছে।তাই তো একটা বার আমার সাথে কথা বললো না।

বাবার কথা শুনে ইমার বুকটা হাহাকারের ছেয়ে যায়। সত্যি তো সে একটা বার তার মায়ের সাথে কথা বললো না খুব বড় ভুল হয়েছে।মা তো সবসময় তার ভালো চেয়ে এসেছেন।তাই তো ভালো ছেলে দেখে দূরত্বের কথা চিন্তা করেন নি।
ইমার মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল। দুই বোন এসে বললো, কিরে বর কে পেয়ে আমাদের ভুলে গেলি নাকি?

ইমা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো, তোমাদের কি করে ভুলে যাই বলো? আসলে আম্মুর কথা মনে পড়ে খুব কষ্ট লাগছে আমার।

ইমার বড় বোন ইরিনা বললো, দূর পাগলি মন খারাপ করছিস কেন? আল্লাহ চাহেতো আজকেই তো আম্মুর সাথে দেখা হবে। তখন মন ভরে কথা বলে নিস। তাহলেই হবে। এখন মুখ গোমড়া করে রাখলে মেহমানদের নজরে পরবে। তখন তারা বলবে ইমার বাড়িতে এসেছি অথচ ইমার মুখে হাসি নেই।

সাথে মেজ বোন ও বোঝালো ইমাকে। এতে ইমা সব কিছু ভুলে মুখে হাসি ফুটে তুললো।
.
.
দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে বিকালের দিকে রওনা দিল ইমাকে নিয়ে। তাদের র‌ওনা হয়েছে যেহেতু তাই আর একটু দেরি করে মহিনের জন্য। তারপর মহিন হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেয়।
অতঃপর বিশ্রাম নিয়ে র‌ওনা হয় তারা।

গাড়িতে ইমা আর মহিন গল্প করে কাটালো।গাড়ি যখন পদ্মা সেতুতে এলো তখন ইমার খুব ইচ্ছে হলো গাড়ি থেকে নেমে হেটে বেড়াতে।
তখন মহিন বললো,পদ্মা সেতু পাড়ি দেওয়ার সময় সেতুর ওপরে কোনো যানবাহন থামানো যাবে না। গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলা বা হাঁটাহাঁটি করা যাবে না। গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব নিয়মের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

ইমা মন খারাপ করে বললো, এমন নির্দেশের কি দরকার ছিল? একটু হাঁটাহাঁটি করলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

মহিন ইমাকে বুঝিয়ে বললো, পদ্মা সেতু ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা’ বলে সেতু পারাপারে এসব নির্দেশনা সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। তুমি জানালা দিয়ে এর সুন্দর্যো উপভোগ করে দেখ ভালো লাগবে। তবে মাথা বের করে নয়।

ইমা আর উপায় না পেয়ে জানালা দিয়েই দেখতে লাগলো। সাথে ফোন বের করে এক মিনিট তেরো সেকেন্ড এর একটা ভিডিও করলো।শুভ্র নীলাভ আকাশের সাথে সচ্চ পদ্মা নদীর পানি সাথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।সব মিলিয়ে অসাধারণ এক মুহুর্ত ক্যামেরা বন্দি করে ইমা।
তারপর ফেবুতে আপলোড করে।
.
.
অতঃপর তাদের মতলব পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেল। এতো জার্নি করে সবার অবস্থা নাজেহাল।
সাহারা মেয়েকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। সাথে ইমাও নিজেকে সামলাতে পারলো না। হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বললো, আমাকে এতো দূর না পাঠালেও পারতে আম্মু। এখন কেন কান্না করছো?একদম কাঁদবে না বলে দিচ্ছি।
সবাই নিজেদের ক্লান্ত শরীরের কথা ভুলে গিয়ে মা আর মেয়েকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।ইমার বড় দুলাভাই মহিন কে বলে,ইমা নিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য।
মহিন অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে ইমাকে নিয়ে রুমে আসে। আলতো হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, আমার ভালোবাসার জন্য কি এই দূরত্ব মেনে নেওয়া যায় না?

ইমা চুপ করে থাকলে মহিন সরে যেতে নিলে ইমা হাত ধরে থামিয়ে দেয় মহিন কে। মহিন থেমে গেল, উৎসুক হয়ে তাকালো।ইমা বললো, কষ্ট হয় তো কি করবো বলেন?

— এটা আল্লাহ প্রদত্ত নির্ধারিত। মেয়েদের একটা নির্ধারিত সময়ে স্বামীর ঘরে যেতে হয়। এবং নিকটবর্তী স্থান নাকি দীর্ঘ পথের স্থান এটাও তো আল্লাহ তা’আলা নিজেই নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই না? হয়তো কোন একটি উছিলায় আমাদের দেখা হয়েছে কিন্তু এটাও ও আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছেতেই হয়েছে। তিনি জানেন ভবিষ্যতে কী ঘটবে, সেই হিসেবেই তিনি তাকদীর লিখে রেখেছেন। আর ঘটনাগুলো স্বাভাবিকভাবেই তাকদীরের সাথে হুবহু মিলে যাবে, অন্যকথায় তাকদীর অনুযায়ী ঘটবে।

ইমা এবার বুঝতে পারলো। তাই বললো আচ্ছা আর কাঁদবো না এভাবে।
মহিন ইমার গাল দুটো টিপে দিয়ে বললো, মনে থাকবে তো ম্যাডাম?
ইমা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিল।
মহিন খুশি হয়ে ইমার গালে পাপ্পি দিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হতে চলে গেল বাথরুমে।
এদিকে ইমা আকস্মিক ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
.
.
এরপরের দিন দুপুর বেলা ইমা এবং তার ছোট ছোট কাজিন’রা আর ভাগ্নিরা মিলে মরিচ দিয়ে তেঁতুলের সাথে ধনেপাতা কুচি দিয়ে মাখিয়ে টকটক স্বাদ আহা… একেকজন খাচ্ছে আর আহ্ কি মজা বলছে। তখন মহিন গিয়ে বললো কি খাচ্ছো তোমরা? আমিও খাবো!

মহিনের এমন ধারা কথায় অবাক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে সবাই। এদিকে মহিন তেঁতুলের বাটিটা হাতে নিয়ে খেতে শুরু করে দেয়।ইমা অবাক হয়ে বললো, আপনি তেঁতুল খাচ্ছেন? সবাই তো বলে তেঁতুল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাহলে?

মহিন খেতে খেতে বললো,কে বলেছে এসব?
অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। এর পাতা, ছাল, ফলের কাঁচা ও পাকা শাঁস, পাকা ফলের খোসা, বীজের খোসা সবকিছুই উপকারী। এর কচিপাতায় রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড। পাতার রসের শরবত সর্দি-কাশি, পাইলস ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় কাজ দেয়। তেঁতুলের কিছু উপকারিতা যেমন –
হার্ট ঠিক রাখে,হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়ায়,ত্বক উজ্জ্বল করে, ডায়বেটিস কন্ট্রোল করে,ক্যান্সার রোধ করে ,ওযন কমায়,ক্ষত সারায়,লিভার সুরক্ষিত রাখে,পেপটিক আলসার রোধ করে,সর্দি কাশি সারাতে সাহায্য করে।

এছাড়া অপকারিতা/সাবধানতা :

১. কিছু ঔষধ আছে সেসব ঔষধ সেবনের সাথে তেঁতুল খেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করবে। যেমন অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সিন এর মতো নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ, অ্যান্টি-প্লাটিলেগ ড্রাগ ও রক্ত পাতলা করার মেডিসিন, যেমন- হেপারিন, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি। তাই যারা তেঁতুল খেতে অভ্যস্ত তারা ঔষধ সেবনের সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

২. মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হ’তে পারে। তাই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, প্রতিদিন ১০ গ্রামের বেশি তেঁতুল না খাওয়া। ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই তেঁতুল খেতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

৩. তেঁতুলের প্রভাবে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের মধ্যে র‌্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হওয়া, বমি ও শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। তাই তেঁতুল খেলে যাদের এইসব অসুবিধা মনে হবে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

৪. তেঁতুলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় এসিড। তাই নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়।

৫. গবেষকরা প্রমাণ দিয়েছেন যে, বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হয়। ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হ’তে পারে।
.
.
তেঁতুল এতো উপকারী শুনে সবাই হাঁ হয়ে গেল।
ইমা বললো, আগে জানলে তো আরো বেশি খেতাম আম্মুর কথা শুনতাম না।
তখন মহিন বললো, কোন কিছুই বেশি ভালো নয়। সবকিছুর একটা ভালো দিক এবং খারাপ দিক আছে।তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে।

ইমা বললো, আচ্ছা।

তারা এরকম নানা বিষয় নিয়ে গল্প করছিল। তখন রিহাব এলো কান্না করতে করতে!সারা শরীর তার ভিজে একাকার হয়ে আছে। নাকের ডগায় ফেটে র’ক্ত বের হচ্ছে।গালে ও কাঁটা দাগ লাল রঙা হয়ে আছে। হাতের কিছু কিছু স্থান ও কেটে গেছে।
ছেলের এমন অবস্থা দেখে সাহারা চিৎকার দিয়ে উঠল…..

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে