#মায়াবন বিহারিনী🖤
#৫ম ও শেষ পর্ব
#ফাহমিদা চৌধুরী
এই বলে চোখ বন্ধ করে নেয় রাহিদ।
সকাল হয়ে এসেছে। শেষ রাতের দিকে ঘুমানোর ফলে আজকে উঠতে দেরি হয়ে যায় মায়ার। সে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রইংরুমের সোফায় গিয়ে বসে পরে। এরপর তার মা কে নাস্তা দিতে বলে সামনের দিকে তাকাতেই থমকে যায় মায়া। রাহিদ তার মুখোমুখি সোফায় বসে আছে এবং তার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ার এখনো বোধগম্য হচ্ছেনা যে রাহিদ এখানে। মায়ার মা নাস্তা টেবিলে দিয়ে মায়া কে বলে মায়া যা নাস্তা দিয়েছি তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। এরপর রাহিদ কে বলে বাবা তুমিও যাও খেয়ে নাও এসেছো সেই কখন এখনো খাওনি যাও। মায়া যা, রাহিদ কে নিয়ে খেতে যা। আমার কাজ আছে এই বলে মায়ার মা রান্নাঘরে চলে গেল। মায়া এখনো বসে আছে তাই দেখে রাহিদ হালকা কাঁশি দিয়ে উঠে মায়া অপ্রস্তুত হয়ে পরে, রাহিদ তা দেখে মুচকি হেসে বলে মায়া খেতে চলো আমি বাসা থেকে কিচ্ছু খেয়ে আসিনি। রাহিদ কিছু খেয়ে আসেনি শুনে মায়া উঠে পরে রাহিদকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসে পরে।
খাবার খেয়ে রাহিদ মায়াকে বলে এগুলো গুছিয়ে রুমে এসো তোমার সাথে আমার কথা আছে। এইবলে রাহিদ মায়ার রুমে চলে যায়। আর মায়া ভাবছে কি এমন কথা যে এখানে আসতে হলো উনাকে। মায়ার ভাবনার মাঝে রাহিদের ডাক পরে মায়া তড়িঘড়ি করে তার রুমে চলে যায়। রাহিদ তার বেডের আধশোয়া হয়ে বসে আছে। মায়া রুমে এসে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেয়। এরপর বলে আপনি আমায় কি বলবেন? কি এমন কথা বলার আছে যে আপনার থেকে আমার বাসায় আসতে হলো?
রাহিদ মায়ার কথা শুনে মায়ার দিকে তাকিয়ে ইশারায় মায়াকে বসতে বলে। মায়া এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে রাহিদ একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে, আপনি কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে চলে এলেন কেন মায়া? একটাবার ও ভাবেননি আপনার হটাৎ এভাবে চলে আসায় মা বাবা কতটা কষ্ট পেয়েছে।
মায়া রাহিদের কথা শুনে হালকা হাসে এরপর বলে আমি চিঠি তে সব জানিয়ে এসেছি রাহিদ। আমি তাদের কথা রাখতে পারেনি তাই এভাবে পালিয়ে এসেছি। আর আপনার পথ থেকে চিরদিনের মতো সরে গিয়েছি। রাহিদ মায়ার কথায় বলে, পালিয়ে আসা কি কোনো কিছুর সমাধান মায়া?
আপনি তো সবটা জানিয়ে ও আসতে পারতেন তাই না। আর হ্যাঁ এটা নিন ধরুন একটি খাম মায়ার হাতে গুজে দিয়ে। মায়া খামটি ভালোভাবে দেখে বলে উঠে কিসের খাম এটা। রাহিদ মায়াকে বলে কিসের হতে পারে এই খামটি। মায়া রাহিদের কথায় মুহুর্তেই ডিভোর্স কথা মনে পরে যায় সাথে সাথে বুক মুচড়ে উঠে মায়ার। সে এই অসস্তিকর অবস্তাই না পরার জন্যই তো চলে এসছিলো তাহলে কি রাহিদ তার থেকে ডিভোর্স পেপারে সাইন নিতে এসেছে ভাবতেই মায়ার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায়।
অপরদিকে রাহিদ মায়ার অবস্থা দেখে ভেতরে ভেতরে হাসছে।বেশকিছু সময় এভাবে কেটে যাওয়ার পর মায়া খামটা খুলে দেখে ওখানে মায়ার ভার্সিটি এডমিশন এর ফরম তা দেখে মায়া সস্তির নিশ্বাস নেই। মায়া ফরমটি নিয়ে রাহিদকে বলে এটা কেন আমিতো বলেছি আমি আপনার কিছুই নিবো না তাহলে আমার এডমিশন ফরম কেন আনতে গেলেন। রাহিদ মায়ার বোকা কথায় কিছুটা হাসে এরপর বলে আপনি কি মনে করেছেন আমি আপনাকে ডিভোর্স দেব তাই আপনার থেকে সাইন নিতে এসেছি উহু আপনার ধারণা ভুল মায়া,
আমি আপনাকে আমার সাথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি। আমি আপনার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই মায়া। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা এইজন্যই তো সকাল সকাল চলে এসেছি আপনাকে নিজের সাথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। মায়া রাহিদের কথায় কিছুটা ভড়কে যায় এরপর বলে আপনি আমায় বাধ্য হয়ে নিতে এসেছেন তাই না রাহিদ!
মা বাবা আপনাকে জোর করেছে আমায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। মায়ার কথার প্রতুত্তরে রাহিদ বলে নাহ মায়া আমি কারো কথায় আপনাকে নিয়ে যেতে আসিনি। আমি আপনাকে ভালোবাসি আর আপনার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই এইজন্যই আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনি আমায় ভুল বুঝে এসেছেন শুরু থেকেই আপনার মনে আমার জন্য যে ভুল ধারণা জন্ম নিয়েছে তা ভাঙাতে এসেছি। রাহিদের কথায় মায়া বলে আপনার জন্য কোনো ভুল ধারণা নেই আমার মনে আর আপনি প্রথম থেকেই অন্যকেউ কে ভালোবাসতেন আমি আপনাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে থাকতে চাইনি তাই চলে এসেছি।আর এখন আপনি বলছেন আমায় ভালোবাসেন ব্যাপার টা সত্যি হাস্যকর নয়কি। মায়ার এরুপ কথায় রাহিদ বলে আপনার কাছে হাস্যকর হতে পারে কিন্তু আমার কাছে মোটে ও নয়। হ্যাঁ আমি কেউকে ভালোবাসতাম কিন্তু সে আমায় ছেড়ে চলে যায় এরপর মা বাবা আমায় আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দেন আমি তখন ও তাজরি কে ভুলতে পারিনি যার কারণে আপনাকে ও মেনে নিতে পারিনি। এরপর নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি যে চলে গেছে তার জন্য বর্তমান টা কেন নষ্ট করবো। তাই আমি আপনাকে বুঝতে শুরু করি ধীরে ধীরে কখন যে আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পরি আমি নিজে ও জানি না এইবলে থামে রাহিদ। মায়া রাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে আজকে তার কাছে রাহিদকে অন্যরকম লাগছে। রাহিদ মায়াকে বলে মায়া আপনি আমায় কখনো আমার অতীত জিজ্ঞেস করেন নি কেন আপনি যদি একটাবার জানতে চাইতেন তাহলে কি আমি আপনাকে বলতাম না? কিন্তু আপনি আমার থেকে আমার অতীত না জেনেই চলে এলেন। আমি আপনাকে আজ সব জানাবো আর ভুল বুঝাবুঝি থাকবে না আমাদের মাঝে এই বলে রাহিদ বলতে শুরু করে
অতীত……….
তাজরি আমি আর আশিক আমরা তিনজন ফ্রেন্ড ছিলাম। আমরা সবসময় একসাথেই থাকতাম। আমি তাজরি কে পছন্দ করতাম তাজরি ও আমায় পছন্দ করত কিন্তু কেউ মুখে বলতাম না এভাবে অনেকদিন কেটে যায়। আমাদের পরিক্ষা শেষে বিদায় এর দিন ও ঘনিয়ে আসে আমাদের আর দেখা হবে না তাই আশিক বলে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন তাজরিকে প্রপোজ করতে আমিও যেহেতু তাজরির প্রতি উইক ছিলাম তাই রাজি হয়ে যায় তারপর থেকে শুরু হয় আমাদের সম্পর্ক। এভাবে চলে যায় একবছর এরমধ্যে আমিও জব পেয়ে যায়। নতুন জব তাই সবসময় ব্যাস্ত থাকতাম তাজরিকে সময় দিতে পারতাম না তেমন। তাই এইনিয়ে রোজ আমাদের মধ্যে ঝগড়া হতো তাজরি ও আমাকে অবহেলা করতে শুরু করে। আমি মনে করতাম সময় দিতে পারতাম না এইজন্য ও এমন হয়ে গিয়েছে কিন্তু তখন ও জানতাম না সে অন্য একটি ছেলের সাথে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছে। কিছুদিন আমাদের যোগাযোগ থাকে না একদিন তাজরি নিজ থেকে কল দিয়ে বলে সে আমার সাথে রিলেশন রাখতে পারবেনা তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং সে তার হাসবেন্ড এর সাথে আমেরিকা চলে যাচ্ছে। এটা শোনার পর থেকে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি অনেকটা ভেঙে পড়ি। নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে নেই একপ্রকার। এই ক্ষতটা সরানোর আগেই বাবা মা আপনার সাথে আমায় বিয়ে দিয়ে দেন যার ফলে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি তাই আপনাকে নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলি বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে রাহিদ।
বর্তমান……..
রাহিদের কথাগুলো শুনে ততক্ষণে মায়ার চোখজোড়া ভিজে উঠেছে। রাহিদ মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া ও তার দিকে তাকিয়ে আছে।রাহিদ গিয়ে মায়াকে বলে মায়াবতী আপনি এবার বলুন আমি কি ইচ্ছেকৃত ভাবে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি মায়া অশ্রু চোখে রাহিদের কথায় না বোধক মাথা নাড়ায় রাহিদ তা দেখে হেসে ফেলে। রাহিদ এগিয়ে গিয়ে মায়ার মুখ দু হাতে ধরে বলে এবার আপনার সকল ভুল ধারণা ভেঙে গিয়েছে মায়াবতী। আপনাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো আর আমরা সব নতুন করে শুরু করবো। আর আপনাকে কখনো কষ্ট পেতে দেব না। রাহিদের কথাশুনে মায়ার চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে। রাহিদ তা সযত্নে নিজের হাতে মুছে দেয় আর বলে উহু আমার মায়াবতী কে কান্নায় মানায় না রাহিদের কথাবলার ধরন দেখে মায়া হেসেফেলে। রাহিদ ও হেসে দেয়।
বিকালের দিকে মায়া তার মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। বাসায় এসে কলিংবেল বাজানোর পর মায়ার শাশুড়ী এসে দরজা খুলে দেয়। রাহিদ এবং মায়াকে একসাথে দেখে তিনি খুশিতে মায়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। রাহিদ তা দেখে প্রশান্তির হাসি হাসে। মায়ার শশুড় এসে বলে আহ ওদের ভেতরে তো আস্তে দাও। মায়ার শাশুড়ী মায়াকে ছেড়ে দেয় মায়া ভেতরে প্রবেশ করে তার শশুড়কে কিছু বলার আগে তার শশুড় তাকে দু হাতে আগলে নেই তা দেখে রাহিদ ভেঙছি কেটে বলে উঠে, বাহ রে আমি এতকষ্ট করে ফিরিয়ে আনলাম আর সব আদর উনাকে রাহিদের কথাশুনে সবাই হেসে দেয়। রাহিদের বাবা মায়া এবং রাহিদ কে দুহাতে জড়িয়ে নেই।
সমাপ্ত….।